নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ ভোর ৪:০২

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা

৩৫)

অন্ধত্ব আর নিয়ম নিয়ে দুটো গল্প

শিল্পী তার আত্মার একাকীত্বকে শান্ত হতে বললো

আলিফ

এটা অনেকেই জানে না-জীবন্ত ঘোড়াকে দেখে ছবি আঁকার কায়দা আমাদের শিল্পীরা ইউরোপের ওস্তাদ শিল্পীদের কাছ থেকে শেখেনি,ওটা আসলে কাজভিনের নামকরা ওস্তাদ শিল্পী জামাতুলিনের ছবি আঁকার একটা নিয়ম।খান লম্বু হাসান,কাজভিন জয় করার পর,ওস্তাদ জামাতুলিন খান বই তৈরীর কাজে যোগ দিয়ে শুধু সন্তষ্ট হয়নি,এক এক করে সরানো আরম্ভ করলো খানের চরিত্রকে কলুষিত করে আঁকা ছবিগুলো।ষাট বছর ধরে ছবি আঁকায় ব্যাস্ত আরম্ভ হলো ওস্তাদ শিল্পীর তাবেদারীর যুদ্ধ যাত্রা।

কিন্ত নতুন ছবিগুলো বই এর পাতায় সাজানোর আগেই,ওস্তাদ জামালুতিন যুদ্ধে শত্রুদের কামানে অন্ধ হয়ে গেল,তবে ওস্তাদ জামালুতিনের কাছে সেটা আল্লাহর দেয়া নেয়ামত,
পৃথিবীতে সবকিছুই ঘটে আল্লাহর ইচ্ছায়।তার পূর্বসুরী আরও অন্যান্য মহান শিল্পীদের মতই ওস্তাদ জামালুতিনের বিশ্বাস ছিল যে,শিল্পীরা ছবি আঁকেযা দেখে তা না বরং তুলে ধরে তুলির টানে তার অন্তরে লুকোনো ছবিটা,আর অন্ধ এক শিল্পীর দেখা সম্ভব প্রকৃতির সেই রুপটা,যা সাধারণ আলোর মানুষের পক্ষে দেখা সম্ভব না কোন সময়।তার এই উপলদ্ধি অন্যান্যদের সাথে ভাগ করার জন্যে কয়েকজন উঠতি কালিগ্রাফ্রারকে ডেকে পাঠালো ওস্তাদ জামালুতিন তার নির্দেশমত ছবি আঁকার জন্যে।

যাদের কাজ ছিল জামালুতিনের অনুভুতির ঐশ্বরিক ঘোড়া যারা ছুটে বেড়াচ্ছিল অন্ধকার পৃথিবী থেকে ছবিতে আঁকা।ওস্তাদের মৃত্যুর পর শিষ্যদের কাছে দেয়া ৩০৩ ঘোড়া আঁকার নিয়ম নিয়ে বের হলো বই, ‘ঘোড়া আঁকার পদ্ধতি’, ‘স্রোতের ঘোড়া’, ‘ঘোড়ার প্রেম’,
বইগুলো যা আজও শিল্পীদের সাহায্য করে যাচ্ছে।বের হলো অনেক নতুন নতুন সংষ্করন,
নতুন বই-আর ও অনেক কিছু যোগ হলো।লম্বু হাসানের যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পরে আসলো পারস্যের হেরাতের পদ্ধতিতে ছবি আকা,ভুলে গেল সবাই ওস্তাদ জামালুতিনের দেখা,উপলদ্ধির কথা।

তবে কোন সন্দেহ কেমালুতিন রেজার ঐ বইগুলোর সমালোচনা ছিল সবচেয়ে বড় একটা কারণ।কেমালুতিন রেজার মতে ঘোড়াগুলো কল্পনার ফানুসে সাজানো,গুলো হতেই পারে না,নিখুঁত কোন ঘোড়া যা আল্লাহর কৃপায় ওস্তাদ জামালুতিনের মনে ভেসে ওঠতো কেমালুতিনের মতে পুড়িয়ে ফেলা ঐ বইগুলো।লম্বু হাসানের পরাজয়ের পর সুলতান মেহমুতের লুঠের সাথে ওস্তাদ জামালুতিন এর আঁকা বইগুলোও চলে গেল ইস্তাম্বুলে।আর এটা খুব একটা অবাক হওয়ার কথা না,মাঝে মাঝে আজও ঘোড়াগুলো দেখা দেয় নানান বই এ।

লাম

হেরাত বা সেরাজ এ,যখন একজন ওস্তাদ যখন ছবি আঁকতে আঁকতে অন্ধ হয়ে যেত,অন্যান্য শিল্পীরা মনে করতো সেটা ছিল তার ছবিতে মুগ্ধ হয়ে আল্লাহর দেয়া পুরস্কার।এমনও বিশ্বাস ছিল অনেক শিল্পীর,ওস্তাদ শিল্পীরা যারা বার্ধক্যেও অন্ধ হয়নি,অপয়া ভেবে তাদেরকে অন্য সব শিল্পীরা সন্দেহের চোখে দেখতো,এই ভঁয়ে অনেক ওস্তাদ শিল্পী নিজেদেরকে অন্ধ করে ফেলতো।শ্রদ্ধায় ডেকে আনতো অনেকেই ঐ শিল্পীদের যারা নিজেদেরকে অন্ধ করতে দ্বিধা করেনি।

ঠিক এ রকম সময় আবু সায়িদ-তৈমুর লং এর নাতি,মিরান শাহের উত্তরাধিকার,তাসখন্দ আর সমরখন্দ জয় করার পর,শিল্পীদের মধ্যে শুধু অন্ধত্ব না,উপলদ্ধির অনুভুতির পার্থক্য বোঝার চেষ্টা করছিল।সিয়াহ ভেলি নামে,একজন পুরোনো ওস্তাদের বুঝতে পারলো আবু সায়িদের কথাটা,উপলদ্ধিই সবকিছু।সিয়াহ ভেলির মতে,অন্ধত্বের অন্ধকারে শিল্পীদের মনে ফুটে ওঠে নিখুঁত ছবিটা,সেটা এক ধরণের উপ্লদ্ধি,তবে দক্ষ শিল্পীদের দৃষ্টিও উপলদ্ধি করতে পারে ঐ অন্ধকারের দেশের ছবিটা তারা তুলে ধরতে পারে আলোর দেশেও।প্রায় একাত্তর বছর বয়সে খোলা চোখে তুলির আঁচড়ে ফুটে উঠলো সিয়াহ ভেলির হাতে নিখুঁত ঘোড়ার ছবি।
সিয়াহ ভেলির এই ছবি আঁকা শেষ হওয়ার পর মিরান শাহের আদেশে বিরাট একটা অনুষ্টানের আয়োজন হলো,বোবা শিল্পীদের গল্প বলা আর বধির শিল্পীদের বাশী বাজানো নিয়ে।মিরান শাহ সিয়াহ ভেলির অন্ধ হওয়ার আগে পুরোনো ঘোড়ার সাথে তুলনা করে দেখলো কোন পার্থক্য ছিল না,কোন।

ঘোষনা করা হলো,অন্ধত্ব কি দৃষ্টিতে শিল্পীর দেখার চোখে কোন তফাৎ নাই,শিল্পীর কাছে আল্লাহর দেয়া উপলদ্ধিতে কোন রকমফের হয় না।আর প্রতিভাবান শিল্পীদের কাছে আলো আর অন্ধকারে কোন তফাৎ নাই,তুলির আচড়ে হাত এঁকে যাবে একই ছবি,এই পদ্ধতির রং ঢং চলনের তেমন একটা ব্দল হয়নি।শিল্পীরা প্রায় শ দেড়েক বছর ধরে সিয়াহ ভেলির আঁকা ঘোড়ার অনুকরন আজও করে যাচ্ছে।আবু সায়ীদ যুদ্ধে হেরে সমরখন্দ থেকে চলে গেল কাজভিনে,সেখানেই বছর দুই পরে তাকে হত্যা করা হয় পবিত্র কোরানের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে, ‘অন্ধ,আর চোখের মানুষের দেখা এক না,এটা আল্লাহর কথা’,এ কারণেই কাফের বলে তার চোখ দুটো অন্ধ তাকে হত্যা করে করে নিজাম শাহের সৈন্যরা।

আরেকটা গল্প বলার ইচ্ছা আমার,ওস্তাদ শিল্পী বিহজাদের এক শিষ্য হরিন চোখের কালিগ্রাফারের গল্প,মানুষটা নিজের চোখ অন্ধ করে দেয় ওযাতে তাকে হেরাত থেকে তাব্রিজ নিয়ে যাওয়ার পর কোন ছবি আঁকতে না হয়।আর যেহেতু ওস্তাদ ওসমানের কাছে আমার ছবি আঁকা শেখা,তার প্রভাবে আমি বেশ কিছুটা আবদ্ধ হয়ে গেছি।বাচিক শিল্পীর গল্প শোনায় মত্ত আমি তখন,কি ভাবে জানতাম যে আজকে শয়তানের গল্প হবে?

আমার বলার ইচ্ছা ছিল,শয়তানেরই আবিষ্কার এই সব নানান ছবি আঁকার নিয়মের বিকাশ,
শয়তানের প্ররোচনায় ভাগ হয়ে গেছে পূর্ব থেকে পশ্চিম।চোখ বন্ধ করে বাচিক শিল্পীর গল্প শুনতে শুনতে খসড়া একটা কাগজে শয়তানের ছবি আঁকলাম,ছবিটা দেখে আশেপাশের লোকজন,বাচিক শিল্পীর সহকারী সবাই খিক খিক করে হাসছিল।

আমার নিজের কি কোন আঁকার কায়দা আছে,হয়তো না,হয়তো এটা কি মদের নেশার কল্যাণে!


আমিই,শয়তান

জলপাই তেলে ভাজা ছোট ছোট লাল মরিচ আমার খুবই পচ্ছন্দ,ভাললাগে আমার শিশির সকালে শান্ত সমুদ্রের বৃষ্টির শব্দ,ভাললাগে জানালায় দাঁড়ানো নাম না জানা মেয়েটাকে।আমার আত্মবিশ্বাস অনেক,কিছুই যায় আসে না আমার,কে কি বললো আমাকে নিয়ে?যাকগে আজকে এই কফির দোকানে আমার আসার একমাত্র কারণ,যাতে শিল্পী আর কালিগ্রাফার বন্ধুদের ভুল বোঝাবুঝিটা ঠিক করে দেয়া যায়।

তবে জানি,যেহেতু আমি বলছি এ সব,এর উল্টোটাই বিশ্বাস করবে সবাই,তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টাটাই অকেজো হবে।অবশ্য অনেকে যারা বুদ্ধিমান তারা ভাবতে পারে আমার কথাগুলো সত্যি,উল্টোটা হিসেব করে ওতো বিবেক বিবেচনার হিসেবে বসে যাবে না।এটা তো সকলেই জানে,আমার নাম কোরআন শরীফের ৫২ জায়গায় লেখা আছে,অনেকটা বলা যায় বহুল ব্যাবহার করা একটা নাম,বলা আছে আমার কর্ম অপকর্মের কথা।

আল্লাহর পবিত্র বই কোরআন নিয়েই আলোচনাটা শুরু করা যাক,কোন সন্দেহ নেই ওখানেও আমাকে নিয়ে যা কিছু বলা সবটুকুই সত্যি।এ কথাগুলো গর্ব করে বলছি না,বরং বিনয় করেই বলছি,তবে কোরআন শরীফে আমাকে এত খাট করে দেখানো,আমার জীবনের একটা দুঃখ,এই একটা যন্ত্রনা আমাকে কুরে কুরে খাচ্ছে।

এটা তো সবার জানা,আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করে মাথা নত করে ফেরেশতাদের সম্মান দেখানোর আদেশ দেয়।হ্যা,ওটাই সত্যি যে ভাবে লেখা আছে।অন্যান্য ফেরেশতারা মাথা নত করে সম্মান দেখালেও,আমি মাথা নত করিনি।আমি সবাইকে বলতে ভুলিনি-মানুষ,ঐ নতুন সৃষ্টি আর কিছু না,কাদামাটির একটা পুতুল,আরফেরেশতারা তো আগুন থেকে তৈরী,
নিঃসন্দেহে ঐ কাদামাটির চেয়ে উন্নত কিছু।আর আল্লাহ আমার এই ব্যাবহার সহ্য করতে পারেনি,“অহংকারী”বলে’।

‘বের হয়ে যাও এই বেহেশত থেকে,এ ধরণের সৃষ্টির যোগ্যতা নেই এখানে থাকার’।

‘আমাকে শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার অনুমতি দেয়া হোক,যখন মৃতেরা জীবিত হয়ে উঠবে আবার’।

আল্লাহ আমার সেই আকুতি মঞ্জুর করলো,আর আমিও প্রতিজ্ঞা করলাম,কাদামাটির তৈরী মানুষদের প্রলুদ্ধ করে নিয়ে যাব নানান ভাবে ভুল পথে।আল্লাহও বললো,নরকে যাবে ঐ সব লোক যারা অন্যায় করবে,এটা বলার অপেক্ষা রাখে না আমরা আমাদের কথামত যা করার করে যাচ্ছি।

অবশ্য অনেক বানোয়াট কথা মানুষ বলে,আমি আর মহাশক্তিমান আল্লাহর একটা চুক্তি হয় ঐ সময়টায়,তবে আমার কাজ আল্লাহর সৃষ্টিদের বিশ্বাস নষ্ট করা।যাদের মাথায় বুদ্ধি আছে তারা বিচার বুদ্ধি করে ঠিক কাজ করে,আর যারা লোভ হিংসায় ডুবে থাকে,তারাই করে যত অপকর্ম,নরক ছাড়া আর কোথায় জায়গা হবে তাদের।এ জন্যেই আমার কাজের একটা বিশেষত্ব আছে,না হলে সবাই যদি বেহেশতে যেত,তা হলে আল্লাহকে ভঁয় করার আর কোন কারণ থাকতো না।

পৃথিবীতে ভালমন্দের অস্তিত্ব না থাকলে অচল হয়ে যেত পৃথিবী,আমি অবশ্য আল্লাহর কাছে চিরকৃতজ্ঞ আমাকে শেষ দিন পর্যন্ত বেঁচে থাকার সূযোগটা দেয়ার জন্যে।তবে নোংরা অভিশাপ হিসাবে আমাকে চিহ্নিত করার জন্যে কেমন জানি একটা যন্ত্রনায় ভুগী এখনও।সুফী মনসুর আর ইমাম গাজ্জালীর ছোট ভাই আহমেদ গাজ্জালীর মতে শয়তানের অন্যায়ের অস্তিত্ব, আল্লাহর আদেশ মতই আছে,থাকবে।

ঐ বোকা মানুষরা,খুন হলো ওটা তো তাদের বোকামীর জন্যেই।পৃথিবীতে ভাল মন্দ আছে,
থাকবে আর এ দুটোর মধ্যে ভাগ করে বিচার করার দায়িত্ব আর কারও না মানুষের।আমি তো আল্লাহ না,আমাকে মাফ করো,মহান আল্লাহ,ঐ সব বেকুবদের মাথায় কথাগুলো আমি সাজাইনি,ওরা নিজেরাই এই সব বলে যাচ্ছে।

আমার আর একটা অভিযোগ হলো,সবাই অপবাদ দিলেও পৃথিবীর সব পাপ আর অন্যায়ের উৎস আমি না।অনেক মানুষই তাদের আকাঙ্খার অন্ধত্বে,চাওয়ায়,মানসিক শক্তির অভাবে,
বোকার মত জেনে শুনে অনেক পাপ করে যাচ্ছে,ওখানে আমার হাত দেয়ার কোন দরকার নাই।আবার কয়েকজন সূফী যতসব অন্যায় অপরাধ সব আমার কাঁধে চাপিয়ে দেয়,সেটা কোনভাবেই ঠিক না,যা পবিত্র কোরআনের বিপক্ষে।আমি তো কোন ব্যাবসায়ীকে বলে দিচ্ছি না লাভ বাড়ানোর জন্যে,বলে দিচ্ছিনা ভাল আপেলের সাথে পচা আপেল মেশাতে,এমন কি যে ছেলেটা অযথা মিথ্যা কথা বলছে সেটাও আমার দোষ,বুড়ো মানুষটা যে হেঁটে যাওয়া যুবতীকে দেখে দিনের বেলা স্বপ্ন দেখছে,সেটাও আমার দোষ,এ গুলো আমার নামে অযথার অপবাদ?আমার চেষ্টা,আমার কাজ হলো তোমাদেরকে বড়সড় অন্যায় জড়ানো,রক্তের বন্যা,অত্যাচারের চরম মাত্রায় নেয়া।আবার অনেক হোজা আছে যারা না বুঝেই বলে যাচ্ছে হাঁচি,কাশি ছোটখাট যত দোষ আছে সব আমার কারণেই,এটা আমার উপরে অযথা অত্যাচার করা ছাড়া আর কিছু না।

অনেক বলতে পারে,ওরা ভুল বুঝছে,তাতে তো তোমারই লাভ,কিন্ত আত্মমর্যাদা বলে একটা কথা আছে,যার কারনেই মহান আল্লাহর কাছ থেকে শাস্তি পেয়ে আজ আমার এই অবস্থা,
অনেক ওটা অহংকার বলে হয়তো।যদিও আমি যে কোন রুপ ধারণ করতে পারি,তবুও হাজার হাজার বই এ লেখা আছে ছলনাময়ী সুন্দরী নারী হিসাবে অনেক ধার্মিক লোককে আমার বিপথে নেওয়ার কাহিনী।কিন্ত কেন জানি শিল্পী বন্ধুরা আমাকে শিংওয়ালা,মুখে আঁচিল ফোঁড়ায় বীভৎস চেহারার একটা দানব হিসাবেই আঁকা পচ্ছন্দ করে।

তা আমার ছবির কথা থাক,ইস্তাম্বুলের রাস্তার এক মোল্লা যার নাম আমি বলবো না,
লোকজনকে আমার নামে যা তা বলে উস্কাছে,অযথাই উত্তেজিত করে বেড়াচ্ছে।ওরা আমার উদ্ধৃতি দিয়ে বলছে,আজান আর গানের মধ্যে তেমন একটা পার্থক্য নাই,দরবেশদের বাড়ীতে মানুষের ধার্মিক জমায়েত,আর গানের সুরে আধ্যাত্মিকতা খোঁজায় কোন পার্থক্য নাই।
মোল্লাদের সাঙ্গপাঙ্গ কয়েকজন শিল্পীও আছে যারা বলছে নতুন সব ছবি আঁকার পদ্ধতি আসছে আমার প্ররোচনায়।যুগ যুগ ধরে দেশে দেশে আমার নামে অযথাই কত সব বদনাম রটানো হচ্ছে,আমি এখন হতভাগা একটা চরিত্র।

সব কিছু সাজিয়ে প্রথম দিক থেকেই বলি,সবাই আমার ইভকে প্রলুদ্ধ করে নিষিদ্ধ ফল খাওয়ার গল্পটাতেই আঁটকে আছে,কিন্ত আরও অনেক কাহিনী আছে,আর এটা সর্ব শক্তিমান আল্লাহর সামনে বেয়াদবী করার আগের কথা।কোন কিছুর আগে আল্লাহ সর্ব শক্তিমানের ফেরেশতাদের সামনে মানুষকে আনা-আর আমার যথাযথ সেটা প্রত্যাখান করার কথা ভুলে গেলে চলবে কেন?

এটা কি কারও কাছে যথাযথ মনে হবে,আমাকে আগুন দিয়ে তৈরী করার পর,কাদামাটির তৈরী মানুষকে মাথা নত করে সম্মান করতে বলাটা কি ঠিক?যদিও অন্যান্য ফেরেশতারা সবাই মুখ বুজে মেনে নিলেও,আমি পারিনি।কেউ কি বলতে পারবে আগুনে তৈরী করা আমাকে কাদামাটির মানুষের সামনে নত হওয়াটা ঠিক?ভায়েরা সবাই আমি নিজের মনের কথা বলছি!অবশ্য অনেকেই ভঁয় পাচ্ছে আমাদের এই সব কথাবার্তা এখানেই থাকবে না,ঠিকই সব জানাজানি হবে।আল্লাহ মহান ঠিকই সব জানবে,তারপর এটা নিয়েই এক সময় বিচার হবে সবার।ঠিক আছে আমি জানি সকলের মাঝে সচেতনতা আছে,আর এই কাদামাটি আর আগুন নিয়ে এখন কথা বলে আর কি লাভ?তবে এটা আমি গর্বের সাথে বলতে পারি,মাথা নত করিনি ঐ কাদামাটির সৃষ্টির কাছে।

এই মনোভাব নিয়েই ইউরোপের ওস্তাদ শিল্পীরা ছবি আঁকে,শুধু ছবি আঁকাটা না,সেটা যাতে যথাযথ ভাবে তুলে ধরা হয়,চোখের রং,ঠোটের সুন্দর রেখা,কপালের ভাঁজ,ছেলেদের কানের বিশ্রী চুল,এমন কি মেয়েদের স্তনের মাঝের ছায়াটা কোনটাই যেন বাদ না পড়ে,ওটা তাদের তুলির দায়িত্ব মনে করে।ছবির চেহারা এতই জীবন্ত হয়ে যায় সেটা একেবারেই অবিশ্বাস্য,
আর সেটা দেখে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক।কিন্ত মানুষের প্রতিচ্ছবিকে এত প্রাধান্য দেয়ার মানেটা কি,যে তার স্তনের মাঝের ছায়াটাও যেন বাদ না পড়ে,তাতে কিইবা যায় আসে।যদি দূরের বাড়ীটা ভুল ভাবে মানুষের দৃষ্টিতে ছোট করে দেখানোটা কি ঠিক,তা হলে মহান আল্লাহর অবস্থানটা কোথায় হবে?আল্লাহ মহাশক্তিমানের জানা আছে সবকিছু,তবে এই সব গুজব দিয়ে ছবি আঁকার নিয়ম,কানুনের দোষ আমার দিকে ঠেলে দেয়াটা তো ঠিক না।আমি তো মানুষের সামনে মাথা নত না করে এমনিতেই যন্ত্রনাতে শেষ হয়ে যাচ্ছি,আবার আমি অবুঝের মত এটা ওটা করে কেন আমার যন্ত্রনা আরও বাড়াবো?

আমার আর কিছু কথা আছে,তবে ঐ সব মানুষদের জন্যে না যারা তাদের শরীরের
কামনার স্রোত,টাকার লোভ বা ঐ ধরণের অপকর্মের জন্য অস্থির হয়ে আছে।হয়তো একমাত্র আল্লাহ মহান,তার সীমাহীন জ্ঞানে বুঝতে পারবে আমার কথাগুলো।এটাও তো ঠিক কথা মানুষের মনের এই গর্ব সেটাও আল্লাহর দেয়া,যে ফেরেশতাদেরকে ঐ কাদামাটির শরীরের সামনে মাথা নত করতে হলো।এখন ঐ মানুষেরাই নিজেদের নিয়ে ব্যাস্ত,তাদের পৃথিবীতে আর কিছুই নাই।এখন যে কোন মানুষ নিজেকে দেখতে চায় নিজেদের ইউরোপের ঐ ছবি আঁকার ধরণে।আমি জানি আল্লাহ তোমাকে সবাই ভুলে যাবে,আর দোষটাও হবে আমার।

কি ভাবে বোঝাবো আমি অবশ্য এগুলো নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাই না,আজও হাজার হাজার বছরের ঢিল পাটকেল খাওয়ার পরেও টিকে আছি নিজের দুই পায়ে।হয়তো আমার বিরুদ্ধে ক্ষেপে যাওয়া লোকেরা ভুলে যাচ্ছে,মহান আল্লাহ দেয়ার শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত সময় নির্ধারন করা আছে আমার জন্যে,আর মানুষের জীবন বড় জোর আশি কি একশ বছর।বরং ঐ সব লোকজনকে বলতে ইচ্ছা হচ্ছে,কফি খেয়ে আনন্দ করে সময় কাটালে হয়তো তাদের জীবনটা আরও কিছুটা লম্বা হবে।তবে এটাও জানি শয়তানের কথা ভেবে
লোকজন ঠিক উল্টোটাই করবে,কফি খাওয়া শুধু ছেড়েই দিবে না,বরং তুলে নিয়ে ফেলে দিবে পাছায়।

না,না,হাসবে না,কথা তো শুধুই না,তার মাঝের চিন্তাধারাই প্রধান।শিল্পী যখন ছবি আঁকে সেখানে ছবিটাই কি প্রধান,আসলে না,বরং ছবিটার আঁকার ধরণটাই প্রধান।তবে গল্প তো শেষ করতে হবে,এমনিতেই অনেক দেরী হয়ে গেছে।এই যে মিষ্টি কথার বাচিক শিল্পী আমার নিজের কথা বলার সূযোগ দিল,কিছুক্ষন পরেই ওখানে আসবে একটা সুন্দরী মেয়ের ছবি আর প্রেমের কাহিনী।


আমি,সেকুরে

বাবা ঘুমে কি যেন সব বললো,ভঁয়ে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।সেভকেত আর অর্হান দুজনে দুপাশ থেকে আমাকে আঁকড়ে ধরে ছিল,সেভকেতের হাতটা ছিল আমার পেটে,অর্হান শুয়ে ছিল আমার বুকে,ওদের ঘুম যাতে না ভাঙ্গে তাই অনেক কষ্ট করে উঠতে হলো।

ঘর ছেড়ে গেলাম সিয়াহের ঘরে,মোমবাতির আলোটা একটু টিমটিমেই ছিল,হাল্কা আলো বিছানায় পৌঁছালেও,শুয়ে থাকা মানুষটাকে ঠিক বোঝা যাচ্ছিল না।মোমবাতি সিয়াহর মুখের কাছে নিয়ে দেখলাম,খোঁচা খোঁচা দাড়ির,খোলা বুকের একটা ক্লান্ত চেহারা।আমি অর্হানের মতই তার বুকে নিজেকে জড়িয়ে ধরলাম,ও শুয়ে ছিল জড়সড় একটা পোকার মত,আর মুখে ছড়ানো ছিল এক কুমারীর আঁকাঙ্খা।

মনে মনে বললাম,‘এই মানুষটা আমার স্বামী’ৎযদিও তাকে মনে হচ্ছিল দূরের অজানা অচেনা কেউ,কেন জানি মনটা ভঁরা ছিল হতাশায়।যদি আমার কাছে চাকু থাকতো আমি কি ওকে খুন করতাম,যদিও ঐ ধরণের কোন কিছু করার ইচ্ছা ছিল না,আমার।তবে ছোটদের খেলা করার মতই ভাবছিলাম,কি হতো ওকে খুন করলে?বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল ওর সারা জীবনটা কেটে গেছে শুধু আমার কথা ভেবে,তবে অবিশ্বাস হচ্ছিল না ওর শিশুসুলভ সরলতায়।

ওর কাঁধে পায়ের নখের খোঁচা দিয়ে ঘুম ভাঙ্গালাম,আমাকে দেখে আনন্দ,উত্তেজনায় হতবাক হয়ে যায়নি সিয়াহ,বরং সে কিছুটা থতমত হয়ে গেল।ও কিছু বলার আগে আমি বললাম, ‘বাবাকে স্বপ্নে দেখলাম,তার কথায় বেশ বিচলিত হলাম আমি।বাবা বললো,তুমিই বাবার খুনী…’।
‘তোমার বাবা যখন খুন হয়,তখন আমরা দুজনে তো এক সাথেই ছিলাম’।
‘জানি’,আমি বললাম,‘বাবা তো বেশীর ভাগ সময় একা থাকতো, কে জানে তখন…’।
‘না,আমি তোমার বাবাকে খুন করিনি।তোমার ছেলেদের,তুমিই তো হাইরিয়ের সাথে বাইরে পাঠালে,আর ঐ কথা শুধু হাইরিয়ে আর এসথার শুধু জানতো।আর যদি কেউ জানে সেটা আমার চেয়ে তোমারই ভাল জানার কথা’।

‘অনেক সময় মনে হয়,আমার ভেতরের কেউ যেন আমাকে বলে দিচ্ছে কোথায় কি ভাবে সবকিছু যেন বদলে গেল,এই সব দূর্যোগের লুকোনো রহস্যটা কোথায়?আমি আমার মুখ খুলি কিন্ত কোন শব্দ বের হয় না।তোমাকে দেখে কেন জানি মনে হয় না,তুমি সেই সহজ সরল সিয়াহ’।
‘আমার সরলতা ধবংস করলে,তুমি আর তোমার বাবা’।
‘তুমি যদি প্রতিশোধ নেয়ার জন্যে আমাকে বিয়ে করে থাক,তবে নিঃসন্দেহে তুমি সার্থক।
হয়তো আমার ছেলেরা তোমাকে পচ্ছন্দ করে না’।
‘আমি জানি’,কোন দুঃখ ছিল না সিয়াহর বলায়, ‘তুমি যখন নীচতলায় ছিলে,ওরা আমাকে সিয়াহ,সিয়াহ… বলে ডাক দিয়ে ঠাট্টা করছিল,জোরে জোরে চীৎকার করে’।
‘ধরে মারনি,কেন’?ওটা যদিও ছিল আমার মনে,তবে কেন জানি ভঁয়ে,দ্বিধায় আমি বললাম, ‘ওদের গায়ে যদি একটা আঙ্গুলও তোল,তোমাকে আমি ছেড়ে দেব না’।
‘বিছানার কম্বলে ঢোক,না হয় ঠান্ডায় জমে যাবে’।

০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।

২| ০৪ ঠা জানুয়ারি, ২০২৪ রাত ১২:২৫

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.