নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(৬)
বেশ উদ্দীপ্ত ছিল মনটা আজকে,ভাবছিলাম জীবনের সেই সময়ের কথা,যা সবাই একসময় পার হয় স্বপ্ন খোঁজার আশায়।স্কুলের শেষ দিনটা-চারপাশে অনুষ্ঠানের হৈহুল্লোড়,কথায় কথায় অযথাই হাসছিল সবাই,তবে চলে যাওয়ার,সময় কারও চোখ শুকনো ছিল না,হয়তো আর দেখা হবে না ভেবে,বিচ্ছিন্নতার একটা যন্ত্রনা্টা ছিল সবার মনে।কটা দিন মন খারাপ ছিল আমারও,তবে দিনের হিসেবটা কে জানে,আর সময় কি আর আটকে থাকে কোথাও?
তিরিশটা বছর কেটে গেল,তিরিশে পৌঁছানোটা বেশ দুঃখজনক-কেন জানি প্রস্তত ছিলাম না,বার্ধক্যের ঐ রাজ্যে পা দিতে।
স্বামী ছেলেমেয়েদের শোয়ার ঘরে নিয়ে গেছে,গ্লাসে মদ ঢেলে আমি পায়চারী করছি।ক দিন ধরে প্রচণ্ড বাতাস,বাতাসের এই ঝড়ো ভাব কোন কোন সময় তিন,ছয় এমন কি নয়টা দিন ও থাকে।এই ঝড়ো বাতাসকে ফ্রান্সে বলে মিস্ট্রাল-ওটা শীতের ডাক,শীত ছুটে আসছে খুব শীঘ্রিই,প্রস্তত হও সবাই।অনেক হলো বাতাসের মাতলামি আর কত,কেন ঘুরে বেড়াচ্ছে এই দমকা বাতাস,কেন যে চলে যাচ্ছে না?
জেকবের,গপ্পো গুজব ভঁরা,মাতাল চুমুর দুপুরটার কথা,ভাবছিলাম।দুঃখ করছি না,তবে আমার ব্যাবহারটা আমাকে কম অবাক করেনি,কি ভাবে যেন ভেঙ্গে ফেললাম চারপাশের কাঁচের দেয়ালটা,মুক্তির আনন্দে ভেসে গেছি আমি!জেকব কোনিগ কি ভাবলো,কেন ভাবলো,তাতে কি যায় আসে?সারাটা জীবন মানুষকে খুশী করার ব্যাবসায় কি কাটানো যায়?মদ খুব একটা খাওয়া হয় না,তবে আজকে আয়েস করে দ্বিতীয়বারের মত মদের গ্লাসে চুমু দিচ্ছি।এটা ব্যার্থতা না,হতাশাও না,অন্য একটা কিছু যা ধাক্কা দিয়ে বেশ বিরক্ত করছে আমাকে।
কাপড়চোপড় পরে স্বামী অপেক্ষা করছিল,আমাকে তাড়াতাড়ি তৈরী হতে বললো,
মনেই ছিল না যে,আজকে আমাদের নাইট ক্লাবে নাচে যাওয়ার কথা।উপরতলায় ছুটে কাপড়চোপড় বদলানো আরম্ভ করলাম,ফিলিপিনো কাজের মহিলা তখন বসার ঘরে বই পড়ছে,ছেলেমেয়েরা ঘুমাচ্ছে,তারও খুব একটা করার কিছু ছিল না।
নাইট ক্লাবে যাওয়াটা এমন বিশেষ কিছু না,তবুও সবচেয়ে ভাল পোষাকটা আজকে আমার গায়ে ছিল।তবে কি যায় আসে,আনন্দ করাটাও তো একটা বিশেষ অনুষ্ঠান!জানালার খিড়কি আর বাতাসের যুদ্ধে,হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল,রাগ হচ্ছিল স্বামীর উপরে,কেন যে জানালাগুলো বন্ধ করেনি।অন্যান্য রাতের মতই ছেলেমেয়েদের ঘরটা ঘুরে দেখলাম।মদের পরিমানটা হয়তো একটু বেশী হয়ে গেছে,দুপুরের খাবারে লেকের ঢেউ এ পাশে বসা মানুষটাও আমার মনটাকে কম দোলা দেয়নি।নাইট ক্লাবের সন্ধ্যাটা তেমন একটা জমেনি,গান,পরিবেশ দুটোই ছিল সস্তাদরের,বেশীক্ষন সময় নষ্ট না করে,বাড়ী ফিরে আমরা দুজনে কম্পিউটারে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম।
বিকেল বেলায় জেকবকে অনেক কিছু উপদেশ দিলাম,কেন যে ভুলে যাই আমার নিজেরও তো কিছু উপদেশ দরকার!দম আটকে আসছে ঘরের বাতাসে,স্বামী পাশে শুয়ে নাক ডাকছে নিশ্চিন্তে,বাতাসের আলোড়ন,জানালার যুদ্ধ,কোন কিছুই তার কানে যায় নি।জেকব হয়তো বৌকে দিনের গল্পগুলো শোনাচ্ছে (তবে আমি নিশ্চিত,আমাদের দেখা সাক্ষাতের কথাটা বলবে না,বলা সম্ভব না)।জেকবও হয়তো হাল্কা বোধ করছে,মনে চাপানো ওজনটা কিছুটা তো কমে,কারও সাথে মনের কথা যদি আদান প্রদান করা যায়।তবে বিশ্বাস হয় না জেকব বৌকে সবকথা বলতে পারে,না হলে বিয়েটা টিকে থাকার কথা না,তা ছাড়া ওদের আবার কোন ছেলেমেয়েও নাই।
এই দমকা বাতাসে জেকবদেরও ঘুম কি ভাঙ্গে নি?কি বললো জেকব তার বৌকে?আজকে জেকব কি নতুন উত্তেজনা নিয়ে বৌ এর সাথে যৌনসঙ্গম মত্ত ছিল?পরকীয়ার উদ্দীপনায় জেকব,বৌ এর শরীরের আনাচেকানাচের রহস্য নতুন করে খুঁজে নিল নাকি,কে জানে?ওর বৌ এর কামনার আনন্দ চীৎকারে পাড়াপড়শিরা সবাই জেগে গেছে হয়তো।
আমার নিজের ব্যাবহারটাও আমাকে খুব একটা অবাক যে করেনি তা না,যেচে পার্কে একজনকে শুধু চুমু খেলাম তা না,পরপুরুষের লিঙ্গ মুখে নিয়ে খেলা,এই কি আসল আমি-নাকি জেকবের সাথে ওটা অন্য কোন এক চরিত্র!দমকা বাতাসের জীবন থেকে সরে গিয়ে আমি এখন লেক লেহমানের শান্ত স্রোতের নতুন একটা মানুষ আবার।
স্কুলের পুরোনো বন্ধুদের কথা ভাবলে,আমরা কি কেউ ভাবি,সুন্দরী বান্ধবীটা ঘর করছে কোথাও কোন অমানুষের সাথে,কেউ কি ভাবে ক্লাসের মেধাবী ছেলেটা ছোটখাট একটা চাকরী করে বেঁচে আছে,কোন ভাবে।নিজেদের অজান্তেই আমরা একটা সাজানো স্বপ্ন রাজ্যে ঘুরে বেড়াই-আর বাস্তবের পৃথিবীটা পড়ে থাকে আরেকপাশে তার আপন সুরে।
জেকবের সাথে এ দেখায়,আমি কি বদলে হতে পারবো সেই মেয়েটা,যার সাহসের অভাব নাই,ডানা মেলে যে ছুটে বেড়ায় অজানা আকাশে।বছর ষোল এর মেয়েটা-শনির সাথে দেখা সাক্ষাৎ হয় নি যার,আর শনিই যে আনে অভিজ্ঞতার ছোঁয়াচ।
ঘুমানোর চেষ্টা করছিলাম-তবে ঘুমটা পড়ে ছিল জেকবের কাছে।অযথাই অপবাদ দিচ্ছিলাম প্রতিবেশীকে-ব্যার্থ এক মানুষ ভেবে।এখন বুঝতে কষ্ট হচ্ছে না,সেটা একেবারেই ভুল-হয়তো গাড়ী ধোয়া ঐ লোকটার একটা ব্যায়াম,জীবনের সবকিছুকে আর্শীবাদ মনে করে এগিয়ে যাচ্ছে লোকটা।
যোগ বিয়োগের খাতাটা সরিয়ে রাখলে-জীবনের চলার পথটা সহজ হয়ে যায়,যা পাওয়া যায়,সেটুকু নিয়েই ভঁরে থাকে মনটা।শুধু শুধু জেকবের কথা ভেবে,দুঃখ করে,হতাশার ঝড়ে কেন নিজের জীবনটাকে তছনছ করার চেষ্টা করছি?জীবনের শূন্যতা একটা শরীর দিয়ে পূরন করতে চাচ্ছি-আমি আনন্দ খুঁজছি,জেকবের শরীরে,সেটা কি সম্ভব।মানসিক চিকিৎসকদের ভাষায় হয়তো এটা তেমন কোন সমস্যা না-লিথিয়াম,সেরোটিনিয়ামের ঘাটতি,আর কিছু এটা ওটা।
জেকবকে যদি মনের মত করে পাই,আনন্দে আমার হতাশ মনটার চেহারাটা কতটুকুই বা বদলাবে?তবু ভুলতে পারছি না জেকবকে,চুমু খাওয়ার স্মৃতিটা আমাকে প্রতি মুহুর্তে কুরে কুরে খাচ্ছে।অজান্তেই একটা হতাশার রাজ্যে ছুটে যাচ্ছি,এ ভাবেই মানসিক হতাশা থেকে হয় মানসিক রোগ।ঐ মানুষটার মুখ আর দেখতে চাই না,ও আমাকে পাপের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
এটা কি ভালবাসা?না হতে পারে না,এটা একটা সাময়িক কামনার জোয়ার,কেন আমি নিজেকে ঠেলে দিচ্ছি এই চোরাবালিতে?
কেন ছুটে যাচ্ছি ধবংসের পথে,সেই শরতের শেষ থেকে আরম্ভ আমার এই হতাশার যুদ্ধ,এখন আর কুল কিনারা জানা নেই।আগে এ ধরনের সমস্যা আমাকে বেসামাল করেনি কখনও,কেন আবার ফিরে যেতে পারবো না সেই পুরোনোয়?এটা কি আমার জীবনের আরেক অধ্যায়!
মনটাকে শক্ত করা দরকার,কেটে যাবে এই ঝড়ো হাওয়ার প্রকোপ।না হলে তছনছ হয়ে যাবে জীবনটা ক্ষনিকের আবেগে,হতাশ হবে আমার প্রিয়জনরাও,তারাও যে তছনছ হবে আমার হতাশার জোয়ারে।চোখে ঘুম ছিল না,শুধু এপাশ ওপাশ করছিলাম,চোখ বুজে কখন যে তন্দ্রার ঘোরে চলে গেছি বুঝতেই পারি নি,স্বামীর ডাকে জেগে উঠলাম,দিনের আলো চারপাশে,দমকা বাতাসটা বয়ে যাচ্ছে,তখনও আপন সুরে।
সকালের খাওয়ার সময় হয়ে গেছে,স্বামী বললো, “ছেলেমেয়েদের ডেকে আনি,বেলা হয়ে গেছে,অনেক”।আমি বললাম,আজকে একটা দিনের জন্য জায়গা বদল করি,তুমি রান্নাঘরে যাও,আমি ছেলেমেয়েদের ডেকে আনি।
স্বামী বললো, “এটা যদি প্রতিযোগীতা হয়,তা হলে এটুকু বলতে পারি,সকালের খাবারটা এত ভাল হবে,তুমি ভুলবে না কোনদিন”।
না,এটা কোন প্রতিযোগীতা না,তবে মাঝে মাঝে একটু বদল হলে ক্ষতি কি?তুমি কি বলতে চাচ্ছ,আমার বানানো খাবার অতটা ভাল না।
“শোন,তর্কটা খুব একটা তাড়াতাড়ি আরম্ভ হয়ে গেল না?গত রাতে মদটা একটু বেশী খাওয়া হয়ে গেছে,আর আমাদের বয়সে নাইট ক্লাব ঠিক মানায় না।ছেলেমেয়েদের ডেকে আনো,আমি রান্নাঘরে সবকিছু তৈরী করছি”।
আমি কিছু বলার আগেই স্বামী,রান্নাঘরে চলে গেল।ফোনটা দেখে,আজকের কাজগুলো ঠিক করলাম।কোনটা না করলেই না,কোনটা ফেলে রাখা যাবে,এক এক করে ঠিক করলাম।
দিনের করনীয় বলে দেয় কেমন যাবে আজকের দিনটা।ফেলে রাখা কাজের লিস্ট জমতে জমতে এক সময় এমন বড় হয়,অনেক কিছু ভুলে যেতেই হয়।তখন নিজেকে সান্তনা দেই, ও গুলো করনীয় হিসেবে ওগুলো তেমন একটা জরুরী ছিল না।যদিও এটা আমার করনীয় এর লিষ্টে না হলেও,জানতে ইচ্ছে হচ্ছিল,জেকব কোথায় থাকে,কেমন আছে?
নীচে খাবার টেবিল সুন্দর করে সাজানো তখন-ফ্রুট সালাদ,রুটি,মিষ্টি দই,ফলের ঝুড়ি।
খবরের কাগজটাও রাখা আছে এক পাশে,আমাদের পত্রিকা।স্বামী খবরের কাগজ অনেকদিন পড়ে না,কিছু জানার দরকার হলে খুঁজে নেয় ইন্টারনেটে।বড় ছেলে জিজ্ঞাসা করলো, “ব্ল্যাকমেল”,বলতে কি বোঝায়।কাগজের প্রথম পাতায় ব্ল্যাকমেল নিয়ে লেখা,সাথে জেকবের বিরাট একটা ছবি,আর বড় বড় অক্ষরের কথাগুলো-“ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা”।
লেখাটা অবশ্য আমার না,যখন জেকবের সাথে আলাপ করছিলাম,সম্পাদক তখন আমাকে টেলিফোনে জানালো,অর্থ মন্ত্রলায়ন থেকে ব্ল্যাকমেলের সম্পূর্ন ঘটনাটা জোগাড় করা হয়ে গেছে,জেকবের সাক্ষাৎকারের আর দরকার হবে না।তবে দিন কয়েক আগে, ঐ একই এলাকায়,কয়েকটা দোকানে পুরোনো-খাবারদাবার বিক্রির অভিযোগ ছিল,ঠিক করলাম বরং খোঁজখবর যোগাড় করে ওটা নিয়েই একটা কিছু লিখবো।লেখাটা,প্রথম পাতায় ছাপা হলেও,ব্ল্যাকমেলের খবরের চমকের কাছে সেটা কিছুই না।কাগজে জেকবের ছবিটা যেন আমার দিকে তাকিয়ে আছে,বেশ অস্বস্তি বোধ করছিলাম,মনটাকে অন্য দিকে নিয়ে স্বামীকে বললাম,রাতে কিছু আলাপ আলোচনা করা দরকার।
“ছেলেমেয়েদের মা এর বাসায় রেখে,দুজনে রাতের খাবারে আলাপ করবো,কি বলো?
তোমার সাথে অনেকদিন একলা কাটানোর সূযোগ হয়নি,এটা একটা ভাল অবকাশ।গতরাতে নাইট ক্লাবে যাওয়াটা কি সত্যিই ঠিক হয় নি”?
আমার স্কুলটার পুরোনো মাঠ,বসন্তের সকাল-খেলার মাঠটা বেশীর ভাগ সময়ই খালি থাকে, বসে দেয়ালের ইটগুলোর দিকে তাকিয়ে ভাবছিলাম,আমার কোথাও নিশ্চয় কিছু একটা
সমস্যা আছে।
স্কুলে চেষ্টা করেও খোলামেলা ভাবে কারও সাথে মেশার সূযোগ হয়নি।অন্যান্য ছেলেমেয়েরা ভাবতো কাছে আমি বিশেষ একজন,আমিও খুব একটা চেষ্টা করিনি বিশেষত্বের মোহটা কাটাতে।দামী কাপড়চোপড়,বিদেশী গাড়ীর একজনকে দেখে কার না ঈর্ষা হয়।খেলার মাঠে মনে হলো,হয়তো ওটাই একটা বিরাট কারণ আমার একাকীত্বের।আটটা বছর কেটে গেছে স্কুলে,তবু বদল হয়নি তেমন কিছুই,একাকীত্ব আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে,সময়টা পার হয়ে গেছে আমাকে অনেক আগেই।
গরমকাল,কোন এক ফাঁকে-মাধ্যমিক স্কুল ছেড়ে,আমি উচ্চ মাধ্যমিকে।যদিও এড়ানোর চেষ্টা করতাম-তবু ছেলেরা ভাললাগা,ভালবাসার কথা বলে আমাকে বিরক্ত করতোই।অন্যান্য মেয়েরা হয়তো ঈর্ষায় মনে মনে জ্বলেপুড়ে শেষ হয়ে যেত,তবু কারও আমার সম্পর্কটা খুব একটা খারাপ ছিল না,তারাও হয়তো আশা করতো,পেছনে ঘুর ঘুর করলে আমার অপচ্ছন্দের ছেলেদের কোন একজনকে যদি জোগাড় করা যায়।আমার তেমন একটা কাউকে পচ্ছন্দ ছিল না,চারপাশের রহস্যময় জালটায় আমার ভালই লাগতো।
বর্ষা এসে গেছে,বাসায় ফেরার সময় দেখলাম চারপাশে মাশরুমের বহর,কেউ একটুও ছুঁয়ে যায়নি,সবাই জানে ওগুলো বিষাক্ত।একবার ইচ্ছা হলো,খেয়েই দেখি না,কেন,কোন দুঃখ বা হতাশার জন্যে না,মা বাবার আর্কষনটা একটু যদি বাড়ানো যায়,শেষে আর খাওয়া হয়নি মাশরুম।
শরতকাল,হাল্কা হিমেল ছোঁয়া চারপাশে,বছরের এ সময়টায় পৃথিবী সবচেয়ে বেশী সুন্দর।
কদিন পরেই বদলে যাবে গাছের পাতার রং,চেহারা বদলে নতুন হবে পৃথিবী।
পার্ক করা গাড়ীতে যাওয়ার সময়,ঘুরে পুরোনো স্কুলে গেলাম,ইটের চেহারাগুলো একই রকম আছে।একটু পুরোনো হয়ে গেছে এটুকুই-বদলে গেছি আমি অনেক,মনে দুজন পুরুষের টানাপোড়েনে যুদ্ধ করে যাচ্ছি।
বাতাসের দোলায় মনের আনন্দে খেলা করছে একটা পাখী,শুধু নিয়ম মেনে উড়ে যাওয়া না,সাথে আছে প্রান ভঁরা আনন্দের সুর।আমি যদি পাখী হতাম,আমিও উড়ে যেতাম আমার আনন্দের আকাশে,কিন্ত যা হবার না সেই চেষ্টা করাটা,কোন বুদ্ধিমানের কাজ কি?কিছুটা স্বামীর সাহায্যেই,এ পত্রিকায় কাজ আরম্ভ করি।শুধু ঘর সাজানো বৌ না হয়ে,নিজের অস্তিত্বটা প্রমান করার চেষ্টা করছি।ছেলেমেয়েরা অন্ততঃ তাদের মাকে নিয়ে বন্ধুবান্ধবের কাছে গর্ব করতে পারবে,দুটো কথা বলতে পারবে।তা ছাড়া আমার কাজ অনেক বন্ধুবান্ধবদের জন্যেও ঈর্ষার ব্যাপার,যারা শুধু ঘরনী হয়ে জীবন কাটিয়ে দিচ্ছে।এমনও হতে পারে সংসারের সাজানো খেলায় ওদের আনন্দ,জীবনে অন্য কিছু করাটা তাদের কাছে তেমন কিছু একটা মা।কিন্ত আমি মনে করি সমাজে আমার প্রয়োজনটা জানান দেয়া দরকার,আর ওটাতো জীবনের উৎসাহের উৎস,বেঁচে থাকার কারণ।অফিসে পৌঁছে সরকারী ওয়েবসাইট খুঁজে জেকবের ঠিকানা,বিস্তারিত ইতিহাস বের করলাম,কোথায় পড়াশোনা,কত আয় আর যাবতীয় এটা ওটা।
রাতের খাবারটা,স্বামীর পচ্ছন্দ করা রেস্তোরায়,অফিস আর বাড়ীর মাঝামাঝি এক জায়গায়,
এর আগেও অবশ্য বেশ কবার আমরা গেছি ওখানে।খাবারটা খারাপ না,পরিবেশটাও বেশ ভাল,তবে আমার কাছে বাড়ীতে খাওয়ার আনন্দটা অনেক বেশী।বাইরে খাবারের ব্যাপারটা আমার খুব একটা পচ্ছন্দের না,সামজিকতায় যা না করলেই না।রান্নাবান্না করে পরিবারের সাথে আমার বিরাট আনন্দের ব্যাপার।
ইচ্ছে থাকলেও জেকবের বাড়ীর কাছে আর যাই নি,এমনিতেই আমার সমস্যার অভাব নাই,এক তরফা প্রেমের জোয়ারে ভেসে নতুন ঝামেলা বাড়িয়ে কি লাভ।সবকিছু ঝেড়ে ফেলে শান্তি,আশা আর উন্নতির আকাশটার দিকে ছুটে যাওয়াটাই ভাল।
“শুনলাম দোকানের মালিক বদল হয়ে গেছে,খাবারটা আগের মত অত ভাল না”,আমার স্বামী মন্তব্য করলো।খাবারে একটু বেশী তেল দেয়া,জাক জমকটা আগের চেয়ে একটু বেশী,
বেড়ে গেছে খাবারের দাম।বাইরে খাওয়াটা আজকাল বিরাট এক আনুষ্ঠানিকতা।ওয়েটার আমাদের পুরোনো টেবিলটাই নিয়ে গেল,যদিও অনেকদিন যাওয়া হয়নি সেখানে,তবুও টেবিলটা চেনা।আমাদের পচ্ছন্দের পুরোনো মদটা আনবে নাকি জিজ্ঞাসা করে ওয়েটার মেনু দিয়ে গেল।মেনুর প্রথম থেকে শেষ দেখা শেষ করে,পুরোনো খাবারগুলোই অর্ডার দিলাম।
স্বামীর পছন্দ রোষ্ট করা ভেড়ার মাংস,সাথে মসুর ডালের সুপ,ওয়েটার দিনের স্পেশালগুলো বলা শেষ করে,যথারীতি খাবারের অর্ডার নিয়ে গেল।
যৌবনের আনুষ্ঠানিকতার ঢংএ মদের গ্লাসে চুমু দিয়ে মদের স্বাদ নিয়ে লাফালাফি করা আজকাল আর মানায় না-বিয়ের দশ বছরে অনেকটা রাস্তা পার হয়ে গেছি,আমরা।আলাপ আলোচনা আরম্ভ হলো সংসার,কাজ কর্ম নিয়ে,এয়ার কন্ডিশনার মেরামতের লোকটার কথা নিয়ে,যার আসার কথা ছিল কিন্ত আসেনি,আরও কটা এটা ওটা।
“সামনের ইলেকশন নিয়ে কিছু লেখছো নাকি”,জিজ্ঞাসা করলো স্বামী।আমার লেখার কথা রাজনীতিবিদদের ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে,কিন্ত এ ভাবে কারও জীবনের খুটিনাটি নিয়ে আলাপ আলোচনা করার অধিকারটা সকলের আছে কি?এক রাজনীতিবিদের বিদেশী নাইজেরিয়ানদের হাতে ব্ল্যাকমেলা হওয়া থেকে এই আলোচনার উৎস।বেশীর ভাগ লোকজনের মতে কারও ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে নাড়াচাড়া না করাটাই ভাল,ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে লাফালাফি করে আসল উদ্দেশ্য থেকে সরে যাওয়াটা বুদ্ধিমানের কাজ না,অন্ততঃসুইজারল্যান্ডের ক্ষেত্রে সেটা মানায় না।
আলাপ হলো,গত নির্বাচনের ভোটার সংখ্যা নিয়ে,কদিন আগের রাস্তা পার হওয়ার সময় এক মহিলার মৃত্যুর কথা নিয়েও আলোচনা করলাম,ট্রেন অচল প্রায় ঘন্টা দুয়েক রেললাইন বন্ধ থাকার ঘটনাটাও বাদ যায়নি।অযথার এটা ওটার নানান গল্প,গ্লাসে আবার মদ নিলাম্,
এপেটাইজার তখনও আসেনি।স্বামী বেশীর ভাগ সময়টাই চুপচাপ ছিল,হয়তো ভাবছিল কেন আমরা আবার নতুন হতে চাচ্ছি রেস্তোরায় বসে।
“তোমাকে আজকে বেশ খুশি খুশি দেখাচ্ছে”,ওয়েটার খাবার আনার পর সে মন্তব্য করলো, “ব্যাপারটা কি,বিশেষ কোন কিছু ঘটলো,নাকি”।এ প্রশ্নটা পার্ক ডেস ইয়াক্স-ভাইভসে যাওয়ার দিন করলে,আমি হয়তো লজ্জায় লাল হয়ে উঠতাম।আজকে তেমন কিছু মনে হচ্ছে না,আমি নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করছি,পৃথিবিতে আমার প্রয়োজনীয়তা।
“তা কি আলাপ করতে চাচ্ছো”?
মদের তিন নম্বর গ্লাসে চুমুক দিয়ে,মানসিকভাবে প্রস্ততিও নিচ্ছিলাম নিজের অপরাধগুলো স্বীকার করার জন্যে।ওয়েটার এসে আমাকে তখন যেন গর্তে পড়ে যাওয়া থেকে উদ্ধার করলো,অযথার অপ্রয়োজনীয় নানান কথা বলে সময় কাটালা।
আরেক বোতল মদের অর্ডার দেয়া হলো,খাবার দিয়ে যথারীতি যা বলার বলে ওয়েটার চলে গেল।অনেকেই বলতে পারে আমার মানসিক চিকিৎসার দরকার,কিন্ত আসলে তা না।
কাজে,বাসায় সব জায়গায়,আমি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছি,শুধু মাঝে মাঝে একটা হতাশার স্রোত এসে আমাকে কিছুটা বিব্রত করছে,ওটা আর এমন কি।
“তুমি আমাকে বোকা বানাতে পার,তবে সত্যিই আজকে তোমাকে বেশ খুশী খুশি লাগছে”।
হয়তো হতাশা আমার একটা অংশ হয়ে গেছে,সেটা আর কার ও চোখে পড়ে না।কিছু একটা বলা দরকার,মুখের কথাগুলো আমাকে ছেড়ে ছুটে গেছে অন্য কোথাও।কেন যে আমার অজান্তেই আমি শুধু মানুষকে খুশী করার চেষ্টা করে যাচ্ছি?এ কয় মাসের মধ্যে আমি শুধু একবারই উপভোগ করলাম যৌনসঙ্গম,আজকাল ওটা যেন লুকোনো রুপকথার গল্পের গুপ্তভান্ডারে।হয়তো আমি জীবনের মাঝবয়সী সমস্যায় ভুগছি,না সেটা না,হয়তো আমার জীবনটা একেবারেই ব্যার্থ,সংসার,ছেলেমেয়ে তা ছাড়া আর কোন অস্তিত্ব নাই আমার!
“সংসার,সেটা মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অস্তিত্ব না”?
হয়তো অনেকের জন্যে,তবে আমার জন্যে না,দিনের পর দিন আমি যেন ধুঁকে ধুঁকে শেষ হয়ে যাচ্ছি।বাড়ীর কাজকর্ম শেষ করে দিনের শেষে শুধু প্রশ্নের ঝড়ো বাতাস আমাকে এলোমেলো করে।আমি ভয় পাই কোন কিছু বদলাতে,আবার একই সময় আমার মন যুদ্ধ করে যাচ্ছে বদলানোর জন্যে।চিন্তাগুলো ঘুরে ফিরে অযথা জ্বালাতন করছে,আমাকে।
কাল রাতের বাতাসে জানালার শব্দ পাওনি?
“না,জানালা তো সব বন্ধ করা ছিল”।
এটাই বোঝাতে চাচ্ছিলাম,বাতাসটা না জানি কতবার যুদ্ধ করে গেছে জানালার সাথে,আমার
ঘুমও হয়নি,অথচ তোমার কাছে এখন সেটা অজানা।জান আমি খেয়াল করি ঘুমে তোমার এপাশ ওপাশ করা,ঘুমের ঘোরের তোমার কথাগুলো।তোমার সমালোচনা করছি না,আমার চারপাশের জগতটা ছেড়ে আমি যেন পড়ে আছি অনেক দূরে।আমি ভালবাসি তোমাকে,
ভালবাসি ছেলেমেয়েদের।এটা আমাকে আরও যন্ত্রনা দেয়,আমি যেন জীবন,সংসার,
বিধাতা সকলের প্রতি অবিচার করছি,তোমাদের পাশে থেকেও আমি যেন অনেকদূরে।
০০০০০০০০
১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ১:৪৫
ইল্লু বলেছেন: জানাবেন,ধন্যবাদ
২| ০৭ ই জুন, ২০২২ দুপুর ১২:২১
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ছোট করে লিখলে পড়তে সুবিধে হয় নচেৎ আর পড়া হয়ে উঠেনা সময়ের অভাবে।
১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ১:৫০
ইল্লু বলেছেন: লেখাটা Paulo Coelho এর আমি শুধু অক্ষরের চেহারাগুলো বদলানোর চেষ্টা করলাম,ধন্যবাদ
৩| ০৭ ই জুন, ২০২২ দুপুর ২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর অনুবাদ।
১৪ ই জুন, ২০২২ রাত ১:৪৭
ইল্লু বলেছেন: আপনার ধৈর্য এর প্রশংসা করতেই হয়,অনেক ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই জুন, ২০২২ ভোর ৫:৩৫
বেবিফেস বলেছেন: শুরুটা ভালো লাগলো। বাকি পরে পড়ব। শুভ সকাল।