নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।
৩য় পর্ব
সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরী হয়েছে। শরীরটা ভালো নয়। কেমন ম্যাজ ম্যাজ করছে। চারিদিকে ব্যান্ড পার্টির শব্দ। বিয়ে বাড়ির কোলাহলে বেশ রমরমা আমেজ। সকালে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে অবিনাশ অবাক হয়ে যায় সকাল সাড়ে দশটা বাজে। রফিক ডাকে নাই কেনো? অবিনাশ বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। বাথরুমে গিয়ে গোসল করে এসে ঘরে দেখে রফিক বসে আছে।
গোসল করে এলি? ভালোই করেছিস? বললো রফিক। অবিনাশ লুঙ্গি আর গামছা বেলকনিতে নেড়ে দিয়ে এসে রফিকের পাশে বসে।
“তোকে একটা কথা বলা হলো না। আমার বোন হেনা একটি পরিকল্পনা করেছে।”
“কি পরিকল্পনা করেছে’? প্রশ্ন করলো অবিনাশ।
আজ বিয়ে বাড়িতে হেনা চারিদিকে ঘুরবে, বর দেখবে, জবার পাশে বসবে বিভিন্ন কর্মকান্ডের সাথে যুক্ত থাকবে। ও চাইছে তোর ওয়াইফ পরিচয় দিয়ে আজ ঘরের বাইরে আসবে। যদিও বোরখা পরে থাকবে কেউ বুঝতে পারবে না।
অবিনাশ বললো “এটাতো আমি আগে থেকেই জানি তবে সমস্যা হলো বন্ধু অভিনয় তো ঠিক মতো পারি না। শেখাও হয় নাই। আবার কোন জটিলতায় পড়বো না তো? “
‘বাবা যদি তোকে জিজ্ঞাসা করে তুই তোর ওয়াইফ বলে সম্বোধন করিস। দেখিস ঘুর্নাক্ষরেও বাবা যেনো টের না পায়। তুই বোস আমি হেনাকে নিয়ে আসি।’
রফিক বাইরে বেরিয়ে যায়। অবিনাশ ভাবছে কি অদ্ভুদ একটি ব্যাপার! মেয়েটি একটি ছেলেকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। কিন্তু বাবা এটা মেনে নেয় নি। এই যে বাবা সন্তানের মধ্যে ফাটল! আসলে সমাজের অধঃপতন বা নারী পূরুষের অবাধ মেলামেশা আজ প্রেম ভালবাসা নামক এই জটিল এই সাইকোলজিক্যাল প্রবলেম ক্রিয়েট করছে। হঠাৎ অবিনাশের মনে হলো ভালবাসাতো হতেই পারে! ভালবাসাকে কি রুদ্ধ দেওয়ালের মধ্যে বন্দি করে রাখা উচিত? সমাজের এই সমস্যা গুলো আরো গভীরে ভাবা উচিত। ভালবাসা অদ্ভুদ! মানুষের মস্তিস্কের রাসায়নিক হরমোন ক্ষরণ ভালবাসার ফিলিংস মানুষের মাঝে সৃষ্টি করে। আর সেই ফিলিংসই ভালবাসার বোধ। আনন্দময় এক অভিজ্ঞতা। ভালবাসা মানুষকে যে পাগল প্রায় উন্মাদ বানায়ে দিতে পারি সেটা বোঝা গেলো হেনার ঘটনায়। স্রষ্টা মানুষকে কি অপূর্ব যান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি করেছেন। নারী-পুরুষের মস্তিস্কের রাসায়নিক উপাদানের বিক্রিয়ার ফলে প্রেম-ভালোবাসা এবং মানবিক তীব্র আবেগ অনুভূতিগুলো নিয়ন্ত্রিত হয়। সাম্প্রতিক গবেষণায় নতুন কিছু তথ্য পাওয়া গিয়েছে। একটি রাসায়নিক উপাদানের কথা নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে তা হলো ফিনাইলথ্যালামিন বা পি পদার্থ। ফিনাইলথ্যালামিন বা পি পদার্থের কারণে জেগে উঠে ভালবাসার তীব্র আকুলতা। এ ভালোবাসার হরমোন নিয়ে বিজ্ঞানীদের আগ্রহের শেষ নেই। আমাদের ভালোবাসা, ভালো লাগা, সমবেদনা, বিশ্বাস কিংবা সম্পর্কের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রতিটি চিন্তায় বা ব্যবহারে এই হরমোন আমাদের মস্তিষ্কে নিঃসরিত হতে থাকে। দেহ মন পুলকিত হয় ভালবাসার বন্যা ছেয়ে যায়। Oxytocine, Dopamine এবং Serotonin এর বিভিন্ন সংমিশ্রণ আমাদের ভালোবাসার প্রকাশে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা পায়। সারাদিন সারারাত জেগে ভালবাসার মানুষটির কথা ভাবতে ইচ্ছে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির একই মুখ, একই চোখ, একই স্পর্শে এই পদার্থের নিঃসরণ এর মাত্রা দীর্ঘদিন একই রকম থাকে না। সময়ের সাথে সাথে এটি নিঃসরণের মাত্রা এবং প্রতিক্রিয়া তীব্রতা হ্রাস পায়। ভালোবাসার জোয়ারে তখন চলে আসে ভাটির টান। এই পদার্থের নিম্নগতি শুরু হলেই বিচ্ছেদের সম্ভাবনা দেখা যায় কিংবা ভালবাসা কমে যায়।
এসব ভাবতে ভাবতে অবিনাশ জানালার সামনে গিয়ে দাড়ায়। দেখতে পায় পাশের বাড়ির জানালায় একটি মেয়ে দাড়িয়ে আর রাস্তার ধারে একটি ছেলে মেয়েটিকে ইশারায় কি যেনো বলছে। মেয়েটি সম্ভবত ছেলেটির কথা বুঝতে পেরে হাত দিয়ে ইশারা করে কি বললো ছেলেটি বুঝলো। ছেলেটি হাত নেড়ে বাই দিতে দিতে সাইকেল চালিয়ে চলে গেলো। ছেলেটি যতক্ষন যেতে থাকলো মেয়েটি ততক্ষন জানালার দাড়িয়ে ছেলেটির পানে হাত নাড়াতে লাগলো। এরা বোধহয় স্কুলে একসাথে পড়ে। অথবা কোচিংএ স্যারের কাছে একসাথে পড়ে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে নারী পুরুষের অবাধ মেলামেশার কারনে তাদের ভিতরে ভালবাসাবোধের সৃষ্টি হয়। যেমন স্কুল সমূহে ছেলে মেয়েরা একসাথে লেখাপড়া করে আর এ থেকেই ছেলে মেয়েদের একসাথে মেলামেশার সুযোগ হয়। যদি নারী পূরুষের একসাথে মেলামেশা করার সুযোগ না থাকতো তাহলে প্রেম নামের এই রাসায়নিক বিক্রিয়া সমাজ কাপাতে পারতো না।
অবিনাশ এসব ভাবতে ভাবতে জানালা ধরে দাড়িয়ে থাকে। রফিক ঘরে এসে প্রবেশ করে। সাথে হেনা’ বোরখা পড়ে আছে। অবিনাশ জানালার ধারে দাড়িয়ে প্রকৃতি দেখছে। রফিক বলে এদিকে আয় অবিনাশ। জানালার ধারে দাড়িয়ে কবি কবি ভাব! ভাই কবি বনে গেছিস দেখছি। এদিকে আয় হেনা এসেছে।
‘স্লামালিকুম ভাইয়া। বললো হেনা।’ অবিনাশ মাথা ঘুরিয়ে
অবিনাশ বললো ‘ ভাইয়া! এই শব্দটা বাইরে বলা যাবে না।’
রফিক হেসে ওঠে। হেনা বলে ‘না ভাইয়া এমনটি হবে না’।
অবিনাশ বলে ‘আমার নাম অবিনাশ। আমি থাকি ঢাকায় 25/2 কলাবাগান। এই ঠিকানাটা আপনারও বাড়ি এটি আপনাকেও মনে রাখতে হবে। এখন থেকেই আমার নাম ধরে ডাকার চর্চা করুন। আর কথা বেশি বলা যাবে না কারন এই বাড়ির অনেকেই আপনার কন্ঠের সাথে পরিচিত। এটি আপনি মনে রাখবেন।”
‘হ্যা আমিও তাই ভাবছি ভাইয়া একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কথা বলবো না’।
চারিদিকে বিয়ে বাড়ির আনন্দ কোলাহল। লোকে লোকরন্য চারিদিকে। বর এসেছে। বরযাত্রীরা এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করছে। খাবারের স্থান নির্ধারন করা হয়েছে। গ্রামীন পরিবেশ ডেকোরেটর খাবারের প্যান্ডলটি সুন্দর করে সাজিয়েছে। বেশ বড় পরিসরেই প্যান্ডেলটি সাজানো। থরে থরে টেবিল সাজানো। চারিদিকে চেয়ার দিয়ে ঘেরা। খাবারের প্যান্ডেলে বরযাত্রীদের ভীড়। সকলে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। ইভেন্টের লোকজন খাওয়া দাওয়া পরিবেশন করছে। চারিদিকে বিয়ে বিয়ে উৎসব বেশ ভালোই লাগছে অবিনাশের। ঘুরে ঘুরে সব দেখছে। খাবারের প্যান্ডেলটির পাশেই বরের স্টেজ। বর বসে আছে পাশে বেশ ক’জন হাসি আনন্দে আছে। বর ও যথেষ্ট হাসিখুশি মেজাজে আছে। এদিক ওদিক বিভিন্ন দিকে ঘুরে এবার বউ এর স্টেজ এর কাছে আসে। বউ হিসেবে জবাকে বেশ ভালোই লাগছে। জবাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে। জবার জবার পাশে আরো বেশ ক’টি মেয়ে বসে আছে। তারা সবাই হাসি খুশিতে মেতে আছে। সেখানে হেনা বোরখা পড়ে জবার পাশে বসে আছে। দুর থেকে অবিনাশ হেনার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে হেনার মাঝে যেনো চির জনমের আনন্দ। ছোট বোনের বিয়েতে অংশগ্রহণ করতে পেরে সে যেনো নিজেকে উৎফুল্ল ভাবছে।
হঠাৎ অবিনাশ দেখে হন্তদন্ত হয়ে কোথা থেকে ছুটতে ছুটতে রফিকের মা জবার কাছে গিয়ে জবাকে জড়িয়ে ধরে কাদছে। বিয়ে এখনও বের হয় নাই জবা এখনও বিয়ে বাড়িতে বসে আছে তাহলে জবার মা আগে থেকেই কাদছে কেনো? অবিনাশ বেশ কিছুটা এগিয়ে গেলো। মেয়েদের স্টেজের কাছে। অবিনাশ বুঝতে পারলো জবার মা বারেবার হেনার দিকে তাকাচ্ছে আর জবাকে ধরে কাদছে। হেনারও দুচোখে পানি গড়িয়ে পড়ছে বোরখা পরে থাকার কারনে তেমনটি বোঝা না গেলোও ছলছলে চোখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে হেনাও নিঃশব্দে কাদছে।
তাহলে কি আন্টির এই কান্নার আসল উদ্দেশ্য জবা নয়। কারন কি হেনা? আন্টি কি বুঝতে পেরেছে পাশে তার মেয়ে হেনা বসে আছে।
অবিনাশ আরো জোর সোরে হেটে হেটে বউএর স্টেজের কাছে চলে যায়। যদি না কোন সিনক্রেট ঘটে। যদি হেনার উপস্থিতি টের পেয়ে কোন সিনক্রেট ঘটিয়ে ফেলে। অবিনাশের উপস্থিতি টের পেয়ে জবার মা কিছুটা ইতস্ততঃ বোধ করে চোখ মুছতে থাকে। কিছুক্ষন পর একবার হেনার দিকে তাকিয়ে আবার অবিনাশের দিকে তাকিয়ে বলে ‘বাবা তুমি একটু এদিকে এসো তো তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে। ‘ কথাটি বলার সাথে সাথে জবা চমকে ওঠে। হেনা চমকে ওঠে। অবিনাশ কিছুটা স্বাভাবিক ভাবেই বলে ‘জ্বি আন্টি চলেন’। অবিনাশ জবার দিকে তাকায় ইশারায় অবিনাশ কে জবা কিছু একটা বোঝায়।
অবিনাশ আর জবার মা কিছুদুর চলে যেতেই। হেনা জবার সাথে কিছু কথা বলে একটু সাইডে গিয়ে দাড়িয়ে কেমন যেনো আনমনা হয়ে পড়ে। ভয়, জড়তা কৌতুহল নিয়ে হেনা অবিনাশ আর জবার মা’র কর্মকান্ড পর্যবেক্ষন করতে থাকে।
অবিনাশকে লক্ষ্য করে মা বলে ‘বাবা তুমি আমার কাছে কোন মিথ্যার আশ্রয় নিও না। তুমি আমার মেয়েকে আজ ওর ছোটবোনের বিয়েতে নিয়ে এনেছো’ আমি সত্যিই তোমার কাছে কৃতজ্ঞ। ওর দিকে নজর রেখো ওর বাবা কিন্তু ওকে বুঝতে পারবে! জবার পাশে না থেকে একটু দুরে থাকলে তো পারে’। কথাটি বলেই জবার মা দুরে চলে গেলো। অবিনাশ নির্বাক হয়ে গেলো। সঙ্গে সঙ্গে কোথা থেকে রফিক এসে হাজির। অবিনাশকে প্রশন করলো- ‘কি বললো রে মা?’। অবিনাশ অনেকটা বিব্রতভাবেই বললো ‘হেনাকে খেয়াল রাখতে বললো। ওর বাবা যেনো বুঝতে না পারে। জবার পাশে না থাকতে অনুরোধ করলো।’তার মানে মা টের পেয়ে গেছে এমনও হতে পারে বাবাও বুঝতে পারবে।’ তুই এক কাজ কর হেনাকে নিয়ে দুরে দুরে থাক জবার পাশে বসবার দরকার নেই ওর। ওকে নিয়ে একটু দুরে থাক।’
রফিক এগিয়ে গেলো বিয়ে বাড়িতে কনের পাশে গেলো হেনা ইশারা করলো এবং হেনাকে কানে কানে কিছু একটা বললো। হেনা শুনে সম্মতভাবে মাথা নাড়িয়ে চললো। অবিনাশ কোন কথা না বলে বিয়ে বাড়ির একটি চেয়ারে বসে পড়লো। রফিক হেনার সাথে আর কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো। হেনা হাটতে হাটতে এসে অবিনাশের পাশে এসে বসলো। অবিনাশ প্রথম প্রথম কিছুটা বিব্রত বোধ করলোও পরে বুঝতে পারলো হাজবেন্ড ওয়াইফের এ্যাকটিং-এ লজ্জা পেলে তো হবে না। হেনা অবিনাশকে প্রশ্ন করলো মা কি বললো? অবিনাশ বলছে ‘তোমার মা তোমাকে চিনে ফেলেছে। আমাকে বললো ওকে জবার কাছে না থেকে দুরে দুরে থাকতে নইলে তোমার বাবা তোমাকে চিনতে পারবে। এটা বলেই তিনি চলে গেলেন।”
বিয়ে বাড়ি উৎসব চারিদিকে চলছে। হেনার চোখে মুখে এক অনাবিল আনন্দ ফুটে উঠেছে। ছোট বোনের বিয়ে উৎসব। হিমায়িত মেঘ যেনো আকাশ থেকে এসে হেনার চোখে মুখে হিম শিতলতার আনন্দ ছড়িয়ে দিচ্চে। হেনা যেনো মেঘরাজ্যের অতিথি। মেঘরাজ্যের সাদা পরী, লাল পরী, নীল পরীর আনাগোনায় হেনার চোখে মুখে যেনো স্বর্গীয় সুধা লেগে আছে। হেনা এই অফুরন্ত আনন্দ উপভোগ থেকে বঞ্চিত করতে অবিনাশের মন সায় দিলো না। হেনা জবাকে দেখেছে আর বিয়ে বাড়ির আনন্দ ছোটবোনের বিয়ের আনন্দ দেখে খুব তৃপ্তি পাচ্ছে। অবিনাশ হেনার দিকে তাকিয়ে বলে “তুমি এখানে বস। আমি বাইরে থেকে ঘুরে আসি। তবে জবার আশেপাশে বেশি যাবার দরকার নেই।”হেনা অবিনাশের কথা শুনে মাথা ঝাকালো।
অবিনাশ হাটতে হাটতে বেরিয়ে যাচ্ছে। যেতে যেতে দেখে। বরযাত্রীদের খাবারের আয়োজন চলছে। বরযাত্রীরা প্যান্ডেলে বসে খাওয়া দাওয়া করছে। পাশে বরের ছোট প্যান্ডেল। অবিনাশের কি মনে হলো অবিনাশ বরের প্যান্ডেলের দিকে যেতে থাকে। প্যান্ডেলে একটি ছেলে বরের বেশে বসে আছে। অবিনাশের ছেলেটিকে দেখে ভালো লাগলো। জবার সাথে বেশ মানাবে। ছেলেটি ও জবার হাইট একই। দুজনের গায়ের রং ও একই। খুব মানাবে সত্যিই মানাবে । অবিনাশ বরকে দেখে হাটতে হাটতে বেরিয়ে গেলো। জবার বাবার পছন্দের ছেলেটির সাথে জবার বিয়ে। জবা একবাক্যে নাকি বিয়েটা মেনে নিয়েছে। হেনার লাইফের স্যাড নিউজ বাবাকে মর্মাহত করেছে তাই বাবা যেনো আর কোন ভাবেই ভেঙ্গে না পড়ে তাই একবোক্যে মেনে নিয়েছে।
অবিনাশ রাস্তার ধারে এসে একটি চায়ের দোকানে বসলো। দোকানে তেমন কোন লোকজন নেই। দোকানদার বসে আছে। অবিনাশ অনেক দিন সিগারেট টানে নাই। কেনো যেনো আজ সিগারেট টানতে মন চাচ্ছে। অবিনাশ দোকানদারকে উদ্দেশ্যে করে বললো “চাচা এক কাপ চা আর একটি ব্যানসন সিগারেটের দিন“। কিছুক্ষন পর দোকানদার চা বানিয়ে অবিনাশকে দেয়। অবিনাশ চা খাইতে থাকে। আর আশেপাশের পরিবেশ দেখতে থাকে। রাস্তার ধারে ক্যানাল জুড়ে পঁচা পানিতে পাট ভিজিয়ে রাখা হয়েছে। পাশের একটি পচা ডোবাতে ক’জনে মিলে পাটের আশ ছড়াচ্ছে। পাট পানিতে পচন ধরিয়ে আশ ছড়িয়ে নেয় কৃষকেরা। সবুজের ব্যাপক সমারোহে জমিনে আলতো বাতাসে ধান উড়ে উড়ে সুন্দর একটি ঢেউ সৃষ্টি করছে। ঢেউ দেখতে অবিনাশের ভালোই লাগছে! গ্রামীণ পরিবেশের এই অপূর্ব মোহমায়া অবিনাশকে মোহগ্রস্থ করে।
হঠাৎ শব্দে অবিনাশ পাশ ফিরে তাকায়। শ্যালো মেশিন চালু হবার শব্দ। পানি উঠছে! অবিনাশ মাঝে মাঝেই ভাবে মানুষের কি জ্ঞান মাটির গভীর থেকে পানি উঠিয়ে সেচ কার্য করছে। দুরে জমিতে ট্রাক্টর মাটি চষে বেড়ায়! কি অদ্ভুদ এক বিশাল গাড়ী! যার নির্মানশৈলী মানুষের মস্তিস্কপ্রসুত। মানুষের বুদ্ধি জ্ঞানের এইযে বিশালতা অবিনাশকে মাঝে মাঝেই থমকে দেয়! এই পৃথিবীর সকল প্রাণির মতো মানুষও একটি প্রানি। এরা কেউ এত গভীরে চিন্তা করতে সক্ষম হলো না। কিন্তু মানুষ হলো। এটা কিভাবে সম্ভব হলো? আধুনিক বিজ্ঞানের চুড়ান্ত কিছু বক্তব্যও মানুষকে পশু থেকে সৃষ্টির ধারাবাহিক প্রক্রিয়া বলেই স্বিকৃত দেয়। বিশেষ করে বিবর্তনবাদ। বিবর্তনবাদ বলে এককোষি প্রানী এ্যামিবা থেকে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় মানুষ সৃষ্টি। যদি বিষয়টা মেনেও নেওয়া যায় কিন্তু সমস্যাটা অন্য খানে। সমস্যাটা হলো মানুষের জ্ঞানের যে ব্যাপকতা সেটা কিভাবে সম্ভব হলো? এই যে বিশাল পরিসরে জ্ঞান অর্জন তা মানুষ কিভাবে সম্ভব? বিবর্তনের ধারায় যে লাখ লাখ প্রাণির উদ্ভব হয়েছে তাদের কারোর মাঝে জ্ঞানের উন্নয়ন ঘটলো না। অথচ মানুষের জ্ঞানের এই বিশালতা কি করে সম্ভব হলো? এই সব ভাবতে ভাবতে অবিনাশ চা পান করতে লাগলো। কিছুক্ষন পর কারো কন্ঠে অবিনাশের হুস এলো। “ভাই একটু সরে বসুন”। অবিনাশ মুখ ঘুরিয়ে দেখলো একজন মুরুব্বি গোছের লোক পাশে এসে বসলো। অবিনাশ সরে বসলো। মুখে সিগারেট ধরালো। সিগারেটে টান দিতে দিতে অবিনাশ আবার ভাবনার রাজত্বে পৌছে গেলো।
একনিষ্ঠ ভাবে বিশ্বাস করতে হবে যদি মানুষ বিবর্তেনের মধ্য দিয়েই সৃষ্টি হয়ে থাকে তাহলেও মানুষ সৃষ্টির পর মানুষের জীবনে এমন কিছু ঘটেছিলো যা তাকে পশু শ্রেণী থেকে এত উন্নত মার্গীয় চিন্তার অধিকারী করে তুলেছিলো। ধর্মীয় ভাষায় যাকে বলে গণ্ধম ফল এমন জাতীয় কোন কিছু একটা ঘটনা। অথবা এমন কোন মিউটেশন মানব জাতির জীবনে ঘটেছিলো যা মানবজাতির চিন্তা চেতনার ক্ষেত্রে আমুল পরিবর্তন ঘটিয়েছেলো। ফলে জ্ঞান বৃক্ষ জন্মেছিলো মানব মস্তিস্কে আর এই কারনেই অভিজ্ঞতা থেকে মানুষের জ্ঞান আহরণ এবং তা ধারন করার মতো সক্ষমতা মানুষের জীবনে সম্ভব হলো। অবিনাশ ক্রমশই ভাবনার আরো গভীরে চলে গেলো। সত্যিই অবাক করে মানুষের পূর্বের নিয়ানডার্থাল বা হোমো ইরেকটাস শ্রেনির মানুষদের কোন অস্তিত্ব এই পৃথিবীতে নেই। আমরা তাদের কোন জেনিটিক বহন করি না। কিন্তু নেই কেনো? আমরা যারা পৃথিবীতে জীবিত অথাৎ আধুনিক মানুষ সকলেই হোমো সেপিয়েন্স থেকে এসেছি। নিয়ানডার্থাল বা হোমো ইরেকটাস এর কোন প্রজাতি পৃথিবীতে টিকে নেই। সত্যিই আশ্চর্য বিষয়। তবে কি প্রকৃতি অন্যান্য প্রজাতি বিলুপ্ত করে দিতে চেয়েছিলো? বিলুপ্ত করে দিয়ে এই একটি প্রজাতি থেকেই মানুষ জাতির আবির্ভাব ঘটনার পরিকল্পনা থেকেই হয়তো এমনটি! অপরিহার্যভাবেই যে প্রশ্নটা মনে আসে সেটা হলো ইতিহাস ঘেটে যখন দেখা যাচ্ছে সেপিয়েন্সদের শুরুতে যেখানে ১৫০ জনের একতাবদ্ধতার সীমা অতিক্রম করতে সক্ষম হতো না! সেখানে আকস্মিকভাবে কি এমন যাদু শিখে ফেললো তাতে হাজার হাজার সদস্যের সমন্বয়ে গড়ে তুলল নগর বা গড়ে তুলল সাম্রাজ্য? বিপুল পরিমাণ হোমোসেপিয়েন্স গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে বসবাস করার ক্ষমতা অর্জন করে ফেললো কি করে? এই বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব কোথা থেকে পেলো? কে দিলো এই বুদ্ধিভিত্তিক বিপ্লব? তাছাড়া হোমোসেপিয়েন্স এর মাঝে আকস্মিক এই প্রজনন বৃদ্ধি ঘটতে থাকলো কি করে? এই সকল রহস্যময় বিষয়গুলোর কোন মিমাংশ নেই। আজ থেকে তিরিশ হাজার বছর আগে হোমো ইরেকটাস ও হোমো নিয়ানডারথেলনিস বিলুপ্ত হয়ে গেল। যাদের মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ আয়তন ছিল ১৩০০ থেকে ১৪০০ সিসি পর্যন্ত। টিঁকে গেল ২০০০ সিসির মস্তিষ্কের আয়তন সমৃদ্ধ হোমো সেপিয়েন্স। শুধু মাত্র মস্তিস্কের আয়তন বৃদ্ধির কারনে সেপিয়েন্স টিকে গেলো মস্তিস্কের আয়তন কম থাকার কারনে বিলুপ্ত হয়ে গেলো হোমো ইরেকটাস ও হোমো নিয়ানডারথেল? মস্তিস্কের আয়তন কি বিলুপ্প্তির কারন? মোটেও না। প্রকৃতি যেনো চেয়েছিলো অন্য সকল প্রজাতির মুলোচ্ছেদ! অথবা প্রকৃতিতে কি জেগে উঠেছিল এমন কোন ভাইরাস যা সেপিয়েন্স ব্যাতিত অন্য ডিএনএ নিধনকারী বা ধ্বংশকারী। নির্ধারিত ডিএনএ নিধনকারী ভাইরাসই কি তবে হোমো সেপিয়েন্স ব্যাতিরেকে অন্যান্য সকল প্রজাতির বিলুপ্তির জন্যই দায়ী? আল্লাই জানে।
ইতিহাস থেকে জানা যায় আনুমানিক ৭০ হাজার বছর আগে থেকে সেপিয়েন্সরা তাক লাগানোর মতো কিছু কাজকর্ম শুরু করে দিলো। এই সময়কালে সেপিয়েন্সরা দ্বিতীয় বারের মতো আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে পড়ে। এইবার তারা যুদ্ধাংদেহী মনোভাব নিয়ে বেরুলো। তাদের শক্তির কাছে নিয়ান্ডার্থাল এবং মানুষের অন্যান্য প্রজাতিকে মধ্য এশিয়া থেকে তো বটেই, এমনকি দুনিয়ার বুক থেকেই পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করে দেয়। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই তারা ইউরোপ এবং মধ্য এশিয়ায় পৌছে যায়। প্রায় ৪৫ হাজার বছর আগে তারা সাগর পাড়ি দিতে শেখে এবং অস্ট্রেলিয়ায় পৌছে যায়। ছড়িয়ে পড়ে সবর্ত্র। এর আগে এই মহাদেশে কোনো মানুষেরই পা পড়েনি। ৭০ হাজার বছর আগে থেকে ৩০ হাজার বছর আগের এই সময়টাতে সেপিয়েন্স নৌকা, তেলের প্রদীপ, তীর-ধনুক এমনকি সুঁই-সুতা আবিস্কার করে ফেলে। শীতের দেশে গরম কাপড় বোনার জন্য এই সুঁই-সুতা খুবই জরুরি ছিল। বেশিরভাগ গবেষকই মনে করেন যে, এতসব গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার পেছনে নিশ্চয়ই সেপিয়েন্সদের বুদ্ধিবৃত্তিক দক্ষতার কোনো পরিবর্তন দায়ী। যদিও পূর্বে শীতের প্রকট থেকে বাচার জন্য নিয়ানর্ডাথালরা পশুর চামড়া শরীরে পেচিয়ে রাখতো। কিন্তু হোমো সেপিয়েন্সরা লজ্জা নিবারনের জন্য পার্মানেন্টভাবে পোষাক পরা শুরু করে। উৎপাদিত হলো সুই সুতো। রহস্যজনক হলেও বলতে হয়-কোথা থেকে পেলো তারা পোষাক পরার পরিকল্পনা! কেনো তাদের মধ্যে লজ্জা বোধটা উদয় হলো? এতদিনের প্রাগৌতিহাসিক নগ্ন মানুষ কেনোই বা পোষাক পড়া শুরু করলো? কে দিলো তাদের এই বুদ্ধি? ধর্মীয় দৃষ্টিকোনের গণ্ধম ফল খাওয়ার মতো কোন না কোন একটা কিছু ঘটেছিলো! বিবর্তনে হয়ে গেছে বললেই তো আর হলো না। সকল পশু শ্রেণি থেকে মানুষে উত্তোরনে যে রহস্যময়তা তা মেনে নিতে হয়। জ্ঞান বিজ্ঞান প্রবৃধ্ধিতে কিছু না কিছু একটা আছে! মানুষ একটি পরিকল্পনার ফসল। এই মনুষত্যবোধ বিকাশে ইন্টেলেকচুয়েল ইন্টেলিজেন্ট কনসাসনেস কিছু একটা আছে। অস্বীকার করলেই তো আর হলো না। বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা!
“এই ভাই আপনি কিসের ধ্যান করছেন। একটু সরে বসেন”-অবিনাশ চমকে উঠে। ইষৎ কালো রঙের একজন লোক বলছে। পাশ থেকে পান চিবুতি চিবুতে এক উঠতি যুবক অবিনাশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বলে। অবিনাশ লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি সহজ সরল মনে কথাগুলো বলছে। অবিনাশ একটু সরে বসে। ও ভাই হাতের সিগারেটটা টানেন। ধোয়া হয়ে শেষ হয়ে গেলো যে!”লোকটির কথা শুনে অবিনাশ হাসলো। অবিনাশ সিগারেটে একটি টান দিলো। শান্তির টান। মুখ ভর্তি ধোয়া ছেড়ে অবিনাশ লোকটিকে প্রশ্ন করলো আপনি কি সিগারেট খান? লোকটি হাসলো। “সেই আবার কেই বা না খাই? তো আপনাগো মতো অত দামী সিগারেট তো আমরা খাইতে পারি না।’ খাই কমদামী সিগারেট খাই।” অবিনাশ দোকানদারকে বলে “চাচা ভাইকে একটি ব্যানসন সিগারেট দিন তো।” অবিনাশ মুচকি হেসে বলে ‘আমার পাশে এসে যখন বসলেন একদিন না হয় দামী সিগারেট খান’। লোকটি লজ্জা পেয়ে অবিনাশের দিকে তাকায়। অবিনাশ বলে ‘নেন নেন। ওই যে চাচার হাত থেকে সিগারেটটা নেন।’ লোকটি হাত বাড়িয়ে দোকানদারের কাছ থেকে সিগারেট নিয়ে ধরায়। অবিনাশ এবার একটু হেলান দিয়ে একটু আরামে বসে। আকাশের দিকে ভাবতে শুরু করে।
১৪ ই জুলাই, ২০২৩ রাত ৮:২৪
রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ। আপনার লেখালেখি দেখে আমিও উপন্যাস লিখতে শুরু করলাম। দেখা যাক। এই বই মেলায় বইটি প্রকাশ করা যাই কিনা?
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই জুলাই, ২০২৩ দুপুর ২:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
গল্প আছে, বিজ্ঞান আছে, ধর্ম আছে।