নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
নিত্যনতুন বই সংগ্রহ এবং পড়তে যে নেশায় আঁটকে আছি- তা থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নাই। প্রায় অবসর জীবন থেকে বইয়ের রাজ্য থেকে বের হতেও চাইনা। বন্ধু দেবুর কাছ থেকে “গুলমোহরের ফুল” নামের একটা বই উপহার পেলাম।
“গুলমোহরের ফুল"- বইটি মূলত ভারতীয় কিংবদন্তি সংগীত ও অভিনয় শিল্পীদের ছোট ছোট ঘটনা নিয়ে লেখা ছবি সমৃদ্ধ ২৮০ পৃষ্ঠার একটি বড়ো বই। একটা ঘটনা দিয়েই শুরু হোক “গুলমোহরের ফুল" উপখ্যানঃ-
সে অনেক অনেকদিন আগের কথা। বৃটিশ শাসন থেকে ভারতবর্ষ স্বাধীন হবারও বছর খানেক আগের ঘটনা।
মুম্বইয়ের এক মিউজিক রেকর্ডিং স্টুডিয়োতে ‘শাহজাহান’ সিনেমার গান রেকর্ডিং এর রিহার্সাল চলছে। ছবির প্রধান চরিত্রে গায়ক-নায়ক কে এল সায়গল। এই সিনেমার অধিকাংশ গানেই তাঁর কন্ঠ।যেদিনের কথা বলছি সেদিন একটি কোরাস গানের রিহার্সাল চলছিল, যে গানটি তার পরের দিনই রেকর্ডিং হবে। ছবির সুরকার কিংবদন্তি নওশাদ। তিনি ছিলেন খুব খুঁতখুঁতে মানুষ। গানের ব্যাপারে সামান্যতম ত্রুটিও তাঁর না-পছন্দ ছিল। যাইহোক, অভিনেতা গায়ক সায়গল এবং কয়েকজন সহশিল্পীকে নিয়ে চলছিল গানের রিহার্সাল।
রিহার্সাল শেষ হবার পর প্যাক-আপ ঘোষণা করে দিয়েছেন সুরকার নওশাদ। মিউজিশিয়ানদের পরের দিন রেকর্ডিং এর খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো বুঝিয়ে দিয়ে উপর থেকে নিচে নেমে এসে তিনি দেখেন- সব শিল্পী বাড়ী চলে গেছেন। কিন্তু ঐ কোরাস দলের সবচেয়ে কম বয়সী শিল্পীটি তখনও বাড়ী যায়নি। স্টুডিয়োর এককোণে কাচুমাচু হয়ে বসে আছে। নওশাদ তার কাছে গিয়ে জানতে চাইলেন, “ঘর কিঁউ নহী গয়া আভিতক?”
নম্র স্বভাবের সেই ছেলেটি অধোবদন হয়ে খুব ধীরে ধীরে উত্তর দিল, “হজুর, কাল হী তো ইয়ে গানা রেকর্ডিং হোগা অওর মেরে পাস ঘর যাকে ফির লওট আনে কী পয়সা নহী হ্যায়। ইসি লিয়ে সোচতা হুঁ কে আজ ইস স্টুডিয়ো কে আসপাস কহীঁ অগর জায়গা মিল জায়ে তো...”
নওশাদ সাহেব অবাক হয়ে বললেন, “আরে পয়সা নহী হ্যায় তো মাঙ্গ কিঁউ নহী লিয়া?”
ছেলেটি আরও নীচু গলায় জবাব দিল, “হজুর মেরে আব্বা কহাঁ করতে থে কে কাম খতম হোনে কে পহলে কভী মেহেনতানা(মেহনতের পারিশ্রমিক,সন্মান-দক্ষিণা) নহী লিয়া করো। গানা রেকর্ডিং তো আভি বাকী হ্যায় জনাব, তো মেহেনতানা ক্যায়সে মাঙ্গুঁ?”
জবাব শুনে থমকে গেলেন নওশাদ সাহেব। মনে মনে কি একটু টলে গেলেন- কে জানে? হবেও বা!
এক মূহুর্তের অপেক্ষা মাত্র। তারপর এগিয়ে এসে আবেগে, আশ্লেষে জড়িয়ে ধরলেন সেই নবাগত শিল্পীকে। অনেক আশীর্বাদ দিলেন, জোরপূর্ব্বক পকেটে ভরে দিলেন কিছু টাকাও- ছেলেটির প্রবল আপত্তি সত্ত্বেও। পরের দিন ঠিক সময়মত স্টুডিয়োতে পৌঁছে সেই কোরাস গানটির রেকর্ডিং শেষ করলেন সেই শিল্পী। সেই শুরু... ভারতীয় সঙ্গীত জগতের সুরের আকাশে এক প্রবাদপ্রতীম সুরকারের সাথে এক নবাগত গায়কের অনন্ত পথ চলার।
জাম্পকাট......
মুম্বাইয়ের এক স্টুডিয়ো কয়েকদিনের জন্য বুক করা হয়েছে প্রযোজক-পরিচালক জে ওমপ্রকাশের ‘আসপাস’ ছবির গানের রিহার্সাল ও রেকর্ডিং এর জন্য। সেদিনের সেই ‘শাহজাহান’ সিনেমার নবাগত গায়ক ততদিনে ভারতীয় সঙ্গীতের জগতে নিজেই এক ইন্সটিটিউশন। তাঁর দুটো গান আছে ঐ সিনেমায় গাওয়ার জন্য। একটি লতা মঙ্গেশকরের সাথে ডুয়েট আর একটি চার লাইনের সোলো স্যাড সং- “তু মেরে আসপাস কহীঁ হ্যায় দোস্ত।” ডুয়েট গানটা শেষ করে জে ওমপ্রকাশ বললেন, সোলো গানটা তাহলে কাল রেকর্ডিং হবে। আজ প্যাক-আপ। গীতিকার আনন্দ বক্সী, সুরকারদ্বয় লক্ষীকান্ত-প্যারেলাল সবাই সে কথায় রাজী। নারাজ শুধু সেই শিল্পী।
“নহী হজুর...পুরা পেমেন্ট যব আজ লিয়া তো কাম পেন্ডিং কিঁউ রাখুঁ? আজ হী ইয়ে রেকর্ডিং কর লিজিয়ে জনাব”।
সদাহাস্যমুখ সেই শিল্পীর অনুরোধ তখন ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে আদেশের সমান। অগত্যা আবার সব মিউজিশিয়ানদের নিয়ে শুরু হল সে গানের রেকর্ডিং। অল্প কিছুক্ষণের মধ্যেই ফাইনাল রেকর্ডিং হয়েও গেল।পেমেন্টের চেক হাতে নিয়ে প্রশান্তিমাখা হাসি মুখে ধীর পদক্ষেপে নিজের গাড়ীতে উঠে বাড়ী ফিরে গেলেন সেই শিল্পী। গাড়ী তাঁকে নিয়ে রওনা দিল দিকশুন্যপুরের উদ্দেশ্যে।
সেদিন রাতেই ম্যাসিভ কার্ডিয়াক অ্যাটাক হল সেই শিল্পীর। আর তার পরদিন ৩১শে জুলাই, ১৯৮০ সালে সঙ্গীত জীবনের “নফরত কী দুনিয়া কো ছোড়কে প্যার কী দুনিয়ার”- পথে পাড়ি দিলেন ভারতীয় সঙ্গীত সাম্রাজ্যের ‘সুলতান’ মহম্মদ রফি।
যতদিন ভারতবর্ষে সঙ্গীত বলে কোনও শব্দ থাকবে, বেঁচে থাকবেন একজনও সঙ্গীতপ্রেমী ততদিন মহম্মদ রফির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ভারতীয় সঙ্গীতের অনন্ত আকাশে। ভারতবর্ষের কোথাও না কোথাও স্টেজ শো, কোনও টিভি চ্যানেল কিম্বা কোনও এফ এম
রেডিও চ্যানেল জুড়ে সুরে সুরে বেজে উঠবে মহম্মদ রফির অমোঘ কন্ঠস্বরে সেই চিরন্তনী-
“বড়ী দূর সে আয়ে হ্যায়
প্যার কা... তোফা লায়ে হ্যায়,
অপনা লো ইয়া ঠুকরা দো
প্যার কা... তোফা লায়ে হ্যায়!
(ঘটনা এবং উদ্ধৃত অংশ বই থেকে নিয়ে নিজের মতো করে লেখা)
১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩
জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:২৩
মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:
আপনি চাইলে এই বইটি পড়তে পারেন।
ভালো লাগবে।