নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইল্লু

ইল্লু › বিস্তারিত পোস্টঃ

Paulo Coelho এর Adultery(পরকীয়া)

২১ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ২:১৯

(১) জালটা ফেলো গভীর জলে,
ঘরে ফিরতে চাও যদি,কিছু হাতে নিয়ে।

০০০

প্রতিদিনের সেই সকাল,বড্ড একঘেয়ে,বদলায় না কিছুই,“নতুন দিন আসে”,ভাবি হয়তো চোখ খুলে নতুন কিছু দেখবো,শেষে হতাশ হয়ে চোখ বুজে শুয়ে পড়তে হয়,কোন কিছুই বদলায় না।আমার স্বামীর প্রশংসা না করে উপায় নেই,বিরাট এক কোম্পানীর মালিক,আমার ভালবাসায় একেবারেই পাগল,আমার সুখ শান্তি নিয়ে সবসময় বিচলিত হয়ে আছে,যেন আর কিছু করার নেই পৃথিবীতে।প্রতি বছর ‘বিলান’,নামের পত্রিকায় সুইজারল্যান্ডের তিনশ ধনী ব্যাক্তির তালিকায় তার নামটা থাকেই,যদিও নামডাক,খ্যাতি বেশ অপচ্ছন্দ তার।

আমাদের দুই ছেলেমেয়ে,হয়তো ওরাই এখন আমার “বেঁচে থাকার কারণ-উৎসাহ এই নীরস জীবনে”।সকাল সকাল উঠতে হয় আমাকে,সকালের খাবার তৈরী করে,মিনিট পাঁচেকের হাঁটা পথে ছেলেমেয়েদের নিয়ে স্কুলে ছোঁটা,সারাটা দিন ওরা ওখানেই কাটায়।স্কুলের শেষে ফিলিপোনো এক কাজের মেয়ে ওদের বাড়ীতে নিয়ে যায়,আর স্বামী ঘরে না ফেরা পর্যন্ত দেখাশোনা করার দায়িত্বটা তার হাতেই।

আমি একজন সাংবাদিক,নামকরা একটা পত্রিকায় কাজ করি,জেনেভার মোটামুটি সব জায়গায় পত্রিকাটার ভাল কাটতি আছে।বছরে অন্ততঃ একবার হলেও আমরা ছুটি কাটাই সুন্দর কোন না কোন সমুদ্র সৈকতে।গরীব গ্রামের পাশে ছড়ানো ছিটানো সুন্দর সুন্দর সব বিনোদনের জায়গা।ঐ সব গরীব লোকদের দেখে,আমাদের নিজেদের আরও ধনী মনে হয়,
নিজেদের মনে হয় আরও সৌভাগ্যবান।

যাকগে,আমি কে সেটা বলা হয়নি এখনও-নামটা লিন্ডা,বয়স বছর তিরিশের এধার ওধারে,
লম্বায় পাঁচ ফুট চার,ওজন ১৩৫ পাউন্ড।দামী কাপড়চোপড় পরি,চেহারাটাও খুব একটা খারাপ না,নিঃসন্দেহে পুরুষদের মনে কামনার জোয়ার আনে,আর হয়তো মেয়েদের মনেও আনে ঈর্ষা।

প্রতিদিন সকালে,চোখ মেলে ভাবি,অনেকের স্বপ্নের আমার এই জীবনটা,যে কত একঘেয়ে আর অসহনীয়।এ প্রশ্নগুলো অবশ্য আগে মনে হয়নি কখনও,বেশ অসুখীও মনে হয় নিজেকে এখন,নীরস এ জীবনটার থেকে অনেক বেশী প্রাপ্য ছিল আমার।এক সকালে খাবার তৈরী করার সময় মনে হলো, “কেন যে বেঁচে আছি,আর এটাকে কি বলে বেঁচে থাকা”,(মনে পড়লো এক বসন্ত সকালের কথা,ফুলের কড়িগুলো উঁকি দিচ্ছিল চারপাশে)।এক সাহ্যিতিকের সাক্ষাৎকারে,তাকে প্রশ্ন করলাম, ‘আপনি কি সুখী’।

প্রশ্নটা হয়তো ও ভাবে করাটা ঠিক হয়নি,তবে সাহিত্যিক ভদ্রলোক কোন দ্বিধা না করেই উত্তর দিল, “না,সুখী হওয়ার জন্যে কোন অস্থিরতা নেই আমার।আমি বেঁচে থাকতে চাই,বেঁচে থাকতে চাই আবেগের স্রোতে,বেঁচে থাকতে চাই আগামীকালের জন্যে,অজানা অচেনা এক আগামীকাল,অচেনা ভব্যিষতের জন্যে-অচেনা উত্তেজনার খোঁজে ”।উত্তরটা শুনে মনে হচ্ছিল, “কত অসহায় লোকটা,ওর মনে বোধহয় কোন শান্তি নেই।সারাটা জীবন বেচার কাটাবে বিতৃষ্ণায় আর হতাশায়”।এখন বুঝতে পারছি তার কথাগুলোর গভীরতা,ঝকঝকে হয়ে উঠছে লুকোনো ভাবটা।

মনে হচ্ছিল,জীবনে ঝুঁকি নেয়া হয়নি কোনসময়,শুধু ভেসে গেছি গতানুগতিকতার স্রোতে।কে জানে কি আছে আগামীতে,আর গতকালের লুকোনো সবকিছুও কি জানা যায়,দিনগুলো যেন সাজানো একটার উপরে আরেকটা।আর আবেগ,বলতে…?

ভালবাসি আমার স্বামীকে,ভালবাসাটা শুধু টাকা পয়সার জন্যে না,সংসারে টিকে থাকার জন্যে,কিছুটা ছেলেমেয়েদের ভবিষৎ এর কথা ভেবেও,হয়তো বা কিছুটা নিজের আনন্দের জন্যেও।

অনেকের কথামত,পৃথিবীর সবচেয়ে শান্তিপূর্ন দেশে বাস করি,আমি।এটাও বলতে দ্বিধা নেই,মা হিসেবে আমি বেশ ভাল একজন মা,গৃহিণী হিসেবেও মন্দ না।আমার বাবা মা,আমাকে যথাযথ ধর্মীয় শিক্ষা দিতে কার্পন্য করে নি,আমিও শেখাবো আমার ছেলেমেয়েদের যতটুকু সম্ভব।হিসেব করে প্রতিটা পা এগোতে হয় জীবনে,ছোট্ট একটা ভুলে তছনছ হয়ে যেতে পারে সারাটা জীবন।সহজে যা করা যায়,ভালভাবে করা যায় সেটাই করে যাই।ছোটবেলায় আর দশটা মেয়ের মত,একতরফা প্রেমে যে খুব একটা কম ভুগিনি তা না।

বিয়ে হওয়ার পর পর মনে হয় সময়টা থমকে ছিল বেশ কিছুদিন,ভালবাসা বা যৌবন যে কারণেই আনন্দের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছিল চারপাশ,তারপর সবকিছুই কেমন জানি একঘেয়ে হয়ে গেল।এক লেখকের কথা মনে পড়লো, “জীবনে,একঘেয়েমি আর দৈনন্দিনতায় ক্ষতিটা কোথায়”,বিয়েতে বদলে গেল আমার জীবনের গল্প।সত্যিকথা বলতে কি,এখন বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয় ক্ষতি কোথায়,একঘেয়েমীতে।এমনই হয়ে গেছে স্বভাবটা যে...একমুহুর্ত থেকে আরেকমুহুর্তে বদলানোর ভয় আমাকে বড়ই বিচলিত করে,শুধু বদলানোর কথাটা ভাবতেই কেমন জানি অস্থির হয়ে পড়ি।মাঝে মাঝে ভাবি,এমন যদি হয় হঠাৎ আমার স্বামী না থাকে আর,তবে কি আমি পারবো এই পৃথিবীর সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে? “হয়তো”,উত্তর দিলাম নিজেকে,
টাকাপয়সা যা আছে,সেটা তো কয়েক পুরুষেও ফুরোবে না,আর ওটাই তো মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় সমস্যা।আমি পৃথিবী ছেড়ে গেলে,ছেলেমেয়েদের অবস্থা কি হবে,কে জানে?কি করবে আমার প্রিয় স্বামী!বিয়ে তো করবেই কোন সন্দেহ নাই,ধনী মানুষ,টাকাপয়সার অভাব নাই,দেখতে শুনতেও খুব একটা খারাপ না,বুদ্ধিমান নিঃসন্দেহে,নতুন কাউকে খুঁজে নিতে অসুবিধা হওয়ার কথা না।তবে নতুন ঘরে আসা মানুষটার হাতে ছেলেমেয়েদের অবস্থাটা কি হবে,কে জানে?

মনের কোনে প্রশ্নগুলো উত্তর নিয়ে ছোটাছুটি করছে সবসময়।উত্তর পেলে,আবার নতুন একগাদা প্রশ্ন এসে ভিড় করে মনের খাতায়।প্রশ্ন জাগে বুড়িয়ে গেলে কি হবে,স্বামী কি নতুন কোন রক্ষিতা আনবে ঘরে?

যৌনসঙ্গমও আজকাল বেশ কমে গেছে,হতে পারে আমার স্বামী হয়তো অন্য কারও সাথে পরকীয়ায় মত্ত!নাকি ও ভাবছে আমিই পরকীয়ার খেলা,আমারও তেমন একটা উৎসাহ নেই শরীর খেলায়,আজকাল।

ঈর্ষা,সন্দেহ আমাদের মধ্যে খুব একটা ছিল না,হয়তো আমাদের ভালবাসায় কোথাও একটা ফাঁক আছে।অবশ্য যা তা ভেবে উতলা হওয়ার কোন মানে হয় না,তবু কেন যে ও স্ব কথা ছুটে আসে মনের খাতায়?কাজের শেষে প্রায়ই রু ডে রোনের দামী দোকানগুলোতে ঘোরাফেরা করি,আর প্রায়ই কিছু না কিছু একটা কেনা হয়।দরকারী কিছু একটা কিনি সবসময় তা না,তবে ও ভাবেই হয়তো আমি নিজেকে খুঁজে নেয়ার করার একটা চেষ্টা করি। রান্নাঘরের দরকারগুলো আমার জানা,খেলনার দোকানগুলোতে অবশ্য খুব একটা যাওয়া হয় না,কেননা ছেলেমেয়েদের অযথার খেলনা দিয়ে নষ্ট করতে চাই না।পুরুষদের কাপড়চোপড় প্রসাধনের দোকানেও তেমন একটা যাওয়া হয় না,তাতে আবার স্বামী যদি সন্দিহান হয়ে উঠে।

সংসারের মায়া রাজ্যে সবই যেন পুরোনো-গতানুগতিক,সবাই ঘুমিয়ে পড়লে-দুঃস্বপ্নের আকাশটা আমাকে টেনে নিয়ে যায় অন্য এক জগতে।কেন জানি মনে হয় আবেগ সেটা শুধু খুঁজে যৌবনের,বয়সে ঘরছাড়া হয়,আর ঐ চিন্তাটা আমাকে শুধু বিচলিত করে না,আরও অজানা অচেনা টানাপোড়েনে ঠেলে দেয়।

বদল আর একাকীত্বের টানাপোড়েনে বেশ অস্থির হয়ে আছে,মনটা।অনেকে বলে,গরমকালের বাতাস মানুষের মনে আনে বিদঘুটে সব চিন্তা নিয়ে আসেঃঅজান্তেই বাইরের পৃথিবিটা বলে দেয় আমাদের নগন্যতা,আকাশটাও ছুটে যায় আরও দূরে,ধরা ছোঁয়ার দূরত্বের অজানা সীমানায়।

ঘুমটাও খুব একটা ভাল হচ্ছে না আজকাল,তবে সেটা গরমের কারণে না।নিস্তব্ধতা আর একাকীত্ব ছুটে আসে রাতের অন্ধকারে,সাথে আসে ভয়-জীবন,মৃত্যু,ভালবাসার প্রশ্ন।
সংসারে কোন না কোনসময় সবার কাছেই জীবনটা একঘেয়ে হয়ে যায়,ছুটে আসে প্রশ্নটা-কোথায় আমি,এই কি বেঁচে থাকা?এ ভাবেই কি শেষ হয়ে যাবে জীবনটা একঘেয়েমিতে,
অন্য মানুষের দুঃখে সান্তনা খোঁজার চেষ্টা করি।

টিভির খবরটবরও গতানুগতিক,সেই পুরোনো-দূর্ঘটনা,প্রাকৃতিক দূর্যোগ,ঘরহারা মানুষ,বাস্তহীন মানুষের গল্প,নতুন কিছু কোথায়?পৃথিবীতে কত যে মানুষ অসুস্থ হয় ধুঁকছে,সেটা কি আর খব্র?কত মানুষ নীরবে সহ্য করে যাচ্ছে,অত্যাচার,অপমান,অবিচার,বিশ্বাসঘাতকতা,সেটা তো আর খব্র না?কত গরীব মানষের কাজ নেই,জেলে বসে বসে পচছে কত মানুষ?সে গুলো খবর না,ওগুলো এখন সয়ে যাওয়া দৈন্দিনতা।

টিভির চ্যানেল বদলে,নাটক দেখি,না হয় একটা সিনেমা,ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি সবকিছু,
নতুন একটা কিছু দেখার আশায়।ভয় হয় হঠাৎ স্বামী যদি জেগে উঠে
জিজ্ঞাসা করে, “কি ব্যাপার,কি হলো তোমার”?বলতে হবে-না,কিছু হয়নি,সবকিছুই ঠিক আছে।আজকাল শারীরিক খেলাতেও বিরক্তি লাগে অনেকসময়,যেমন গতমাসে কথা বলতে বলতে হঠাৎ করেই স্বামী উরুতে হাত দিয়ে আদর করতে করতে যোনীদ্বারে নাড়াচাড়া আরম্ভ করলো।যৌনসুখের ভান করা যায়-তবে যোনীর আদ্রতার ভান করা তো আর সম্ভব না।বাধ্য হয়ে বলতেই হয় আমি ক্লান্ত,আর ভাল মানুষের মত স্বামী বেচারাও বিরক্তি প্রকাশ না করে,টেবলেটে রাতের খবর দেখতে দেখতে,অপেক্ষা করে নতুন আরেকটা দিনের জন্যে।
আমি ভাবি সে যেন ক্লান্ত থাকে আগামী কাল।

অবশ্য সবসময় এ রকমটা যে হয় তা না,কোন কোন সময় উদ্যোগ আমাকে নিতেই হয়।পর পর দু তিন রাত্রি প্রত্যাখান করলে,স্বামী হয়তো আবার রক্ষিতা খুঁজে বেড়াবে,তাকে তো আমি হারাতে চাই না।আগেভাগে হস্তমৈথুন করলে,আমিও প্রস্তত হয়ে থাকি,খুব একটা অসুবিধা হয় না,সবকিছু শেষ হয়ে যায় স্বাভাবিকভাবে।

“স্বাভাবিক”,বলতে বলছি না,যে আমরা একেবারে ফিরে গেছি,যৌবনের সেই রহস্যময় দিনগুলোতে।বিয়ের বছর দশ পেরোলেই-পুরোনো আগুন জ্বালিয়ে রাখা অনেকটা অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়।যতই যৌনসুখের সীৎকারের ভান করি না কেন,জানি ভালবাসার সাথে সাথে-শরীর খেলার মৃত্যু হচ্ছে একটু একটু করে,অজান্তেই শেষ হয়ে যাচ্ছি আমি।

বন্ধুদের কাছে হ্য়তো বেশ ভাগ্যবান আমি,ঈর্ষার পাত্র,যৌন জীবনের অভিযানের গল্প,সেটাতো মাঝে মাঝে কিছুটা বানিয়ে বানিয়ে বলতেই হয়।বানিয়ে বলতে হয় শরীর যুদ্ধে কত ঘনঘনই ব্যাস্ত থাকি আমরা,অবশ্য বন্ধুরা ও বলতে ছাড়ে না তাদের স্বামীদের যৌনক্ষমতার গল্পকথা,জেনেও না জানার খেলা।

যে যাই বলুক না কেন-যৌন সঙ্গমের সুখ,আনন্দ যতটুকু-ওটা বিয়ের প্রথম পাচ বছরে-তারপর সব কিছুই ব্দলায়,তখন ছোটাছুটি কল্পনার আকাশে।পাঁচ ছয় বছর কেটে গেলে,চোখ বন্ধ করে যৌনসঙ্গমের সময় ভাবতে হয়,সুন্দর কোন এক প্রতিবেশীর কথা,শরীর খেলাটা যে তার সাথেই।ভাবতে হয়,শরীরের উপর শুয়ে আছে সুন্দর চেহারার প্রতিবেশী,আর অজানা নতুন নতুন শরীর খেলায় পাগল করে যাচ্ছে তোমাকে,যা স্বামীও সাহস করেনি কোনদিন।
ভাবতে ভালই লাগে স্বামী আর প্রতিবেশী দুজনের সাথে একসাথেই যৌনসুখে লিপ্ত আমি,
বিকৃত,নিষিদ্ধ সব যৌনখেলাগুলোতে।

ছেলেমেয়েদের স্কুলে নিয়ে যাওয়ার সময় আজকে প্রতিবেশীকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরখ করলাম।
তার সাথে যৌনসঙ্গমের কল্পনা করিনি কখনও,দেখে মনে হলো সেটাই ঠিক।ঐ লোকটার চেয়ে,বরং ভাল হবে যৌনসঙ্গম পত্রিকার সাংবাদিক ছেলেটার সাথে,এমনিতেই একাকীত্ব আর হতাশায় ভুগছে ছেলেটা,তার উত্তেজনার প্রচণ্ডতা হবে নিঃসন্দেহে আকাশ ছোঁয়া।কোনদিন কোন মেয়ের সাথে দেখিনি ছেলেটাকে,প্রেমের খেলায় নির্লুপ্ত,হতাশ একটা চেহারা।এজন্যেই হয়তো অফিসের সব মেয়েদের কাছে ও,বেশ আর্কষনীয় আর কৃপার পাত্র।এই তো কদিন আগে একজন্য মন্তব্য করছিল, “বড় দুঃখী ছেলেটা,ওর দরকার এমন কাউকে যার কাছে পাবে স্নেহ আর শরীর দুটোই”।ছেলেটাও বোধহয় উপলদ্ধি করে চারপাশের আলাপ আলোচনা,
হয়তো তাই নিজেকে সবার কামনার মানুষের মত আর্কষনীয় করে রাখতে চায়।হয়তো তার মনে ভঁয় ঘোরাঘুরি করে,ভুল পদক্ষেপ না নেয়,যাতে তছনছ হয়ে যাবে সারা জীবনটা।

সকালে দেখা হলো প্রতিবেশীর সাথে,ইচ্ছা হচ্ছিল চীৎকার করে কেঁদে উঠি।গাড়ী পরিষ্কার করছিল লোকটা, “আমার স্বামীর মতই একঘেয়ে,অবসর নেয়া,হতাশ একটা মুখ।হয়তো একদিন আমরাও হয়ে যাব,ও রকম।ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গেছে,হয়তো চলে গেছে অন্য কোন শহরে,হতে পারে অন্য কোন দেশে।অবসর নিয়ে আমরা সময় কাটাচ্ছি,তেমন কিছু করার নাই।আমরাও গাড়ী পরিষ্কার করছি,যদিও আমাদের যথেষ্ট সার্মথ্য আছে,বাইরে গাড়ী ধূয়ে আনার।একটা সময়,একটা বয়স আসে যখন মানুষ অপ্রাসঙ্গিক সব কাজ নিয়ে নিজেকে ব্যাস্ত রাখে,লোকজনকে দেখানো সময় যেন ছুঁয়ে যায়নি তাদের,শারীরিক ক্ষমতাও কমেনি খুন একটা।মানুষ দেখাতে চায় তাদের জীবন যাত্রাটা কত সাধারণ,কোন বদভ্যাস নেই,অযথা টাকাপয়সা ছুঁড়ে ফেলার স্বভাব নেই”।

পরিষ্কার গাড়ীটা পৃথিবীকে কতটুকুই বা বদলাবে,তবে সকালে প্রতিবেশীর কাছে ওটাই জীবনের সবচেয়ে দায়িত্বপূর্ন কাজ।লোকটা হেসে সকালের শুভেচ্ছা জানিয়ে,গাড়ী ঘষামাজায় ব্যাস্ত হয়ে গেল,যেন রদিনের নামকরা একটা ভাষ্কর্যকে আদর করে সাজিয়ে রাখছে।

গাড়ীটা পার্ক করে,বাসে গেলাম কাজে,বাতাস যত কম দূষিত করা যায় ততই ভাল।খুব বদলায়নি জেনেভা,ছোটবেলায় যা ছিল অনেকটা আজও তাই আছে।পুরোনো বাড়ীগুলো, পুরোনো স্থাপত্যের চেহারায় আজও দাড়িয়ে আছে,নতুন আকাশ ছোঁয়া দালানগুলোর ফাঁকে ফাকে।

বাইরে বেড়াতে গেলেও মনটা আমার পড়ে থাকে,লোহা আর কাঁচের এই পুরোনো দালানগুলোর চেহারাতে,বড় বড় গাছ যাদের শেকড় হেঁটে গেছে রাস্তায়,শহরের পার্কগুলোর আগাছা ভর্তি কাঠের দেয়াল,সাজানো সব “প্রকৃতির ভালবাসার চেহারায়”।এখনও সকালে অচেনা মানূষের সাথে দেখা হলে আমরা বলি, “সুপ্রভাত”,চলে যাওয়ার সময় অচেনা দোকানদারকে বলি, “দেখা হবে আবার”,যদিও হয়তো কোনদিন যাওয়া হবে না ঐ দোকানে আর।বাসে আগন্তকের সাথে আমরা অযথার গল্পো তক্কে মত্ত হই,বাইরের পৃথিবীর কাছে সুইসরা অবশ্য বেশ ভারিক্কী আর বুদ্ধিমান মানুষ।

কত যে ভুল তাদের জানায়!তবে ঐ ভাল,এভাবে হয়তো আমরা আমাদের ঐতিহ্য সংরক্ষন করতে পারবো আরও পাঁচ ছয়শ বছর,তারপর আল্পসের পাহাড় পার হয়ে অসভ্য মানুষেরা ছুটে আসবে এদিকে।ছুটে আসবে মেয়েরা একগাদা প্রসাধণ মুখে নিয়ে,আসবে পুরুষের দল অযথাই চীৎকার করে কথা বলার স্বভাব যাদের,যারা বিরক্ত করে প্রতিবেশীদের,যাদের ছোট ছেলেমেয়েদের গায়ে থাকে বিদ্রোহীর পোষাক,আর ভয় বাবা মাদের মনে।

কিই বা যায় আসে,যদিও অনেকেই বিশ্বাস করে আমরা শুধু পনীর,চকলেট,গরু আর গান গাওয়া ঘড়ির দেশ।বিশ্বাস করুক না তারা জেনেভার রাস্তার কোনায় কোনায় আছে ব্যাংক,
কি দরকার তাদের মনের ছবিটা বদলানোর।ঐ সব অসভ্য মানুষদের সঙ্গ ছাড়াও আমরা সুখী।এখানে প্রায় সকলের কাছে অস্ত্র আছে দেশ রক্ষার জন্যে,তবে অযথার গোলাগুলি শোনা নেই কখনও না ।

এটা আমাদের গর্ব যে,সারা ইউরোপ যখন যুদ্ধে মত্ত,নিরপেক্ষ ছিলাম আমরা,যুদ্ধে কোন দলে যাইনি আমরা।কারও কাছে কৈফিয়ত দেয়ার দরকার নেই আমাদের,অসুন্দর দালান,কফির দোকান,বয়সী মহিলাদের হেঁটে হেঁটে সময় কাটানোর গল্পের আসরের চেহারা।সবাই সুখী কথাটা বললে ভুল হবে,তবে আমি ছাড়া হয়তো অন্য সবাই সুখী,কাজে যেতে যেতে তাই ভাবি আমার সমস্যাটা কোথায়?


পত্রিকার কাজের আরেকটা দিন,সেই পুরোনো,প্রতিনিয়ত যা থাকে,গাড়ীর দুর্ঘটনা,
ছিনতাই,বাড়ী দোকানে আগুন-এ ছাড়া নতুন কিছু আর নেই।বাড়ীতে আনন্দে রান্না করে,খাবার টেবিলে,সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিয়ে খাওয়া আরম্ভ করি,আরেকটা সন্ধ্যা কাটে,আরেক একঘেয়েমি দিন।বদলায় না কিছু,খাবার শেষ হলে বাবা ছেলেমেয়েদের স্কুলের কাজে সাহায্য করবে,বাড়ীর মা রান্নাঘর পরিষ্কার করে-কাজের মেয়েটার বেতনটা রেখে ঘুমোতে যাবে,সাজানো আরেকটা দিনের জন্যে-এটাই কি বেঁচে থাকা?

বেশ অবাক লাগে ভাবতে আমার জীবনের সার্থকতা,জীবন নাটকে আমার চরিত্রটা।
ছেলেমেয়েদের কাছে মা বাবার শান্তির একটা চেহারা হয়তো শুধু চোখে পড়ে,স্নেহশীল বাবা,ওদের চোখে বাড়ীটা ভঁরে আছে মা বাবার গুনে,ঔজল্যে।তাদের চোখে তাদের বাড়ীটা শুধু এ এলাকায় কেন,কেনটন শহর বা প্রদেশ যেটাই বলা যাক,একটা দৃষ্টান্তমূলক পরিবার।কোন কারণ ছাড়াই কেন জানি হঠাৎ গোসলখানায় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লাম।কেঁদে বেশ হাল্কা হলাম অবশ্য-একা,কেউ শুনছে না,উতলা হয়ে প্রশ্ন করবে না কেউ, “কি ব্যাপার,কি হলো তোমার”?

অসুবিধা কোথায়,কাঁদতে?কি ভাবে সুখী হওয়া যায়,জানা আছে কি আরও?কি হলো আমার জীবনে?হয়তো,কিছুই হয় নি।রাতের অন্ধকারে অদ্ভুত একটা শঙ্কা আমাকে জড়িয়ে ধরে আষ্টেপৃষ্টে,মনে হয় এটাই আমার শেষ সম্য় হয়তো,এমন না যে,দিনের আলোয় আমি আনন্দে ভেসে যাই।পুরোনো দিনের ছবিগুলোতে নিজেকে খুঁজি,কি হলো,কি হতে পারতো-কেন হয়নি,অযথার প্রশ্ন স্ব।অজানা আনন্দের অভিযান যা করা হ্য়নি,হয়তো সুযোগও হবে না আর।অজানা একটা ভয় ছুটে বেড়ায় মনে,ছেলেমেয়েদের জীবন নিয়ে?তারপর অদ্ভুত সেই হতাশা চারপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে আমাকে,সেই পুরোনো,একটা দানব লুকিয়ে আছে ঘরের কোনে কোথাও,ঝাপিয়ে পড়বে যে কোন সময়।বলবে, তুমি কি জান, “সুখ’,সেটা মুহুর্তের আনন্দ মাত্র।

বদলাতে চাই,বদলানো দরকার আমার।আজকে কাজে কেন জানি বেশ একটু উত্তেজিত হয়ে গেলাম,কারনটা তেমন কিছু না,অস্থায়ী এক কর্মচারী একটা কাজ করতে খুব বেশী সময় নিচ্ছিল,সংযম হারা হয়ে বেশ রাগারাগি করলাম।সবকিছুর দোষ কি আর ঐ সাহিত্যিকের,
ওটাতো প্রায় মাসখানেক আগের ঘটনা।তবু কেন জানি মনে হয় ঐ লোকটার জন্যেই একটা সুপ্ত আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত ঘটলো,ধবংস হয়ে যাচ্ছে আমার সব পুরোনো।

এটা অবশ্য ঘটতোই,এ ভাবে না হলে হয়তো অন্যকিছুর যোগাযোগে-একটা নাটকে,একটা বই এ,না হয় হয়তো অন্য কোন এক চরিত্রের ধাক্কায়,কোন কিছুর একটা যোগাযোগে।মানুষের মনে মানসিক চাপটা ধীরে ধীরে জমে উঠে,তারপর একদিন ছোটখাট অযথার কাকতালীয় কোন এক কারণে-ঘটে সেই বিরাট অগ্নুৎপাত।চীৎকার উঠে, মনটা,“অনেক হয়েছে,সহ্য করবো না আর”।অনেকে আত্মহত্যা করে,কারও কারও সংসার ভেঙ্গে যায়,অনেকে ছুটে যায় আফ্রিকার দুঃস্থ মানুষদের সাহায্যে।আমার একমাত্র প্রতিক্রিয়া হবে সবকিছুকে দমন করে রাখা,তারপর হয়তো কোন একদিন কোন এক অসুখে হবে সবকিছুর সমাপ্তি।আমি বিশ্বাস করি অনেক অসুখের উৎসটাই-চাপা আবেগ আবেদন।

ঘুম ভেঙ্গে গেল,প্রায় রাত দুটো,আর ঘুম আসছিল না,শুয়ে শুয়ে ছাঁদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম,বড়ই অপছন্দ আমার এ সময়টা।আগামীকাল অপেক্ষা করে আছে একপাশে-সকাল সকাল উঠে যথারীতি কাজে যাওয়ার প্রস্ততি নিতে হবে।“কি ঘটছে আমার জীবনে”,একটা বাঁধনহারা সুরে ছুটছে জীবনটা,জংলী ঘোড়াটা যে কোথায় গিয়ে থমকে দাঁড়াবে,কে জানে?
ভাবছি একজন মানসিক চিকিৎসকের কাছে যাওয়া উচিত কি না?বাঁধাটা আমার স্বামী আর কাজ,ছেলেমেয়েরা না?তাদের মায়ের মনের ঝড়টা উপলদ্ধি করার মত মানসিকতা,বয়স এখনও হয়নি।দিন দিন অনুভুতির ঝড় অস্থির করছে আমাকে।সংসারের কথা ভাবছি,
সংসারটা যেখানে ঈর্ষা বা আবেগের কোন ঝড় নেই।তবে মেয়েদের ষষ্ঠ ইন্দ্রীয়ের আলাদা কতগুলো ক্ষ্মতা আছে,অনেক অজানাকে পৌঁছে দেয় মনে।এমনও হতে পারে আমার স্বামী হয়তো কারও সাথে সম্পর্ক চালিয়ে যাচ্ছে,আর এই অস্থিরতা আমার অবচেতন মনের প্রকাশ।কিন্ত তাকে সন্দেহ করার কোন কারণ তো খুঁজে পাইনি।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ সকাল ৯:৫০

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: ৭টা প্যারা পড়লাম মনে হচ্ছে ভালোই হবে কিন্তু ব্লগে কি উপন্যাস পড়া সম্ভব? ছোট করে লিখলে সবাই পড়বে।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৪৩

ইল্লু বলেছেন: আপনার কথাটা হয়তো ঠিক,তবে একটা কিন্ততে আঁটকে গেছি।
ধন্যবাদ

২| ২১ শে এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ১২:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: এলকেমিস্ট টাই শুধু পড়েছি এই লেখকের।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৪০

ইল্লু বলেছেন: আলকেমিষ্টের নাম ডাক,আর এলেভেন মিনিটস,ভেরোনিকা,এডাল্টারী এরা আছে পেছনে।
ধন্যবাদ

৩| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ৯:২৮

মুক্তা নীল বলেছেন:

স্বামীর সাথে বাস করা "পার্ট অফ লিভিং" কিন্তু বছরের পর
বছর ধরে একই স্বামীর সাথে বাস করা "আর্ট অফ লিভিং"



২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩৭

ইল্লু বলেছেন: জীবনের ছবিটা একেক জানালায় একেক রকম।
ধন্যবাদ

৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১০:১৬

শ্রাবণধারা বলেছেন: বেশ ভালো লাগলো।
বাংলা গল্প উপন্যাসগুলোর অধিকাংশই দরিদ্র মানুষদের নিয়ে । তাই প্রথমদিকে একটু হোচোট খেতে হয়, এত ধনী লোকের স্ত্রীর বয়ান শুনতে । পুরোটা পরে কিন্তু মনে হলো, গল্পটা সাধারণ মধ্যবিত্ত বা উচ্চ মধ্যবিত্তেরও হতে পারতো হয়তো।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২২ রাত ১:৩৬

ইল্লু বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.