নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৫৬

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা


(২৩)

‘চমৎকার উদহারণ’,আরেকজন বললো, ‘তবে এটাও তো ঠিক,রং কি আর চেনা যায়,
অনুভব করা যায় মন দিয়ে’।
‘আমার প্রিয় বন্ধু,কি ভাবে একজন বুঝতে পারবে লাল রং এর চমৎকারিত্ব যে লাল রং দেখেনি কোনদিন’?
‘আঙ্গুলের ডগা দিয়ে অনুভব করলে মনে হবে,এটা লোহা না হয় তামা।হাতের তালুতে ধরলে হাত পুড়ে যাবে,জিভ দিয়ে স্বাদ নিলে মনে হবে লবন দেয়া মাংস।মুখে দিলে সারাটা মুখ ভরে থাকবে,গন্ধে মনে হবে একটা ঘোড়া,যদি একটা ফুল হয় তবে সেটা হবে জবাফুল,লাল গোলাপ না’।
‘লাল রংটা কি’?প্রশ্ন করলো অন্ধ শিল্পী যার হাতের তুলিতে তুলে ধরা ঘোড়ার ছবি,তার স্মৃতি থেকে।
‘রং হলো এমন কিছু একটা,আছে আমাদের সামনে চোখের সামনে,আমরা দেখে যাই সবসময়,তবে তার সৌন্দর্য শুধু দেখায় না,উপলদ্ধির না থাকে যদি সেখানে’,
আরেকজন শিল্পী বললো,‘লাল বোঝানো যাবে না বর্ননায়,যে দেখেনি কোনদিন’।
‘আল্লাহর অস্তিত্ব অস্বীকার করার জন্যে শয়তানের শিষ্যরা আমাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করে,আমাদেরকে সন্দিহান করতে চায় আল্লাহর অস্তিত্ব নিয়ে,ওরা বলে আল্লাহকে দেখা যায় না কেন’?
‘আল্লাহ আছে সবখানে,সেটা দেখার চোখে বোঝার না,সেখানে দরকার অনুভুতি’,আরেকজন শিল্পী বললো, ‘এ জন্যেই পবিত্র কোরানে বলা আছে,অন্ধত্ব আর দেখার চোখ দুটা সমান না’।
কম বয়সী শিল্পী তখনও তার রং এর পোঁচটা টেনে যাচ্ছিল ঘোড়ার জিনে।কি অদ্ভুত এক অনুভুতি সাদা কালোর ওপরে আমার লাল সুরের ছোয়া,লোমের ব্রাশ দিয়ে আমাকে ছড়িয়ে দিচ্ছিল শিল্পী,একটু কাতুকুতুও লাগছিল,সারা পৃথিবীটা যেন আমার আয়ত্বে,যারা আমাকে দেখেনি তারাও জানে আমি আছি সব জায়গায়।



আমি সেকুরে

ছেলেরা ঘুম থেকে উঠার আগে সিয়াহকে লিখলাম, তাড়াতাড়ি যেন চলে আসে ফাঁসী দেয়া ইহুদীরা বাড়ীতে,হাইরিয়েকে চিঠিটা এসথারের হাতে পৌঁছে দিতে বললাম।দেখলাম চিঠিটা
নেয়ার সময় হাইরিয়ের চোখের ভাষাটা বদলে গেছে,বাড়ীর এই পরিস্থিতিতে তার ঔদ্ধত্যে দেখে অবাক হলেও,অবজ্ঞা করলাম।এখন হাইরিয়েকে ধীরে ধীরে বুঝতে হবে,গত দু বছর ধরেই সন্দেহ হচ্ছিল বাবার সাথে হাইরিয়ের অবৈধ কোন একটা সর্ম্পক আছে।আশেপাশের এটাও মনে হচ্ছিল হয়তো একটা বাচ্চাও আছে তাদের,ধীরে ধীরে বাড়ীর কতৃত্ব নেয়ার ইচ্ছা হয়তো হাইরিয়েরর।বাবার লাশটা পরখ করে দেখলাম,শরীরটা শক্ত হয়ে গেছে,তার হাতে চুমু দিলাম আবার।বাবার জুতা,পাগড়ী,আলখেল্লা একপাশে লুকিয়ে রাখলাম,ঘুম ভাঙ্গা ছেলেদেরকে বললাম,তাদের নানা সুস্থ হয়ে সকালে মুস্তাফা পাশার কাছে কাজে গেছে।

হাইরিয়ে তখন ফিরে খাবারের টেবিলে সকালের নাস্তা সাজাচ্ছিল,আমি কমলালেবুর জ্যাম টেবিলের মাঝখানে রাখলাম।এসথার হয়তো তখন সিয়াহর দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে,বরফ পড়াও থেমে গেছে,সূর্যের হাল্কা হাসি ছড়ানো আকাশে তখন।ইহুদীর বাড়ীর রাস্তার চেহারাটা বরফে তেমন একটা বদলায়নি,ছাদের কার্নিস থেকে বরফ জমে ঝুলে আছে,বাগানের শ্যাওলা,পচা পাতাগুলো সূর্যের আলোকে হাসিমুখে জড়িয়ে খেলা করছে।দেখলাম সিয়াহ ঠিক একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে যেখানে গতকালকে ছিল,তবে মনে হলো এর মাঝে কেটে গেছে বেশ কটা বছর,নেকাব তুলে বললামঃ
‘তোমার যদি সত্যিই আমাকে পচ্ছন্দ,সত্যিই যদি আমাকে বিয়ে করতে চাও,এখন আর বাবার কোন প্রতিরোধ,অভিযোগ নাই।গতকাল তুমি যখন আমার শরীর নিয়ে খেলা করছিলে,এক পাশব পিশাচ মানুষ বাড়ীতে ঢুকে বাবাকে খুন করে গেছে’।

সিয়াজর প্রতিক্রিয়ার কথা না ভেবেই হয়তো সবাই আমাকে নিষ্ঠুর আর নির্মম হ্রদয়ের মানুষ বলতে ব্যাস্ত হয়ে গেছে নিঃসন্দেহে,তবে এ ব্যাপারে আমার কোন মন্তব্য নাই।হয়তো ইচ্ছা ছিল কেঁদে উঠবো আর সিয়াহ সহানুভুতিতে বুকে জড়িয়ে ধরবে,কিন্ত কোন কিছুই হলো না।‘পিশাচটা যে ভাবে আমাদের বাড়ী তছনছ করে দিয়ে গেছে,তাতে ওর মনের পুরোনো ঘৃনা আর রাগটাই বোঝা যায়।মনে হয় না ওর কাজ শেষ হয়ে গেছে,ঐ পিশাচটা কি আর চুপচাপ বসে থাকবে।ও বাবার বই এর শেষ ছবিটা চুরি করে নিয়ে গেছে।আমি অনুরোধ করছি আমাদেরকে সাহায্য করার জন্যে-বাবার বইটা ঐ পিশাচের হাতে নষ্ট হওয়া থেকে রক্ষা করতে হবে তোমাকে।এখন খোলাখুলি বলো কি চাও,আমাদেরকে সাহায্য করার জন্যে?এটা আমাদেরকেই ঠিক করতে হবে’।

কিছু একটা বলতে চাচ্ছিল সিয়াহ তবে আমার চাহনি দেখে থেমে গেল।
‘আইনের চোখে,বাবার অবর্তমানে,স্বামী আর তার আত্মীয়স্বজনেরাই আমার অভিভাবক।এটা সত্যি ছিল বাবার মৃত্যুর আগেও,কেন না কাজীর আইনে আমার স্বামী এখনও বেঁচে আছে।শুধু একটা কারণেই শ্বশুর অনুমতি দিল আমাকে এ বাড়ীতে আসার জন্য,যখন রাতে হাসান ঘরে ঢুকে আমাকে ধর্ষন করার চেষ্টা করছিল,বিধবা হিসাবে আমাকে এখনও কেউ মেনে নেয়নি।হাসান বাবাকে এর মধ্যে কবার আইনের ধমক দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেও ছাড়েনি।বাবার মৃত্যুর খবর পেলেই,আইনের যথাযথ সাহায্য নিয়ে আমাকে ফিরে যাওয়ার জন্যে বাধ্য করার চেষ্টা করবে,শ্বশুর পক্ষের সবাই।তবে সব কিছু থামানোর এক মাত্র উপায় হলো বাবার মৃত্যুর খবর কোনভাবে গোপন রাখা,তবে তাতে কোন লাভ নাও হতে পারে,কেন না এমনও হতে পারে ওরাই সেই খুনীর দল’।

হাল্কা একটু সুর্যের আলো তখন বন্ধ জানালার খিড়কির ফাঁক দিয়ে সিয়াহ আর আমার মাঝে এসে পুরোনো জমে থাকা ধূলোকে নতুন করে জন্ম দিল।
‘অবশ্য সেটাই একমাত্র কারণ না যে আমি বাবার মৃত্যুর ঘটনাটা লুকিয়ে রাখতে চাচ্ছি’,সিয়াহর চোখে চোখ রেখে বললাম, ‘আর বাবার মৃত্যুর সময় আমি কোথায় ছিলাম সেটাও তো একটা রহস্য,তা নিয়ে অনেক প্রশ্ন হতে পারে,গুজব রটাতে পারে।যদিও হাইরিয়ে একটা ক্রীতদাসী,আর তার কথার হয়তো কোন দাম নাই কারও কাছে,তবে এ ব্যাপারটাতে সম্পূর্ন আমার বিরুদ্ধে না হলেও বাবার বইটার বিরুদ্ধে।কেউ যদি আমাকে সাহায্য না করে,বাবার খুনের কথাটা জানাজানি হলে আমাদের সর্ম্পকের কি হবে জানি না,তা ছাড়া হাইরিয়ে হ্য়তো জানে বাবার মত ছিল না তোমার সাথে বিয়ের’।
‘তোমার বাবার মত ছিল না আমাদের বিয়েতে’?সিয়াহ জিজ্ঞাসা করলো।
‘না মত ছিল না,বাবার ভয় ছিল বিয়ের পর হয়তো তুমি আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলে যাবে,ঐ একাকীত্ব সহ্য হতো না বাবার।যাই হউক এখন ধরে নাও বাবার কোন দ্বিমত ছিল না,তোমার কোন আপত্তি আছে’?
‘অবশ্যই না,তুমি যা বলবে সেটাই করবো আমি’।
‘ঠিক আছে আমাদের পক্ষ থেকে কোন সোনাদানা,টাকাপয়সা যৌতুকের দাবী নাই।মাফ করে দিও,নিজের বিয়ের ব্যাপারটা নিজেকেই আলাপ আলোচনা করতে হচ্ছে’।
কিছুক্ষন চুপ করে ছিলাম,এক সময় সিয়াহ বললো, ‘এতে আপত্তি করার কি আছে’,কিছুটা নিজেকে দোষী ভেবে ক্ষমা চাচ্ছিল,সে।
‘প্রথমে’,আমি বললাম, ‘দুজন সাক্ষীর সামনে তোমাকে শপথ করতে হবে,বিয়ের পর যদি অত্যাচার আরম্ভ কর বা দুই নম্বর বিয়ে করো,তা হলে আমাকে তালাক দিতে তোমার কোন আপত্তি থাকবে না,আর আমাকে ভরণপোষনও দিতে হবে।দ্বিতীয়ত তুমি যদি বাড়ী থেকে ছ মাসের বেশী অনুপস্থিত থাক,তাহলেও আমি তালাক দিয়ে ভরণপোষন পাব।তিন নম্বর,বিয়ের পরে তুমি আমাদের বাড়ীতে থাকবে।আরেকটা শর্ত থাকবে,আমাদের মধ্যে যতদিন বাবার খুনী ধরা না পড়বে,আমরা এক বিছানায় ঘুমাবো না।চার নম্বর,ছেলেরা এখন আমার সাথে ঘুমায় এ নিয়ে আপাততঃ কোন আপত্তি থাকবে না তোমার,আর তাদেরকে নিজের ছেলের মত ব্যাবহার করবে’।
‘আমার কোনটাতেই আপত্তি নাই’।
‘ঠিক আছে,আর তো কোন বাঁধা দেখছি না,আমাদের বিয়েতে,এখন একটা ভাল দিন দেখে কাজটা সারতে হবে’।
‘প্রথম হলো বিয়ের অনুষ্ঠান’,আমি বললাম, ‘আর ভালবাসা আসবে না হয় বিয়ের পরে।তুমি তো জানই বিয়ের পরিবেশ ভালবাসার আগুনকে নিভাতেই সাহায্য করে,কিছুই থাকে না শুধু ছাই আর অন্ধকার।তবুও কিছু বেকুব মানুষ আছে যারা বিয়ের আগেই প্রেমে ঝাপিয়ে পড়ে,ওরা পুড়ে ছারখার হয় আবেগের আগুনে যেন ভালবাসাটাই জীবনের একমাত্র কাম্য জিনিষ’।
‘তাহলে কোনটা সত্যি?
‘আসলে তৃপ্তিই হলো সবকিছু,ভালবাসা,বিয়ে সবকিছুই আনুষাঙ্গিক,সেখান থেকে আসে স্বামী,
বাড়ীঘর,ছেলেমেয়ে,বই খাতা।এমন কি আমার ক্ষেত্রে,যার স্বামী মাই,বাবা খুন হয়ে গেছে,
আমি তোমার একাকীত্বের চেয়ে অনেক ভাল আছি।এই ছেলেদের ছাড়া আমার জীবনের কোন অস্তিত্ব নাই আর,ওদের সাথে খেলাধূলা হাসিখুশী এ ছাড়া আর কি আছে আমার,এ জীবনে?যেহেতু এ অবস্থায়ও তুমি আমার সাথে সময় কাটাতে চাচ্ছ,এমন কি বিছানায়ও একসাথে থাকতে পারবে না,তাহলে কটা কথা একটু দয়া করে মনোযোগ দিয়ে শোন’।
‘বল,আমি শুনছি’।
‘তালাকের অনেক রকম নিয়মকানুন আছে,মিথ্যা সাক্ষী জোগাড় করা যায় যারা বলবে,
আমার স্বামী যুদ্ধে যাওয়ার আগে বলে গেছে,আমি হাকিমের কাছে গিয়ে যে কোন সময় তালাক নিতে পারি।তারা বলতে পারে আমার স্বামী বলে গেছে,বছর দুয়ের মধ্যে ফিরে না আসলে,কোন কাজী তালাক মঞ্জুর করার কোন ধরণের আপত্তি না করে।আরও সহজ হবে যদি ওরা বলে,যুদ্ধের সময় আমার স্বামীর লাশ পড়ে ছিল ওদের চোখের সামনে।তবে বাবার লাশ বাড়ীতে রেখে ঐ দিকে ছুটে বেড়ানো এখন ঠিক হবে না,কেন না যে কোন হাকিম যার মাথায় একটু বুদ্ধি আছে,এ অবস্তায় ও ধরণের গল্প বিশ্বাস করবে না,বরং সেটা তার মনে সন্দেহ জাগাবে আরও।স্বামীর দেখা নাই প্রায় চার বছর,কোন ভরণপোষনও ছিল না,এমন কি হানেফি হাকিমরাও হয়তো এ ভাবে আমাকে তালাক মঞ্জুর করবে না।

অবশ্য যুদ্ধের যা পরিস্থিতি তাতে বিধবাদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে,তাই মহামান্য সুলতানের অনুমতিতে,হাকিমেরা এখন প্রায়ই তালাক মঞ্জুর করে,এমন কি ভরণপোষণের ব্যাবস্থা করে দিতেও ভুলে যাচ্ছে না।তুমি যদি হাকিমের কাছে গিয়ে আজকে অনুমতি জোগাড় করে সন্ধ্যার আগে ফিরে আসতে পার,তাহলে কাজী খুঁজে নিয়ে আজকেই আমরা বিয়ে করে ফেলবো।সারারাত দরজার শব্দ,খুনীর ভঁয়ে আমাদের জেগে রাত কাটাতে হবে না,আর তুমি আমাকে রক্ষা করবে বাবার মৃত্যুর খবর জানাজানির পর গরীব,হতাশ,নোংরা,চরিত্রহীনা মহিলা উপাধি দিয়ে আমার নামে যাতে গুজব না রটানো আরম্ভ হয়’।
‘হ্যা’,সিয়াহ বললো, ‘তুমি যা যা বললে তাই করবো,আমার কোন আপত্তি নাই’।
অনেকে হয়তো ভুলে গেছে,নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম,সিয়াহর সাথে কেন এ ধরণের ব্যাবহার করলাম।এখন বুঝতে পারছি,ও ভাবে ছাড়া আর কোন উপায় ছিল না-সিয়াহর ঐ বাচ্চা ছেলের মত স্বভাব থেকে ওকে বের করে আনতে।

‘অজানা,না দেখা শত্রুর সাথে যুদ্ধ করার জন্য অনেক কিছুই করতে হবে,তুমি জান ওরা চেষ্টা করবে যাতে বাবার বইটা কোন ভাবেই শেষ না হয়।কিছু লোকজন আছে যারা আমার তালাক আর আমাদের বিয়ের বিপক্ষে সোচ্চার হয়ে আছে,তবে আল্লাহর কৃপায় আজকেই সেরে ফেলবো আমরা বিয়ের সমস্যাটা।তোমার মাথা আরও গোলমেলে করে দিতে চাই না,এত কথা শুনে তুমি হয়তো হতবুদ্ধি হয়ে গেছ’।
‘না,না,চিন্তা করো না,আমাকে যা করতে হবে,সেটা আমি বুঝে গেছি’,সিয়াহ উত্তর দিল।
‘হয়তো,তবে চিন্তা করো না এগুলো বুদ্ধি আমার বাবার কাছ থেকে শেখা,বাবার সাথে বছরের পর বছর এক সাথে থাকার অভিজ্ঞতা’।
এ জন্যেই বললাম যাতে সিয়াহ না ভেবে বসে,সম্পূর্ন পরিকল্পনা আমার মেয়েলী মাথার উর্বর ফসল।
আর দশজন পুরুষের মতই সিয়াহ উত্তর দিল, ‘তুমি অপরুপ সুন্দরী’।‘হ্যা’,আমি বললাম, ‘তবে আমার বুদ্ধির প্রশংসা করলে আমি বরং আরও খুশি হতাম,বাবা প্রায়ই আমার বুদ্ধির প্রশংসা করতো’।
ভাবলাম,সিয়াহকে একবার বলি অবশ্য বয়স হওয়ার পর বাবা বুদ্ধির প্রশংসা করা তো দুরের কথা,শুধু ভুলগুলোই ধরতো,তবে কোন কিছু না বলে আমি শুধু কেঁদে উঠলাম।
কাঁদতে কাঁদতে আমি তখন বদলে অন্য আরেকজন,অনেকটা দুঃখের একটা গল্প ছবি দেখে পাঠকের চেহারা সম্পুর্ন বদলে যায়।বাইরে দাঁড়িয়ে জীবনের বিশ্লেষণ করছিলাম,হতাশা ছাড়া আর কিছুই ছিল না ঐ গল্পে।কান্নার এমন অদ্ভুত একটা সুর,ছোঁয়া আছে যা দূরের মানুষকেও যাদুর মায়ায় কাছে আনে,সিয়াহ আমাকে জড়িয়ে আদর করছিল।




আমাকে সবাই ডাকে,সিয়াহ নামে

বিধবা,পরিত্যাক্তা,হতাশ,আমার প্রিয় সুন্দরী সেকুরে যেন বাতাসের ডানায় ভেসে ভেসে ফিরে গেল,আর আমি প্রেয়সীর সাথে বিয়ের স্বপ্নে তখনও মগ্ন।উত্তেজনায় উন্মাদ আমার মন,তবে পেছনে কোথাও কান্না জোয়ার আটকে ছিল।আমার প্রিয়,সম্মানিত এনিষ্টে এফেন্দীর মৃত্যুর কথা শুনে যথাযথ শোক প্রকাশ করার কোন উপায় ছিল না।ভাবছিলাম আমি কি সেকুরের খেলার পুতুল হয়ে গেলাম,বিয়ের স্বপ্ন আমার চোখে ভাসছে,তখন।

ঢোকার সময় দেখা হলো বাড়ীওয়ালীর হাজারো প্রশ্ন ছিল তার,কোথায় ছিলাম এই সকালে আরও এটা ওটা।বেশী কিছু না বলে,ঘরে ঢুকে তোষকে লুকানো বাইশটা সোনার মোহর বের করলাম।রাস্তায় বের হয়ে মনে পড়লো,আজকে সেকুরে বিষন্ন মুখ,কান্না ছাড়া আর কিছু দেখা যাবে না ঐ সুন্দর চেহারায়্।পাঁচটা ভেনিসের সোনার মোহর এক ইহুদী ব্যাবসায়ীর কাছে বদলে ফিরে গেলাম ইউকুলতার পাড়ায় আমার খুব একটা পচ্ছন্দের জায়গা না,যেখানে এনিষ্টে খুন হয়ে গেছে।

আর সেখানে সেকুরে ছেলেদের নিয়ে আমার জন্যে অপেক্ষা করছে,দৌড়ে দৌড়ে ছুটে যাচ্ছিলাম,একটা বিরাট গাছ এসে যেন আমার কানে ফিস ফিস করে বললো, ‘সব কিছু একা নিজের কাঁধে নিও না,নিজের দিকটাও একটু ভেবে দেখ’,একটা কালো বিড়াল অশুভ লক্ষন হয়ে একপাশে বসে ছিল,কেউ যেন আমাকে বলছে, ‘তুমি নির্দোষ ভাবছো নিজেকে সেটা সত্যি হলেও,অনেকেই সন্দেহ করবে,তুমি জড়িত আছ তোমার মামার খুনে’।

ইমাম এফেন্দীর সাথে দেখা হলো,যাকে দেখলেই মনে হয় কেমন জানি একটা ঘুম ঘুম ভাব সবসময় জড়ানো তার চোখে,তবে তাকে বাড়ীতে কিছু জিজ্ঞাসা না করে,মসজিদে ঢোকার সময় জিজ্ঞাসা করলাম, ‘কোর্টে জবানবন্দী কখন দিতে হয়’?উত্তরটা মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম,‘কোন ঘটনায় অনেক সাক্ষীর মধ্যে একজন হলে তখন সেটা খুব একটা প্রয়োজনীয় না,তবে কোন এক অপরাধের কেউ যদি একমাত্র সাক্ষী হয় তবে সেখানে সাক্ষী দেয়া তার ধর্মীয় দায়িত্ব’।

‘ঐ ধরনের এক জটিল পরিস্থিতিতে আমি জড়িয়ে গেছি,কি করা উচিত ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না,আপনার পরামর্শ দরকার’,আমি বললাম,‘অন্যান্য সাক্ষীরা তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে বলে,সাক্ষী দেয়াটা তো বাধ্যতামুলক না,আর আমি যাদের সাহায্য করতে চাচ্ছি তারা হতাশ হয়ে কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না’।
‘তা হলে’,ইমাম এফেন্দী বললো,‘তোমার মোহরের থলিটা একটু ঢিলা কর’?
আমি মোহরের থলিটা খুলে ইমামকে ভেনিসের মোহরগুলো দেখালাম,সোনার হলুদ রং দেখে শুধু ইমাম এফেন্দী না,সারা মসজিদের আঙ্গিনাটা যেন হেসে উঠলো।ইমামকে বিস্তারিত সবকিছু বললাম,‘এনিষ্টে এফেন্দী খুব অসুস্থ মৃত্যুর আগে উনি তার বিধবা মেয়ের তালাক,ভরণপোষনের বন্দোবস্ত করে দিতে চান’।ইমামের কাছে হাকিমী আইন কানুন নিয়ে কোন কিছু বলতে হলো না,ইমাম এফেন্দী বললো,সেকুরের স্বামীর ব্যাপারটা অনেকদিন ধরেই ঝুলে আছে,আর নৈতিক ভাবে এ ব্যাপারে সাহায্য করতে তার কোন আপত্তি নাই,আর দুটা সোনার মোহর দিলে ইমামের ভাই দুই নম্বর সাক্ষী হতে দ্বিধা করবে না।

সারাটা দিন কেটে গেল বিড়াল ইঁদুরের খেলায়,তবে গল্পটা থাক আলেপ্পোর কফির দোকানের গল্পকথকদের জন্যে।কিন্ত এ ধরণের গল্প লেখা হয়নি,কবিতাও লেখা হয়নি,তবে এ দিনের কথা আমি চার ভাগে ভাগ করে সাজিয়ে দিলাম।

প্রথম দৃশ্যে থাকবে,মোচওয়ালা বেশ ভাল স্বাস্থ্যের একজন মাঝি বসফরাসের নীল পানিতে নৌকা নিয়ে ঘুরছে,উনকাপানে আমরা সেই লম্বা নৌকায় উঠবো।নৌকায় ইমাম আর তার ভাই নিজেদের মধ্যে নানান বিষয় নিয়ে আলাপ আলোচনা করছে।আমি একপাশে বসে বিয়ের স্বপ্নে বসফরাসের পানিতে ভবিষ্যতের দিন সাজাচ্ছি,তবে আমার মনে লুকানো একটা ভঁয় সামনে কি কোথাও কোন জলদস্যু আছে নাকি?যে শিল্পী ছবিটা আঁকবে,তার তুলিতে শুধু রঙ্গীন স্বপ্নের জীবনের সুরটা তো থাকবে না,সাথে থাকবে আমার মনের ঝড়ো যুদ্ধ,বিপদের ছবিটা।

দ্বিতীয় ছবিটাতে থাকবে,সুলতানের প্রাসাদ,উজীর নাজিরের সভা,ইউরোপের রাষ্ট্রদুতদের অভিনন্দনের দৃশ্য।লোকজনসহ প্রাসাদের সৌন্দর্য নিয়ে ছবিটা আঁকা অনেকটা ওস্তাদ বিহজাদের পদ্ধতিতে,সাথে হয়তো শিল্পীর নিজের কায়দায় কিছু বিদ্রুপ।থাকবে একপাশে কাজী এফেন্দীর ঘুষ খাওয়ার প্রতি ঘৃনার কটূক্তি,আরেকদিকে ভেনিসের মোহর ঘুষ নিয়ে পকেটে ঢোকানো।সাহাপ এফেন্দী থাকবে আরেক হাকিমের জায়গায়,এ ধরণের ছবির বৃত্তান্ত শুধু একজন দক্ষ শিল্পীর পক্ষে তুলিতে তুলে ধরা সম্ভব।পাঠকের চোখে ধরা পড়বে আমি যখন ইমাম এফেন্দীকে ঘুষ দিচ্ছি,তখন হাকিমের চেয়ারে বসে আছে নতুন এক হাকিম যাতে সে সহজেই সেকুরের তালাক আর ভরনপোষনের সমাধান করতে পারে।

তৃতীয় ছবিটাতে থাকবে একই দৃশ্য,তবে এখানে দেয়ালের ছবিটা হবে একটু গাঢ় রং এ সাজানো,অনেকটা চীনা পদ্ধতিতে,গাছের শাখাগুলো পেঁচানো আর বেশ ঘন ঘন,আকাশে নানান রং এর মেঘ,যা তুলে ধরবে বদলানো হাকিমের চাতুরীর প্রতিফলন।থাকবে ইমাম এফেন্দী আর তার ভাই এর ছবি এক সাথে যদিও তারা সাক্ষী ছিল আলাদা করে।ছবিতে ফুটে উঠবে তাদের কাকুতি মিনতি সেকুরের জন্যে,যার স্বামীর খোঁজখবর নাই প্রায় চারবছর,কত কষ্টে সময় কাটছে মেয়েটা,বিয়ে করার উপায় নাই,কারও কাছ থেকে কিছু টাকা ধার করাও সম্ভব না,স্বামীর অনুভুতি ছাড়া।তাদের অনুযোগ এতই মন কেড়ে নেয়া হবে যেন পাথরের মনটাও ভেঙ্গে যাবে,আর কান্না শুনে হাকিম সেকুরের তালাকের অনুমতি দিতে দ্বিধা করবে না।তবে এই ছবিতে কোথাও থাকবে না সেকুরের অভিভাবকের অস্তিত্ব,
হঠাৎ আমি বলবো সেকুরের বাবা-সুলতানের রাষ্ট্রদুত এখনও বেঁচে আছে।

০০০০০০০০০০


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.