নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা
১৮)
চমৎকার সিয়াহর কথাগুলো,ছবির প্রেমের গল্পের মত কত যন্ত্রনায় ভুগে গেল মানুষটা,শুধু আমার জন্যে,তার বলার ভঙ্গীতে,ফিরে গেলাম আমার সোনালী দিনগুলোতে।সময়ে আমি এক এক করে বিশ্লেষণ করবো,নিজেকে দোষী মনে হচ্ছিল বারটা বছর একটা মানুষকে অযথা ওভাবে জ্বালানোর জন্যে।লোকটার কথায় চমক আছে,লোকটা কথা বলতে জানে ভালই!মনে হলো সিয়াহ সত্যিই একটা ভাল মানুষ,শিশুর মত সরলতা ওর কথায়,ভাবে,ভঙ্গীতে ওর চোখ দেখলেই সেটা বোঝা যায়।ও যে আমাকে এত ভালবাসে কোনদিন ভাবিনি,ও অবশ্যই আমার বিশ্বাসের পাত্র।
একে অন্যকে জড়িয়ে ধরলাম আমরা,কোন অপরাধবোধ ছিল না মনে,মিষ্টি আবেগে ভেসে গেলাম আমি,আরও জোরে জড়িয়ে ধরলাম তাকে।সে আমাকে চুমু খেল,আমিও চুমু দিলাম তাকে,আমার মনে এটাই ভালবাসা।সে তার জিভটা আমার মুখে দিয়ে চুমু খাচ্ছিল।
অশ্লীল,অস্বাভাবিক কোন কিছু মনে আসেনি,শুধু মিষ্টি স্বর্গীয় এক সুরে ভেসে গেলাম
আমি।
আমার খুব জানার ইচ্ছা,হেরাতের ওস্তাদরা আমাদের ভালবাসার এই লুকোচুরির খেলাকে তুলির ছোঁয়া কি ভাবে তুলে ধরতো,এই দুঃখ ছোঁয়া সুখের ছবি বই এর ভাষায় কেমন ভাবে দেখা যেত।বাবার কাছে দেখা বই এর প্রেমের ভাষা অনেকটা যেন বাতাসে গাছের পাতার দোলার মত,ভেসে যাওয়া হাঁসের পাখা,যাতে ফুটে উঠে প্রেমিকের মনের উল্লাস।
ছোট্ট একটা ছবিতে দুজন প্রেমিক একে অন্যের দিকে তাকিয়ে আছে,অনেক দূরের ছবির দুজনের দৃশ্যের গল্পটা তাদের নিয়ে না,বরং রাতের তারা,অন্ধকারের গাছ,চোখ ঝলসানো প্রাসাদ যেখানে প্রথম দেখা তাদের,প্রাসাদের সাজানো চত্বর,ফুলের বাগান,প্রতিটা পাতা,প্রতিটা কুড়ি আদর করে তুলে ধরা।কিন্ত দেখার চোখের মানুষটা বুঝতে পারবে রং এর চমৎকারিত্ব সব কিছু ছাড়িয়ে শিল্পীর ভাষা,সেটা আর কিছু না ভালবাসা,দুই প্রেমিকের চোখের স্বর্গীয় আলো,যা জানা চোখকে স্বভাবতই অভিভুত করবে।আমি যখন সিয়াহকে জড়িয়ে ধরলাম,সেই স্বর্গীয় অনুভুতিটাই ছিল আমার মনের খাতায়।
তবে কোন অনুভূতিই চিরস্থায়ী না,ওটা কে না জানে,কিছুক্ষনের মধ্যেই সবকিছুই হারাবে সময়ের সুরে?সিয়াহ আদর করে আমার বিশাল স্তনটা হাতে নিল,পুরোনো হারানো সুরে আমি বদলে গেছি,আমার মন বলছিল কেন এত অপেক্ষা,কখন সে আমার দুধের বোঁটা চোষা আরম্ভ করবে।কিন্ত তা হলো না,সিয়াহ বুঝে উঠতে পারছিল না তার কি করা দরকার,তবে তার চাওয়ার স্রোত আটকে ছিল না কোনভাবে।এক সময় ধীরে ধীরে ভঁয় আর লজ্জা আমাদের মধ্যে এসে জায়গা করে নিল,কিন্ত সিয়াহ থেমে থাকেনি,আমাকে কাছে টেনে নিয়ে তার স্ফীত শক্ত লিঙ্গ আমার দুই উরুর মাঝে ঘষাঘষি করা আরম্ভ করলো,খারাপ লাগেনি আমার।এটাতো জানাই এই জড়াজড়ি,চুমু অন্য এক জায়গায় নিয়ে যাবে আমাদের,যদিও চোখটা ঘুরিয়ে নিলাম অন্যদিকে তবে আড়চোখে যা দেখলাম,কি বিশাল একটা লিঙ্গ।
তারপর সিয়াহ জোর করে যা করার চেষ্টা করছিল,কিপচাকের মহিলা আর রক্ষিতারা হাম্মামে যারা তাদের বড়াই করে যৌনতার গল্প বলে,তারাও করবে না,সেটা।কি করা উচিত জানা ছিল না আমার,কিছুটা হতবাক হয়ে ছিলাম,
‘দোহাই তোমার দয়া করে,তোমার ভুরুটা কুচকাবে না’,কাকুতি মিনতি করেই বললো সিয়াহ।একসময় তার হতাশা,যন্ত্রনাকে অবজ্ঞা করেই ধাক্কা দিয়ে একপাশে সরিয়ে দিলাম।
আমাকে সবাই ডাকে সিয়াহ নামে
ফাঁসি দেয়া ইহুদীর বাসায়ভুরু কুঁচকে,রাগে সেকুরে অনেক কিছুই বললো,তার হাতে ধরা আমার লিঙ্গ,যা তিফলিসের সারকাসিয়ান মেয়েদের মুখে,কিপচাকের বেশ্যাদের শরীরে,সরাই খানার গরীব বৌদের,তুর্কমেন আর পারস্যের বিধবা,সস্তাদরের ইস্তাম্বুলের বেশ্যারা(যাদের সংখ্যা বেড়েই যাচ্ছে),ছলনাময়ী আবখাজিয়ান,আর্মেনিয়ান ঠক,জেনোসি,সিরিয়ান দজ্জালেরা,
থেস্পিয়ানরা যারা নিজেদের মেয়ে,ছেলে দুটো বলেই চালায়,তাদের শরীরে কম যাতায়াত করেনি,কিন্ত সেকুরের শরীরে সেটা যাবে না।সেকুরে চীৎকাঁর করে বললো, ‘ঐ সব রাস্তার সস্তা বেশ্যাদের সাথে ঘুমাতে ঘুমাতে ভুলে গেছ,মেয়েদের কাছে শরী্র একটা পবিত্র জিনিষ,আগলে রাখে তারা তাদের এই সম্মান,আর তোমার ভালবাসার কথাবার্তা কি শুধু একটা ভড়ং’।
সেকুরের অভিযোগ শুনে তার হাতে ধরা লিঙ্গ উত্তেজনা হারিয়ে একেবারেই নিস্তেজ হয়ে গেছে তখন।যদিও আমার মনে ছিল হতাশা,যন্ত্রনা তবুও আমি খুশী দুটা কারণেঃ
১)সেকুরের কথার প্রতিবাদে আমি ক্ষেপে কোন কিছু বলিনি,সাধারণত অন্যান্য মেয়েদেরকে এ সময় আমি বেশ নোংরা কথা বলে ফেলি।
২)আর আমার জানা এটুকু বলে দিল,যা ভাবতাম তার চেয়ে সেকুরেকে আমাকে নিয়ে অনেক বেশী ভাবে।
সেকুরে আমার দুরবস্থা দেখে তখন কিছুটা করুনার চোখেই আমাকে দেখছিল।
‘তুমি যদি সত্যিই আমাকে ভালবাস,যে ভাবে চিঠিতে মন উজাড় লেখা তোমার,তা হলে নিঃসন্দেহে ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করবে,একজন সম্ভ্রান্ত মানুষের মত।যাকে নিয়ে এত স্বপ্ন দেখছো,তুমি এমন একজনকে অসম্মান করবে না।তা ছাড়া তুমিই তো একমাত্র মানুষ যে আমাকে বিয়ে করতে চায়।তোমাকে আসতে এখানে কেউ দেখেনি,তো,নিশ্চয়’?
‘না’।
বাগানে কাঁরও পায়ের শব্দ শোনা গেল,সেকুরে জানালার আলোতে সরে গেল,বার বছর পর তার মিষ্টি মুখটা দেখছিলাম।শব্দটা শুনে আমরা দুজনেই কিছুক্ষন চুপচাপ ছিলাম,কিন্ত কেউ আসেনি,হয়তো বিড়াল অন্য কিছু একটা হবে হয়তো।সেকুরের বয়স যখন বার সেই সময়ই তাকে দেখে আমি উত্তেজনায় অস্থির হয়ে যেতাম,সেকুরে হয়তো জানে না আমার অস্থিরতার কাহিনী।
‘ফাঁসি দেয়া ইহুদীর আত্মা এখনও ঘুরে বেড়াচ্ছে,এখানে’,সেকুরে বললো।
‘তুমি কি এখানে আস,কখনও’?
‘জিন,পরী আর আত্মারা ঘুরে বেড়ায় এখানে বাতাসে বাতাসে,ঘরের আনাচে কানাচে, এত নিস্তব্ধতার মধ্যেও যেন নানান ধরণের শব্দে তাদের উপস্থিতি বেশ উপলদ্ধি করা যায়।সবকিছু কথা বলে এখানে,আমার আসার দরকার কি এখানে,আমি তো বাড়িতেই শুনতে পাই তাদের কথা’।
‘সেভকেত একটা মরা বিড়াল দেখানোর জন্যে কয়েকদিন আগে আনলো আমাকে,কিন্ত কিছুই ছিল না সেখানে’।
‘শুনলাম সেভকেতকে তুমি বললে,ওদের বাবা খুন হয় তোমার হাতে’?
‘ও তো আমাকে প্রথমে জিজ্ঞাসা করলো,কতগুলো মানুষ খুন হয়ে গেছে আমার হাতে?আমি সত্যি কথাটাই বললাম,দুজন মানুষ খুন হয় আমার হাতে’।
‘বড়াই করার জন্যে’।
‘শুধু বড়াই করা না,একটা ছেলেকে সাহস দেখানোর জন্যে যার মাকে আমি প্রচন্ড ভাবে ভালবাসি।আর ঐ দূর্দান্ত দুই ছেলেকে আমার সাহসটা জানানো দরকার,মার কাছে তাদের বাবার বীরত্বের গল্প সবসময় শুনে তারা’।
‘খুব ভাল আরও বড়াই করে বল,এখন ওরা দুজনেই কেউ তোমাকে পচ্ছন্দ করে না’।
‘সেভকেত হয়তো আমাকে পচ্ছন্দ করে না,তবে অর্হান আমাকে খুব পচ্ছন্দ করে’,প্রেমিকার চোখের ভাষার অস্থিরতা দেখে বললাম, ‘আমি তো ওদের বাবা হতে যাচ্ছি’।
মনে হলো,আমাদের মধ্যে অজানা অশরীরি একজন কেউ যেন চুপচাপ বসে ছিল,দেখলাম সেকুরে হাল্কা সুরে কাঁদছে।
‘আমার হতভাগা স্বামীর একটা ভাই আছে,হাসান।স্বামীর জন্য অপেক্ষা করে দুটা বছর কেটে গেছে ওদের বাসায়,হাসান আর শ্বশুরের সাথে,এটাই দাঁড়ালো শেষমেষ হাসান এখন আমার প্রেমে পাগল।ইদানীং অযথাই আমাকে খুব সন্দেহ করছে,ওর সন্দেহ এর মধ্যে আমার হয়তো অন্য কাউকে বিয়ে করার প্রস্ততি নিচ্ছি।হাসান বলে বেড়াচ্ছে,লোকজন দিয়ে জোর করে আমাকে ধরে নিয়ে যাবে ওদের বাড়ীতে।ওদের কথায় আমি তো হিসাবমত বিধবা না,এমন কি কোন কাজীর চোখেও না,আমাকে জোর করে ধরে নিয়ে গেলেও,আইনমত ভাবে কারও কিছু বলার নাই।বাবাও চায় না কোন কাজী আমাকে বিধবা ঘোষনা করে,বাবার ভঁয় তাহলে হয়তো বিয়ে করে আমি বাড়ী ছেড়ে চলে যাব।মা মারা যাওয়ার পর আমি কাছাকাছি থাকার জন্যে বাবা অন্ততঃ কিছুটা শান্তি আর আস্থা নিয়ে আছে।তুমি কি আমাদের সাথে এই বাড়ীতে থাকতে পারবে’?
‘ঠিক বুঝলাম না,কি বলতে চাচ্ছ’?
‘যদি তোমাকে বিয়ে করি,তুমি কি বাবার সাথে আমাদের বাড়ীতে থাকবে’?
‘ঠিক বলতে পারবো না’।
‘যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চিন্তা করে ঠিক কর,খুব একটা সময় নাই হাতে,কথাটা কিন্ত বানিয়ে বলছি না।বাবার ধারণা ঝড়ের গতিতে দূর্ভাগ্য ছুটে আসছে আমার দিকে,যদি হাসান গুন্ডার দলের সাথে আমাকে নিয়ে যায়,তুমি কি কাজীর কাছে কসম খেয়ে বলতে পারবে,যুদ্ধে আমার স্বামীর লাশ তোমার চোখের সামনেই ছিল?তুমি তো কিছুদিন হলো তুরানের যুদ্ধ থেকে আসলে,সবাই তোমাকে বিশ্বাস করবে’।
‘আমি জবানী দিতে পারি,তবে আমি তোমার স্বামীকে খুন করিনি’।
‘ঠিক আছে সেটাতো আমি জানিই,বোকার মত আবার কি যা তা বলছো?আরেকজন সাক্ষীর সাথে তোমার জবানী থাকলে কাজী আমাকে বিধবা ঘোষনা করতে আপত্তি হবে না।তুমি কি বলতে পারবে আমার স্বামীর রক্তাক্ত শরীর দেখেছ পারস্যের যুদ্ধে’?
‘আমি দেখিনি তবে আমাদের ভালবাসার স্বার্থে সেটা বলতে আমার কোন অসুবিধা নাই’।
‘তুমি কি আমার ছেলেদের ভালবাস’?
‘অবশ্যই ভালবাসি,এটাও কি বলে প্রমান করতে হবে’?
‘আচ্ছা বল,কেন তুমি ভালবাস ওদের’?
‘সেভকেতের সাহস,আত্মবিশ্বাস,সততা,বুদ্ধি আর একগুয়েমি ভাবটা দেখে আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে’,আমি বললাম, ‘অর্হানের আবেগ,সরলতা আর চঞ্চল ভাবটা অতুলনীয়।
তাদের ভালবাসি তারা যে তোমার ছেলে’।
আমার হরিন নয়না প্রেমিকা একটু মুচকি হাসলো,তবে চোখের কোনের হাল্কা একটুঁ কান্নাটা আলোয়ে চিকমিক করছিল।এক হিসাবী মহিলার মত অল্প সময়ে যতটুকু যা করা সম্ভব সেটা ভেবে,বিষয়টা বদলে ফেললো সেকুরে।
‘বাবার বইটা শেষ করে সুলতানের হাতে তুলে দিতে হবে,এই বইটা হলো যত দূর্ভাগ্যের উৎস’।
‘জারিফ এফেন্দীর খুন ছাড়া আর কি দূর্ভাগ্যে হলো আবার’?
প্রশ্নটা খুব একটা পচ্ছন্দ হয়নি সেকুরের,আন্তরিক ভাবেই সে উত্তর দিল,
‘নুসরেত হোজার লোকজন গুজব ছড়াচ্ছে,বাবার বই অবিশ্বাসীদের কথা অনুকরণ করে আমাদের ধর্মের অপমান করছে।আমি জানি আমাদের বাড়ীতে যে সব শিল্পীরা আসে,তারা এঁকে অন্যের ক্ষতি করার জন্য প্রস্তত হয়ে আছে,তুমি তো তাদেরই একজন,তোমার এটা নিশ্চয় জানা আছে’।
‘হাসান,তোমার দেবরের সাথে তোমার যোগাযোগ আছে’?আমি জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তোমার কি মনে হয়,শিল্পীরা যারা তোমার বাবার বই এর ছবি আঁকছে,বা নুসরেত হোজার সঙ্গীদের সাথে কি হাসানের যোগাযোগ আছে’?
‘না মনে হয় না ওর যোগাযোগ আছে ওদের কারও সাথে’।
অদ্ভুত একটা নিস্তব্ধতা কেটে গেল।
‘তুমি যখন হাসানদের ওদের বাড়ীতে থাকতে ওর কাছ থেকে দূরে থাকতে পার নি’?
‘দুই ঘরের বাড়ীতে যতটুকু দূরে থাকা সম্ভব,তার চেয়ে বেশী আর কিছু করা সম্ভব ছিল না’।
দূরে কয়েকটা কুকুর ঘেউ ঘেউ করছিল,ইচ্ছা থাকলেও জিজ্ঞাসা করতে পারলাম না,সেকুরের স্বামী যে এতগুলো যুদ্ধে একের পর এক জয়ী হয়ে ফিরে আসতো,প্রচুর জমি জায়গার মালিক হওয়া সত্বেও,কেন বৌকে ভাই এর সাথে দুই ঘরের একটা বাড়ীতে
রাখলো।
কিছুটা নম্র সুরে আমার কৈশোরের প্রেমিকাকে জিজ্ঞাসা করলাম,
‘কেন ঐ লোকটাকে বিয়ে করলে’?
‘আমার তো কারও না কারও সাথে তো বিয়ে হতোই’,সেকুরে উত্তর দিল।কথাটা সত্যি,তবে বলার ধরণ এমন ছিল যে যাতে আমি অখুশী না হই,আর তার স্বামীকে কোন ভাবে কাঠগড়ায় দাড় করাতেও না হয়।
‘তুমি ও তো চলে গেলে,ফিরে আসবে কি না কেউ জানতো না?তোমার চলে যাওয়া ভালবাসার প্রকাশ,তবে ওখানে ভবিষ্যত ছিল না কোথাও’?কথাটা সত্যি,তবে ঐ ধরণের ও ধরনের একটা বাজে লোককে বিয়ে করার কি যুক্তি ছিল,বুঝতে পারলাম না!যদিও আমার বুঝতে কষ্ট হয়নি,আমার চলে যাওয়ার পর খুব একটা বেশী সময় লাগেনি সেকুরের আমাকে ভুলে যেতে,যেন আমার ভালবাসার জোয়ারটা ছিল এক তরফা।তবু আমাকে খুশী করার জন্যে এই যে মিথ্যা কথাগুলো সেকুরে বললো,সেটাই বা কম কি?সেকুরেকে বললাম যদিও ঐ বার বছরে কম দেশ ঘুরিনি হয়নি আমার তবুও তাকে ভুলতে পারিনি কোনদিন,তার স্মৃতি ছায়ার মত সবসময়ই ছিল আমার সাথে।ঐ যন্ত্রনা,ঐ দুঃখ আমি কোনদিন কাঁউকে বলতে পারিনি,যন্ত্রনাটা সত্যি ছিল তবে সেই মুহুর্তে আমার অনুভুতিটা ছিল না সত্যি।
যাতে আমার অনুভুতি আর আকাঙ্খার ব্যাখা দিতে পারি,সত্যি আর আন্তরিকতার পার্থক্যটা বোঝাতে পারলে ভাল হতো।অনেক সময় সত্যি বলাটাই বিপদ তাতে সেই মানুষটা অন্যের চোখে হয়ে যায় কুটিল,কপটক।একটা ভাল উদহারণ আমাদের শিল্পীরা,সবাই ভঁয়ে ভঁয়ে আছে এই খুনের কারণে।একটা নিখুঁত ছবির কথা যদি বলি-যেমন ঘোড়ার ছবি,ওস্তাদ শিল্পী যতই তার অন্তরের আবেগ ঢেলেই আঁকুক না কেন,সেটা কোনদিনই আল্লাহর তৈরী ঘোড়া প্রানীটার ধারে কাছেও পৌঁছাবে না।
শিল্পী্রা আল্লাহর এক নগণ্য সৃষ্টি,যতই আন্তরিকতা থাকুক না কেন,তাদের কি আর সম্ভব তুলির আঁচড়ে একটা নিখুঁত ছবি আঁকা,দেখা দেয় ভুল,ক্লান্তি,হতাশা।কথাগুলো এ জন্যেই বলছি,অনেক মেয়েরা ভাবতে পারে সেকুরের জন্যে আমার কামনার উচ্ছাস আর কাজভিনের রোদে পোড়া চেহারার সুন্দরীদের জন্যে কামনা দুটোর মধ্যে কোন পার্থক্য নাই,তবে সেটা সম্পুর্ন ভুল বলা হবে।আল্লাহর দেয়া বুদ্ধি আর জিনদের মত উপলদ্ধি নিয়ে সেকুরের বুঝতে কষ্ট হয়নি নিশ্চয়,ভালবাসার জন্যে আমার বার বছরের যন্ত্রনা,আবার তাকে একা পেয়ে একটা হিংস্র জন্তর মত আমার কামনার স্রোতে ভেসে যাওয়া।নিজামী তার লেখায়,সুন্দরীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ সুন্দরী শিরিনকে,মুক্তা সাজানো একটা কালির দোয়াতের সাথে তুলনা করতে দ্বিধা করেনি।
বাইরে কুকুরগুলো আবার জোরে চীৎকাঁর করছিল,সেকুরে একটু অস্থির হয়েই বললো, ‘এখন আমাকে যেতে হবে’।আমাদের দুজনেরই মনে হলো ইহুদীর বাড়ীটা বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে,রাতের অন্ধকাঁরে যদিও ছেয়ে যায়নি চারপাশটা।আবার ছুটে গেলাম সেকুরেকে জড়িয়ে ধরার জন্যে,তবে সেকুরে আহত একটা ছোট্ট চড়ুই পাখীর মত ছিটকে সরে গেল।
‘আমি কি এখনও আগের মতই সুন্দর?কি মনে হয় তোমার’?
উত্তর দিলাম।
‘তোমার শরীর থেকে একটা সুবাস ছুটে আসে,নেশায় মাতাল হয়ে যাই আজও আমি।
তোমার সৌন্দর্যের নেশা এখনও আকাশ ছোঁয়া ’?
সেকুরে তো জানেই নিজামীর ভাষায়, ‘প্রেম একটা খেলা’,কথার ধাঁধাঁ না,বরং প্রেমিক প্রেমিকের আবেগের দেয়া নেয়া।
‘কেমন বেতন পাও তুমি?ছেলেদের,সংসারের সকলের জন্যে যথেষ্ট হবে’?
সেকুরেকে নিজের সমন্ধে বলা আরম্ভ করলাম,বারটা বছর সরকারী চাকরী করছি,যুদ্ধে জীবন মৃত্যুর অভিজ্ঞতা,কথা শেষ করে তাকে জড়িয়ে ধরলাম।
‘কত মধুর ভাবে আমরা এঁকে অন্যকে ধরে আছি,তবুও অদ্ভুত একটা শূন্যতার দেয়াল যেন আমাদের মাঝখানে,কোথায় যেন হারিয়ে গেছে প্রথম দেখার রহস্যের আমেজটা’,সেকুরে বললো।
আমার ভালবাসার গভীরতা প্রমান করার জন্যে,আবার আলতো করে জড়িয়ে সেকুরেকে,
জিজ্ঞাসা করলাম,বার বছর পর কেন আমার আঁকা ছবিটা এসথারের হাতে ফিরিয়ে দিল?সেকুরের চোখে স্নেহ আর ভালবাসা ছাড়া অজানা অন্য কোন এক রুপ,চুমু খেলাম ঠোঁটে ঠোঁটে,জিভের ছোঁয়ায় পুরোনো দিন খুঁজছিলাম আমরা।ভেসে যাইনি কামনার স্রোতে,
ভালবাসার দুটো চড়ুই পাখী এঁকে অন্যের সাথে খেলা করছে।যৌনসঙ্গম ভালবাসার অসুখের জন্যে সবচেয়ে ভাল ওষুধ না?
স্তন দুটোকে হাতে ধরার সাথে সাথে সেকুরেকে আগের চেয়েও জোরে আমাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল।চোখের ভাষার কথাটা যেন ‘ভালবাসার মানুষটা,যার জন্যে তোমার এত অস্থিরতা যার সাথে সারাটা জীবন কাটাবে,তবে বিবাহিত জীবন পালন করার মত মানসিকতা তোমার আজও হয় নি,তুমি সেই পুরোনো ছেলেটা,সংযম জানে না’।
আমি কি সত্যিই ভুলে গেছি ভালবাসায় সহিষ্ণুতা,একসাথে জীবন কাটানোর স্বপ্নের টানাপোড়েন?আমার কাছ থেকে সরে গিয়ে সেকুরে দরজার দিকে চলে গেছে,নেকাবটা কাঁধের কাছে নামানো।রাস্তাটা তখন অন্ধকারে হারিয়ে গেছে অনেকটা,হঠাৎ আমি চীৎকাঁর করে বললাম,‘এখন কি করবো আমরা’?
‘জানি না’,সেকুরে উত্তর দিল,যেন হঠাৎ মনে পড়ে গেল তার ‘ভালবাসার দাবাখেলার নতুন একটা চাল’,
সেকুরে বের হয়ে যাচ্ছিল,বাগানের বরফে তার ছেড়ে যাওয়া পায়ের দাগ পড়ে আছে এখনও,কিছুক্ষন পরেই মিশে যাবে নতুন বরফে।
০০০০০০০০০০
(
২| ০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ২:৫০
ইল্লু বলেছেন: আপনাআর সাথে একমত। দৈনন্দিতার পাশাপাশি,ধর্মান্ধতা,ভালবাসা ঠিক বলা যাবে কি না জানি না,শরীরের ডাক সব নিয়ে তুরস্কের এক বিশেষ সময়ের চেহারা/
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে আগস্ট, ২০২৩ রাত ১০:৪৬
রাজীব নুর বলেছেন: দারুন একটা উপন্যাস।