নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।
The time of Pericles....
পেরিক্লিসের রাজনৈতিক দর্শন বলার আগে আমাদের দেশের কয়েকজন বিখ্যাত রাজনৈতিক নেতাদের রাজনৈতিক দর্শন সম্পর্কে প্রচলিত বক্তব্য বা ধারণার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিঃ-
* শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক "প্রজাস্বত্ব আইনের মাধ্যমে কৃষক শ্রমিকদের নিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা" করতে চেয়েছিলেন।
* কমরেড মনি সিং এর রাজনীতি ছিলো- "যতদূর পাকা রাস্তা ততদূর"!
* মাওলানা ভাসানী চেয়েছিলেন- "কাদামাটি কুড়ে ঘরের মানুষের কাছে রাজনীতি পৌঁছে দিতে"।
* আউব খান চেয়েছিলেন- ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মেম্বারদের নিয়ে মৌলিক গণন্ততন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।
* বংগবন্ধু চেয়েছিলেন- বুর্জুয়া গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে।
* হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ চেয়েছিলেন- ধানমণ্ডি থেকে ধানক্ষেতে গণতন্ত্র পৌঁছে দিতে।
সব শেষে গণতন্ত্রের মানসকন্যা বিশ্বনেত্রী হজরত শেখ হাসিনা মদিনা সনদে দেশ পরিচিত করার নমুনা এতো সহজে ভুলে যাবে না!
আপনারা সবাই জানেন তারপরও মনে করিয়ে দেই পেরিক্লিস কে ছিলেনঃ পেরিক্লিস (প্রাচীন গ্রিক ভাষায় পেরিক্ল্যাস্, অর্থাৎ "মহিমান্বিত", ৪৯৫ খ্রীস্টপূর্ব-৪২৯ খ্রীস্টপূর্ব) ছিলেন গ্রিক সভ্যতার স্বর্ণযুগে এথেন্স নগরের একজন প্রভাবশালী মান্যগণ্য নেতা, বক্তা এবং সেনাপতি। পেলোপেনিয়ান যুদ্ধের ওপর Pericles Of Athens And The Birth Of Democracy নামে ৮ খণ্ডের বিশাল বই লিখেছিলেন Donald Kagan, সেখানে পেরিক্লেসের শাসনকালে এথেন্স নগরীর যে চিত্র তুলে ধরেন, সেটা অতুলনীয়। ৮ খণ্ডের মধ্যে আমি এক খণ্ড পড়েছিলাম বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে। তবে গোটা বইয়ের উপর আলোচনা এবং বক্তৃতা সিরিজ শুনেছিলাম প্রফেসর আবদুল্লা আবু সাইদ স্যারের মুখে। বইটির অনেক দাম, তারপরও বছর দুই আগে রকমারি থেকে একখণ্ড কিনেছিলাম। Pericles Of Athens And The Birth Of Democracy বইয়ের ইংরেজি থেকে কিছু অংশ বাংলা অনুবাদ তুলে ধরছিঃ-
"আমাদের ব্যক্তি এবং গণ জীবনে কোন বিচ্ছিন্নতা ছিলনা। আমরা সন্দেহবাতিকগ্রস্ত ছিলাম না। কোন প্রতিবেশির কোন ভালোলাগার বিষয়ের ওপর কখনও রাগান্বিত হতাম না। অর্থাৎ প্রত্যেকের ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার চোখে দেখা হতো। এমনকি কারোর কোন মন্দ বা দৃষ্টিকটু কাজের জন্যে কখনও অযথা নাক গলাতাম না। আমাদের শহর সারা দুনিয়ার কাছে খোলা ছিল এবং বিদেশিদের ছিল অবারিত যাতায়াত। এমন কি রাষ্ট্রের কোন গোপন তথ্য কোন বিদেশির কাছে প্রকাশিত হবার ভয়ে আমরা কোন কঠিন দেয়াল তুলে রাখতাম না। আমরা ছিলাম ভালোবাসার পূজারী, অথচ রুচিতে খুব সাধারণ। আমরা মনের চর্চা করতাম বীরত্বের সাথে। পরিবারের প্রতি দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে আমরা কখনও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব অবহেলা করতাম না ...।"
মাত্র কয়েকটা বাক্যে একটা রাষ্ট্র কতটা গণতান্ত্রিক হতে পারে তার পরিচয় পাওয়া যায়। হয়তো সেই সময়ের এথেন্সে একেবারেই নিরবচ্ছিন্ন সুখ ছিলনা। পৃথিবীর কোথাও কখনও নিরবচ্ছিন্ন সুখ কখনই থাকেনা। কিন্তু স্বস্তি থাকে। এবং এসব নিজেদের চেষ্টায় অর্জন করতে হয়। বাইরে থেকে কেউ এসে করিয়ে দেয়না।
পেরিক্লিস সকল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের সম্প্রসারণ ও স্থিতিশীলতা চেয়েছিলেন। তদনুসারে, তিনি নিম্ন শ্রেণীর লোকদের (শ্রেণী বৈষম্য তখনও ছিলো) রাজনৈতিক ব্যবস্থা এবং সরকারী অফিসগুলিতে প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য আইন প্রণয়ন করেছিলেন, যেখান থেকে তাদের আগে বাধা দেওয়া হয়েছিল।
বাস্তবতা হচ্ছে- ৪৬০ সালের ইতিহাস আধুনিক এথেন্সও অনুসরণ করে না। সম্ভবত পৃথিবীর কোনো দেশই অনুসরণ করে না। একসময় আমাদের সমাজে শান্তি, সাম্য এবং মানবিক মর্যাদা ছিল, কিন্তু আজ তা অদৃশ্য। সৎ মেধাবী তরুণরা এখন আর রাজনীতিতে নেই। রাজনীতিতে প্রবেশ করেছে লোভী নেতৃত্ব, দুর্বল চরিত্রের ব্যক্তি ও সমাজের নিম্নস্তরের মন-মানসিকতার মানুষ, যাদের উদ্দেশ্য কেবল স্বার্থসিদ্ধি। ভাল কিছু আশা করা কঠিন, যতক্ষণ না আমরা সক্রিয়ভাবে প্রতিবাদ করি ও প্রতিরোধ গড়ে তুলি।
পেরিক্লেস এবং তার শাসনকালে এথেন্সে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সামাজিক দায়িত্বের মধ্যে যে ভারসাম্য ছিল, তা বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সঙ্গতকারনেই এখন আর প্রাসঙ্গিক নয়। তবে এথেন্সে বিদেশিদের জন্য রাষ্ট্র উন্মুক্ত রাখা এবং গোপনীয়তা রক্ষার ক্ষেত্রে কঠোরতা না দেখানোর যে উদাহরণ, তা আজকের বাংলাদেশের বৈদেশিক সম্পর্ক এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হতে পারে। এছাড়া, নিজেদের সম্মিলিত প্রয়াসের মাধ্যমে স্বস্তি অর্জনের যে মূলমন্ত্র এথেন্সে দেখা গিয়েছিল, তা বাংলাদেশেও উন্নতি ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় পথনির্দেশ হতে পারে।
পেরিক্লেসের এথেন্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক দিকগুলো সবসময় সুখকর ছিল না। লোভী রাজনীতিবিদেরা এথেন্সকে ধ্বংস করেছিল। বাংলাদেশের মতো দেশে রাজনৈতিক বিভাজন ও সামাজিক অসাম্য আজও বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। এথেন্সের ইতিহাস আমাদের শেখায় যে গণতন্ত্র ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা সম্ভব, কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন সততা, সচেতন প্রচেষ্টা এবং সবার অংশগ্রহণ।
সুতরাং, আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত একটি সচেতন সমাজ গঠন করা, যেখানে সকলে মেধা, যোগ্যতা ও নৈতিকতা নিয়ে নেতৃত্ব দিতে পারে। এই সংগ্রামকে একত্রে গ্রহণ করতে পারলে, আমরা আগামী প্রজন্মের জন্য একটি উজ্জ্বল ও ন্যায়সঙ্গত ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে সক্ষম হব।
জুলাই গণ অভ্যুত্থান পরবর্তী ডক্টর ইউনুস এর নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আজ বাংলাদেশ যখন, নিজেদের সম্মিলিত চেষ্টায় একটা স্বস্তির জায়গায় পৌঁছাতে চাচ্ছে, ঠিক তখন স্বৈরাচারী সরকারের সুবিধাভোগী এবং সুযোগ সন্ধানী কিছু মহল আমাদের সবাইকে অস্বস্তি এবং ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেয়ার জন্যে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। হোক না, অনেক দূরের এথেন্সের ইতিহাস, যে কোন ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে তো ক্ষতি নাই।
(২১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম মিলনায়তনে ‘শিক্ষাব্যবস্থা ও রাষ্ট্র সংস্কারে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। অনুষ্ঠানে পেরিক্লেস এর রাজনৈতিক দর্শনের উপর বক্তব্য দিয়েছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অর্থনীতিবিদ প্রফেসর ফ্লোরা সরকার। তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা)
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: সত্যি বলতে, শেখ হাসিনা গণতন্ত্রের নামে যতকিছু করেছে- তা সবই ষড়যন্ত্র, বিধ্বংসী রাষ্ট্রদ্রোহিতা।
২| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৮
জটিল ভাই বলেছেন:
লেখাটি পড়ে অনেককিছু জানলাম। তা প্রিয় ভাই, আপনার লিখার শিরোনামগুলো বাংলাতেই বেশি আকর্ষণীয় হয়ে থাকে ♥♥♥♥
২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৪২
জুল ভার্ন বলেছেন: তাই হবে
©somewhere in net ltd.
১| ২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:০৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: বুর্জুয়া গণতন্ত্র ওনার মেয়েও প্রতিষ্ঠা করেছিল কিন্তু ভাগ্যের সিঁকে ভর সইলোনা।