নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এপিটাফ \n\nএক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস...খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে...কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়।আমার অদক্ষ কলমে...যদি পারো ভালোবেসো তাকে...ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে,যে অকারণে লিখেছিল মানবশ্রাবণের ধারা....অঝোর

জুল ভার্ন

এপিটাফ এক নিঃশব্দ প্রচ্ছদে ঢাকা আছে আমার জীবনের উপন্যাস... খুঁজে নিও আমার অবর্তমানে... কোনো এক বর্তমানের মায়াবী রূপকথায়। আমার অদক্ষ কলমে... যদি পারো ভালোবেসো তাকে... ভালোবেসো সেই অদক্ষ প্রচেষ্টা কে, যে অকারণে লিখেছিল মানব শ্রাবণের ধারা.... অঝোর শ্রাবণে।।

জুল ভার্ন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওপেনহাইমার এবং সাইলাস টিমবারম্যান...

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:০৫

'ওপেনহাইমার' এবং 'সাইলাস টিমবারম্যান'....

ক্রিস্টোফার নোলানের একটি সিনেমার নাম- ‘ওপেনহাইমার' এবং হাওয়ার্ড ফাস্টের একটি বইয়ের নাম- 'সাইলাস টিমবারম্যান।'

১৯৫৪ সালে হাওয়ার্ড ফাস্টের 'সাইলাস টিমবারম্যান' বইটি প্রকাশিত হয়। বইয়ের কাহিনীতে সাইলাস আমেরিকান নাগরিক, সাতেপাঁচে না থাকা নিপাট ভালো মানুষ, ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের অধ্যাপক। স্ত্রী-পুত্র-কন্যাদের নিয়ে নির্বিবাদ মানুষটির অনাড়ম্বর জীবন ওলট-পালট হয়ে যায় একটি প্রশ্নে- ইন্টিগ্রিটি, সংহতি। পরমাণু বোমাকে নিষিদ্ধ করার জন্য একটি শান্তি আবেদনে সাইলাস সই করেছিলেন। সেটিই তাঁর শান্তিময় জীবনের কাল হয়। যে আমেরিকান গণতন্ত্র, জাতীয়তাকে তিনি শ্রদ্ধার চোখে দেখতেন তা আমূল পালটে যায়। তিনি ‘কম্যুনিস্ট’ এই অভিযোগে বিচার বসে। হতবুদ্ধি হয়ে তিনি দেখেন আধুনিক সময়ে উদারমনস্ক মানুষ হওয়া, যুদ্ধকে ঘৃণার চোখে দেখাও কেমন অপরাধের সামিল হয়, এমনকি শ্রেণীকক্ষে মার্ক টোয়েন পড়াতে গেলেও কম্যুনিস্ট-সহমর্মী এই অভিযোগ শুনতে হয়! ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ দেখার সময় বইটির কথা মনে পড়েছিল।

নোলানের ১২ তম চলচ্চিত্র ওপেনহাইমার ২০২৩ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত। জে. রবার্ট ওপেনহেইমার পারমাণবিক বোমার জনক। পরমাণুবিজ্ঞানে যাঁর কাজ কিংবদন্তীতুল্য। পরমাণু বোমার বিকাশে তার ভূমিকার উপর ভিত্তি করে একটি বায়োপিক। রবার্ট ওপেনহাইমারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন কিলিয়ান মার্ফি। ৯৬তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা অভিনেতা, সেরা সহ-অভিনেতাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্রটি।

কথিত আছে আইনস্টাইনের কখনও ভুল হয় না। কিন্তু একটি জায়গায় তাঁর হিসেবও মেলেনি। তিনি মনে করেছিলেন পরমাণুর ভেতরের ঘুমন্ত শক্তিকে মানুষের কাজে লাগানো হয়তো কোনদিনই সম্ভব হবে না। অন্তত তাঁর জীবদ্দশায় নয়। বোতলের দৈত্যকে মুক্ত করতে পারবে না মানুষ। পরমাণুর দৈত্যকে মুক্ত করার রাস্তা তো দীর্ঘ। ১৯১৯ থেকে ১৯৩৮। রাদারফোর্ড, চ্যাডউইক, জোলিও-কুরি, ফের্মি, অটো হান, ছাড়াও প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ কতো জনের অবদান পরমাণুর হৃদয় বিদীর্ণ করার কাজে। রাতের আকাশের তারাদের দিকে তাকিয়ে ওপেনহাইমার এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেন, একটি তারার ধ্বংসের পর এত এত শক্তির বিচ্ছুরণে কী ঘটে? মৌল জগত, তার অন্তর্জগত যার সাদৃশ্য সৌরমন্ডলের সঙ্গে, যার ক্ষয়, যার ধ্বংস কী দিয়ে যায় মহাবিশ্ব এবং এই পৃথিবীকে? সেই প্রাকৃতিক ক্ষয়কে যদি কৃত্রিম ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায় কী বিপুল বিস্ফোরণ সংঘটিত হয়! যা তত্ত্বে আছে তার বাস্তব প্রয়োগও থাকে, কেবল সঠিক পথ, যথার্থ হিসেবটা জানা চাই। তা হলে হয়তো হিটলারকে আটকানো যাবে, যাবে জাপানকে অথবা পৃথিবী থেকে চিরতরে যুদ্ধ বিদায় নেবে। আশঙ্কা কেবল অনিঃশেষ এক চেন রিয়্যাকশনের যা থেকে ধ্বংস হতে পারে সমগ্র বিশ্ব! তবু নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাকেও। পরমাণু বোমার সফল পরীক্ষা হয়।

কিন্তু যা রবার্ট জে ওপেনহাইমারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল তা হল বিজ্ঞানের ওপর রাষ্ট্র-ক্ষমতার দখলদারি। হিরোশিমা-নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা ফেলার পর প্রেসিডেন্ট ট্রুম্যানকে তিনি বলছেন, এই হাতে রক্ত লেগে আছে! স্মিত হেসে ট্রুম্যান রুমাল এগিয়ে দেন, বলেন- মুছে ফ্যালো! বলেন, বোমা কে আবিষ্কার করেছে তা নিয়ে লোকের মাথাব্যথা নেই, তারা তাকেই মনে রাখে বোমাটি যে ফেলেছে! বিজ্ঞান আর রাজনীতির দড়ি টানাটানির খেলায় উদ্ভূত প্রবল সভ্যতার সংকট যা থেকে পরিত্রাণের রাস্তা নেই। ওপেনহাইমার পরমাণু বোমা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে চলে গেলেন, শান্তির পক্ষে।

দুনিয়া থেকে প্রায় হারিয়ে যাওয়া তাঁর কম্যুনিস্ট যোগ খুঁড়ে বের করে আনা হয় এবার! ম্যানহাটন প্রোজেক্টের গোপন নথি সোভিয়েতে পাচার হওয়া এবং কম্যুনিস্ট চরবৃত্তির গুরুতর অভিযোগে ওপেনহাইমারের বিচার বসে সেই সময় যখন পরমাণু বোমার ‘সফল’ প্রয়োগের পর তিনি জাতীয় নায়ক। কারণ হিসেবে আসে তাঁর বহু পূর্বের 'কম্যুনিস্ট' যোগ, তাঁর প্রথম স্ত্রী কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্য ছিলেন, দ্বিতীয় জনও ছিলেন কার্ড হোল্ডার। ওপেনহাইমার নিজেও কম্যুনিজমের তাত্ত্বিক সমর্থক ছিলেন এককালে।
তিনি বোঝেন যুদ্ধ থামানো যাবে না। আইনস্টাইনের সঙ্গে শেষ একটুকরো দৃশ্যে হাহাকারের মতো শোনায়, যে অনিয়ন্ত্রিত চেন রিয়্যাকশনের আশঙ্কা তাঁদের ছিল, বিশ্বজুড়ে এখন তাই শুরু হয়েছে, বোতলের দৈত্যকে আর বোতলে পোরা যাবে না!

ইতিপূর্বে আমি নোলানের পাঁচটি চলচ্চিত্র দেখেছি। নোলানের যে কোনো ছবি দেখাই একটা অভিজ্ঞতা। আগাগোড়া একটি দীর্ঘ তারে বাঁধা থাকে চিত্রনাট্য। মাঝে মাঝে সেই তারে টোকা দিলে কম্পন ওঠে। কম্পন কমতে কমতে ধীর লয়ে আসার মুহূর্তে আবার একটি আঘাত। বুঝি নিউট্রনের আঘাতে ইউরেনিয়ামের হৃদয় চূর্ণ হওয়া! এভাবে সেই কম্পন তীব্র লয়ে গিয়ে পৌঁছায়। পর্দা ফেটে পড়ে, পর্দা ঝলসে যায় মহাজাগতিক আগুনে। বিজ্ঞানের তত্ত্ব যেমন কো-অর্ডিনেশন মেনে চলে, নোলানের ছবির স্ক্রিপ্টও তাই। এটাই তাঁর সিগনেচার, ব্যাটম্যান সিরিজ, ইন্টারস্টেলার, ইনসেপসন থেকে ওপেনহাইমার। বিজ্ঞান, রাজনীতি, রাষ্ট্র, প্রেম, সম্পর্কের যন্ত্রণা এবং সুবিশাল এক ক্যানভাস! ছায়াছবির মহাজগত ফুটে ওঠে পর্দায়। বিরাটের স্পর্শে বাকি সব তুচ্ছ মনে হয়....

HBO’S Movies Channel ওপেনহাইমার সিনেমাটি দেখে মুগ্ধতা শেয়ার করার সুযোগ হাতছাড়া করলাম না।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ, শেয়ার করার জন্য।

সামুর গতাণূগতিক ব্লগের বাইরে আপনার এই লেখা যেন দুঃসহ গরমে শীতল হাওয়া :)
আবারও ধন্যবাদ।

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৩৯

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।
আমি সবসময়ই সিস্টেমের বাইরে, ট্রেন্ড বর্জিত মানুষ।

২| ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২০

জনারণ্যে একজন বলেছেন: @ জুলভার্ন, মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারলাম না (লিট্ল এক্সসাইটেড)।

ভালো লাগলো, কিন্তু শুধুমাত্র মুভিটা দেখেছেন, এজন্য নয়। কারণ হয়তো কখনোই বলা যাবে না।

অনেক ভালো থাকবেন, শুভকামনা থাকলো।

২৫ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

জুল ভার্ন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.