নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

অবিনাশের স্বপ্ন! (পর্ব-2) আসছে কেয়ামত! কেয়ামত কি?

০৪ ঠা মে, ২০২২ রাত ১১:৪১

( ধারাবাহিকভাবে চলবে)
পর্ব ১ Click This Link



অবিনাশ মেয়েটিকে কিছু বুঝতে না দিয়ে গোসলখানার ভিতর প্রবেশ করে। গ্রাম এলাকাগুলোতে চাপকল চেপে পানি উঠিয়ে গোসল করতে হয়। রফিকের বাড়িটিও সেই পুরানো মননশীলতা দিয়ে আবদ্ধ। আধুনিকতার ছোয়া খুব একটা আসে নাই। অবিনাশ বালতি ভরা পানির দিকে তাকিয়ে থেকে মনের সুখে চাঁপকল চাপছে। ভাবছে মেয়েটি কে ?কেনো আমাকে এভাবে দেখছে? আমাকে তো এভাবে দেখার কিছু নেই। রফিক তো পরিচয় করিয়ে দিতে পারে। অথবা রফিককে তো বলতে পারতো আমার সাথে পরিচিত হবার বাসনার কথা! এখনতো সেই রকম গ্রাম নেই। তাহলে কারনটা কি? এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে পানি গড়িয়ে পড়ে যাচ্ছে অবিনাশ খেয়াল করে নাই। পানি চাপা শেষ করে গোসলখানার মেঝেতে বসে পড়ে। শরীরটা থিতু হয়ে পড়েছে। সারাটা রাত্রী জাগা ক্লান্ত শরীর। শরীরে একটু পানি পড়তেই চামড়ার উপর একটি হিমবাহ ছোয়া তড়িৎবেগে ছড়িয়ে গেলো যেনো অর্পূব এক মোহনীয় স্পর্ষ পেলো অবিনাশ।

বিকেল হয়ে গেছে। সুর্যের তেজ যথেষ্ট কম। অবিনাশ ঘুম থেকে জেগে উঠে। তাকিয়ে দেখে মাথার উপর ফ্যান দ্রুত গতিতে ঘুরছে। অবিনাশ ফ্যানের দিকে তাকিয়ে থাকে। ফ্যানের ঘুরে চলা দেখতে ভালোই লাগছে। শরীরটা ঝড়ঝড়ে। রিফ্রেস লাগছে। অবিনাশ বিছানার উপর উঠে বসলো। রফিক কই? রফিক তো ঘরে নেই। তাহলে রফিক কি কোথাও গিয়েছে? ভাবতে না ভাবতেই রফিক ঘরে এসে ঢোকে। অবিনাশকে বিছানার উপর বসে থাকতে দেখে বলে -
‘কিরে তুই উঠে পড়েছিস! ওঠ ওঠ লাঞ্চ করতে হবে। বিকাল ৪টা বাজে ক্ষিদায় পেটের ভিতর চুই চুই করছে। ওঠ চল খেতে যাই।’

খাবার টেবিলে বসে অবিনাশ আর রফিক লাঞ্চ করছে। রফিকের ছোট বোন জবা ওদের খাবার পরিবেশন করছে। মুরগীর মাংশ, ডাল,আলু ভর্তা, বেগুন ভাজী বিভিন্ন আইটেম সহ ভাত। অবিনাশের মাংশ মাছ ডিম খাইতে কেনো যেনো লাগে! বমি বমি আসে। পেটের ভিতর কেমন গুড়িয়ে যায়! তাই সচরাচর মাংশ এড়িয়ে চলে। একেবারে না খাইলেই নয় এমন একটা সিচুয়েশনে কেবল মাংশ খাই। তবে কালাই ডাল রান্না রফিকের প্রিয়। তাই ডাল আর বেগুন ভাজী দিয়ে বেশ মজা করেই ভাত খাচ্ছে। জবা অবিনাশের মাংশ না নেওয়া দেখে বলে
‘ভাইয়া আপনি কিন্তু মাংশ একেবারেই নিচ্ছেন না। প্লেট টা দিন তো মাংশ দিয়ে দিই।’
অবিনাশ বলে ‘ না জবা আমি মাংশ খাইতে পারি না।’
‘কি বলেন? মাংশ আবার খাইতে পারে না কে?’-প্রতিউত্তর দিয়ে উঠলো জবা।
‘হ্যা রে জবা ও সত্যিই ও মাংশ খাইতে পারে না। আমরা বন্ধুরা একদিন সবাই ওকে জোর করে মাংশ খাওয়ায়ে দিলাম। ও খাইলো ঠিক কিন্তু কিছুক্ষন পর ঘর ভরে বমি করে ভাসিয়ে দিলো ঘর’। কাজের বুয়া রাগ করে সেই দিন আর আসলো না পরে অবশ্য আমাদেরই সেই ঘর পরিস্কার করতে হয়েছিলো।
ও তাই নাকি? ঠিক আছে ভাই আপনাকে মাংশ খাইতে হবে না। বললো জবা।
কিছুক্ষন পর অবিনাশ রফিককে প্রশ্ন করলো -
তোরা কয় ভাই বোন?
হঠাৎ রফিকের মনের উপর কিসের যেনো লুকোচুরির ছায়া লক্ষ্য করা গেলো।
‘২ ভাই বোন’
আমতা আমতা করে জবাব দিতে গেলো রফিক। অপর পাশ থেকে জবা বলে উঠলো
‘ভাইয়া সত্যটাকে লুকানোর চেষ্টা করবি না। সত্য কে স্বীকার করতে হবে। অবিনাশ ভাইয়া আমরা ১ ভাই ২ বোন। আমার বড় একটি বোন আছে নাম হেনা। রফিক ভাইয়ার ছোট। তবে ও জার্মানীতে থাকে হাসবেন্ডের সাথে।
জবা কথা বলছে অবিনাশ লক্ষ্য করলো রফিকের মুখের উপর কিসের যেনো ভর্য়াত চাহনি! কি যেনো এক গোপনীয়তা এ চাহনির মাঝে আছে। তার মানে জবা যা বলছে এখানেও কিছুটা লুকোচুরি আছে। অবিনাশ আর কথা না বাড়িয়ে চুপ করে গেলো। কিছুক্ষন পর জবার দিকে তাকিয়ে বললো তোমার বড় বোন হেনার সাথে তো আর দেখা হলো না অন্তত ছবিও যদিও দেখাতে তাহলেও না হয় বুঝতে পারতাম।
রফিক সঙ্গে সঙ্গে বললো ‘কেনো আমার মোবাইলেই তো আছে! জবা আমার মোবাইলটা নিয়ে ওকে হেনা’র ছবি দেখাতো।’ জবা রফিকের কাছে গিয়ে মোবাইলটা নিয়ে অবিনাশ কে হেনার ছবি দেখাতে লাগলো। অবিনাশ চমকে উঠলো হ্যা এই মেয়েটিকেই অবিনাশ দেখেছে যে লুকিয়ে লুকিয়ে অবিনাশ কে দেখছিল! অবিনাশ বুঝতে পারলো। জবাও মিথ্যা বলেছে। তাহলে জবা মিথ্যা বললো কেনো? নিশ্চয় তাহলে এর ভিতরে কোন কিন্তু আছে!

বিকেলের হিমেলের বাতাসে অবিনাশ আর রফিক হেটে যাচ্ছে। বাজারের উদ্দেশে তাদের এই যাত্রার গতি খুবই ধীর লয়ে। গল্প করছে! যাচ্ছে! আবার গল্প করছে থামছে। রাস্তার দুধারে শুধু ধানের ক্ষেত। এ এলাকায় ধান চাষ খুব বেশি হয়। ধানক্ষেত্রের হলদে প্রভা আর বিকেলের এই স্বর্ণরঙা আলো মায়াবী যাদুর খেলা অবিনাশের মন বিবেককে আবেগী করে তোলে। সেই কিশোরবেলা থেকেই মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছে বিকেলের এই স্বর্ণময় সময়। আজ এতো বছর পরেও সেই মুগ্ধতায় এতটুকু ভাটা পড়েনি, বরং মনে হয় দিনকে দিন বেড়ে চলেছে। অবিনাশ হাটতে হাটতে রফিককে বলে দোস্ত চা খাওয়া যায় না? আশেপাশে কি কোন চায়ের দোকান আছে? রফিক বলে ‘ হ্যা আর কিছুদুর গেলেই আমলা বাজার ওখানে অনেক চায়ের দোকান”। কেউ কোন কথা না বলে হাটতে থাকে।

চায়ের দোকানে বসে দুজনে চা খাচ্ছে। হঠাৎ অবিনাশ রফিককে প্রশ্ন করলো
‘ রফিক তোর ছোট বোন জবার বিয়ে অথচ জবার বড় বোন হেনা আসে নাই কেনো? হেনাকে ছাড়া এ বিয়েটা আসলে মানায় না! সত্যিই কেমন যেনো লাগে? হেনা এখনও এসে পৌছায় নাই কেনো?
রফিকের মনটা কেমন যেনো হলদেটে হয়ে পড়লো। হঠাৎ বিদ্যুৎ শক খেলে মানুষ যেমনটি কোন কিছু ছেড়ে দিতে চাই ঠিক তেমনি রফিক এই বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে শরীর ঝাড়া দিয়ে অন্য প্রসঙ্গে চলে যেতে চাইলেও অবিনাশ আবারও রফিককে প্রশ্ন করে বিব্রত করলো
‘কিরে রফিক হেনা আসবে না? জবার বিয়েতো আগামীকাল!’।‘
হ্যা আসবার তো কথা আছে বিকেলে,দেখা যাক’
রফিক প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কোনভা্বে প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলো। অবিনাশ বুঝলো।এখন আর রফিককে কিছু বলা যাবে না। বিকেলে আবার না হয় প্রশ্ন করা যাবে।

ভ্যান ভর্তি বাজার করে নিয়ে রফিক ও অবিনাশ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। আগামীকাল বন্ধু রফিকের ছোটবোন জবার বিয়ে উৎসব। অবিনাশের ভালোই লাগছে ভ্যানের উপর বসে থাকতে। ঢাকা শহরে এরকম ভ্যানে করে মালামাল পরিবহন করে কিন্তু ভ্যানের উপর বসে যে যাতায়াত করা যায় সেটা আমলাতে এসেই জানতে পারলো। জবার বিয়ের রান্নার কাঁচামাল। আলু , ডাল, তেল, মসলা, চাউল আরো অন্যান্য সামগ্রী বাবুর্চী লিষ্ট হাতে ধরিয়ে দিয়েছে সেই মোতাবেক সব কেনা হয়েছে। গ্রামের মানুষগুলো কেমন যেনো সহজসরল। বাজারে এসেই এলাকার মানুষের মনোজগতে প্রবেশ করতে পারলো।

রফিক মাঝে মাঝে উদাসী হয়ে যাচ্ছে কিসের যেনো চিন্তা! কোথা থেকে যেনো ফোন এলো রফিক ফোন রিছিভ করলো। ওপাশ থেকে কে যেনো কি বলছে। রফিক বললো
‘আমি ওসব জানিনা। প্রেম করে বিয়ে করেছিলি যখন তখন হুশ ছিলো না। আর তো মাত্র দু’তিন দিন তারপর তো সমস্যা নেই।’
রফিক ফোন কেটে দিলো। অবিনাশের দিকে তাকিয়ে চূপ করে থাকলো। অবিনাশ প্রশ্ন করলো
‘কে ফোন করলো?’
রফিক কোন প্রতিত্তর না দিয়ে উল্টা প্রশ্ন করে বসলো? ‘সারা দিন তো ঘুমালি রাতে ঘুমাতে পারবি তো?’
অবিনাশ বুঝতে পারলো রফিক প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে নিতে চাইছে? অবিনাশ বুঝতে পেরে আর কোন প্রশ্ন করলো না। বললো
‘ঘুম না হলে সমস্যা কি তোদের বাড়ির ছাদেঁ উঠে চাঁদ দেখবো। রাতের আকাশের সাথে মিতালী করতে কি আনন্দ? আমি আবার এসব কাজে পারদর্শী।’
‘কিন্তু দোস্ত আজ তো সমগ্র বাড়িটাই সাজাবে সারারাত ডেকোরেশন মিস্ত্রী কাজ করবে। তোর চিন্তার সেই আকাংখিত নিরবতা আজ পাবি না’ বললো রফিক।

রাতের বেলা ডিনার করে এসে রফিক আর অবিনাশ ঘরে এসে বসেছে। বাড়ির চারিদিকে কোলাহল। এমন একটি সুযোগ অবিনাশ আশা করছিলো-‘তোর বোন হেনা তো এখনও এলো না?’ রফিকের মুখখানা কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেলো? কাচুমাচু করে আমতা আমতা করে বললো ‘হ্যা তাই তো দেখছি’ জার্মান থেকে আসার কথা। নাও আসতে পারে। কি জানি আসবে কিনা?’
‘কিন্তু রফিক তুই আমার কাছে গোপন করে যাচ্ছিস। আমি তোর বন্ধু। আমার কাছে কিছু গোপন করলে আমি সব বুজতে পারি! তুই হেনার ব্যাপারটা আমাকে সব খুলে বল। হেনা তোর বাড়িতেই আছে।ও এখন জার্মান নেই’।’
আকাশ হতে যেনো বাজ পড়ল । রফিকের মুখে সেই বাজের প্রভাব দেখা গেলো। চরমভা্বে চমকে উঠলো রফিক। দরজার বাইরে গিয়ে দেখে এলো কেউ কোন কথা শুনলো নাকি?’ অবিনাশ আবারও বললো
‘আমাকে ভূল বুঝিসনা। আমার দ্বারা তোর গোপনীয়তা রক্ষা পাবে কিন্তু সমস্যাটা আমাকে বল? তোর বোনের কি সমস্যা?’
রফিক বেশ কিছু সময় ধরে নিশ্চুপ থাকলো। অবিনাশ কোন কথা বললো না। দুজনের এই নিরাবতার মাঝে দুজনেই প্রস্তুতি নিয়ে নিলো পরবর্তি প্রশ্ন বা উত্তরের হিসাবনিকাশ। বেশ কিছুটা সময় পর রফিক বললো
‘হ্যা তোর অনুমান সত্য। হেনা এখানে আছে। আসলে হেনার এই পরিবারে প্রবেশ নিষেধ এবং পরিবারের কোন সদস্যর সাথে যোগাযোগ করা নিষেধ। এটা বাবার নিষেধ। এমনকি হেনা নামক আমাদের কোন বোন আছে এ পরিচয়টিও বাবা দিতে নিষেধ করেছেন। আসলে বাবার প্রচন্ড রকম ঘৃনা করে হেনাকে। একসময় আব্বাই সবচেয়ে বেশি ভালবাসতো হেনাকে তাই এখন হয়তো ঘৃনাটা সবচেয়ে বেশিই করতে পারে।’
‘কিন্ত্র কেনো? এরকম নিষেধের কারন কি? ঘৃনাই বা কেনো করে?’
‘হেনা বাবার অমতে বিয়ে করেছিলো। বিয়েটা লুকিয়ে করেছিলো পালিয়ে গিয়ে। ওর ধারনা ছিলো বাবা কখনই মেনে নিবে না। আর এটাই ছিলো হেনার সবচেয়ে বড় ভুল। বাবা ওকে কখনই ক্ষমা করতে পারে নাই। বাবা ওকে বন্ধুর মতো ভাবতো। বাবা ভাবতো হেনা আর যা করুক বাবাকে শেয়ার না করে কিছু করতে পারেনা। হেনার মনের কোনায় কোন গোপন কিছু থাকতে পারে এটাই বাবা ভাবতেও পারে নাই। তাই হেনা বিয়ের ব্যাপারটা মেনে নিতে পারে নাই।’
রফিক আবার বলতে শুরু করলো।
‘হেনা পালিযে গেলো বাবা পাগলের মতো চারিদিকে খুজতে শুরু করে। থানায় মিসিং ডাইরি করে। পরে থানার ওসি সাহেব বাবাকে একদিন ডেকে বলে ‘আপনার মেয়ে হারিয়ে যাই নাই সে স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে গেছে। সে আপনার বন্ধুর ছেলের সাথে বিয়ে করেছে! ওরা দুজনে কুষ্টিয়া শহরে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে।’ বাবা ওসি সাহেবের কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে। প্রথমে বিশ্বাস করতে পারে নাই। পরে ওসি সাহেব হেনার সাথে ফোনে কথা বলে এবং বাবার সাথে হেনার কথা বলিয়ে দেয়। হেনা বাবার কাছে ক্ষমা চাইলেও বাবা কখনই ওকে ক্ষমা করে নাই।পরে থানা থেকে ফিরে বাবা সকলকে ডেকে বললো হেনা নামে আমার কোন মেয়ে কখনই ছিলো না। এখন নাই। কেউ যদি আমার অবর্তমানে হেনার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে তাহলে আমি ভাববো সেও আমার কেউ নয়।
বলেই বাবা হাও মাও করে কেদে ফেললো। ঠিক যেনো ছোট মানুষের মতো কান্না। কখনই বাবাকে আমি এভাবে কাদতে দেখি নাই।’
রফিক আবার বলতে শুরু করে।

‘তারপর থেকে হেনা কখনই এ বাড়িতে আসে নাই। একদিন হাজবেন্ড সহ বাড়িতে আসলো। হেনা আসছে শুনে বাবা গেটের সামনে গিয়ে দাড়িয়ে থাকলো। ঢুকতে তো দিলোই না সরাসরি বলে দিলো হেনা নামের তার কোন মেয়ে নেই। কেউ ছিলোও না। এ কথা বলার সাথে সাথে বাবার বুকে ব্যথা ওঠে আর সে কারনেই মা ছুটতে ছুটতে এসে হেনার হাজবেন্ডের পা জড়িয়ে ধরে বলে আমরা স্বামী হার্টের রোগী সে তোমাদের পছন্দ করে না তোমরা ফিরে যাও। এমন কিছু কর না যাতে আমার স্বামী ক্ষতিগ্রস্থ হোক। কথাটি শোনার সাথে সাথে হেনার হাজবেন্ড হেনাকে সাথে নিয়ে চলে যায়। আর কোনদিনও ওরা এ বাড়ির মুখে পা রাখে নাই।’

‘কিন্তু হেনাকে তো আমি দুদিন দেখেছি। তার মানে সে এখানে!’
অবিনাশ বলে উঠলো।

‘আমি বুঝতে পারি নাই তোর চোখ এতটা ধূর্ত হলো কবে? তুই সব দেখতে পারিস কিভাবে’
অবিনাশ বলে
‘না দোস্ত ব্যপারটা ঠিক তেমন নয়। সব ঘটনাই আমি তোকে বলবো তবে আমাকে সঠিক সত্যটা জানা’।
রফিক বলতে শুরু করে
‘জবা ফোন করেছিলো হেনাকে। তখন হেনা এ বিয়ে অনুষ্ঠানে থাকার জন্য অনুরোধ করে। কিন্ত কিভাবে সম্ভব? অবশেষে ওরা সিদ্ধান্ত নেয় হেনাকে বোরখা পড়ে বাড়িতে আসতে হবে। বিয়ে অনুষ্ঠানে বোরখা পড়ে জবার বান্ধবি সেজে বাড়িতে থাকবে। এই শর্তে হেনা রাজী হওয়াতে জবা ওকে বাড়িতে এনেছে। ব্যপারটি কেউ জানে না। শুধু আমি আর জবা ব্যতীত। কিন্তু অবাক হলাম তুই এতদুর থেকে এসেও কিভাবে বুঝতে পারলি? তোর দ্বারা এটা কিভাবে সম্ভব হলো? আমার বোধগম্য হলো না।”

“ আসলে আমি তোর বোন হেনাকে দেখেছিলাম। যেদিন আমি যাত্রা দেখে ভোর তোর বাসায় এসেছিলাম সেদিন আমি লক্ষ্য করেছিলাম একটি মেয়ে আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে। আমি সেদিনই সন্দেহ করেছিলাম। রফিক তো ওর বোন জবা’র সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলো। ওর, মা আব্বা সহ পরিবারের সবাই আমাকে চেনে তাহলে মেয়েটি কে? সেই ক্রিয়োসিটি আমাকে এতদুর নিয়ে এসেছে। সেদিন দুপুরে যখন তোর সাথে খাবারের সময় তোর মোবাইল থেকে হেনা’র ছবি দেখলাম তখনই বুঝতে পারলাম মেয়েটি হেনা। ’
“আচ্ছা তাই বুঝি! আমি আবার ভাবলাম অবিনাশ গনক হলো কবে থেকে। ভালোই হলো। হেনা দু’ দিন ধরে আমাকে বলছে বিয়ের অনুষ্ঠানটা ও ঘুরে দেখতে চাই। এভাবে ও বন্দী হয়ে থাকতে পারছে না। তাই ও আমাকে বলছে তোর ওয়াইফ হিসেবে বিয়ের দিন জবার পাশে থাকবে। ও না হয় বোরখা পরে থাকবে। কেউ ওকে চিনতে পারবে না।”
“বুঝতে পেরেছি। আর এই কারনে তোর বোন হেনা আমাকে দেখছিলো। এবার বিষয়টি আমার কাছে স্পষ্ট। ঠিক আছে তুই যদি আমার এই সামান্য মিথ্যা দ্বারা উপকৃত হতে পারিস তাহলে আমার কোন সমস্যা নেই। হেনাকে বলিস আমি ওকে সহায়তা করবো।”

রফিকের ঘরের ভিতর দিয়ে বেরকনির দরজা। দরজা খুলে দিলেই সহজেই রাতের আকাশ দেখা যায়। বেলকনিতে বসলেই খোলা বাতাসে গা জুড়িয়ে যায়। ভীশন ভালো লাগে প্রকৃতির সুন্দর বাতাস। অবিনাশ দরজা খুলে বেলকনিতে এসে বসে। আজ পূর্নিমার রাত চাঁদের আলোয় চারিদেকে উজ্জল। অবিনাশের চাঁদের পানে তাকিয়ে থাকতে খুব ভালো লাগে! কি সুন্দর নির্মল আলো! গভীর একটা ধ্যানের মধ্য দিয়ে অবিনাশ চাঁদ দেখছে। হঠাৎ ঝিঝি পোকার শব্দ আর আলো অবিনাশকে মুগ্ধ করে তুললো। বেশ ক’টি ঝিঝি পোকা। অবিনাশ আনমনে উদাশ হযে গেলো। চাঁদের দিকে তাকালে অবিনাশের বাবার কথা মনে পড়ে যায়। ছোট বেলায় বাবা অবিনাশকে নিয়ে চাদ দেখতে ছাঁদে উঠতো। অবিনাশ খেলা করে বেড়াতো আর বাবা দুরবীন দিয়ে চাঁদ দেখতো। সে তো অনেক দিন আগের কথা। বাবা আর নেই। কিন্তু সেই সময়টা কেনো যেনো অবিনাশ ভূলতে পারে না। বাবা এই পৃথিবীতে নেই এই কথাটা ভাবতেও অবিনাশের খুব কষ্ট হয়। বাবার প্রতি কৃতজ্ঞতা তার দুচোখ ভিজে যায়।

অবিনাশরা এক ভাই এক বোন। ছোট বোন অপ্সরা মায়ের সাথে গ্রামে থাকে। অবিনাশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে। মেসে থাকে। বাবা মারা গেলেও সংসারে অভাব অনটন নেই। কারন বাবার রেখে যাওয়া অগাধ সম্পদ থেকে উপার্জিত আয় দিয়েই ওদের সংসার চলে আবার অবিনাশেরও লেখাপড়ার খরচ মেটে। সমস্যা হয় না। বাবাকে অবিনাশ খুব মিস করে। বাবাকে একদিন অবিনাশ প্রশ্ন করে।
“বাবা আমার নাম তুমি অবিনাশ রেখেছো কেনো? সবাই বলে নামের মাঝে হিন্দু হিন্দু প্রলেপ আছে?”
বাবা অবিনাশের কথা শুনে বলে
“ যে যা বলে বলুক বাবা। কারো কথার কান দিয়ো না। অবিনাশ পিওর বাংলা একটি শব্দ। আমরা বাঙ্গালী। বাংলা শব্দ থেকেই আমাদের নাম হওয়া উচিত। আমার বাবা বিষয়টি বোঝে নাই কিন্তু তোমার বাবাতো বুজেছে। বাংলা শব্দ দিয়েই তোমার নাম প্রতিষ্ঠা পাক।”
অবিনাশ মাথা ঝাকালো। কিছুক্ষন পর বললো
“হ্যা বাবা তুমি ঠিকই বলেছো। আমরা বাঙালী আমাদের নাম বাংলায় হওয়া উচিত।’
তারপর থেকে অবিনাশ নিজের নাম আর বোনের নাম নিয়ে গর্ব করতো। কেউ নাম জিজ্ঞাসা করলে দাপটের সাথে নিজের নাম প্রকাশ করতো।

কি রে তুই এখানে চাঁদের দিকে তাকিয়ে আছিস?
রফিক ব্যালকনিতে এসেছে। অবিনাশ রফিকের দিকে তাকায়। রফিক অবিনাশের পাশে এসে সোফায় বসে। রফিকের পাশ দিয়ে একটি ঝিঝি পোকা চলে গেলো। অবিনাশ ঝিঝি পোকার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকলো। রফিক বললো
‘আমরা এই চাঁদের পানে চেয়ে তৃপ্ত হই অথচ এই চাদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো রাসুলের হাতের ইশারায়। ’ কিছুক্ষন থেমে অবিনাশ বলে
‘দোস্ত আসলে আমরা সবাই একটা বিভ্রান্তময় সমাজব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে চলছি। যে যেদিকে থাকি। সেই দিকটাকেই সেরা বলে অভিহিত করে। সত্যর সাথে মিথ্যাকেও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে দিয়ে নিজেদেরই প্রশংসায় প্ঞ্চমুখ হয়ে থাকি। কতটা সত্য আর এঘটনার সাথে কতটা মিথ্যা জড়িয়ে আছে তা উপলদ্ধি করবার মতো সৎসাহস দেখায় না।’
‘হঠাৎ করে তুই আবার এসব কথা বলছিস কেনো? ’
‘না তুই হঠাৎ করে বললি রাসুলের হাতের ইশারায় চাদ দ্বিখন্ডিত হয়েছিলো। তাই আমিও এবিষয়টি নিয়েই বললাম । আসলে আমাদের অলৌকিক বিষয়গুলোকে বেশি হাইলাইট না করে দোস্ত আল্লা মানবজাতিকে কি ম্যাসেজ দিয়েছে সেই বিষয়টি হাইলাইট করার দরকার ছিলো। ’
মানে? তুই আবার বিধর্মী হয়ে গেলি নাতো?
‘কেনো আমি তা হবো কেনো? আমি এটা উপলদ্ধি করেছি।’ বললো অবিনাশ।
‘আমার মত প্রকাশের স্বাধীনতাতো আছে নাকি? যদি আমার উপলদ্ধিবোধ ভূল হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে আমি ক্ষমা চাইতে দ্বীধা করবো না। তবে আমার কোন যেনো মনে হচ্ছে আমার উপলদ্ধি বোধই সত্য।’
তো শুনি তোর উপলদ্ধিটা? হাসতে হাসতে বললো রফিক।
এবার বক্তৃতা দেওয়ার ভঙ্গীমায় অবিনাশ বলতে লাগলো
“আল কোরআনের সুরা ‘কামার’ এর প্রথম আয়াতে কাফিরদের দৃষ্টি আকর্ষন করে হঠাৎ করেই আল্লাহপাক ঘোষনা করেন “কিয়ামত নিকটবর্তী চন্দ্র বিদীর্ন হয়েছে’। ইসলামের ইতিহাস থেকে আমি যতটুকু জেনেছি মক্কাবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে রাসুল সাঃ এর কাছে জানতে চাইতেন কিয়ামত কিভাবে হবে? তাই রাসুল (সাঃ) সেদিন মক্কাবাসীদের ডেকে জড়ো করেছিলেন কিয়ামত কিভাবে হবে নিদর্শন দেখাতে! মক্কাবাসীরাও কিয়ামত কেমন করে হবে দেখার জন্য রাসুল (সাঃ) এর ডাকে সাড়া দেয়। এবং সকলকে সেদিন কেয়ামতের নিদর্শন দেখার জন্য অপেক্ষা করতে বলে। কিছুক্ষন পর রাসুল (সাঃ) হাত উচু করে সকলকে বলে তাকাও চাদের দিকে। উপস্থিত সবাই চাদের দিকে তাকায়। দেখতে পাই চাঁদ থেকে একটি আলো যেনো ছড়িয়ে গেলো। চাঁদ একদিকে আর আলোটি আরেকদিকে। সকলে অবাক হয়ে গেলো।ব্যাপারটিকে রাসুলের মুজেজা ভেবে অনেক ইহুদী সেদিন মুসলিম হয়ে গিয়েছিলো। সকলে রাসুলের হাত উচু করে চাঁদের দিকে দেখানোকে রাসুলের মুজেজা বলেই মেনে নিয়েছিলো।” একনিঃশ্বাসে এতগুলো কথা বলার পর কিছুক্ষন থেমে আবার অবিনাশ বললো-“সেদিনকার ঘটনাটি অলৌকিক কোন ঘটনা ছিল না এটি ছিল আল্লার একটি ম্যাসেজ!”
“অলৌকিক ঘটনা যদি না হয় তাহলে সেই লৌকিক ঘটনাটি কি?” জিঙ্গাসা করলো রফিক।
‘চাঁদের বুকে সেদিন ভয়াবহ এক বিস্ফোরন ঘটেছিলো, বিশাল এক প্রস্তরখন্ড (এস্টেরিযেড) আঘাত করেছিলো। যার আঘাতের কারনে চাদ অগ্নিগোলকময় হয়েছিলো।’
তাহলে তুই বলতে চাইছিস সেদিন চাদ দ্বিখন্ডিত হয় নাই? শুধুমাত্র প্রস্তরখন্ডের আঘাতে চাদ আলোকময় হয়েছিলো? কিন্তু পবিত্র হাদীস গ্রন্থ বোখারী, মুসলিম, তিরমিযি, আহমাদ এর বিভিন্ন স্থানে চাঁদের দ্বিখন্ডের বিষয়টি জানা যায়। হযরত আলী, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ, হযরত হুযাইফা, হযরত জুবায়ের ইবনে মুতয়িম (রা) স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন যে তারা এ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী। আব্দুল্লা ইবনে মুহাম্মদ ও খলিফা (রা) কর্তৃক আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্নিত যে মক্কাবাসী কাফিররা রাসুল্লাহ (সাঃ) এর নিকট মুজেযা দেখানোর জন্য দাবী জানালে তিনি তাদেরকে চাঁদ দ্বিখন্ডিত করে দেখালেন।“ যা বুখারী শরিফের ৩৩৭৬ নং আয়াতে উল্লেখিত।”
এই কথা বলার পর রফিক কিছু সময়ের জন্য থামলো।অবিনাশ বুঝতে পারলো রফিক আরো কিছু বলতে চাই।
কিছুক্ষন বিশ্রাম নেওয়ার পর রফিক যেনো হন্তদন্ত হয়ে আবার বলতে শুরু করলো “ হাদীস সুত্রে আমরা আমরা জানতে পারি।নবীজীর কাছে কতিপয় কাফির তাকে তার নবুওতের মুজিযা দেখতে চাইলো। তখন নবীজী তাদেরকে কিয়ামতের নিদর্শন দেখার জন্য আহ্বান করে। নবীজী চাঁদের দিকে অঙ্গুলি ইশারায় সকলকে দেখতে বলে সকলে তাকালে দেখা যায় আকাশের চাঁদ হঠাৎ দুই ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগ সম্মুখের পাহাড়ের একপার্শ্বে এবং অপর অংশটি অপর পার্শ্বে দেখা গেলো। এই অবস্থাটি মূহুত্বমাত্রের জন্য থাকলো। নবী (সাঃ) এর ঘটনা দেখে কাফিরেরা আলোচনা-সমালোচনা শুরু করে দেয়। কিছু কিছু কাফির তার অনুসারি হয়ে গেলো আর কিছু কাফির বলতে লাগলো (নবী সাঃ) তাদের যাদু দেখিয়েছিলেন।”
রফিক কিছুক্ষনের জন্য থেমে আবার বলতে শুরু করলো।
“এ ব্যাপারে তারা সিদ্ধান্ত নেয় যারা মক্কার বাইরে অবস্থান করছে তাদের কাছে জানতে হবে সেদিন এজাতীয় কোন ঘটনা ঘটেছিলো কিনা? কারন রাসুল যদি তাদের চোখে যাদু করে থাকে তাহলে বাইরের লোকেরা এসব ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে না। কিন্তু কাফিররা যখন বাইরের এলাকার লোকদের কাছে জানতে চাইলো সেদিনকার ঘটনা প্রসঙ্গে। তখন তারা একবাক্যেই জানিয়ে দিলো এমন একটি ঘটনা তারা প্রত্যক্ষ করেছে। ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত মালাবার রাজ্যের (বর্তমান কেরালা অঞ্চল) ততকালীন রাজা চক্রবর্তী ফারমাস (চেরামান পিরুমেল) আকাশে চাঁদ দুই টুকরো হয়ে যাওয়ার ওই অলৌকিক ঘটনাটি স্বচক্ষে দেখেছিলেন। যখন তিনি জানতে পারেন যে আরব দেশে শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটেছে ও রাসূল (সা.)ই চাঁদ দ্বিখণ্ডিত করেছেন, তখন তিনি মক্কায় গিয়ে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। ভারতের ইতিহাস গ্রন্থ ‘তারিখে ফেরেশতা’য় ওই ঘটনা উল্লেখিত হয়েছে। চেরামানের নামে ভারতের কেরালা রাজ্যে একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।’

“তোর বক্তব্য আমি বুঝতে পারছি।কিন্তু রাসুলের মৃত্যুর ৩০০ বৎসর পর উৎসরিত হাদীসের সত্য মিথ্যা নিয়ে সংশয় থেকে যায়।সহি বিষয়টা প্রমান সাপেক্ষ নয়! গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে সংশয় থেকে যায়। তুই যা বলছিস সম্পূর্ন হাদীসের কথা বলছিস । অলৌকিকতা বলতে তুই এটাই বলতে পারিস সেইদিন যে চাঁদের বুকে প্রস্তর খন্ড আঘাত হানবে সে বিষয়টি রাসুল জানলো কি করে? ” বললো অবিনাশ।
রফিক বলে “ তা ঠিক।”
অবিনাশ বলতে শুরু করে “আল কোরআনে আছে সঠিক সত্যটা। সুরা কামারের ১ নং আয়াতে বলছে-কেয়ামত আসন্ন চন্দ্র বিদীণ হয়েছে। আল কোরআন কিন্তু চাঁদ দ্বিখন্ডিত হবার কথা বলে নাই। বলেছে চাঁদে ফাটল আছে বা চন্দ্র বির্দীন হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসে চাঁদ ফাটতে পারে কিভাবে? যখন কোন পাথরখন্ড বা গ্রহানূ মহাশূন্য থেকে চাঁদেও মধ্যাকর্ষনের কারনে তার পৃষ্ঠের দিকে সবেগে ছুটে প্রচন্ড গতিতে চন্দ্রপৃষ্ঠে আঘাত হানে।এবং কল্পনাতীত ধাক্কায় ফিউশন পদ্ধতিতে পারমানবিক বোমার মত ব্যাপক প্রতিক্রিয়া ঘটে। পাথরখন্ড বা গ্রহানু চন্দ্রপৃষ্ঠে পতিত হওয়ার কারনে যদি প্রচন্ড ধাক্কায় পতিত স্থান থেকে কোন বড় শক্ত পাথরখন্ড বা একটা পাহাড়খন্ড দলাবদ্ধ অবস্থায় মহাকাশের দিকে উৎক্ষিপ্ত হয়, তাহলে ঐ উৎক্ষিপ্ত মাটির দলাটিও ফিউশন পদ্ধতি লাভ করে পারমানবিক বোমার মতো প্রচন্ড অগ্নিগোলক সৃষ্টি করে মহাশুন্যে জ্বলতে থাকবে। এবং উধ্বগতি শেষ হওয়া মাত্রই চাঁদের মধ্যার্কষন বলে আবার চাঁদের দিকে ফিরে আসবে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মনে হবে চাঁদ ভেঙ্গে আরেক দিকেই সরে গেছে এবং আবার ফিরে এসে এক হয়েছে “
“হাদীসের বর্ননার সাথে তোর ব্যাক্ষার একটি মিল পাচ্ছি। কিন্তু আমার প্রশ্ন আলকোরআনের বর্ননা মতে চন্দ্র বির্দীনের সাথে কিয়ামতের কি সর্ম্পক?”
“সম্পর্ক তো আছেই। আমার জানা মতে রাসুল সা: সেদিন মক্কাবাসীদের ডেকে জড়ো করেছিলেন পৃথিবীতে কিয়ামত কিভাবে হবে সেটি দেখাতে? আল্লাহ তায়ালা তার নবীর মাধ্যমে মক্কাবাসীকে এ দৃশ্য অবলোকন করায়ে বুঝাতে চেয়েছেন যে পৃথিবীর ধ্বংশ অনুরুপ ব্যবস্থায় ঘটানো হবে। একটি পাথর খন্ডের আঘাতে।”
অবিনাশ আবার বলা শুরু করে “তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয়ে উঠে যে একটি বড় ধরনের পথরখন্ডই চন্দ্রপৃষ্ঠে পতিত হয়েছিলো এবং সেটা ছিলো মানুষের জন্য সাবধানবানী ও সতর্কবানী। তারা যদি আল্লাহকে অমর্যাদা করে তবে সেক্ষেত্রে আল্লাহ প্রস্তরখন্ডের আঘাতের দ্বারা মানবজাতির অস্তিত্ব বিনাশের সম্মুখিন করে তুলবে।”
কিন্তু আল কোরআনের বক্তব্য মতে চনদ্র বিদীর্ণ বা চন্দ্র ফাটল সমৃদ্ধ এমন কি কোন প্রমান বিজ্ঞানীরা কখনও পেয়েছে?
হ্যা পেয়েছে। ১৯৬৯ সালে এ্যাপোলো -১১ নামের একটি মার্কিন মহাকাশযানে মানুষ সর্বপ্রথম চাঁদে অবতরন করে। এর আগেও চাঁদ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণার জন্য এ্যাপোলো-১০ নামের রকেট চাঁদে পাঠানো হয় চাঁদের সর্বাধিক ছবি তুলে আনার জন্য। ঐ সময়ে চাঁদের যেই ছবি এলো, এতে দেখা যায় চাঁদের বুক চিরে একটি ফাঁটল বিদ্যমান। ফাঁটলটি লম্বায় ২০০ কিঃমিঃ এর ও বেশি এবং চওড়ায় ৩ কিঃমিঃ বিজ্ঞানীগণ এর নাম দিয়েছেন "হাইজিনাস রিলী"। এই "হাইজিনাস রিলী"র মাটি ও পাঁথর গবেষণা করে বিজ্ঞানীগণ আবিষ্কার করলেন যে, এই ভাঙ্গা ও জোড়া লাগার ঘটনাটি বেশ পুরোনো”
“তাহলে প্রমান হচ্ছে আল কোরআনের কথাই সত্য। চাদঁ বির্দীন।?” রফিক প্রশ্ন করলো।
‘শুধু তাই নয় ফাটলটির পাশে রয়েছে বিশাল বিশাল গর্ত যা দেখে বোঝা যায় চাঁদের বুকে কিছু আছড়ে পড়ার নিদর্শন। উল্কাপিন্ড, ধূমকেতু, গ্রহানুর মতো মহাজাগতিক আঘাত। বিজ্ঞানীরা ধারনা করছেন, “চাঁদের বুকে কোনো গ্রহানু আছড়ে পড়ার কারণ সেখানে পাথুরে র্দীঘ ভাজ সৃষ্টি হয়েছিলো এবং ফাটল ঘটেছিলো। এবং সেই ফাটলের অভ্যন্তর থেকে গলিত লাভা বের হয়ে ফাটল জোড়া লাগিয়েছে।’
‘বন্ধু তোর কথার যুক্তি আছে। রাসুল (সাঃ) যদি অলৌকিকতা দিয়েই সব করতে পারতেন তাহলে তাকে জীবনজুড়ে এত যুদ্ধ করতে হতো না।’
‘তবে মানবজাতির উপর এমন ভয়াবহ ধ্বংশলীলা ঘটতে পারে এমন কোন বর্ননা কি আল কোরআনে আছে? এমন কোন হুশিয়ারী কি আল কোরআনে আছে?’ অবিনাশ কে জিঙ্গাস করলো রফিক।
অবিনাশ বললো “আল কোরআনের অসংখ্য আয়াতে এই রকম হুশিয়ারী দেওয়া আছে। ।“ যেমন সুরা আল মুলকে ১৬ ও ১৭ নং আয়াতে বলছে “তোমরা কি এ থেকে নির্ভয় হয়েছ যে, যিনি আসমানে রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে সহ যমীনকে ধ্বসিয়ে দেবেন, অতঃপর তা হঠাৎ করেই থর থর করে কাপতে থাকবে? অথবা তোমরা কি নিশ্চিত আছ যে, আকাশে যিনি রয়েছেন, তিনি তোমাদের উপর পাথর বর্ষণকারী ঝড় প্রেরণ করবেন না? তখন তোমরা জানতে পারবে, কিরূপ ছিল আমার সতর্কবাণী! “ আরেকটি আয়াতে বলছে তুমি কি জান সেই আঘাতকারী কি? সেই আঘাতকারী একটি জলন্ত জোতিস্ক। সুরা : হিজর, আয়াত : ৭৩-৭৭ নং আয়াতে বলছে “ সূর্যোদয়ের সময় মহানাদ তাদের আঘাত করে। অতঃপর আমি জনপদটিকে উল্টে দিলাম ও তাদের ওপর কঙ্কর বর্ষণ করলাম। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য নিদর্শনাবলি রয়েছে। পথের পাশে ওই জনপদের ধ্বংসাবশেষ এখনো বিদ্যমান। অবশ্যই এতে বিশ্বাসীদের জন্য রয়েছে নিদর্শন”। সুরাটিতে লুত আঃ এর জাতির উপর আল্রার গজব এর বর্ননা দেওয়া হয়েছে। এটি ডেড সি বা মৃত সাগর নামেও পরিচিত। ফিলিস্তিন ও জর্দান নদীর মধ্যবর্তী স্থানে বিশাল অঞ্চলজুড়ে নদীর রূপ ধারণ করে আছে। জায়গাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বেশ নিচু। এর পানিতে তেলজাতীয় পদার্থ বেশি। এতে কোনো মাছ, ব্যাঙ, এমনকি কোনো জলজ প্রাণীও বেঁচে থাকতে পারে না। এ কারণেই একে ‘মৃত সাগর’ বলা হয়। এখানকার মাটিতে প্রচুর গন্ধক পাওয়া যায়। এই গন্ধক উল্কাপতনের অকাট্য প্রমাণ। এ শাস্তি এসেছিল ভয়ানক ভূমিকম্প ও অগ্নি উদিগরণকারী বিস্ফোরণ আকারে। ভূমিকম্প সে জনপদকে ওলটপালট করে দিয়েছিল। অগ্নি উদিগরণকারী পদার্থ বিস্ফোরিত হয়ে তাদের ওপর প্রস্তর বর্ষণ করেছিল।১৯৬৫ সালে প্রাচীন ইতিহাসের সদোম ও গোমরাহ নগরীর ধ্বংসাবশেষ অনুসন্ধানকারী একটি আমেরিকান দল ডেড সির পার্শ্ববর্তী এলাকায় এক বিরাট কবরস্থান দেখতে পায়, যার মধ্যে ২০ হাজারেরও বেশি কবর আছে। এটা থেকে অনুমান করা হয়, কাছেই কোনো বড় শহর ছিল। কিন্তু আশপাশে এমন কোনো শহরের ধ্বংসাবশেষ নেই, যার সন্নিকটে এত বড় কবরস্থান হতে পারে। তাই সন্দেহ প্রবল হয়, এটি যে শহরের কবরস্থান ছিল, তা সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে। সাগরের দক্ষিণে যে অঞ্চল রয়েছে, তার চারদিকেও ধ্বংসলীলা দেখা যায়। জমিনের মধ্যে গন্ধক, আলকাতরা, প্রাকৃতিক গ্যাস এত বেশি মজুদ দেখা যায় যে এটি দেখলে মনে হয়, কোনো এক সময় এখানে এ্যাষ্টিরয়েড পতন এবং তার আঘাতে ভূমিকম্প সৃষ্টি হয়ে গলিত পদার্থ বিস্ফোরণে এখানে এক ‘জাহান্নাম’ তৈরি হয়েছিল।”
ট্রিনিটি সাউথ ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা অধ্যাপক ফিলিপ সিলভিয়া এই তত্ত্বটিতে বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন যে তুলনামূলকভাবে বড় উল্কাপিণ্ড বা অন্যান্য মহাজাগতিক "এয়ারবার্স্ট" এ প্রবেশ করাই এই অঞ্চলে ব্যাপক ধ্বংস সাধন করতে পারে। এবং এটাই সম্ভবত বাইবেলের বা কোরানের বিবরণের ভিত্তি হতে পারে। তাছাড়া সাদুম উপসাগরবেষ্টিত এলাকায় এক ধরনের অপরিচিত উদ্ভিদের বীজ পাওয়া যায়, সেগুলো মাটির স্তরে স্তরে সমাধিস্থ হয়ে আছে। সেখানে শ্যামল উদ্ভিদ পাওয়া যায়, যার ফল কাটলে তার মধ্যে পাওয়া যায় ধুলাবালি ও ছাই। এখানকার মাটিতে প্রচুর গন্ধক পাওয়া যায়। যেখানে সেখানে গন্ধকের পাথর পড়ে থাকে। গন্ধক ই উল্কাপতনের অকাট্য প্রমাণ।’
এক নিঃশ্বাসে যেনো কথাগুলো অবিনাশ বললো। কিছুক্ষন থেমে আবার বলতে লাগলো।
হা মিম সিজদাহ সুরাতে ১৩ আয়াতে বলা আছে “ অতঃপর তারা যদি মুখ ফিরিয়ে নেয় তবে বলুন, আমি তো তোমাদেরকে সতর্ক করছি এক ধ্বংসকর শাস্তি সম্পর্কে, আদ ও সামূদের শাস্তির অনুরূপ।”।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০২২ ভোর ৪:৪৫

সোনাগাজী বলেছেন:



বিশ্বে নতুন কিছু ঘটছে না?

০৫ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:৪২

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: নতুন কিছু কি দরকার?

২| ০৫ ই মে, ২০২২ বিকাল ৫:৩১

জ্যাকেল বলেছেন: আপনি গল্পের ছলে বিজ্ঞানভিত্তিক কোরআন শেখাচ্ছেন। ভাল। তবে হেনা'র সাথে কি কিছু হয়েছিল তা বললেন না। আশা করি আরো পর্ব আসবে।

০৫ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১৯

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: হ্যা আপনি ঠিকই ধরেছেন। হেনা প্রেম করে বিয়ে করেছে! বাবা কখনই মেনে নেয় নাই। সম্পর্ক চিরতরে হারিয়ে গেছে বাবা ও মেয়ের। ভুক্তভোগী অন্যন্য সন্তান ও মা।

নারী ও পুরুষ এর অবাধ মেলামেশা থেকে প্রেম ভালবাসা। অবাধ মেলামেশার কারনে প্রেম ভালবাসা । সমাজের জন্য অবাধ মেলামেশা কতটুকু গ্রহণযোগ্য? প্রেম ভালবাসার কতটুকু গ্রহনযোগ্যতা আছে এ সকল বিষয় নিয়ে আরো বক্তব্য আছে পর্র্ববর্ত ী
পর্বে । ধারাবহিকভা্বে প্রকাশ করবো ইনশাল্লাহ।

৩| ০৫ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩০

জ্যাকেল বলেছেন: প্রশ্নটা আসলে ছিল- হেনার সহিত অবিনাশের কি কিছু হইয়াছিল।

০৫ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৫৩

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: না। হেনা লুকিয়ে দেখছিলো কারন অবিনাশের স্ত্রি সেজে বিয়ে বাড়িতে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াবে বোরখা পড়ে।
আপনি ১ম পর্ব টি পরেন নইলে বুঝবেন না ।

০৫ ই মে, ২০২২ রাত ৯:৫৫

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: Click This Link

৪| ০৬ ই মে, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১

জ্যাকেল বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.