নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রকৃত সত্যের দিকে আমাদের ছুটতে হবে..

রাশিদুল ইসলাম লাবলু

প্রকৃত সত্যকে উপলদ্ধি করতে হবে খোলা মন নিয়ে।

রাশিদুল ইসলাম লাবলু › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্ন কি? মানুষ কেনো স্বপ্ন দেখে? স্বপ্নের সাথে কি অতি প্রাকৃতিক জগতের সম্পর্ক কি? (পর্ব-2)

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৭



বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানের “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস” নামের একটি তত্ত্ব বলে যে স্বপ্নের আসলে কোন অর্থই নেই। ঘুমের সময় মস্তিষ্কে বিদ্যুৎ প্রবাহের কারণে আমাদের স্মৃতি থেকে বিভিন্ন চিন্তা এবং আবেগ উঠে আসে। এই চিন্তা এবং আবেগগুলো খাপছাড়া। অর্থাৎ এদের মধ্যে কোন সম্পর্ক নেই। একমাত্র ঘুম থেকে উঠার পর আমরা এই খাপছাড়া দৃশ্য, চিন্তা এবং আবেগগুলোর মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের চেষ্টা করি। তখন তৈরি হয় এক বা একাধিক গল্প। এর আগে মস্তিষ্কে স্মৃতি একীভবন (প্রাথমিকভাবে কোন তথ্য পাওয়ার পর তার বিভিন্ন অংশ মস্তিষ্কে ধরে রাখার প্রক্রিয়া) ও অন্যান্য স্মৃতির সাথে সংযুক্ত করার জন্য ঘুম চক্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার স্বপ্ন সংশ্লিষ্ট। স্বপ্ন কোন না কোন ভাবে স্মৃতির সাথে সম্পর্কিত। রকফেলার বিশ্ববিদ্যালয়ের জোনাথন উইনসন বলেন –“ স্বপ্ন আসলে ঘুমন্ত অবস্থায় স্মৃতি প্রক্রিয়াজাত করার একটি উপজাত মাত্র।” তিনি যুক্তি দেখান, অভিজ্ঞতাকে স্মৃতিতে পরিণত করার জন্য মস্তিষ্কের যে সম্পদ ব্যবহার করা লাগে তা যদি জাগ্রত অবস্থায় করা হয় তাহলে আমাদের কর্টেক্সের যে আয়তন তার চাইতে বেশি পরিমাণ সম্পদ ব্যবহার করা লাগবে। এ কাজটি জাগ্রত অবস্থায় করতে গেলে একটা অচলাবস্থার তৈরি হবে। তাই মস্তিষ্কের যে সীমাবদ্ধ সম্পদ আছে আমাদের তার উপযুক্ত ব্যবহার করার জন্য রাত্রে ঘুমের মধ্যে স্মৃতী একীভবন ও সংযুক্ত করার কাজটি করি। আর এই স্মৃতি সংশ্লিষ্ট কাজ করার সময় ঘুমচক্র স্বপ্ন দেখায়ে থাকে।” “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস” এর জনক জন এলান হবসন ও মের্কারির তত্ত্বের পরবর্তী
আমরা কেন স্বপ্ন দেখি আর সপ্নের ব্যাখ্যাই বা কি? অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক জোসেফ ডি কনিস্ক তার সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখিয়েছেন যে সপ্নের সংকেত গুলর ব্যাখ্যা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিতে ভিন্নতর হয়।যদিও সপ্নের ব্যাখ্যা ব্যাক্তি থেকে ব্যাক্তিতে ভিন্নতর কিন্তু প্রত্যেকটা স্বপ্নই আমাদের মনস্ততত্তকে ব্যাখ্যা করে।স্বপ্ন বিশেষজ্ঞরা বিখ্যাত স্বপ্নবিশারদ সিগমুনড ফ্রয়েড ও তার সহকর্মী কার্ল জাং মনে করেন স্বপ্ন হচ্ছে আমাদের অবচেতন মনের সাথে যোগাযোগের পথ।কার্ল জাং বিশেষ করে মনে করেন সপ্নকে জানা মানে নিজেকে জানা।হাবার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনস্তাত্ত্বিক বিভাগের অধ্যাপক ভ্যান অয়েগার বলেন “একই ভাবে তুমি যদি কোন কিছু চেপে রাখতে চেষ্টা কর সেটা তোমার স্বপ্ন হয়ে দেখা দেবে” ।তিনি একদল ছাত্রকে ঘুমুতে যাবার আগে কোন বন্ধু সম্পর্কে একটা চাপা চিন্তা করতে বলেন।আর এই পরীক্ষার ফলে সেই ছাত্ররা প্রত্যেকেই ঐ বন্ধুকে স্বপ্নে দেখেছে, কিন্তু অন্যরা,যারা এ ব্যাপারে চিন্তা করেনি তাদের স্বপ্নগুলো ছিল ভিন্নতর।অবচেতন কামনারা সরাসরি না এসে বিভিন্ন প্রতীক বা রূপকের ছদ্মবেশে স্বপ্নে চলে আসে।মনোবিশ্লেষণের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েড স্বপ্ন বিশ্লেষণের জন্য একটি তত্ত্ব প্রণয়ন করেন। ‘The Interpretation of Dreams’ বইটিতে এই তত্ত্বটির ব্যাখ্যা দেন তিনি। ফ্রয়েডের মতে স্বপ্ন উৎসরিত হয় মানুষের অবদমিত কামনা হতে।ফ্রয়েড মনে করতেন, আকাশে উড়ার স্বপ্নের মানে হলো বিপথগামী যৌন কামনা।আর পুরুষের স্বপ্নে দাঁত পড়ে যাওয়ার মানে হলো তার মনে পৌরষত্বহীনতার ভয় কাজ করছে (অবশ্য এই স্বপ্ন মহিলারা দেখলে কি ব্যাখ্যা হবে সেটা তেমন পরিস্কার না)। আদিম মিশরীয় আর ফ্রয়েড-পরবর্তী মনোবিশ্লেষণে স্বপ্নের ব্যাখ্যাদান-পদ্ধতির মাঝে যে তেমন অমিল নেই। যদিও এ দুইটি ধারার উদ্দেশ্য ভিন্ন–মিশরীয়রা চাইতো ভবিষ্যত সম্পর্কে জানতে। আর ফ্রয়েডিয় স্বপ্ন-বিশ্লেষণের লক্ষ্য অতীত ও বর্তমানের বিভিন্ন ঘটনা ও কর্মপ্রেরণার উপর আলো ফেলা। উভয়ই স্বপ্ন-বিশ্লেষণের জন্য রূপক-অভিধানের উপর খুব বেশি নির্ভরশীল।

ফ্রয়েডের মতে স্বপ্নে অচেতন মন নিজেকে প্রকাশ করে। অচেতন মনের ”ইচ্ছেপূরণে‘-র হাতিয়ার হলো স্বপ্ন।যদি ধরা হয় স্বপ্ন গভীর তাৎপর্যপূর্ণ, তাহলে মনে হবে স্বপ্ন অতীত স্মৃতি আর চিন্তা-দুশ্চিন্তার সরাসরি অনুবাদ। কিংবা এটাও মনে হতে পারে, স্বপ্ন আসলে রূপক-মন্ডিত একটি ছায়াছবি, যেখানে বিভিন্ন দৃশ্যকল্পে গোপন ইঙ্গিত লুকায়িত থাকে ।গভীর মনের এইসব অন্ধকার ভাবনা বাস্তবে খুব কম ক্ষেত্রেই প্রকাশিত হওয়ার সুযোগ পায়। আমাদের মন এই অন্ধকার বাসনা চেপে রাখে, আসল রূপে প্রকাশ পেতে দেয় না। কিন্তু এই চেপে রাখা সবসময় সফল হয় না। অন্ধকার কামনা–বাসনা নিজেদেরকে প্রকাশিত করে, কিন্তু সরূপে নয়, ছদ্মবেশে।কিন্তু স্বপ্নমঞ্চের পেছনে না বলা বাসনাটা এতো অস্পষ্ট কেন? কেন অদ্ভূত সব প্রতীক আর খাপছাড়া দৃশ্যকল্প দিয়ে স্বপ্ন জড়ানো থাকে?
বর্তমানের আধুনিক বিজ্ঞানের “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস” নামের তত্ত্ব মানলে এটাও স্বীকার করতে হয় স্বপ্নের আসলে কোন অর্থই নেই। আসলেও কি তাই? দীর্ঘদিনের মানুষের বিশ্বাস আর স্বপ্ন নিয়ে মিশরীয়দের গবেষনা স্বপ্নের ব্যাক্ষার অর্থ খোজার প্রেষনা সমস্তটাই মিথ্যা? যদি ধর্মগুলোর বক্তব্য মিথ্যাই হয়ে থাকে তবে এ পৃথিবীতে এমন অসংখ্য নির্দশন আছে তার ব্যাক্ষা স্বপ্নবিজ্ঞান কি করে দিতে পারে? অনেক স্বপ্ন আছে যা বাস্তব হিসেবে দেখা দিয়েছে। স্বপ্নে ভবিষ্যৎ বর্ননা অনেকাংশে সত্য। অতীতে স্বপ্ন নির্দশন সত্য হিসেবে যেভাবে দেখা গেছে ঠিক সেভাবে বর্তমানেও এটা প্রমানিত। এ সকল ঘটনার ব্যাক্ষা কি করে “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস” বা এ জাতীয় তত্ত্ব দিতে পারে।এ পৃথিবীতে অসংখ্য স্বপ্ন আছে যা সত্যিই ভাববার বিষয়। কি করে অলৌকিক ভাবে স্বপ্ন ভবিষ্যত বলে দিতে পারে অথবা কি করে গুঢ় অর্থ রুপক ভাবে জানাতে পারে মানুষেকে? এগুলো কিভাবে সম্ভব? যেমন রবীন্দ্রনাথ তাঁর রাজষির্ নাটকের কাহিনী স্বপ্নে পেয়েছেন, ইংরেজ কবি কোলরিজ তাঁর বিখ্যাত কোবলা খান কবিতাটি স্বপ্ন দেখে লিখেছেন, বিজ্ঞানী নিলস বোর পরমাণুর গঠন স্বপ্নে দেখে পরমানু মডেল আবিস্কার করে বিশ্বজুড়ে হইচই ফেলে দিয়েছিলেন।বিজ্ঞানী নিলস বোর স্বীকার করেছিলেন তার এই স্বপ্ন মডেল আবিস্কার করতে সহায়তা করেছে। বিজ্ঞানী কেকুলে বেনজিনের গঠন-তত্ত্বটি স্বপ্নে দেখেন অর্থাৎ এক চিন্তা তাৎপর্যপূর্ণ স্বপ্ন সৃষ্টি করে।স্বপ্নের মধ্যে মানব জাতিকে কে শিক্ষা দিচ্ছে? এই মহাবিশ্বের সাথে কি কোনভাবেই ব্যাক্তি মানবের কোন যোগাযোগ আছে? মহাবিশ্বের সাথে কি মানুষের ঘুমের সময় সেই সংযোগ স্থাপন হয়? নইলে কি করে এগুলো সম্ভব? আর যদি যোগাযোগ নাই থাকে তবে কিভাবে মানুষের এত স্বপ্ন সত্যসত্যই হতে পারে।স্বপ্নে ভবিষ্যৎবানীর বক্তব্য অহরহ শোনা যায়। বিভিন্ন ধর্মে এ জাতীয় স্বপ্ন বিদ্যমান।কিভাবে মানুষ এ সকল জটিল তথ্য স্বপ্নের মাধ্যমে জানতে পারে? এ সকল ব্যাক্ষা আজোবধি বিজ্ঞান মানুষকে দিতে পারে নাই।আসলে স্বপ্ন সম্পর্কে মানুষের জ্ঞানটা প্রাথমিক ক্ষেত্রে রয়েছে।নিম্নে আমি “কোয়ান্টাম মেথড” এর ওয়েব সাইট থেকে সংগৃহিত করা কিছু স্বপ্নের তথ্য তুলে ধরলাম।
# স্বপ্নে মানুষের ভকিষৎবানীর ঘটনা দেখা নতুন নয়। বাংলাদেশের বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী রফিকুন্নবীর একটি স্বপ্ন পাঠকদের সুবিধার্থে তুলে ধরলাম।
(চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী বাংলাদেশ)“উনিশ শো বাহাত্তরের শেষ নাগাদ, সম্ভবত ডিসেম্বর মাস। প্রখ্যাত চিত্র শিল্পী রফিকুন্নবী তখন আর্ট কলেজের শিক্ষক। এক রাতে তিনি স্বপ্ন দেখলেন পোস্ট অফিসের পিওন তাঁকে একটা চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠিতে লেখা আছে তাঁকে কোনো একটি দেশ স্কলারশীপ দিয়েছে উচ্চতর পড়াশোনার জন্যে। শিগগিরই যেতে হবে ওখানে। চিঠিটা পেয়ে অসম্ভব আনন্দ লাগছিল রফিকুন্নবীর। পরক্ষণেই তার ঘুমটা ভেঙে গেল। জেগে উঠে তাঁর মনে হলো একটা সুন্দর জগৎ মাটি হয়ে গেছে একটু আগেই।
পরদিন যথারীতি কর্মস্থল আর্ট কলেজে গেলেন রফিকুন্নবী। সকাল ১১ টায় ক্লাস নিচ্ছিলেন, এমন সময় প্রিন্সিপাল (শফিক হোসেইন) ডেকে পাঠালেন তাঁকে। রফিকুন্নবী ভাবলেন হয়ত ক্লাস সম্পর্কিত কোনো কথাবার্তা আছে। কিন্তু প্রিন্সিপালের কক্ষে গিয়ে যা শুনলেন তাতে অবাক হয়ে গেলেন তিনি। ভেতরে একটা উত্তেজনাও বোধ করছিলেন। প্রিন্সিপাল তাঁকে জানালেন যে, গ্রীক সরকারের একটি বৃত্তি। কলেজ থেকে তাঁর নাম পাঠানো হবে বলে ঠিক করা হয়েছে। যাওয়ার ইচ্ছা থাকলে আজই কিছু কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিতে হবে।
রফিকুন্নবী সে সময় মনে মনে প্যারিস অথবা লণ্ডনে যাওয়ার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছিলেন। কিন্তু স্বপ্নটি এত তাড়াতাড়ি ফলে যাচ্ছে দেখে ভাবলেন কপালে গ্রীসই লেখা আছে হয়ত। দ্বিরুক্তি না করে সব কাগজপত্র পূরণ করে পাঠিয়ে দিলেন। মাস খানেক পরই চিঠি পেলেন গ্রীসের স্কলারশীপটা তাঁর হয়ে গেছে। পরের অক্টোবরেই রফিকুন্নবী গ্রীসে গিয়ে হাজির হয়েছিলেন টানা তিন বছরের জন্যে।”
# স্বপ্নে নিজেকে মৃত দেখার ঘটনা বিরল নয়। সে মারা গেছে সেটাই সে দেখছে। এবং বাস্তবে কিছুদিন পর আততায়ীর গুলিতে সেই ব্যক্তির মারা যাওয়ার ঘটনা বিশ্বজুড়ে আড়োলন সৃষ্টি করেছিলো।
(আব্রাহাম লিংকন) “আততায়ীর হাতে নিহত হওয়ার কয়েকদিন পূর্বে এমনি স্বপ্ন দেখেছিলেন আমেরিকার মহান প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কন। তিনি তাঁর স্ত্রী এবং ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওয়ার্ড লেমনের নিকট তাঁর স্বপ্নের ঘটনা বর্ণনা করেন। লিঙ্কন বলেন, ‘আমি স্বপ্ন দেখলাম, আমি হোয়াইট হাউসের বিভিন্ন কক্ষে ঘুরে বেড়াচ্ছি। কিন্তু কোনো কক্ষেই কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। কিন্তু শুনছি প্রতিটি কক্ষ থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ।’
‘হোয়াইট হাউসের পূর্বদিকের কক্ষে আমি দেখতে পেলাম পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রক্ষিত একটি কফিন। প্রহরী সৈনিকদের চারদিক ঘিরে রয়েছে শোকাচ্ছন্ন নারী-নর।’ আমি তাদের জিজ্ঞেস করলাম, ‘এটি কার লাশ? হোয়াইট হাউসে কে মারা গেছেন?’
তারা জবাব দিল, প্রেসিডেন্টের। তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন।’ প্রেসিডেন্ট লিঙ্কন স্বীকার করেন যে, ‘যদিও এটি ছিলো একটি স্বপ্ন, তবুও তা আমার মনের ওপর গভীর প্রভাব বিস্তার করেছিল। সারারাত আমার আর ঘুম এল না। মনে হলো, আমি সবকিছুর পরিসমাপ্তির দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। মনটা বেদনায় লীন হয়ে গেলো। অনেক চেষ্টা করেও আমি এই বেদনাদায়ক অনুভূতিকে দূরে ঠেলে দিতে পারছিলাম না।”
আনন্দময় স্বপ্ন দেখলে মনে চমৎকার একটা অনুভূতি জাগে। তেমনি খারাপ স্বপ্ন দেখলেও আমার শিহরিত হই, ভয় পাই। একটা অজানা আশঙ্কার ছায়া যেন থেকে যায় কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিন।
# স্বপ্ন সব সময় রুপক অর্থেই সমস্তটাই দেখায় স্বপ্ন ঠিক তা নয়। সরাসরিও সত্য ঘটনাও স্বপ্নে দেখা যায়। এমনি একটি ঘটনা ঘটেছিলো বাংলাদেশের কথাশিল্পী জুবাইদা গুলশান এর জীবনে। তিনি যে ঘটনা স্বপ্নে দেখেছিলেন ঠিক সেই ঘটনা তিনি পরে দেখেছিলেন।
(কথা শিল্পী জুবাইদা গুলশান)“সে সময় তিনি ডেনমার্কে ছিলেন। একদিন স্বপ্ন দেখলেন আকাশে একটা প্লেনে আগুন ধরে গেছে। এবং শেষ পর্যন্ত পুরে ধ্বংস হয়ে গেছে প্লেনটি। তারপর এই স্বপ্নের মধ্যেই দেখলেন আগুন লেগে ধ্বংস হয়ে যাওয়া বিমানের পাইলটকে কাঠের কফিনে করে কবর দেয়া হলো। ঘুম ভাঙার পর ভীষণ ভয় পেয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। তখন তাঁর এক ঘনিষ্ট আত্মীয় বিমানের সাথে সংশ্লিষ্ট চাকুরি করেন। তিনি তাদের খবরাখবর নিয়ে সতর্ক থাকতে বললেন।
এর ঠিক পরের মাসেই জুবাইদা গুলশান আরার সেই আত্মীয় এয়ার কমোডর বাশারের মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে। তিনি তখন দেশে ফিরে এসেছেন। টেলিভিশনে যখন বাশারের মৃত্যু পরবর্তী ঘটনা দেখছিলেন তখন স্তম্ভিত হয়ে গেলেন জুবাইদা গুলশান আরা। ঠিক এ ঘটানাটাই স্বপ্নে ঘটতে দেখেছিলেন তিনি।”
# নেতা নির্বাচনের ক্ষেত্রে স্বপ্নের অবদান অনস্বিকার্য।এমনি একটি মাত্র স্বপ্ন ইউরোপের ইতিহাসকে প্রভাবিত করেছিলো ব্যাপকভাবে। সেই ইতিহাস আজো অনেকেই স্মরণ করে।
(রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার এর একজন প্রভাবশালী সভাসদ সিসিরো)
“রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার তখনও জীবিত। তার একজন প্রভাবশালী সভাসদ সিসিরো এক রাতে স্বপ্ন দেখেন যে, সিজারের যোগ্য উত্তরাধিকারী মনোনয়নের জন্যে দেবতা জুপিটার সিনেটের তনয়দের প্যারেড পরিদর্শন করছেন। কিন্তু কাউকেই দেবতার মনঃপুত হলো না। এমন সময় প্যারেডের মাঠে দেখা গেলো এক অদ্ভুত তরুণকে। দেবতা জুপিটার তাকেই মনোনীত করলেন সিজারের উত্তরাধিকারী। ঘুম ভাঙার পরও সিসিরোর মনে স্বপ্নে দেখা তরুণের মুখচ্ছবি ভাসতে লাগল।
পরদিন সিসিরো দরবারে যাওয়ার পথে একদল তরুণের সাক্ষাৎ পেলেন। তারা শরীরচর্চা শেষে ফিরছিল। তাদের মধ্যেই তিনি দেখতে পেলেন স্বপ্নে দেখা তরুণকে। সিসিরো এর পূর্বে সে তরুণকে কখনো দেখেননি। খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারলেন, তরুণের নাম অক্টাভিয়াস। তার বাবা-মার তেমন কোনো পরিচিতি রাজধানীতে নেই।
কয়েক বছর পরের কথা। সিজারের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হলো। সিসিরো তার স্বপ্নের বলে বলিয়ান হয়ে সর্বশক্তিতে অক্টাভিয়াসের পক্ষ সমর্থন করলেন। অক্টাভিয়াস আরোহণ করলেন রোমের সিংহাসনে। অক্টাভিয়াসই পরে সর্বশ্রেষ্ঠ রোম সম্রাট হিসেবে অগাস্টাস নামে ইতিহাসখ্যাত হন।”
# স্বপ্ন দ্বারা উদ্ধারকার্য সম্পূর্ণ সত্যিই একটি বিরল ঘটনা। তারপরও এমন ঘটনা অহরহই ঘটছে। কে যেন নির্দেশ দেয় এই কাজ করতে হবে। সব্প্ন গ্রহিতারা ত্রেতার মতো ছুটে যায় এবং সেই দূর্ঘটনার মতো ঘটনা থেকে মুক্ত করে অসংখ্য জনতাকে। ধর্মগ্রন্থগুলোতে এ জাতীয় স্বপ্নের ঘটনা বেশি শোনা যায়। ধর্মগ্রন্থগুলো শুধু নয় এমন স্বপ্ন সাধারণ মানুষের জীবনে ঘটে।
(এড্রিন ক্রিশ্চিয়ান)“ম্যান দ্বীপে বসবাসরত বালক এড্রিন ক্রিশ্চিয়ান স্বপ্ন দেখে যে, সে একটি জাহাজে ক্যাপ্টেনের দায়িত্বলাভ করেছে। তার পরিবার রয়েছে অন্য জাহাজে। তারপর জাহাজটি হঠাৎ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়ে এবং সে তার জাহাজ নিয়ে তাদের উদ্ধার করে। পরদিন সকালে সে তার ভাই টমাসকে স্বপ্নের কথা বলে। বালক এড্রিন একদিন সত্যি সত্যি জাহাজের ক্যাপ্টেনে পরিণত হয়।
১৮৮০ সালে ‘বৃটিশ ইণ্ডিয়া’ জাহাজ অস্ট্রেলিয়ার লণ্ডনী থেকে রেঙ্গুনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ জাহাজ পরিচালনার ভার ছিল ক্যাপ্টেন এড্রিন ক্রিশ্চিয়ানের ওপর। রেঙ্গুন অভিমুখে যাত্রার কয়েকদিন পর পর ক্যাপ্টেন এড্রিন স্বপ্ন দেখেন যে, একটি জাহাজ বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। স্বপ্নের শেষে ‘ফ্যামিলি’ শব্দটি অত্যন্ত জ্বলজ্বলভাবে তার চোখের সামনে ভাসতে থাকে। ছোট বেলার স্বপ্নের কথা মনে পড়ে যায় তার। পরদিন তিনি তার সন্ধান তৎপরতা দ্বিগুণ বৃদ্ধি করলেন।
পরবর্তী রাতে একই স্বপ্নের পুনরাবৃত্তি ঘটে। তার মধ্যে এ অনুভূতির সঞ্চার হয় যে, বিপদগ্রস্ত জাহাজটি তার নিজের জাহাজের উত্তরে রয়েছে। অধীনস্থ অফিসারদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও তিনি তার জাহাজের গতি উত্তরে পরিবর্তিত করেন। দু’দিন ক্রমাগত চলার পর তিনি দূর-দিগন্তে একটি নিমজ্জমান জাহাজের মাস্তুল দেখতে পান। বিপন্ন জাহাজের কাছে সময়মত পৌঁছতে পারায় ২৬৯ টি প্রাণ রক্ষা পায়। এদের মধ্যে তার ভাই টমাসও ছিলেন। নিমজ্জিত জাহাজটির নাম ছিল ফ্যামিলি।”

স্বপ্নের এমন অসংখ্য প্রমান দেওয়া সম্ভব।অনেক সময় এমন স্বপ্নও মানুষ দেখে থাকে যখন স্বপ্ন দেখার সময়ই ঘটনাটা ঘটছে।এমন ঘটনাও ঘটেছে-ছেলে বিদেশে থাকে,যে সময়ে সে স্বপ্নে তার বাবার মৃত্যু দেখেছে ঠিক সে সময়েই বাস্তবে তার বাবা ইন্তেকাল করেছেন। টেলিপ্যাথি ছাড়া অন্য কোনভাবে এমন ঘটনার ব্যাখ্যা করা যায় কি? লাঠি, সাপ, পিস্তল, গর্ত, ঘর, কাগজ, গহনা, ঘোড়ায় চড়া, চাবি, নদী, সমূদ্র ইত্যাদি নানা রকমের স্বপ্ন প্রতীকের ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। ওড়ার স্বপ্ন, পড়ে যাবার স্বপ্ন, নিজেকে উলঙ্গ দেখার স্বপ্ন, পরীক্ষার স্বপ্ন, চোর ডাকাতের স্বপ্ন, পানিতে পড়ে যাবার স্বপ্ন, প্রিয়জনের মৃত্যুর স্বপ্ন ইত্যাদি স্বপ্নও প্রতিকী।ধর্মগ্রন্থগুলো হাজারে হাজারে অসংখ্য এমন স্বপ্ন এর দৃষ্টান্ত দেওয়া যেতে পারে। অসংখ্য উদাহরন দেওয়া যাবে যার অলৌকিকত্ব কোনভাবে হালকা ভেবে নেওয়া যাবে না। তাহলে কিভাবে “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস” এসব তত্বকে মেনে নিয়ে ধর্মগ্রন্থগুলোকে অস্বীকার করি। “এক্টিভেশন-সিন্থেসিস তত্বটা শুধুমাত্র বস্তুগত বিষয়টাই বুঝতে পেরেছে এর গভীরের মধ্যে যেতে পারে নাই। আধুনিক জ্ঞান এখন পযর্ন্ত স্বপ্নের মধ্যকার অনুভূতী, দৃশ্যের সংশ্লিষ্টতার দিকগুলো ব্যাক্ষা করতে পারে নি। বিজ্ঞানীরা স্বপ্নকে ব্যাটারি বা চার্জের সাথে তুলনা করেন। তাদের মতে এ সময় জাগ্রত অবস্থার মস্তিস্কের ক্ষয়িত সব রাসায়িনিক পর্দাথের পূর্ণবন্টন হয় যা পরবর্তী দিনের কর্মযজ্ঞ এর জন্য আবশ্যক। যদি তাই হয় তাহলে এই প্রশ্ন স্বাভাবিক ভাবে চলে আসে যে আগামীদিনের রাসায়নিক পর্দাথের পূর্ণবন্টন কি করে সম্ভব যদি চার্জ হবার জন্য মানবদেহের মস্তিস্ক যদি কোন ক্ষেত্র এর সাথে সম্পৃক্ত না থাকে? তবে কি সেই ক্ষেত্র? তবে কি মানবদেহ ঘুমের সময় যোগাযোগ করে তার নিদীষ্ট কোন ক্ষেত্রের সাথে? কিভাবে এই যোগাযোগ সম্ভব? মহাবিশ্বের সাথে তবে কি মানুষের যোগাযোগের আলাদা কোন সংযোগ আছে? যে সংযোগ মানুষের সাথে মহাজাগতিক মিথস্ক্রিয়া সৃষ্টি করে।আর এই কারনে অতিপ্রাকৃতিক জগতের মাধ্যমে মানুষ স্বপ্নে তথ্য পায়? হ্যা এমনি চিন্তাচেতনা ইদানিং চলছে।কি এ মহাবিশ্ব এর সাথে মানবদেহের যোগাযোগ থাকে ঘুমের সময়? কিন্তু এ সম্পর্কে কি কোন বৈজ্ঞানিক কোন থিসিস আছে? হ্যা স্বপ্ন নিয়ে এমনি একটি তত্ত্ব বর্তমানের বিজ্ঞানে আড়োলন করেছে।নিউইউর্কের ডি স্কট একটি ব্লগে বলেন “ I have often thought a similar theory, that perhaps the mind receives signals from elsewhere. Like a TV picking up its signal giving us clues or an image of something.. –(D. Scott newyork)

পরবতীয় অংশ ৩য় পর্বে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:০৪

একটি পেন্সিল বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই পর্বের জন্য অপেক্ষা করছিলাম।♥♥♥♥♥

০১ লা অক্টোবর, ২০১৬ সকাল ১১:০০

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ

২| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৩৭

ঋতো আহমেদ বলেছেন: সুন্দর করে লিখছেন। ভাল লাগছে

২১ শে নভেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:২৭

রাশিদুল ইসলাম লাবলু বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.