নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্বঃ ৪
এই বছর বেশ শক্তিশালী একটা ঘূর্ণিঝড় হয়েছিল, রেমাল। ঘূর্ণিঝড়ের চোখ ফুটলে, মানে মাঝখানে খালিমত, চারপাশে ভীষণ ঘূর্ণিমেঘ, আর তীব্র বেগে ঝড়োহাওয়া বয়! বরাবরের মতো এবারো প্রকৃতির সুরক্ষা দেয়াল সুন্দরবন এর অনেকটাই সামলে ছিল! ঘূর্ণিঝড় হলেই প্রবল বৃষ্টিপাত আর জলোচ্ছ্বাস হয়। প্রায় এক বা দুই তলা ডুবে যেতে পারে যদি বাঁধ ভেঙ্গে যায়! যেমনটা হয়েছিল ৭০-এ। প্রায় ১২ লাখ মানুষ তখন মারা গিয়েছিল।
এরপর স্বাধীন বাংলাদেশে ধীরে ধীরে অনেক বাঁধ, আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণ হবার কারণে, আর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত হওয়াতে অনেকটাই মৃত্যুর মিছিল কমানো গিয়েছে। ৯১ এর ঘূর্ণিঝড়েও বেশ বড় একটা ধাক্কা লেগেছিল বাংলাদেশে। সেসময়ে দুঃখের কথাগুলো আগেই বলেছি। এবার মজার কিছু অভিজ্ঞতা বলি। তখন আর্মিরা গিয়েছিল উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাতে। হেলিকপ্টার দেখলেই আমাদের অনেক ভাল লাগতো! তারা ত্রাণ নিয়ে দুর্গম এলাকায় পৌঁছে দিত, যেমনটা এবার ফেনীর বন্যার সময় বা গেলবার সিলেটের বন্যার সময় হয়েছে।
হেলিপ্যাড পুলিশ লাইনে হবার কারণে সেখান থেকেই উড়তো হেলিকপ্টারটি। আমার নামে আমাদের এক ক্লাসমেট ছিল, তার বাবা সেসময়ে সুধারাম থানার ওসি ছিলেন। তাদের সরকারী বাসার ঠিক ছাদের উপর দিয়েই যেত হেলিকপ্টার, বিল্ডিং এর শিশুরা দৌড়ে ছাদে উঠতো, আর পাইলটকে খুব কাছ থেকে দেখা যেত! সেইসব পাইলট যে কত ভাগ্যবান! শিশু-কিশোরদের কাছে রীতিমত হিরো হিরো ব্যাপার! পাইলট ভাইরাও মজা পেতেন, চকলেট ছুড়ে দিতেন বাচ্চাদের কাছে, সে কি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। পরদিন স্কুলে এসে সেই অপার পাওয়ার আনন্দ চোখে মুখে ফুটিয়ে তুলে ঘটনার বিশদ বিব্রণ আমাদের শোনাতো, আমরাও এই বিরল অভিজ্ঞতার কথা তন্ময় হয়ে শুনতাম! আর ভাবতাম, ইশ! আমরাও যদি পাইলটদের এমন কাছ থেকে দেখতে পেতাম!
এই রোমাঞ্চকর অনুভূতি আজো আমার হৃদয়ে রয়ে গেছে! ২৬শে মার্চের আর্মিদের অনুষ্ঠানের আগের কয়েকদিন পুরো ঢাকা শহর কাঁপিয়ে চলে পাইলটদের মহড়া! কান ঝালাপালা হলেও একটুও বিরক্ত হই না! বেশ ভাল লাগে তাদের আকাশ কাঁপানো কসরত গুলো দেখতে, কি নিয়ম মেনে নির্দিষ্ট দূরত্বে থেকে একেকটা কৌশল দেখানো! ২৬শে মার্চের দিন রঙিন এরোবেটিকস দেখা, বেশ মজার! আকাশ থেকে প্যারাস্যুট দিয়ে প্যারাকমান্ডোদের নেমে আসা, ফ্রি ফলিং – এগুলো যে কি অদ্ভূত কেরামতি, ওদেরকে রিয়েল হিরো না বলে পারা যায়! ইশ! আমিও যদি পারতাম!
যেদিন আর্মিরা ব্যাক করবে, পুলিশ লাইন থেকে আমাদের স্কুলের পিছনের রাস্তা দিয়ে আর্মিরা লাইন করে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছিল, আমরা পাশ দিয়ে কাচু মাচু করে বাড়ি ফিরছিলাম, একেবারে রাস্তার কিনারে দেয়াল ঘেঁষে, একটু ভয়ও লাগে, হাসিও পায়! তারাও আমাদের দেখে কেউ কেউ শিস মারে, আমাদের বিহবল চেহারা দেখে তারা খুব মজা পায়, দেখ কেমন মাঞ্জা মারা হিরো আমরা! উনারা যেহেতু সবসময়ে জনসম্মুখে থাকে না, তাই অবাক বিস্ময়মিশ্রিত ভয়, কিছুটা রোমাঞ্চ, জনমনে কাজ করে, ছোটদের মনে এটা আরো বেশি দাগ কাটে!
যাক, আবার বর্ষার যন্ত্রনায় ফিরে আসি।এই ভরা বর্ষা শেষের মেঘনা, পদ্মার টয়টুম্বুর নদীর প্রচন্ড ঢেউ-এর কথা মনে আসলে একেবারেই কোন রোমাঞ্চ অনুভূত হয় না। বেশ আতংক লাগে! কেবলি বাঁধ ভেঙ্গে যাবার ভয়, নৌকা বা ট্রলারডুবির ভয়। জেলেদের মৃত্যুসংবাদ এর খবর! এই তো কাল রাত থেকে নিম্নচাপ চলছে, ঝিরিঝিরি বৃষ্টি এই ঢাকাতেও। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী আবারো পানির নিচে। হাতিয়া প্রায় বিচ্ছিন্ন! মেঘনার প্রচন্ড ঢেউ যেকোন বীরের সাহসও এতোটুকু কমিয়ে দিবে! উত্তাল মেঘনা! ভয়ার্ত মেঘনা!
এটা শরৎকাল হলেও এবার কেউ কাঁশফুলের অপেক্ষায় আছে বলে মনে হয় না! সবাই আরেকবার যেন বন্যা পরিস্থিতিতে পড়তে না হয়, সেই আশাতেই দিন গুজার করছে। সবাই একধরণের ডিপ্রেশানের ভেতর দিয়েই যাচ্ছে! কি হয়! কি হয়!
বাঁধ ভাঙলে আবারো আর্মিদের শরণাপন্ন হতে হবে! যাদের সবাই ভয় পাবে, তীব্র সংকটে তারাই কান্ডারী!
গভীর নিম্নচাপে দেশ আক্রান্ত, আকাশ যেন চেপে বসেছে জনজীবনে। ছাত্রজীবনে ছুটির দিন পেলে এরকম ঝুম বৃষ্টির মাঝে কাঁথা গায়ে দিয়ে ঘুমিয়ে থাকা আর ঘুম থেকে কোনরকম উঠে গরম খিচুড়ি আর বেগুন ভাজা, শুকনো মাছ ভাজা খাওয়ার যে কি আনন্দ! ভাষায় প্রকাশ করা মুশকিল! ইশ্! ভারতীয়রা ইলিশের জন্য কাঁদছে! ওদের জামাই ষষ্ঠি বন্যায় ভেসে গেল! এ বর্ষায় আর নাইওর আসার সুযোগ নেই! সবখানে থৈ থৈ পানি!
চাকুরী জীবনে সেই ঘুমের মায়া ত্যাগ করতে হয় অনেকটাই। এই নিম্নচাপে অনেকগুলো ট্রলার ডুবেছে, জেলেদের জন্য এটা খুব কঠিন সময়! মাছ পেলে অনেক আনন্দ! কিন্তু ট্রলার ডুবে গেলে ট্রলার, প্রাণ, জাল সবই হারাতে হয়, সেই সাথে চড়া সুদের পুঁজি! মহাজনকে এই টাকা কিভাবে শোধ করবেন, সেটাই চিন্তার বিষয়। আর যেসব জেলেরা মারা গেল, তাদের পরিবারের দুঃখটা একবার ভাবুন তো! এইসব ভাবলে ইলিশ পাতে নিয়ে আনন্দ করাটাই মাটি হয়ে যাবে! বিষাদ নেমে আসবে।
আজ সারাদিন গভীর বৃষ্টিপাত, খুবই মেঘ কালো, গম্ভীর এখনো! কবে যে থামবে!
২| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫০
শায়মা বলেছেন: আপুনি সাত সকালে এমন ঝমঝম বৃষ্টিতে স্কুল যেতে কেমন লাগে!!!
যাইহোক এইবারের যুদ্ধে আমি হেলিকপ্টারের মধ্যে বন্দুক ধরে থাকা কালো সানগ্লাস পরে থাকা র্যাব দেখেছি আমাদের দশ তলার বারান্দা দিয়ে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৪৫
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: ১৫ বছর ৮ মাস এবং ১৬০ পোস্ট, আর আজকে প্রথম আমি আপনার লেখা পড়লাম।
বোন আসলেই আমি হতভাগা। আর সেই হতভাগার প্রথম মন্তব্য বিষাদ পর্বে । কি আর করা এরই নাম জীবন।
বিষাদ পর্বের স্মৃতিচারন খুব ভাল লাগল।
বাঁধ ভাংগার ফলে বন্যায় এবং ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্থদের হেলিকপ্টারের সাহায্যে পুলিশ সহ আর্মিদের সাহায্য বিতরন করতে করতে প্রমত্ত পদ্মার ভরা যৌবনের রুপের সাথে সাথে চরের কাশফুলের সৌন্দর্য দেখতে দেখতে যেইনা নীচে এসেছি অনেকটা তখনই হঠাৎ নাকে এসে লাগল পদ্মার তাজা ইলিশের মনমাতানো ঘ্রাণ। ইলিশের লোভ সামলাতে না পেরে হেলিকপ্টার নীচে নামিয়ে গরম ভাতের সাথে তাজা ইলিশ ভাজার অর্ডার দিয়ে কিছুটা সময় বসতে না বসতেই সাগরের নিম্নচাপের প্রভাবে পদ্মার ফুসে উঠা । সাথে সাথে আকাশ থেকে ঝম ঝম বৃষ্টি।
আসুন এই বৃষ্টিতে ঝালাই করি আমাদের ঘুনে ধরা সম্পর্কগুলিকে। ( আমার প্রথম মন্তব্য আপনার লেখায়,আবেগে বেশী বেশী । কিছু মনে কইরেন না বোন) । সাথে সাথে এই ঘন বর্ষায় একটু সময় নিয়ে পড়ে নেন - - -
- Click This Link