নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ) ধারাবাহিক

০৩ রা আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৫


Orhan Pamuk এর My Name is Red(অনুবাদ)
ধারাবাহিক
ফেনিত অর্হান পামুক
জন্মঃ জুন,১৯৫২
তুরস্কের খ্যাতনামা এক উপন্যাস লেখক
২০০৬ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান
খ্যাতনামা লেখার মধ্যে My name is red,Silent house,white castle আরও অন্যান্য অনেক লেখা

(১৬)

রাস্তায় বেরোনোর পর দেখি,অন্ধ তাতারটা তখনও বসে আছে আমাকে জ্বালানোর জন্যে,
কিছু না বলে তার দিকে থুতু ফেলে হাঁটা দিলাম।এত শীত তবু কেন যে এইসব শয়তানের দল মরে না?হাসান চিঠিটা চুপচাপ করে পড়ছিল,অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তা হলে,কি হচ্ছে’,হাসান চিঠিটা জোরে পড়া আরম্ভ করলোঃ

প্রিয় সেকুরে,তোমার অনুরোধ আমি ভুলিনি,তোমার বাবার বইটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি,নিশ্চিত থাকতে পার এ মুহুর্তে ওটা নিয়েই আমার যত ব্যাস্ততা,আর অন্য কোন কিছুতে মন দেয়ার সময়ও নাই।এমন কি তোমাদের বাড়ীতে যাওয়ার সময়টাও খুঁজে পাচ্ছি না,তা ছাড়া তোমাকে অযথা বিরক্তও করতে চাই না,ভেবে দেখলাম তোমার কথাটাই ঠিক, ‘আমার ভালবাসা সেটাতো আমার রাজত্ব,আমার দেশ,ওখানে আর কারও কিছু বলার নেই’।ভালবাসার তাড়নায় ঠিকমত কলমটা হাতে নিয়ে তোমার বাবার বইটা শেষ করতে কষ্ট হচ্ছে যদিও,তবুও আমি যুদ্ধ করে যাচ্ছি।তোমার ক্তহা,তোমার মুখটা মনে ভেসে উঠতেই সব খেই হারিয়ে ফেলি,তখন আর কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না।বার বছর পরে ইস্তাম্বুলেই ফিরে শুধু একবার মাত্র দেখা হলো তোমার সাথে।সেই চেনা মুখটা অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার মত,আরেকবার যদি দেখা হতো তা হলে হয়তো তোমার মুখটা জ্বলজ্বল হয়ে থাকতো মনের খাতায়।গতকালকে সেভকেত আমাকে একটা ইহুদীর পোড়ো বাড়ীতে নিয়ে গেল,শুনলাম ফাঁসী দিয়ে লোকটা নাকি মারা গেছে।বেশ র্নিজন একটা জায়গা,কারও আসার সম্ভাবনা নাই,কেউ আমাদের দেখবে না,যখন ইচ্ছা আসতে পার,আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।সেভকেতের কাছে তোমার স্বপ্নের কথা শুনলাম,বললো তোমার স্বামী-ওর বাবা আর ফিরে আসছে না’।

চিঠিটা পড়তে পড়তে হাসান অনেক কটূক্তি,ঠাট্টা মশকরা করছিল।কোন কোন সময় গলার স্বরে নাকি সুর এনে,মেয়েলী সুরে কথা বলছিল,সবকিছু হারানো এক প্রেমিকের বিধ্বস্ত আকাশ।হাসান সিয়াহর লেখাটা নিয়ে ঠাট্টা করে বললো,‘তোমার মুখটা আরেকবার দেখতে চাই’।বোঝাই যাচ্ছে সেকুরের চোখে একটুঁ আশার আলো দেখে,সিয়াহ সমঝোতা করার চেষ্টা করছে।
‘সিয়াহ সত্যি সত্যিই সেকুরেকে ভালবাসে’,আমি বললাম।
হাসান উত্তর দিল,‘জানি সেভকেত কত চালাক ছেলে,ও আমাদের সাথে অনেক বছর ছিল,সিয়াহকে ওর ঐ ইহুদীদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা না,সেকুরের কোন উৎসাহ ছাড়া।সেকুরে যদি ভাবে আমার ভাই মারা গেছে,তবে সে ভুল করবে,আমি জানি আমার ভাই ফিরে আসবে’।



কথা শেষ হওয়ার আগেই হাসান পাশের ঘরে ছুটে মোমবাতি জ্বালাতে গিয়ে হাতটা পোড়ালো,শোনা যাচ্ছিল তার চীৎকাঁর।দেখলাম পোড়া জায়গায় জিভ দিয়ে চেটে শেষমেষ কোনরকমে মোমবাতিটা জ্বালালো,হাসান,তারপর কাগজ আর কলম নিয়ে রেগেমেগে চিঠি লেখা আরম্ভ করলো।তার মনে একটা আনন্দ,একটা উৎসুক্য আমার দেখায়,একটুঁ হেসে তাকে সম্মতই জানালাম।
‘এই ইহুদীদাটা কে,তুমি নিশ্চয় জানো’,হাসান জিজ্ঞাসা করলো।
‘এই বাড়ীগুলো ছেড়ে গেলে দূরে একটা হলুদ বাড়ী আছে।যতদূর জানি মোশে হামোন,
আগের সুলতানের ডাক্তার,তার বাড়ী,বেশ ধনী লোক ছিল।বেশ ক বছর ডাক্তারের রক্ষিতা আর তার ভাই,আমাসায়া শহর থেকে ওখানে লুকিয়ে ছিল।ক বছর আগে ইহুদীদের বাৎসরিক পর্ব, ‘পাসওভারে’,কমবয়সী এক গ্রীক ইহুদীদের পাড়ায় নিখোঁজ হয়,গুজব রটে যায় খুন করে তার লাশ গুম হয়ে গেছে বর্বর ইহুদীদের হাতে,একেবারেই লা পাত্তা।এক এক করে মিথ্যা সাক্ষী খাঁড়া করে,ইহুদীদের ফাঁসি দেয়া আরম্ভ হলো নির্বিচারে।সুলতানের ডাক্তারের সুন্দরী রক্ষিতা আর তার ভাই লুকিয়ে ছিল ঐ বাড়ীতে,অবশ্য সুলতানের অনুমতি নিয়েই।সুলতানের মারা যাওয়ার পর দূবৃত্তরা মেয়েটাকে খুঁজে পায়নি,তবে তার ভাইকে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল,সে তখন একাই ছিল ঐ বাড়ীতে।

‘সেকুরে যদি আমার ভাই এর যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার জন্যে অপেক্ষা না করে,তবে নিঃসন্দেহে বিচারে তার শাস্তি হবে’,হাসান তার লেখা চিঠিটা আমাকে দিয়ে বললো,
চোখে মুখে কোন ক্ষোভ বা রাগ ছিল না,ছিল হেরে যাওয়া প্রেমিকের হতাশা।
শুল্ক বিভাগের (কাষ্টমসের)চাকরী,টাকাপয়সায় তার মনে নতুন তারুন্য আনেনি,সেই পুরোনো হাসান।মনে হলো,দুঃখ,হতাশায় ভেসে যাওয়া হাসান হয়তো জিজ্ঞাসা করবে,কি ভাবে সেকুরে তার হতে পারে।তবে তার শয়তানী ভাবটা একেবারেই অসহনীয়,তার কোন কথা শোনার ইচ্ছা ছিল না আর।মানুষ যখন শয়তানীর আশ্রয় নেয়,আর সেটা যদি প্রেমে প্রত্যাখানের পর হয়,তখন তার নিষ্ঠুরতা হয় আকাশ ছোঁয়া।হাসানদের বাড়ীর লাল তলোয়ারের কথাটা মনে পড়তেই কিছুটা ভঁয়েই ছুটে বের হয়ে গেলাম।

আবার পড়লাম অন্ধ তাতার ফকিরের কটুক্তির মুখে,রাস্তা থেকে একটা পাথরের টুঁকরা তার ভিক্ষার রুমালে দিয়ে বললাম, ‘এই নাও,বদমায়েশ তাতার,এটাই তোমার প্রাপ্য’।অন্ধ তাতার সেটাকে পয়সা ভেবে হাত বাড়িয়ে দেখলো,তারপর আরম্ভ হলো অভিশাপ,
গালাগালি।কান না দিয়ে গেলাম আমার মেয়ের বাসায়,বেশ ভাল জায়গায় বিয়ে হয়েছে,তার।

আমার ভাল মেয়েটা,একটা পিঠা এনে দিল,যদিও গতকালকের তবুও বেশ মচমচে ছিল।রাতের খাবারের জন্যে ছিল ভেড়ার মাংস,ঝোলটায় ছিল ডিম, সাথে টক বরই,আমার পচ্ছন্দের খাবার।দুই বড় চামচ বাটিতে নিয়ে রুটির সাথে মজা করে খেলাম,সাথে ছিল আঙ্গুরের জ্যাম,কিছু কেওড়ার জল দিয়ে বেশ মজা করে খেলাম।এবার আমার সেকুরেকে চিঠি দেয়ার পালা।


আমি সেকুরে



ধোয়া কাপড়গুলো তুলে রাখছিলাম,হাইরিয়ে বললো,এসথার বসে আছে,নাকি আমি কি বানিয়ে বললাম...।কিন্ত আমার মিথ্যা কথা বলার কি কারণ থাকতে পারে?
যাকগে,এসথারের আসার সময় আমি গর্ত দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলাম বাবার ঘরে,সিয়াহর সাথে বাবার কথাবার্তা আড়ি পেতে শুনছিলাম,যদিও আমার মন সিয়াহ আর হাসানের চিঠিতে আটকে ছিল।আমার মৃত্যু ভঁয় বাবাকে অতিষ্ঠ করে যাচ্ছে,আর সিয়াহর আমার মত বুড়ীকে পচ্ছন্দ করাটা হয়তো খুবই সাময়িক।সিয়াহর বিয়ে করা দরকার,তার এই প্রেম পর্ব আর কিছু না বিয়ে পাগল মানুষের মাতলামি।আমি এখানে শুধুই একটা মুখ,দরকারে তার ভালবাসার চেহারা বদলাতে সময় লাগবে না,আমি না হলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে,
সেখানে দরকার শুধু একটা মুখ,একটা শরীর।

রান্নাঘরে হাইরিয়ের দেয়া কেওড়া জলের সরবত খেতে খেতে এসথার কেমন জানি আড় চোখে চোখে আমাকে দেখছিল।হাইরিয়ে অনেকটা বাবার রক্ষিতার মত,এসথারকে কানাঘুষা করে এটা ওটা অনেক কিছুই বলতে হয়তো তার দ্বিধা হয়নি।
‘আমার হরিন চোখের সুন্দরী,সুন্দরীদের মাঝের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সেকুরে,আসতে দেরী হলো নেসিমের জন্য,অযথার কিছু কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই’,এসথার বললো, ‘তোমার স্বামী নাই এ যন্ত্রনা থেকে অনেক দূরে,ভালই আছ’।

চিঠিগুলো বের করলো এসথার,তার হাত থেকে অনেকটা কেড়েই নিলাম চিঠিগুলো,সহ্য হচ্ছিল না আর।হাইরিয়ে একপাশে চলে গেল,তবে সেখান থেকে তার কথাবার্তায় আড়ি পাততে খুব একটা কষ্ট হবে না।এসথার আম্র মুখ দেখে মন বিশ্লেষনে ব্যাস্ত না হয়ে যায়,তাই মুখটা একপাশে নিয়ে সিয়াহর চিঠিটা পড়ছিলাম।ফাঁসিতে আত্মহত্যা করা ইহুদীর বাড়ীর কথায় তেমন বিচলিত হয়নি,মনে মনে বললাম, ‘সেকুরে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নাই,তুমি যে কোন অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে’।

হাসানের চিঠিটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম,ও কি পাগল হয়ে গেল নাকিঃ
‘সেকুরে আমার শরীর,মন কামনার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে,জানি সেটা নিয়ে তোমার ভাবার কিছু নেই।স্বপ্নে প্রায় দেখি পাহাড়ে পাহাড়ে তোমার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি।জানি না তোমাকে কি ভাবে বোঝাবো,আমার চিঠির কোন উত্তর না পেলে,প্রতি মূহুর্তে আমি যেন
রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছি।তবু আশা করে লিখছি যদি এবার দয়া করে উত্তর দাও।খবরটা ছড়িয়ে গেছে চারপাশে,এমন কি তোমার ছেলেরাও জানেঃস্বপ্নে তোমার স্বামীর মৃত্যু জানার কথাটা,তুমি এখন একটা মুক্ত বিহং,অবশ্য জানি না এটা সত্যি কি না?তবে ভুলে যাবে না,তুমি এখনও আমার ভাই এর বৌ,আর এই বাড়ীর সাথে তোমার একটা আত্মার সম্পর্ক আছে।আমার বাবার মতে,আমরা দুজনে কাজীর কাছে গিয়ে তোমাকে আইনগত ভাবে বাড়ীর বৌ করে আনবো।কজন লোক দিন কয়েকের মধ্যেই তোমাদের বাসায় যাবে,তোমার বাবাকে সাবধান করে দিও,যাতে কোন গোলমাল যেন না হয়।তোমার মতামত,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাবে’।
চিঠিটা শেষ করে এসথারের দিকে তাকালাম,এসথার অবশ্য সিয়াহ বা হাসান কাউকে নিয়ে কিছু বললো না।রান্নাঘরের কোনায় লুকানো কলম আর কাগজে রুটি কাটার কাঠে সিয়াহকে চিঠি লিখতে লিখতে কেন জানি থমকে গেলাম।অজানা এক ঝড় যেন আমাকে অযথাই আমাকে তছনছ করে যাচ্ছিল,এসথার অবশ্য তার কেওড়াজলের শরবত নিয়ে ব্যাস্ত ছিল,আর মনের ঝড়ের সাথে আমি একাই যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম।

‘কত মিষ্টি তোমার হাসিটা’,এসথার বললো, ‘চিন্তা করো না,ইস্তাম্বুলের অনেক ধনী লোক আর পাশা আছে,যারা তোমার মত সুন্দরীর জন্যে এমন কিছু নেই যা বিসর্জন দিতে কার্পন্য করবে’।
মাঝে মাঝে ভাবি কেন যে আমার মনের কথাগুলো অন্য কাউকে বলি?
‘কিন্ত এসথার কে বিয়ে করবে বিধবাকে আবার দুই ছেলেকে নিয়ে,তোমার কি মাথা খারাপ হলো’?
‘বিধবা?একগাদা লোক আছে’,তারপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে আমাকে দেখালো।
এসথারের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,মনে হলো আমি তাকে একেবারেই পচ্ছন্দ করি না।এসথার বুঝলো আমি তাকে কোন চিঠি দিচ্ছি না,আর অযথা না বসে তার জন্যে চলে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।এসথার চলে যাওয়ার পর বাড়ীর এক কোনায় গিয়ে বসে আত্ম বিশ্লেষণ করছিলাম।
দেয়ালে হেলান দিয়ে ভাবছিলাম,সামনের পৃথিবীটা যেন অন্ধকার কোথাও আলো নাই।জানি না কি করা উচিত,কোন উত্তর খুঁজে ছিল না কোথাও,শুধু দোতলা থেকে সেভকেত আর অর্হান এর কথাবার্তা ভেসে আসছিল।
‘তুই একবারে মেয়ের মত’,সেভকেত বলছিল, ‘সবসময় পেছন থেকে জাবড়াজাবড়ি করিস’।
‘আমার দাত ভেঙ্গে গেছে’,অর্হান বললো।
আমার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল,বাবা আর সিয়াহ কি নিয়ে আলোচনা করছে।
বাবার কাজের ঘরের নীল দরজাটা খোলা ছিল,আর দু একটা কথাবার্তা আমার কানে ভেসে আসছিল।
‘ভেনিসের ওস্তাদদের ছবি দেখে অদ্ভুত একটা ভঁয় জাগে আমাদের মনে তখন’,
বাবা বলছিল, ‘ছবিতে চোখ শুধু দুটো গর্ত না আর,ওটা হতে হবে চোখের মত যার প্রতিফলন আছে আয়নায়,যে দেখে আর জনে নেয়।ঠোট ছবির কাগজে শুধু কাটা দাগ না,ওটা হওয়া উচিত লালের বিভিন্ন ছোঁয়াচ-যেখানে আছে আমাদের আনন্দ,দুঃখ যাদের প্রকাশ ঠোঁটের ভঙ্গীতে।আমাদের নাক মুখটা ভাগ করার দেয়াল না,তবে আমাদের শরীরের একটা জীবন্ত প্রকাশ’।

সিয়াহর চিঠিতে কি ‘আমার’,কথাটায় যাদের কথা বলছিল তারা তো অবিশ্বাসীর দল?উঁকি মেরে দেখলাম সিয়াহর চোখমুখ যেন রক্ত হারানো একটা লাশ।ভাবছিলাম,সাহসী শাহজাদা কি সারারাত ঘুমায়নি আমার কথা ভেবে ভেবে?তাই চোখমুখের এই অবস্থা?হয়তো তোমরা জান না,সিয়াহ,লম্বা,পাতলা বেশ সুন্দর,সুপুরুষ,চওড়া কপাল,টিকোলো নাক,কটা চোখে ওকে বেশ ভালই লাগে।লম্বা লম্বা আঙ্গুল,চওড়া কাধ,তবে ঐ কুলীদের মত না।বার বছর পর প্রথমবারের মত যখন তাকে দেখলাম,সে তখন চোখ কেড়ে নেয়া এক সুপুরুষ।
আবার যখন উঁকি দিলাম,দেখি কিছু একটা নিয়ে তার মনে বেশ কিছু একটা নিয়ে টানা পোড়েন,নিজেকে বেশ দোষী মনে হচ্ছিল,আমার কারণেই তার জীবনের এই যন্ত্রনা।সিয়াহ একটা সরল শিশুর মত বাবার কথাগুলো শুনছিল,সিয়াহ যখন কথা বলা আরম্ভ করলো, ইচ্ছা হচ্ছিল তার গোলাপী ঠোঁটে স্তনের বোটাটা গুজে দেই।যেন আমার আঙ্গুলগুলো তার চুলে আলতো করে বিলি কেটে যাচ্ছে আর সিয়াহর মাথাটা দুই স্তনের মাঝে বাচ্চাদের মত আমার দুধ চুষে খাচ্ছে।সিয়াহ আমার,কামনার সুরে,শান্তি,সুখে সিয়াহ হবে আমার।

ঘেমে যাচ্ছি,সিয়াহ হয়তো আমার স্তনের কথা ভেবে ভুলে গেছে বাবার ছবির ব্যাখা।শুধু স্তন না,মাতালের মত আমার চুল,গলা,সব কিছু আদর করে ছুঁয়ে যাচ্ছে।এক সময় হয়তো কৈশোরের আমার শরীরের নানান অংশের কল্পনায় ভেসে যেত,এখন হয়তো সুপুরুষ সিয়াহ নিজের অজান্তেই মিষ্টি নাম দিয়ে কল্পনার রাজ্যে ভেসে যাচ্ছে।অনুভব করছিলাম তার চিঠির লেখায় আমার শরীর সৌন্দর্য এর মিষ্টি সুরটা।

রাগ হচ্ছিল ভেবে,হয়তো বাবার জন্যেই আমার আর বিয়ে হবে না,রাগ হচ্ছিল ভেনিসের শিল্পীদের অনুকরণে আঁকা ছবিগুলো দেখে।অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ করলাম-আল্লাহ,ওটা আমার নিজের ইচ্ছায় না,কোথা থেকে হঠাৎ সিয়াহ যেন অন্ধকারে আমার পাশে দাড়িয়ে গেল।মনে হলো,পেছনে এসে সে আমার ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে,কানে আলতো করে কামড় দিচ্ছে,স্বাস্থ্যবান এক সুপুরুষ শাহজাদা,চমৎকাঁর নিটোল শরীরের একটা মানুষ যার ওপর আমি নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারি।ঘাড়ের শুড়শুড়িতে শরীরের লোমগুলো তখন দাড়ানো,
স্তনের বোঁটাগুলো উত্তেজনায় শক্ত হয়ে গেছে।অন্ধকারে অনুভব করছিলাম তার স্ফীত লিঙ্গ পেছন থেকে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে,মাথা ঘুরে উঠলো।জানি না,সিয়াহ কি ধরণের মানুষ?
অযথা কি যা তা ভাবছি?

অনেক সময় স্বপ্নে দেখি,স্বামীর তীরে রক্তাক্ত শরীরটা,যন্ত্রনায় দুলতে দুলতে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আসছে,তবে দুঃখ এটাই যে আমাদের মাঝে বিরাট একটা নদী।নদীর ওপার থেকে রক্তাক্ত শরীরে সে আমাকে ডাকছে,আর তার স্ফীত লিঙ্গ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
হাম্মামে জর্জিয়ার সেই বুড়ীটার কথা যদি সত্যি হয়, ‘হ্যা,হ্যা,ওটা অনেক বড় হয়’,কিন্ত আমার স্বামীরটা তো অত বড় ছিল না।সিয়াহরটা হয়তো অনেক বড়,বেল্টের নীচে দেখলাম গতকাল সেভকেত পেশাবের গামলাতে যা দেখলাম,ওতো অনেক বড়,হয়তো খুব ব্যাথা লাগবে।
‘মা,সেভকেতকে আমাকে খামাখা জ্বালাচ্ছে’।
সিয়াহর দিক থেকে সরে লাল পোশাকটা পরে ঘরে ঢুকলাম,তোষকে দুই ছেলে মারমারি করছে।
‘তোমাদেরকে কতবার বললাম সিয়াহ যখন আসবে,তখন এভাবে অযথা চীৎকাঁর করবে না’।
‘মা,তুমি লাল কাপড় পরে কোথায় যাচ্ছ’?সেভকেত জিজ্ঞাসা করলো।
‘মা তুমি সেভকেতকে কিছু বললে না’,অর্হান বললো।
‘তোকে কতবার বললাম,ছোট ভাইকে বিরক্ত করিস না?আর এই মরা পাখীটা এখানে কেন’?পাখীটা একপাশে ফেলে দিলাম।
‘সেভকেত রাস্তা থেকে তুলে আনলো’।
‘এখনই ওটা ফেলে দিয়ে আয়,যেখানে ছিল’।
‘সেভকেতকে বল’।
‘কি বললাম তর্ক না করে এখনই যা’।
তারপর যা করা দরকার ছিল ঠিক তাই করলাম,দুজনকে দিলাম কটা থাপ্পড়,ঠোটে একটুঁ কামড়েও দিলাম,আমার রাগ দেখে দুই ভাই ঝগড়া ঝগড়া করতে করতে পালালো।
দেখতে হবে বেশিক্ষন ওরা যেন বাইরে না থাকে,যা শীত।শিল্পীদের মধ্যে সিয়াহকেই আমার সবসময় খুব পচ্ছন্দ ছিল।অন্যান্যদের চেয়ে তার জন্যে আর্কষনের মাত্রাটা ছিল অনেক বেশী,তার মনের ভেতরটাও যেন জানা ছিল আমার।

কাগজ,কলম বের চিঠির উত্তর দেয়া আরম্ভ করলাম,তেমন কোন কিছু না ভেবেই,লিখলামঃ
‘ঠিক আছে মাগরেবের নামাজের আগে ঐ ইহুদীর বাড়ীতে দেখা হবে।বাবার বইটা যত তাড়াতাড়ি পার শেষ করে ফেল,ভুলে যেও না’।

হাসানের চিঠির কোন উত্তর দেইনি।কাজীর কাছে গেলেও,লোকজন জোগাড় করে অত সহজে বাড়ীতে এসে গোলমাল,কান্ড কারখানা করার সূযোগ পাবে না।তা ছাড়া সবকিছু এত সহজ হলে হাসান কি আর চুপচাপ বসে থাকতো?হাসান হয়তো আমার চিঠির আশায় বসে আছে,চিঠি না পেলে তার রাগ কোথায় ছুটে যাবে কে জানে?তখন সে চেষ্টা করতে পারে লোকজন জড় করে আমাকে জোর করে তুলে নেয়ার জন্যে,তাকে যে আমি ভঁয় পাই না,তা না।তবে আমি আশা করছি সিয়াহ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে রক্ষা করবে।
মনের কথাটা বলেই ফেলি,হাসানকেও আমি ভালবাসি।

একটা প্রশ্ন আমাকে বড়ই জ্বালায়,আচ্ছা ভালবাসা কি,কাকে বলে ভালবাসা?এমন না যে আমার জানা নাই যে কত স্বার্থপর,দূর্বল আর করুন মানুষ হাসান,আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাতের পর রাতের অপেক্ষায় থাকতো আমার দরজার বাইরে।এসথারের কাছে শুনলাম এখন তার বেশ ভালই কামাই,আর টাকার সাথে সাথে মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়,আর আগুনের শরীরের জিনদের মত একটা অজানা অন্ধকাঁর আকাশ ঘিরে আছে হাসানকে,যা নিঃসন্দেহে বেশ আর্কষনীয়।এটা তো তার পাঠানো চিঠিতে খুব সহজেই বোঝা পায়।

০০০০০০০০০



(১৬)


রাস্তায় বেরোনোর পর দেখি,অন্ধ তাতারটা তখনও বসে আছে আমাকে জ্বালানোর জন্যে,
কিছু না বলে তার দিকে থুতু ফেলে হাঁটা দিলাম।এত শীত তবু কেন যে এইসব শয়তানের দল মরে না?হাসান চিঠিটা চুপচাপ করে পড়ছিল,অধৈর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘তা হলে,কি হচ্ছে’,হাসান চিঠিটা জোরে পড়া আরম্ভ করলোঃ

প্রিয় সেকুরে,তোমার অনুরোধ আমি ভুলিনি,তোমার বাবার বইটা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শেষ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি,নিশ্চিত থাকতে পার এ মুহুর্তে ওটা নিয়েই আমার যত ব্যাস্ততা,আর অন্য কোন কিছুতে মন দেয়ার সময়ও নাই।এমন কি তোমাদের বাড়ীতে যাওয়ার সময়টাও খুঁজে পাচ্ছি না,তা ছাড়া তোমাকে অযথা বিরক্তও করতে চাই না,ভেবে দেখলাম তোমার কথাটাই ঠিক, ‘আমার ভালবাসা সেটাতো আমার রাজত্ব,আমার দেশ,ওখানে আর কারও কিছু বলার নেই’।ভালবাসার তাড়নায় ঠিকমত কলমটা হাতে নিয়ে তোমার বাবার বইটা শেষ করতে কষ্ট হচ্ছে যদিও,তবুও আমি যুদ্ধ করে যাচ্ছি।তোমার ক্তহা,তোমার মুখটা মনে ভেসে উঠতেই সব খেই হারিয়ে ফেলি,তখন আর কোন কিছুতেই মন বসাতে পারি না।বার বছর পরে ইস্তাম্বুলেই ফিরে শুধু একবার মাত্র দেখা হলো তোমার সাথে।সেই চেনা মুখটা অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার মত,আরেকবার যদি দেখা হতো তা হলে হয়তো তোমার মুখটা জ্বলজ্বল হয়ে থাকতো মনের খাতায়।গতকালকে সেভকেত আমাকে একটা ইহুদীর পোড়ো বাড়ীতে নিয়ে গেল,শুনলাম ফাঁসী দিয়ে লোকটা নাকি মারা গেছে।বেশ র্নিজন একটা জায়গা,কারও আসার সম্ভাবনা নাই,কেউ আমাদের দেখবে না,যখন ইচ্ছা আসতে পার,আমি তোমার জন্যে অপেক্ষা করবো।সেভকেতের কাছে তোমার স্বপ্নের কথা শুনলাম,বললো তোমার স্বামী-ওর বাবা আর ফিরে আসছে না’।

চিঠিটা পড়তে পড়তে হাসান অনেক কটূক্তি,ঠাট্টা মশকরা করছিল।কোন কোন সময় গলার স্বরে নাকি সুর এনে,মেয়েলী সুরে কথা বলছিল,সবকিছু হারানো এক প্রেমিকের বিধ্বস্ত আকাশ।হাসান সিয়াহর লেখাটা নিয়ে ঠাট্টা করে বললো,‘তোমার মুখটা আরেকবার দেখতে চাই’।বোঝাই যাচ্ছে সেকুরের চোখে একটুঁ আশার আলো দেখে,সিয়াহ সমঝোতা করার চেষ্টা করছে।
‘সিয়াহ সত্যি সত্যিই সেকুরেকে ভালবাসে’,আমি বললাম।
হাসান উত্তর দিল,‘জানি সেভকেত কত চালাক ছেলে,ও আমাদের সাথে অনেক বছর ছিল,সিয়াহকে ওর ঐ ইহুদীদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার কথা না,সেকুরের কোন উৎসাহ ছাড়া।সেকুরে যদি ভাবে আমার ভাই মারা গেছে,তবে সে ভুল করবে,আমি জানি আমার ভাই ফিরে আসবে’।



কথা শেষ হওয়ার আগেই হাসান পাশের ঘরে ছুটে মোমবাতি জ্বালাতে গিয়ে হাতটা পোড়ালো,শোনা যাচ্ছিল তার চীৎকাঁর।দেখলাম পোড়া জায়গায় জিভ দিয়ে চেটে শেষমেষ কোনরকমে মোমবাতিটা জ্বালালো,হাসান,তারপর কাগজ আর কলম নিয়ে রেগেমেগে চিঠি লেখা আরম্ভ করলো।তার মনে একটা আনন্দ,একটা উৎসুক্য আমার দেখায়,একটুঁ হেসে তাকে সম্মতই জানালাম।
‘এই ইহুদীদাটা কে,তুমি নিশ্চয় জানো’,হাসান জিজ্ঞাসা করলো।
‘এই বাড়ীগুলো ছেড়ে গেলে দূরে একটা হলুদ বাড়ী আছে।যতদূর জানি মোশে হামোন,
আগের সুলতানের ডাক্তার,তার বাড়ী,বেশ ধনী লোক ছিল।বেশ ক বছর ডাক্তারের রক্ষিতা আর তার ভাই,আমাসায়া শহর থেকে ওখানে লুকিয়ে ছিল।ক বছর আগে ইহুদীদের বাৎসরিক পর্ব, ‘পাসওভারে’,কমবয়সী এক গ্রীক ইহুদীদের পাড়ায় নিখোঁজ হয়,গুজব রটে যায় খুন করে তার লাশ গুম হয়ে গেছে বর্বর ইহুদীদের হাতে,একেবারেই লা পাত্তা।এক এক করে মিথ্যা সাক্ষী খাঁড়া করে,ইহুদীদের ফাঁসি দেয়া আরম্ভ হলো নির্বিচারে।সুলতানের ডাক্তারের সুন্দরী রক্ষিতা আর তার ভাই লুকিয়ে ছিল ঐ বাড়ীতে,অবশ্য সুলতানের অনুমতি নিয়েই।সুলতানের মারা যাওয়ার পর দূবৃত্তরা মেয়েটাকে খুঁজে পায়নি,তবে তার ভাইকে নিয়ে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিল,সে তখন একাই ছিল ঐ বাড়ীতে।

‘সেকুরে যদি আমার ভাই এর যুদ্ধ থেকে ফিরে আসার জন্যে অপেক্ষা না করে,তবে নিঃসন্দেহে বিচারে তার শাস্তি হবে’,হাসান তার লেখা চিঠিটা আমাকে দিয়ে বললো,
চোখে মুখে কোন ক্ষোভ বা রাগ ছিল না,ছিল হেরে যাওয়া প্রেমিকের হতাশা।
শুল্ক বিভাগের (কাষ্টমসের)চাকরী,টাকাপয়সায় তার মনে নতুন তারুন্য আনেনি,সেই পুরোনো হাসান।মনে হলো,দুঃখ,হতাশায় ভেসে যাওয়া হাসান হয়তো জিজ্ঞাসা করবে,কি ভাবে সেকুরে তার হতে পারে।তবে তার শয়তানী ভাবটা একেবারেই অসহনীয়,তার কোন কথা শোনার ইচ্ছা ছিল না আর।মানুষ যখন শয়তানীর আশ্রয় নেয়,আর সেটা যদি প্রেমে প্রত্যাখানের পর হয়,তখন তার নিষ্ঠুরতা হয় আকাশ ছোঁয়া।হাসানদের বাড়ীর লাল তলোয়ারের কথাটা মনে পড়তেই কিছুটা ভঁয়েই ছুটে বের হয়ে গেলাম।

আবার পড়লাম অন্ধ তাতার ফকিরের কটুক্তির মুখে,রাস্তা থেকে একটা পাথরের টুঁকরা তার ভিক্ষার রুমালে দিয়ে বললাম, ‘এই নাও,বদমায়েশ তাতার,এটাই তোমার প্রাপ্য’।অন্ধ তাতার সেটাকে পয়সা ভেবে হাত বাড়িয়ে দেখলো,তারপর আরম্ভ হলো অভিশাপ,
গালাগালি।কান না দিয়ে গেলাম আমার মেয়ের বাসায়,বেশ ভাল জায়গায় বিয়ে হয়েছে,তার।

আমার ভাল মেয়েটা,একটা পিঠা এনে দিল,যদিও গতকালকের তবুও বেশ মচমচে ছিল।রাতের খাবারের জন্যে ছিল ভেড়ার মাংস,ঝোলটায় ছিল ডিম, সাথে টক বরই,আমার পচ্ছন্দের খাবার।দুই বড় চামচ বাটিতে নিয়ে রুটির সাথে মজা করে খেলাম,সাথে ছিল আঙ্গুরের জ্যাম,কিছু কেওড়ার জল দিয়ে বেশ মজা করে খেলাম।এবার আমার সেকুরেকে চিঠি দেয়ার পালা।


আমি সেকুরে



ধোয়া কাপড়গুলো তুলে রাখছিলাম,হাইরিয়ে বললো,এসথার বসে আছে,নাকি আমি কি বানিয়ে বললাম...।কিন্ত আমার মিথ্যা কথা বলার কি কারণ থাকতে পারে?
যাকগে,এসথারের আসার সময় আমি গর্ত দিয়ে উঁকি দিচ্ছিলাম বাবার ঘরে,সিয়াহর সাথে বাবার কথাবার্তা আড়ি পেতে শুনছিলাম,যদিও আমার মন সিয়াহ আর হাসানের চিঠিতে আটকে ছিল।আমার মৃত্যু ভঁয় বাবাকে অতিষ্ঠ করে যাচ্ছে,আর সিয়াহর আমার মত বুড়ীকে পচ্ছন্দ করাটা হয়তো খুবই সাময়িক।সিয়াহর বিয়ে করা দরকার,তার এই প্রেম পর্ব আর কিছু না বিয়ে পাগল মানুষের মাতলামি।আমি এখানে শুধুই একটা মুখ,দরকারে তার ভালবাসার চেহারা বদলাতে সময় লাগবে না,আমি না হলে অন্য কাউকে বিয়ে করবে,
সেখানে দরকার শুধু একটা মুখ,একটা শরীর।

রান্নাঘরে হাইরিয়ের দেয়া কেওড়া জলের সরবত খেতে খেতে এসথার কেমন জানি আড় চোখে চোখে আমাকে দেখছিল।হাইরিয়ে অনেকটা বাবার রক্ষিতার মত,এসথারকে কানাঘুষা করে এটা ওটা অনেক কিছুই বলতে হয়তো তার দ্বিধা হয়নি।
‘আমার হরিন চোখের সুন্দরী,সুন্দরীদের মাঝের শ্রেষ্ঠ সুন্দরী সেকুরে,আসতে দেরী হলো নেসিমের জন্য,অযথার কিছু কাজে ব্যাস্ত ছিলাম তাই’,এসথার বললো, ‘তোমার স্বামী নাই এ যন্ত্রনা থেকে অনেক দূরে,ভালই আছ’।

চিঠিগুলো বের করলো এসথার,তার হাত থেকে অনেকটা কেড়েই নিলাম চিঠিগুলো,সহ্য হচ্ছিল না আর।হাইরিয়ে একপাশে চলে গেল,তবে সেখান থেকে তার কথাবার্তায় আড়ি পাততে খুব একটা কষ্ট হবে না।এসথার আম্র মুখ দেখে মন বিশ্লেষনে ব্যাস্ত না হয়ে যায়,তাই মুখটা একপাশে নিয়ে সিয়াহর চিঠিটা পড়ছিলাম।ফাঁসিতে আত্মহত্যা করা ইহুদীর বাড়ীর কথায় তেমন বিচলিত হয়নি,মনে মনে বললাম, ‘সেকুরে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নাই,তুমি যে কোন অবস্থায় নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে’।

হাসানের চিঠিটা দেখে অবাক হয়ে গেলাম,ও কি পাগল হয়ে গেল নাকিঃ
‘সেকুরে আমার শরীর,মন কামনার আগুনে দাউদাউ করে জ্বলছে,জানি সেটা নিয়ে তোমার ভাবার কিছু নেই।স্বপ্নে প্রায় দেখি পাহাড়ে পাহাড়ে তোমার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি।জানি না তোমাকে কি ভাবে বোঝাবো,আমার চিঠির কোন উত্তর না পেলে,প্রতি মূহুর্তে আমি যেন
রক্তাক্ত হয়ে যাচ্ছি।তবু আশা করে লিখছি যদি এবার দয়া করে উত্তর দাও।খবরটা ছড়িয়ে গেছে চারপাশে,এমন কি তোমার ছেলেরাও জানেঃস্বপ্নে তোমার স্বামীর মৃত্যু জানার কথাটা,তুমি এখন একটা মুক্ত বিহং,অবশ্য জানি না এটা সত্যি কি না?তবে ভুলে যাবে না,তুমি এখনও আমার ভাই এর বৌ,আর এই বাড়ীর সাথে তোমার একটা আত্মার সম্পর্ক আছে।আমার বাবার মতে,আমরা দুজনে কাজীর কাছে গিয়ে তোমাকে আইনগত ভাবে বাড়ীর বৌ করে আনবো।কজন লোক দিন কয়েকের মধ্যেই তোমাদের বাসায় যাবে,তোমার বাবাকে সাবধান করে দিও,যাতে কোন গোলমাল যেন না হয়।তোমার মতামত,যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানাবে’।
চিঠিটা শেষ করে এসথারের দিকে তাকালাম,এসথার অবশ্য সিয়াহ বা হাসান কাউকে নিয়ে কিছু বললো না।রান্নাঘরের কোনায় লুকানো কলম আর কাগজে রুটি কাটার কাঠে সিয়াহকে চিঠি লিখতে লিখতে কেন জানি থমকে গেলাম।অজানা এক ঝড় যেন আমাকে অযথাই আমাকে তছনছ করে যাচ্ছিল,এসথার অবশ্য তার কেওড়াজলের শরবত নিয়ে ব্যাস্ত ছিল,আর মনের ঝড়ের সাথে আমি একাই যুদ্ধ করে যাচ্ছিলাম।

‘কত মিষ্টি তোমার হাসিটা’,এসথার বললো, ‘চিন্তা করো না,ইস্তাম্বুলের অনেক ধনী লোক আর পাশা আছে,যারা তোমার মত সুন্দরীর জন্যে এমন কিছু নেই যা বিসর্জন দিতে কার্পন্য করবে’।
মাঝে মাঝে ভাবি কেন যে আমার মনের কথাগুলো অন্য কাউকে বলি?
‘কিন্ত এসথার কে বিয়ে করবে বিধবাকে আবার দুই ছেলেকে নিয়ে,তোমার কি মাথা খারাপ হলো’?
‘বিধবা?একগাদা লোক আছে’,তারপর হাতের আঙ্গুল দিয়ে আমাকে দেখালো।
এসথারের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম,মনে হলো আমি তাকে একেবারেই পচ্ছন্দ করি না।এসথার বুঝলো আমি তাকে কোন চিঠি দিচ্ছি না,আর অযথা না বসে তার জন্যে চলে যাওয়াটাই যুক্তিযুক্ত।এসথার চলে যাওয়ার পর বাড়ীর এক কোনায় গিয়ে বসে আত্ম বিশ্লেষণ করছিলাম।
দেয়ালে হেলান দিয়ে ভাবছিলাম,সামনের পৃথিবীটা যেন অন্ধকার কোথাও আলো নাই।জানি না কি করা উচিত,কোন উত্তর খুঁজে ছিল না কোথাও,শুধু দোতলা থেকে সেভকেত আর অর্হান এর কথাবার্তা ভেসে আসছিল।
‘তুই একবারে মেয়ের মত’,সেভকেত বলছিল, ‘সবসময় পেছন থেকে জাবড়াজাবড়ি করিস’।
‘আমার দাত ভেঙ্গে গেছে’,অর্হান বললো।
আমার মনে শুধু একটাই প্রশ্ন ছিল,বাবা আর সিয়াহ কি নিয়ে আলোচনা করছে।
বাবার কাজের ঘরের নীল দরজাটা খোলা ছিল,আর দু একটা কথাবার্তা আমার কানে ভেসে আসছিল।
‘ভেনিসের ওস্তাদদের ছবি দেখে অদ্ভুত একটা ভঁয় জাগে আমাদের মনে তখন’,
বাবা বলছিল, ‘ছবিতে চোখ শুধু দুটো গর্ত না আর,ওটা হতে হবে চোখের মত যার প্রতিফলন আছে আয়নায়,যে দেখে আর জনে নেয়।ঠোট ছবির কাগজে শুধু কাটা দাগ না,ওটা হওয়া উচিত লালের বিভিন্ন ছোঁয়াচ-যেখানে আছে আমাদের আনন্দ,দুঃখ যাদের প্রকাশ ঠোঁটের ভঙ্গীতে।আমাদের নাক মুখটা ভাগ করার দেয়াল না,তবে আমাদের শরীরের একটা জীবন্ত প্রকাশ’।

সিয়াহর চিঠিতে কি ‘আমার’,কথাটায় যাদের কথা বলছিল তারা তো অবিশ্বাসীর দল?উঁকি মেরে দেখলাম সিয়াহর চোখমুখ যেন রক্ত হারানো একটা লাশ।ভাবছিলাম,সাহসী শাহজাদা কি সারারাত ঘুমায়নি আমার কথা ভেবে ভেবে?তাই চোখমুখের এই অবস্থা?হয়তো তোমরা জান না,সিয়াহ,লম্বা,পাতলা বেশ সুন্দর,সুপুরুষ,চওড়া কপাল,টিকোলো নাক,কটা চোখে ওকে বেশ ভালই লাগে।লম্বা লম্বা আঙ্গুল,চওড়া কাধ,তবে ঐ কুলীদের মত না।বার বছর পর প্রথমবারের মত যখন তাকে দেখলাম,সে তখন চোখ কেড়ে নেয়া এক সুপুরুষ।
আবার যখন উঁকি দিলাম,দেখি কিছু একটা নিয়ে তার মনে বেশ কিছু একটা নিয়ে টানা পোড়েন,নিজেকে বেশ দোষী মনে হচ্ছিল,আমার কারণেই তার জীবনের এই যন্ত্রনা।সিয়াহ একটা সরল শিশুর মত বাবার কথাগুলো শুনছিল,সিয়াহ যখন কথা বলা আরম্ভ করলো, ইচ্ছা হচ্ছিল তার গোলাপী ঠোঁটে স্তনের বোটাটা গুজে দেই।যেন আমার আঙ্গুলগুলো তার চুলে আলতো করে বিলি কেটে যাচ্ছে আর সিয়াহর মাথাটা দুই স্তনের মাঝে বাচ্চাদের মত আমার দুধ চুষে খাচ্ছে।সিয়াহ আমার,কামনার সুরে,শান্তি,সুখে সিয়াহ হবে আমার।

ঘেমে যাচ্ছি,সিয়াহ হয়তো আমার স্তনের কথা ভেবে ভুলে গেছে বাবার ছবির ব্যাখা।শুধু স্তন না,মাতালের মত আমার চুল,গলা,সব কিছু আদর করে ছুঁয়ে যাচ্ছে।এক সময় হয়তো কৈশোরের আমার শরীরের নানান অংশের কল্পনায় ভেসে যেত,এখন হয়তো সুপুরুষ সিয়াহ নিজের অজান্তেই মিষ্টি নাম দিয়ে কল্পনার রাজ্যে ভেসে যাচ্ছে।অনুভব করছিলাম তার চিঠির লেখায় আমার শরীর সৌন্দর্য এর মিষ্টি সুরটা।

রাগ হচ্ছিল ভেবে,হয়তো বাবার জন্যেই আমার আর বিয়ে হবে না,রাগ হচ্ছিল ভেনিসের শিল্পীদের অনুকরণে আঁকা ছবিগুলো দেখে।অজান্তেই চোখ দুটো বন্ধ করলাম-আল্লাহ,ওটা আমার নিজের ইচ্ছায় না,কোথা থেকে হঠাৎ সিয়াহ যেন অন্ধকারে আমার পাশে দাড়িয়ে গেল।মনে হলো,পেছনে এসে সে আমার ঘাড়ে চুমু দিচ্ছে,কানে আলতো করে কামড় দিচ্ছে,স্বাস্থ্যবান এক সুপুরুষ শাহজাদা,চমৎকাঁর নিটোল শরীরের একটা মানুষ যার ওপর আমি নিশ্চিন্তে নির্ভর করতে পারি।ঘাড়ের শুড়শুড়িতে শরীরের লোমগুলো তখন দাড়ানো,
স্তনের বোঁটাগুলো উত্তেজনায় শক্ত হয়ে গেছে।অন্ধকারে অনুভব করছিলাম তার স্ফীত লিঙ্গ পেছন থেকে আমাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে,মাথা ঘুরে উঠলো।জানি না,সিয়াহ কি ধরণের মানুষ?
অযথা কি যা তা ভাবছি?

অনেক সময় স্বপ্নে দেখি,স্বামীর তীরে রক্তাক্ত শরীরটা,যন্ত্রনায় দুলতে দুলতে আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আসছে,তবে দুঃখ এটাই যে আমাদের মাঝে বিরাট একটা নদী।নদীর ওপার থেকে রক্তাক্ত শরীরে সে আমাকে ডাকছে,আর তার স্ফীত লিঙ্গ আমার দিকে তাকিয়ে আছে।
হাম্মামে জর্জিয়ার সেই বুড়ীটার কথা যদি সত্যি হয়, ‘হ্যা,হ্যা,ওটা অনেক বড় হয়’,কিন্ত আমার স্বামীরটা তো অত বড় ছিল না।সিয়াহরটা হয়তো অনেক বড়,বেল্টের নীচে দেখলাম গতকাল সেভকেত পেশাবের গামলাতে যা দেখলাম,ওতো অনেক বড়,হয়তো খুব ব্যাথা লাগবে।
‘মা,সেভকেতকে আমাকে খামাখা জ্বালাচ্ছে’।
সিয়াহর দিক থেকে সরে লাল পোশাকটা পরে ঘরে ঢুকলাম,তোষকে দুই ছেলে মারমারি করছে।
‘তোমাদেরকে কতবার বললাম সিয়াহ যখন আসবে,তখন এভাবে অযথা চীৎকাঁর করবে না’।
‘মা,তুমি লাল কাপড় পরে কোথায় যাচ্ছ’?সেভকেত জিজ্ঞাসা করলো।
‘মা তুমি সেভকেতকে কিছু বললে না’,অর্হান বললো।
‘তোকে কতবার বললাম,ছোট ভাইকে বিরক্ত করিস না?আর এই মরা পাখীটা এখানে কেন’?পাখীটা একপাশে ফেলে দিলাম।
‘সেভকেত রাস্তা থেকে তুলে আনলো’।
‘এখনই ওটা ফেলে দিয়ে আয়,যেখানে ছিল’।
‘সেভকেতকে বল’।
‘কি বললাম তর্ক না করে এখনই যা’।
তারপর যা করা দরকার ছিল ঠিক তাই করলাম,দুজনকে দিলাম কটা থাপ্পড়,ঠোটে একটুঁ কামড়েও দিলাম,আমার রাগ দেখে দুই ভাই ঝগড়া ঝগড়া করতে করতে পালালো।
দেখতে হবে বেশিক্ষন ওরা যেন বাইরে না থাকে,যা শীত।শিল্পীদের মধ্যে সিয়াহকেই আমার সবসময় খুব পচ্ছন্দ ছিল।অন্যান্যদের চেয়ে তার জন্যে আর্কষনের মাত্রাটা ছিল অনেক বেশী,তার মনের ভেতরটাও যেন জানা ছিল আমার।

কাগজ,কলম বের চিঠির উত্তর দেয়া আরম্ভ করলাম,তেমন কোন কিছু না ভেবেই,লিখলামঃ
‘ঠিক আছে মাগরেবের নামাজের আগে ঐ ইহুদীর বাড়ীতে দেখা হবে।বাবার বইটা যত তাড়াতাড়ি পার শেষ করে ফেল,ভুলে যেও না’।

হাসানের চিঠির কোন উত্তর দেইনি।কাজীর কাছে গেলেও,লোকজন জোগাড় করে অত সহজে বাড়ীতে এসে গোলমাল,কান্ড কারখানা করার সূযোগ পাবে না।তা ছাড়া সবকিছু এত সহজ হলে হাসান কি আর চুপচাপ বসে থাকতো?হাসান হয়তো আমার চিঠির আশায় বসে আছে,চিঠি না পেলে তার রাগ কোথায় ছুটে যাবে কে জানে?তখন সে চেষ্টা করতে পারে লোকজন জড় করে আমাকে জোর করে তুলে নেয়ার জন্যে,তাকে যে আমি ভঁয় পাই না,তা না।তবে আমি আশা করছি সিয়াহ তার সমস্ত শক্তি দিয়ে আমাকে রক্ষা করবে।
মনের কথাটা বলেই ফেলি,হাসানকেও আমি ভালবাসি।

একটা প্রশ্ন আমাকে বড়ই জ্বালায়,আচ্ছা ভালবাসা কি,কাকে বলে ভালবাসা?এমন না যে আমার জানা নাই যে কত স্বার্থপর,দূর্বল আর করুন মানুষ হাসান,আমার স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাতের পর রাতের অপেক্ষায় থাকতো আমার দরজার বাইরে।এসথারের কাছে শুনলাম এখন তার বেশ ভালই কামাই,আর টাকার সাথে সাথে মানুষের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়,আর আগুনের শরীরের জিনদের মত একটা অজানা অন্ধকাঁর আকাশ ঘিরে আছে হাসানকে,যা নিঃসন্দেহে বেশ আর্কষনীয়।এটা তো তার পাঠানো চিঠিতে খুব সহজেই বোঝা পায়।

০০০০০০০০০

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০২৩ রাত ১২:৩৭

রাজীব নুর বলেছেন: চোখ বুলিয়ে গেলাম।

১৪ ই আগস্ট, ২০২৩ রাত ১১:৩৬

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.