নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শাহবাগে প্রধান প্রোগ্রামটা যেখানে হচ্ছে, তার চারপাশে ধারণা করি ত্রিশ/চল্লিশ হাজার মানুষ বৃত্তাকারে বসে আছে। তারা সবাই স্টেজ দেখতে পারেন না, মাইকে কেবল আওয়াজ শুনতে পান। সে আওয়াজে স্লোগান, হারিয়ে যাওয়া স্লোগান, মুখরিত।
কিন্তু মানুষ তো আরো বেশী, তাদের জায়গা নাই। কাজেই বৃত্তের বাইরে তারা অসংখ্য বৃত্ত তৈরী করেছে। প্রতিটা বৃত্তের মাঝে নানান অভিনব শিল্পকর্ম, কোথাও পোস্টার, কোথাও জ্বলছে মোমবাতি। মোমবাতি দিয়ে ৭১ লেখা, ফাঁসি চাই লেখা। এমন কয়েকশ স্লোগান লেখা হয়েছে মোমবাতির আলোয়। কোথাও বাংলাদেশের ম্যাপ আঁকা, রঙতুলিতে, ফুলকলিতে। কোথাও পোস্টার, ফেস্টুন। হাতে লেখা, ছাপানো বা নানান উপাদানে। সেসবের ভাষায় নতুনত্ব, দাবীতে প্রখরতা, নন্দনে সৃষ্টিশীলতা। ঘিরে থাকা মানুষগুলো স্লোগানে মুখর। কোনো বৃত্তের চারিপাশে মানুষগুলো বসে আছে, কোথাও দাঁড়িয়ে আছে। কেউ বৃত্তের পরিধি ঘুরছে, মিছিলের মত। ঘুরন্ত মিছিল। কোন বৃত্তে একজন দাঁড়িয়ে আছে মাঝখানে, নেচে নেচে স্লোগান দিচ্ছে, বাকীরা কোরাসে লাইন ধরছে, ক তে কাদের মোল্লা. তুই রাজাকার তুই রাজাকার।
কোনো বৃত্তের মাঝে গায়ক, গান গাচ্ছে জাগরণের। সেখানে একটু বেশী ভীর। তার সাথে গলা মেলাচ্ছে দর্শক। কেউ খুবই ভালো গায়ক, আবার কেউ চলনসই। কিন্তু গানের মধ্যে যেন বারুদ ফুটছে।
কোনো বৃত্তের মাঝে নাটক হচ্ছে। তাৎক্ষণিক স্ক্রিপ্ট। কেউ একজন শাহবাগে আসবে - এ নিয়ে কথপোকথন হচ্ছে অফিসের বসের সাথে - নাটকের সংলাপে সেসবের চিত্রন। মাইক নেই, চিৎকার করে ডায়লগ বলছে অভিনেতারা।
কোনো বৃত্তের মাঝ আবৃত্তি হচ্ছে, চারিপাশে ভীড়, মুক্তিযুদ্ধের, স্বাধীনতার সেইসব কবিতা - যা শুনলে যুদ্ধে যেতে ঝাপিয়ে পড়তে উদ্যত হয় ছাত্র-যুবা-বৃদ্ধ।
মাঝখানের চওড়া ডিভাইডারে কম্পিউটার নিয়ে বসেছে একদঙ্গল ছেলেমেয়ে। অনলাইনে ছাগু পেইজের বিরুদ্ধে আন্দোলন চলছে সেখানে। জামাত-শিবির প্রোগাগান্ডার বিরুদ্ধে সেখানে বসে চলছে যুদ্ধ। মানুষজন মন্তব্য করে যাচ্ছে, ছাগু পেইজের বিরুদ্ধে এবিউজ রিপোর্ট করে যাচ্ছে নিজের আইডি থেকে।
কোথাও স্বাক্ষর অভিযান চলছে। মানুষজন স্বাক্ষরের সাথে সাথে লিখে যাচ্ছে মন্তব্য। কয়েক লাখ মন্তব্য নিয়ে তৈরী হতে পারে বিশাল বিশ্বকোষ।
এমন কয়েকশ বৃত্ত ঘিরে মানুষের নিরন্তর উচ্ছ্বাস। অপরিচিত মানুষ এসে পাশে বসে স্লোগানে গলা মেলাচ্ছে। বাদাম খাচ্ছে। কেউ কিনে দিচ্ছে পানির বোতল, কেউ ফুচকা। মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকালে চেনার উপায় নাই। বিশ্বাস হয় না সে আগে কখনও স্লোগান দিয়েছে। মায়ের সাথে শিশু, বাবার সাথে শিশু, কিশোরের সাথে মা, কিশোরীর সাথে বাবা - এরা সবাই যেনো অবাক বিষ্ময়ে দেখছে এক নবজাগরণ, এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
মানুষগুলোর মুখের দিকে তাকালে বাংলাদেশ দেখা যায়। যুদ্ধাপরাধীদের প্রতি এক সমুদ্র ক্ষোভ ঠিকরে বেড়ুচ্ছে তাদের চোখ দিয়ে। ছেলের চেহারা অপরিচিত এক বিদ্রোহে উদ্ভাসিত হয় মায়ের কাছে, মা চিৎকার করে বলে, ফাঁসি ফাঁসি।
এক ব্যক্তি তার গলায় কাগজ ঝুলিয়ে হাঁটছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই।
এক ব্যক্তি তার গলায় ফাঁসির দড়ি ঝুলিয়ে দাড়িয়ে আছে, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির প্রতিকী মঞ্চায়ন।
এক তরুন তার মোবাইলে ছবি তুলছে আর কালের ফ্রেমবন্দী হচ্ছে।
প্রেমিক-প্রেমিকা স্লোগানে তাদের যুগলবন্দী ঘোষণা করছে।
সকাল থেকে রাত, রাত থেকে সকাল, মানুষেরা দলে দলে আসছে। যার যার মত নিজের দায়িত্ব মাথায় তুলে নিচ্ছে। কি করতে হবে - তা যেনো বাতাস বলে দিচ্ছে। শাহবাগের বাতাসে সব লেখা আছে।
বসে থাকছেই তো থাকছে। একজন স্লোগান দিচ্ছেই তো দিচ্ছে। পেটে কিছু পড়ছে না তার, কিন্তু মুখ তার ছুটছেই। ঘুম তার হচ্ছে না, কিন্তু স্বপ্ন তার ছুটছেই।
বারবার স্লোগানগুলো ধ্বনিত হচ্ছে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে পাথরে, ইটে, বৃক্ষে, দেয়ালে। হাওয়ায় ভেসে শব্দ-সম্পাত ছড়িয়ে যাচ্ছে দূরে, মহাযানে।
কেউ এই অভূতপূর্ব উপলব্ধির প্রান্তে দাঁড়িয়ে শুধু একবার চিৎকার করে জয় বাংলা, বাংলাদেশের প্রতি ইঞ্চি ভূমি সে স্লোগানের কম্পনে কেঁপে ওঠে। এই নিরবিচ্ছিন্ন স্বপ্ন-তৈরীর কারখানায় নির্মিত হচ্ছে রাজনৈতিক চেতনা, দেশপ্রেম। এই অবিশ্বাস্য মানবমিছিল যেনো মুছে দিচ্ছে অশ্রু, গ্লানি আর চল্লিশ বছর বয়ে বেড়ানো ঋণ। এই অসাধারণ দেহযোগ যেনো শহীদের কবরে পৌঁছে দিচ্ছে বিজয়ের ওয়েভ।
আজকের শাহবাগ যেনো আমাদের দিকদর্শন, আমাদের ভবিষ্যত, আমাদের স্বপ্নীল এক সংস্কৃতির উদগীরণ। আজকের শাহবাগ আমাদের রাজনীতির, সমাজনীতির, রাষ্ট্রনীতির, মানবনীতির স্বতন্ত্র এক গণমুখী অবস্থান, এর বাইরে থেকে বাংলাদেশকে দেখার সুযোগ চিরতরে রহিত করে দেবার অপ্রতিরোধ্য বিজয়।
২| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:০৩
রেজোওয়ানা বলেছেন: তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা, মেঘনা, যমুনা
জয় বাংলা!
৩| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৩২
আহমেদ আলাউদ্দিন বলেছেন:
জয় বাংলা।
দাবী একটাই, সব রাজাকারদের ফাঁসী চাই।
৪| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:১২
রোকসানা লেইস বলেছেন: শুভকামনা প্রজন্মের জন্য
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:১৩
পীরসাহেব বলেছেন:
দেখে রাখ শুয়োরের বাচ্চারা, চিনেরাখ!