নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(৪)
“তোমার মনে আছে কিনা জানি না,স্কুলে সবাই ভাবতো জীবনে,আমি বিরাট কিছু একটা করবো,বড় কিছু একটা হবো।আর আমিও কেন জানি সবসময় চেষ্টা করে গেছি,মানুষের কথাগুলোকে সত্যি প্রমান করার জন্যে।বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গ,সন্ধ্যার হৈ চৈ এমন কিছু ছিল না যা আমি বিসর্জন দেইনি,আমার লক্ষ্যে পৌছানোর জন্যে।স্কুলের রেজাল্টের কথা বলতে গেলে, শুধু ভাল বললে ভুল হবে,বরং চমৎকার ছিল বলা যায়।তোমার মনে আছে কৈশোরের আমাদের দেখা সাক্ষাতের পর্বটা শেষ হলো কেন”?
“ভার্সিটির পড়াশোনা শেষ করে,আমি কাজ আরম্ভ করলাম আইনের ব্যাবসা।বলতে পার আমার জীবনের প্রথম অংশ অনেকটা ঐ চোর,চোট্টা,গরীবদের মাঝেই।একটা অস্থায়ী কাজ হয়ে গেল,চিরস্থায়ী অবস্থাঃমানুষকে সাহায্য করা,যাদের আইনের সাহায্য নেয়ার টাকাপয়সা নাই,তাদের আদালতের প্রতিনিধি হওয়া।আমার মক্কেলদের লিষ্ট বেড়েই যাচ্ছিল,আর খ্যাতিটাও শহর জুড়ে।বাবার অবশ্য সম্পূর্ন অসম্মতি ছিল এ ভাবে টাকাপয়সা ছাড়া কাজ করার জন্যে,বাবা অনুরোধ করলো তার বন্ধুর আইন প্রতিষ্ঠানে যোগ দিয়ে ভাল একটা কিছু করার জন্যে।কিন্ত প্রতিটা নতুন কেস আমাকে তখন নিয়ে যাচ্ছে নতুন এক জানালায়,নতুন এক জানার আনন্দে,সেটা ছেড়ে সাধারণ হতে আর রাজী হই নি।পুরোনো সাবেকীর কোন স্থান নেই আধুনিক সমাজে,ঠিক করলাম,রাজনীতিতে নামবো,চেষ্টা করবো সামাজিক পরিবর্তনের জন্যে”।
এসবই জেকবের ছোট্ট জীবনীতে দলের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা,তবে জেকবের মুখে সেটা সম্পূর্নই একটু অন্যরকম শোনাচ্ছিল।
“অপেক্ষা না করেই ঠিক করলাম,শহরের প্রতিনিধি প্রার্থী হিসেবে দাঁড়াবো।নির্বাচনের প্রচারে খ্রচ করার মত টাকাপয়সা তেমন একটা ছিল না ছাড়া,বাবার কাছ থেকে কোন সাহায্য পাই নি,বাবা স্বসময় রাজনীতির নোংরামির ঢিল ছোড়াছুড়ির সম্পুর্ন বিরুদ্ধে।সাহায্য,উদ্যোগ বলতে যা বোঝা,সবই ছিল মক্কেলদের সাহায্যে।জিতলাম,যদিও খুবই সামান্য ভোটের ব্যাবধানে,তবুও সেটা তো জেতা”।
চারপাশটা দেখে নিয়ে আবার সিগারেটে আরেকটা টান দিল জেকব,অদ্ভুত এক শূন্যতা তার চোখে,সে যেন ছুটে গেছে পুরোনো কোন হারানো পৃথিবীতে।
“রাজনীতির খেলার প্রথম দিকে,চার পাঁচ ঘন্টার বেশী ঘুমানোর সময় পেতাম না,তবু ক্লান্ত হইনি,ছেড়ে যাইনি আমার লক্ষ্য।এখন তো প্রায় বার চোদ্দ ঘন্টা ঘুমিয়েও সেই উদ্যোগ আর খুঁজে পাই না।শেষ হয়ে গেছে উদ্দোগ,পৃথিবী বদলানোর উৎসাহ,এখন শুধু সবাইকে খুশী করে যাওয়া।বিশেষ করে বৌকে খুশী করাটা,তার সাহায্য আর কঠোর পরিশ্রম ছাড়া আমার পক্ষে কোনদিনই সম্ভব হতো না,এই রাজনৈতিক জীবনের সার্থকতা।মারিয়ান আমার জন্যে অনেককিছুই ছাড়তে দ্বিধা করেনি,তাকে হতাশ করতে পারি না”।
কত সহজেই বদলে গেছে মানুষটা,কিছুক্ষন আগে তার কথা বলার ভঙ্গীই ছিল অন্যরকম,
কিছুক্ষন আগে সে ভালবাসার পুরোনো আকাশ খোঁজায় ব্যাস্ত ছিল,আর এখন!এমনও হতে পারে সে হয়তো খুঁজছে এমন কাউকে যে বুঝবে তার মনের দুঃখ,যার সাথে ভাগ করা সম্ভব তার কান্নাগুলো।
আজকাল কেন জানি হঠাৎ মাঝে মাঝে কল্পনার ফানুসে ভেসে বেড়াই,এর ফাঁকে আমি নিজেকে নিয়ে গেছি সিল্কের চাদরে জড়ানো নগ্ন শরীরে নাম না জানা কোন এক হোটেলের বিশাল বিছানায়।
“আবার দেখা হবে?কবে”?প্রশ্ন করলো জেকব।
উত্তর দিলাম,সবটুকুই নির্ভর করছে তোমার ইচ্ছার উপরে।শুক্রুবার ইয়োগা ক্লাশ তাই ঐ দিনটা বাদ।জেকবকে বললাম জীবনে কিছুটা শৃঙ্খলা খুঁজছি তাই ক্লাশ বাদ দেয়ার প্রশ্ন আসে না।কিছুটা হতাশা ছিল জেকবের চোখেমুখে,যদিও আমার মন বদলাতে অসুবিধা ছিল না কোন,কিন্ত কি দরকার,আমার রাজ্যে এত সহজেই দামাল ঝড়ো হাওয়া টেনে আনার।
আনন্দ ফিরে আসছে জীবনে আবার,ধীরে ধীরে সরে যাচ্ছে বিষন্নতার হতাশ কালো মেঘটা,
কতই না আনন্দ একটা হারানো পুরোনো ফিরে পাওয়ার।জেকব তার কর্মচারীকে ফোন করে বৃহষ্পতিবারের সময় ক্ষন ডাইরীতে লিখে রাখতে বললো।হাতের সিগারেটটা শেষ করে বিদায় নিল,জেকব।ইচ্ছা থাকলেও জিজ্ঞাসা করিনি,তার ব্যাক্তিগত জীবনের ইতিহাস আমাকে বলার কি দরকার ছিল?কিছু একটা ঘটে গেছে আজকের দুপুরের খাবার পর্বে,জানি না সেটা কি,তা ছাড়া শনি তো এখনও বিপক্ষে।
অনেকরই ধারণা সাংবাদিকরা সবাই ক্ষমতাশালী লোকজনদের সাথে ঘোরাঘুরি করে,
সাক্ষাৎকার নেয়ার জন্যে,তাদের যাওয়ার সুযোগ হয় অনেক সুন্দর জায়গায়,এমন কি সুযোগ হয় খুনী অপরাধীদের মুখরোচক গল্প শোনার।কিন্ত বাস্তবে সবকিছুই অন্যরকম,আমাদের বেশীর ভাগ সময়টা কাটে পত্রিকা অফিসের কাঠ দিয়ে ঘেরা ছোট্ট ঘরটায় বসে ফোনে কথা বলে।আর গোপনীয়তা সেটা শুধু কথার কথা,ওটা শুধু অফিসের উর্ধতন কর্মকর্তাদের জন্যে।
পেশা হিসেবে জেনেভার প্রায় লাখ দুয়েক অধিবাসীদের মাঝে সাংবাদিকতা বেশ একটা
ক্লান্তিকর পেশা।আজকের কাগজে চোখ বুলাচ্ছিলাম,যদিও মোটামুটি সবটুকুই জানা আমার-সেই বিদেশী রাজনীতিবিদদের সম্মেলন,ব্যাঙ্কের গোপনীয়তা রক্ষার পদ্ধতি নিয়ে তর্ক বিতর্ক,আরও স্ব এটা ওটা,প্রথম পাতায় বড় অক্ষরে লেখা, “অস্বাভাবিক মোটা এক মানুষকে বিমান থেকে বের করে দেয়া”,নেকড়ে বাঘের অত্যাচারে গ্রামের ভেড়া প্রায় বিলুপ্ত, “নতুন চেহারার জেনেভা রক্ষনাবেক্ষন করার পর ফিরে গেছে আগের চেয়ে সুন্দর চেহারায়”।
সম্পাদক ডেকে পাঠালো তার অফিসে,জানতে চাইলো রাজনীতিবিদের সাথে দুপুরের খাবারের সাক্ষাৎকারে নতুন কি খবর জোগাড় করলাম,বোঝাই যাচ্ছে কারও না কারও চোখ এড়ায়নি আমাদের সাক্ষাৎ।
না,আমার পক্ষে সেটা সম্ভব হয়ে উঠেনি,এমন কিছু পেলাম না যা এখনও কাগজে
বেরোয় নি।দুপুরের খাবারটা ছিল খবরের কোন উৎসের কাছে পৌছানোর চেষ্টা
(সাংবাদিকদের যোগাযোগ যত বেশী,ততই তারা অভিনন্দিত)।
সম্পাদক বললো বিশেষ সুত্রে তার জানা মতে,জেকব কোনিগ যদিও বিবাহিত তবে পরকীয়া প্রেমে মত্ত হয়ে আছে আরেক রাজনীতিবিদের বৌ এর সাথে।মনে লুকোনো হতাশার কাঁটা খচখচ করে যন্ত্রনায় আমাকে তছনছ করে দিচ্ছিল,আমি তো সাড়া দিতে রাজী না,হারতে চাই না,আমি।সম্পাদক অনুরোধ করলো জেকবকে কোনভাবে ব্ল্যাকমেল করে কিছু খবর সংগ্রহ করা যদি সম্ভব হয়,তার জীবনের রসাল পরকীয়া প্রেম নিয়ে কোন উৎসাহ নেই পত্রিকার।
বিদেশী কোন এক সংস্থা নিজের দেশে ট্যাক্স সমস্যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্যে,জেকবকে নাকি কোণঠাসা করে সাহায্য নেয়ার চেষ্টা করছে,কলুষিত করার চেষ্টা করছে সুইজারল্যান্ডের গনতান্ত্রিক পদ্ধতি।সম্পাদক আবার জোর দিয়ে বললো,জেকবের পরকীয়ার মুখরোচক গল্প নিয়ে পত্রিকার কোন উৎসাহ নাই,ব্ল্যাকমেল করার চেষ্টা করছে যারা তাদের মুখোসটা খুলে দেয়াটাই পত্রিকার মুখ্য উদ্দেশ্য,অনেকটা বলা যায় দেশের স্বার্থেই।
“মনে হয় সেটা খুব একটা কষ্টকর হবে না,তাকে বোঝানোর চেষ্টা করো আমরা তারই দলে,তাকেই সাহায্য করার চেষ্টা করছি”।
সুইজারল্যান্ড এমন একটা দেশ যেখানে আজও,মানুষ বিশ্বাস করে মানুষের কথায়,মানুষের কথাটাই অনেকটা তার বেদবাক্য।পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে দরকার উকিল,সাক্ষী,সই করা কাগজপত্র,কোন কিছু অবমাননা করলে আছে একগাদা শাস্তির ভঁয়।
“কিছু ছবি,আর ঘটনাটা একটু বিস্তারিত ভাবে জানতে পারলে ভাল হয়,
কাগজে লেখার জন্যে কথার সাথে আরও অন্যান্য কিছু তথ্য জানা দরকার”।
আমাকে জেকবের সাথে বেশ একটু ঘনিষ্ঠ হতে হবে!
“তোমার জন্যে খুব একটা খুব একটা কষ্টকর হওয়ার কথা না,শুনলাম তোমার সাথে দেখা করার দিন তারিখ,ডাইরীতে লেখা আছে,সেক্রেটারীর জন্যে”।
বাহ!অদ্ভুত!এটাই নাকি আবার ব্যাঙ্কিং এর গোপনীয়তার স্বর্গ!এখানে তো মানুষের নিজের গোপনীয়তাই রক্ষা করা সম্ভব না।
“সাংবাদিক তুমি,খবর বের করার কৌশল ব্যাবহার করো।সাংবাদিকতার কৌশলে আছে কয়েকটা পদ্ধতি।
প্রথমঃএমন কিছু জিজ্ঞাসা করা ঠিক না,যা সাধারণ ভাবে আলাপ আলোচনা করতে কেউ দ্বিধাবোধ করে।দ্বিতীয়ঃযা বলার বলতে দেয়া উচিত,সাক্ষাৎকারের সময় সবাই যেন ভাবে কাগজে সেটাই বড়সড় করে ছাপানো হবে।তৃতীয়ঃসাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে মানুষ যখন একটু খোলামেলা হয়ে যায়,তখনই সাজানো প্রশ্নগুলো করবে।বক্তা ভাবতে পারে,উত্তর না দিলে কাগজে হয়তো কিছুই বেরোবে না,অত সব কথা সব উচ্ছন্নে যাবে।চতুর্থঃউত্তরটা যদি হেয়ালী হয়,তবে একই প্রশ্ন একটু অন্যভাবে জিজ্ঞাসা করবে।উত্তর দেয়ার মানুষটা কোন আগ্রহ না দেখালেও,চেষ্টা করবে একটা কিছু উত্তর জোগাড় করার,অন্ততঃ একটা মানাসই বক্তব্য।বেশীর ভাগ মানুষই কোন না কোন ফাঁদে পড়েই যায়।
এ টুকুই,এর চেয়ে আর বেশী কিছু করতে হবে না তোমাকে।সাক্ষাৎকারের সবকিছুই ফেলে দিতে পার,শুধু শেষের মন্তব্য বা উত্তর ছাড়া বাকীটুকু অপ্রয়োজনীয় বলা যায়।সাক্ষাৎকারটা এখানে মুখ্য না,ভেতরে লুকোনো রহস্যটা বের করে আনাই আমাদের উদ্দেশ্য,এ ভাবেই আসে সাংবাদিকতার সাফল্য।তা ছাড়া ওটা আনবে তোমার…”।
রহস্য বের করে আনা,বলা যায় সাংবাদিকতার একটা অংশ,অনেকটা পেশাদার খেলোয়াড়দের দক্ষতার মত।সাংবাদিকরা খ্যাতি প্রতিপত্তি যখন আসে,সাথে ছুটে আসে সময় নতুন প্রজন্মের জন্য সরে যাওয়ার।আসে জীবনযাত্রায় বেশ রদবদল,জড়ায় তখন সাংবাদিকতার সমালোচনায়,ব্লগ লেখে,আলাপ আলোচনায় জড়ায়,সবাইকে তৃপ্ত করাটাই হয়ে দাঁড়ায় জীবনের একমাত্র লক্ষ্য।উপরতলা থেকে একেবারে নীচতলায়,মাঝামাঝি তেমন আর কিছু নাই।
আমি এখনও ঐ যে যাকে বলে, ‘ভবিষৎ আছে এমন একজনের লিষ্টে’।যদি এই সাক্ষাৎকারে কিছু খবর বের করে আনতে পারি,তবে আগামী বছর হয়তো শুনতে হবে না, ‘আমাদের খবরের খরচপত্র কিছু কমাতে হবে’,আর ‘তা ছাড়া তোমার যা প্রতিভা,যা নামডাক তাতে তোমার নতুন কোন কাগজে কাজ পেতে খুব একটা কষ্ট হবে না’।
আর পদোন্নতি হলে তো কথাই নাই?অন্ততঃ বলতে পারবো,কাগজের প্রথম পাতায় কোন খবরটা দেয়া হবেঃছাগল ভেড়া খাওয়া নেকড়ে বাঘের গল্প,বিদেশী ব্যাঙ্কারদের সুইজারল্যান্ড ছেড়ে ডুবাই,সিঙ্গাপুর ছুটে যাওয়ার কথা,না যথাযথ ভাড়ায় বাড়িঘরের অভাবের দুঃখ কথা।
কি চমৎকার ভাবে হয়তো সামনের চার পাঁচটা বছর কাটানো যাবে…।
টেবিলে গিয়ে কয়েকজনকে ফোন করলাম,একগাদা ওয়েবসাইট ঘুরে কিছু খবর জোগাড় করার চেষ্টাও করলাম।সহকর্মীরাও সবাই একইভাবে ব্যাস্ত-অন্ততঃ এ জন্যে যেন কেউ বলতে না পারে তার উদ্যোগের অভাবে কাগজের কাটতি কমে গেছে।দেখলাম বন্য শূওরের দলের অত্যাচার করার খবর,জেনেভা আর জুরিখের রেললাইনের মাঝে,ওটা নিয়ে কি কিছু লেখা যায়?
লেখা হয় অনেক কিছু নিয়েই,লেখা হয়,৮০ বছরের এক মহিলার প্রতিবাদের কাহিনী,যাতে বারে সিগারেট খাওয়া বন্ধ না হয়,বেশ হৈচৈ করেই ছাপা হলো সেটা।মহিলার যুক্তি,গরমকালে তেমন একটা অসুবিধা হবে না,তবে শীতে বাধ্য হয়ে বাইরে সিগারেট খেতে গিয়ে নিউমোনিয়ায় মারা যাবে অনেক লোক।কি করছি আমি এই পত্রিকায়?জানি সবাই ভালবাসে তাদের কাজ,সবাই মুছে দিতে চায় পৃথিবীর কান্না,যন্ত্রনা।
পদ্মাসন,পাশে জ্বালানো আগরবাতি,হাল্কা একটা বেহালার সুর রেকর্ডে,যথারীতি অন্যান্য দিনের মত যোগ ব্যায়াম আরম্ভ করলাম।আশেপাশের অনেকেই পরামর্শ দিচ্ছে,ও স্ব যোগ ব্যায়ামে কোন কাজ হয়না,মানসিক টানাপোড়েনে ভুগছি সেটা নিয়েও,তবে আপাততঃ চালিয়ে যাচ্ছি।
“তোমার মনে চিন্তার ঝড় বয়ে যাবে,কোন চিন্তা না করে,একপাশে সরিয়ে না রেখে,ভেবে নাও ওরা তোমারই একটা অংশ”।
কথাটা একেবারেই ঠিক,আমি ঠিক সেটাই করছি,মনের দূষিত অহংকার,ঈর্ষা,
অকৃতজ্ঞতা,সবকিছু একপাশে সরিয়ে রেখে নিজেকে খুঁজছি।মনটা ভরে উঠবে,
কৃতজ্ঞতা,নম্রতা,সমঝোতা,লাবন্যতার নতুন সুরে।আজকাল মিষ্টি খাওয়া বেশ একটু বেড়ে গেছে,মিষ্টি শুধু শরীরের জন্য না মনের জন্যও ক্ষতিকারক।অন্ধকার,হতাশাকে একপাশে সরিয়ে আমি আলোর,আধ্যাত্মিকতার মানুষটাকে সামনে আনতে চাই।
জেকবের সাথে দুপুরের খাবারের খুটিনাটি,কোন কিছুই ভুলে যাইনি।যোগব্যায়ামের অন্যান্য সঙ্গীদের সাথে ইড়বিড় করে কিছু মন্ত্র আওড়াচ্ছিলাম।সম্পাদক যা বললো সেটা কি ঠিক?জেকব কি সত্যি সত্যি তার বৌকে কি ঠেকাচ্ছে?তাকে কি কেউ ব্ল্যাকমেল করছে?
ইয়োগার যোগগুরু বললো,মনের মধ্যে একটা জগত তৈরী করতে যেখানে শুধু আছে স্বর্গীয় আলোর ছোঁয়া,যা আমাদের আগলে রাখবে সব অপয়া শক্তি থেকে।
“জীবনটা সাজিয়ে নেবে এমন ভাবে,যেন আলোর ছটা রক্ষা করে যে কোন বিপদ থেকে,থাকবে না কোন দন্দ,মানসিক টানাপোড়েন।এমন একটা পথে হেঁটে যাবে,যা তোমাকে নিয়ে যাবে যন্ত্রনা ছাড়া আনন্দ ভঁরা নতুন একটা শান্তির আকাশে”।
এখন বুঝতে পারলাম কেন আমি,যোগ ব্যায়ামের ক্লাশ সবসময় ফাকি দেই।দন্দ,জীবনের আনন্দ হতাশা,নতুন শান্তির পথ?আলোর বর্ম ক্ষনকিছুর জন্যে চারপাশকে ঢেকে রাখে,তারপর অচেনা অন্ধকারে হঠাৎ ভেঙ্গে সব চুরমার হয়ে যায়।জেকবের বাস্তবতা এসে মনটা
ছেয়ে গেল,বুঝতে পারলাম ওটাই জেকবের স্বভাব,কোন একটা সুন্দর মুখ দেখলেই উতলা হয়ে যায়,জেকব।তা হলে ও ধরণের মানুষকে নিয়ে কেন এত টানাপোড়েন,আমার?
যোগব্যায়ামটা অবশ্য থেমে ছল না,ব্যায়াম হচ্ছিল একটার পর ভিন্ন ভঙ্গীতে,ব্যায়ামগুরু বুঝিয়ে বললো,আর কিছু না হোক অন্ততঃ ক্ষনকিছুর জন্য হলেও আমরা যেন চেষ্টা করি,মন থেকে সবকিছু ছুঁড়ে ফেলে ‘শূন্যতা’,খুজে নিতে।শূন্যতাকেই সবচেয়ে বেশী ভয় আমার।ঐ ব্যায়ামগুরু জানে না কি বলছে,যদি জানতপ...আমিই বা কে বিচার করার,এভাবেই চলছে পৃথিবীটা যুগ যুগ ধরে।
আমি কি করছি,এখানে?
“মন থেকে হতাশা দূর করছি”।
মাঝরাতে জেগে উঠলাম,ছেলেমেয়েদের ঘরে গেলাম-তাদের নিয়ে হয়তো খুব বেশী চিন্তা ভাবনা করছি,কিন্ত মা বাবারা ছেলেমেয়েদের নিয়ে কমবেশী চিন্তা করেই।ফিরে বিছানায় শুয়ে আবার সিলিং তাকিয়ে ভাবনার রাজ্যে ফিরে গেলাম।কি করবো,করবো না এটা চিন্তা করার ক্ষমতাই যেন নাই আমার,আর।কেন ক্ষান্ত দিচ্ছি না ঐ যোগব্যায়ামের পর্বটা?কেন যে কোন মানসিক ডাক্তারের পরামর্শে ঔষধপত্র খাওয়া আরম্ভ করি নি এখনও?কেন আমি নিজেকে নিজের আয়ত্বের মধ্যে আনতে পারছি না,কেন জেকব নিয়ে এত ভাবছি?যতই যাই বলি না কেন,ও তো শুধু শনির প্রভাব নিয়ে আলাপ করতে চাচ্ছিল।
মনে বিরাট একটা হতাশার কালো মেঘ-আমার জীবনটা যেন একটা ভাঙ্গা রেকর্ড,একই জায়গায় আটকে,একই সুরে বেজে যাচ্ছে।সাংবাদিকতায় পড়াশোনা করার সময়,
মনোবিজ্ঞানেরও কটা ক্লাশ করতে হয়।অধ্যাপকের সাক্ষাৎকার বিশ্লেষণটা ছিল বেশ মজার,তার মতে সাক্ষাৎকারের কয়েকটা স্তর আছেঃযার সাক্ষাৎকার নেয়া হচ্ছে-সে চেষ্টা করে আত্মরক্ষা করার,একসময় তার আত্মবিশ্বাস জন্মায়,আরম্ভ হয় নিজের গুণগান,শেষে অনেকটা যেন স্বীকারোক্তি করে সবকিছু ঠিক করে নেয়ার একটা চেষ্টা করে।
আমার জীবনে,একবারেই আত্মবিশ্বাস থেকে স্বীকারোক্তি-অনেক কথাই মনে আসছে,তবে ও স্ব নিয়ে নাড়াচাড়া না করাটাই ভাল।পৃথিবীটা থমকে গেছে,শুধু আমার পৃথিবীটা না,থমকে গেছে চারপাশের পৃথিবীটাও।বন্ধুবান্ধবরা যখন একসাথে হই,তখন সেই পুরোনো কথা,সেই একই জাবর কাটা,কেন জানি মনে হয় সময়ের স্রোতে উদ্দীপনা ভেসে গেছে,কোন এক অজানায়।
সবাই নিজেদের দুঃখটা লুকিয়ে রাখতে চায়-শুধু জেকব না,আমি,হয়তো আমার স্বামীও, হয়তো সে দেখায় না।ভয়ংকর স্বীকারোক্তি পর্বে অনেককিছুই পরিষ্কার হয়ে আসছে,নিজেকে এখন আর একা মনে হচ্ছে না।চারপাশের সবার তো একই সমস্যা,সবাই ভান করে যাচ্ছে আমার মত,বাইরের সবার কাছে সুন্দর সাবলীল জীবন ভঙ্গীর ছবি দেখানোর জন্যে।
আমার প্রতিবেশী,আমার সম্পাদক,এমন কি আমার পাশে শুয়ে থাকা মানুষটাও হয়তো একই অভিনয় করে যাচ্ছে।
১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৫৯
ইল্লু বলেছেন: মানুষ,আকাঙ্খায় লাগাম নেই,সুযোগ পেলেই ভেসে যায়
২| ১৪ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৪৯
রাজীব নুর বলেছেন: অনুবাদ কি আপনিই করেছেন?
১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১:০০
ইল্লু বলেছেন: হ্যা,অখাদ্য মনে হলে ক্ষমা করবেন
৩| ১৪ ই মে, ২০২২ সকাল ১০:১৯
বিজন রয় বলেছেন: পরকীয়া মানে অভিনয় করা।
মানুষ অভিনয়ে পটু নয়।
১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১:০২
ইল্লু বলেছেন: মানতে পারলাম না,মনে হয় মানুষই অভিনয়ে সবচেয়ে বেশী পারর্দশী
৪| ১৪ ই মে, ২০২২ দুপুর ২:১৮
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: পরকিয়া একটা নিন্দনীয় কাজ। নিজ জীবন সঙ্গীর সাথে প্রতারণা।
১৫ ই মে, ২০২২ রাত ১:০৩
ইল্লু বলেছেন: হয়তো
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই মে, ২০২২ রাত ১২:৩৩
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
দ্যা আলকেমিস্টের মাথায় পরকীয়াও ঘুরে?