নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গল্পকথার কল্পলোকে এক যে ছিল রাজার কুমার … ইশ্ আমার তরুণিবেলায় এরকম সাদা টাট্টু ঘোড়ায় করে কোন রাজকুমারের দেখা পাবো, কি যে মধুর স্বপ্ন ছিল!
ইউটিউবে দেখে সেই স্বাদ ঘোলে মেটালাম। দুবাই প্রিন্স শেখ হামাদান, তার বাবাও পিএম শেখ মাখদুম দেখি সাদা ঘোড়ায় চড়ে, ডান হাতে ঈগল। খুবই রাজকীয় ব্যাপার। নাহ্, এটা তাহলে কেবলি রূপকথার গল্পই নয়, বাস্তবেও দেখা মেলে এরকম রাজকুমার এই একবিংশ শতাব্দীতে!
এককালে নাকি ভুঁইঞাদের হাতি ছিল, আমার সেটা দেখারও সৌভাগ্য হয়নি। তাহলে নিজেকে একটু রাজকুমারী ভাবতে পারতাম! যাক্, পড়ন্ত জমিদারী গর্বটুকুই আছে, এতোটুকুই সান্ত্বনা!
দিনে দিনে অনেক অনেক রাজপুত্র দেখেছি! সেই ইউটিউবের কল্যাণে! সৌদি প্রিন্স এমবিএস, বাহরাইনের শাহজাদা, মিশরের জাঁদরেল জেনারেল সিসি। কি অবাক হচ্ছেন? খুবই সত্যি স্বপ্ন! বাস্তবের কল্পলোকের কল্পনা! ভার্চুয়াল রিয়েলিটি!
জয়তু ইউটিউব!
একসময় গুগল আর্থ দেখে এতোটা অভিভূত হয়েছি! সেই কোরিয়ায় বসে গুগল আর্থের মাধ্যমে আমার নোয়াখালীর বাসার আশপাশের পুকুর, রাস্তাঘাট, চেনা স্কুল, ঢাকার সংসদ ভবনের উপরের নকশা, কার্জন হল – কি যে রোমাঞ্চকর অনুভূতি!
এরকম নাইটমেয়ার আরো আছে! ইদানীঙ দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার স্বপ্নে ধরা দিচ্ছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান! কি আজব কান্ড! মৃত ব্যক্তি কি করে কথা বলে আমার সাথে, একেবারে জীবন্ত যে! সেই সুদূর আফ্রিকা থেকে উনার কন্ঠ ভেসে আসে, নাজনীন আমি কিন্তু বেঁচে আছি। তোমাদের সবার অনেক প্রচেষ্টা আমি দূর থেকে বসে দেখতে পাচ্ছি! আমাদের রক্ত পানি করা যুদ্ধে জেতা দেশ নিয়ে রাজাকারেরা এখনো আস্ফালন করে যাচ্ছে! দেখি আর অবাক হই! ভাবছি, আবারো ফিরে এসে যুদ্ধ করবো, যেটুকু বাকী ছিল। যারা সেদিন আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিল, তাদের মুখোশ খুলে দেই। এই স্বাধীন বাংলায় তারা আছে, নেই আমি, নেই বঙ্গবন্ধু! নেই অনেক বীরউত্তম, বীরবিক্রম!
ধানমন্ডি ৩২ নং এর বাড়ি পোড়ানো, ভাংচুর দেখে, গণভবনের ভাঙ্গা দেয়াল দেখে, মেট্রোরেল ১০ নং গোলচক্করের ভাংচুর দেখে হৃদয় কেঁদে উঠেনি, এরকম নিষ্ঠুর বাঙালী নেই! অনেক বেশি আওয়ামী বিদ্বেষীরও বুক কেঁপে উঠেছে। একদিন ইতিহাসের এ পরিণতি তো যেকোন নেতার ক্ষেত্রেই হতে পারে। এতোটা ইতিহাসশূন্য কি হওয়া যায়! আওয়ামী লীগের প্রতি আমাদের যত বিরাগই থাকুক, এই লাল সবুজের পতাকা, এই জাতীয় সংগীত এগুলো আমাদের সবার, আওয়ামী লীগের একার নয়!
যাক, সুখস্বপ্নে ফিরে আসি! আমি স্বপ্নে তারেক জিয়াকেও দেখেছি, আমাকে অনেক বকে! বলে আমার জন্যে নাকি তার দল আরো বিপদে পড়ে! কে যেন আমার ব্যাপারে অভিযোগ করলো, আমি নাকি পাজী হতচ্ছাড়া! বলেন তো, এসব মানা যায়!
আমি সেনাপ্রধানদেরকেও শুনতে পাই, ইথারে ভেসে আসে তাদের গুরুগম্ভীর কন্ঠ! কখনো নিষ্ঠুর রসিকতাও!
আমার স্বপ্নে সেই সুদূর জাপানের মানুষেরা আসে, চীন থেকে আসে, রাশিয়া থেকে আসে, আলজেরিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, ইকুয়েডর, তুরষ্ক, মালয়েশিয়া! ইটালি, ইউকে, আমেরিকা! কি আজব সব কান্ড! কি করে যে এতো মানুষের এতো কথা আমি শুনতে পাই! নিশ্চয়ই ইউটিউব দেখার ফল! সারাবিশ্ব বিনা ভিসা টিকেটে ঘুরে আসার কি চমৎকার আয়োজন!
আমার আকাশ দেখতেও অনেক ভাল লাগে! একসময় স্যানেটেরিয়ামে দেখতাম, সরাসরি টেলিস্কোপে দেখার সুযোগ এখনো হয়নি! নভোথিয়েটারে গিয়ে ডকুমেন্টারী দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হচ্ছে! আমি এখনো খালি চোখে এন্ড্রোমিডা ঠিক ঠাহর করতে পারি না। কোথা থেকে শুরু, কোথায় শেষ। আকাশ গঙ্গা, নীহারিকা, এসব শব্দ এখনো আমার কাছে ধাঁধাঁর মতো। তবে হেলিবপ ধূমকেতু দেখেছি, শীতের আকাশের আদমসুরুত, প্রশ্নবোধক চিহ্ন দেখি ফিবছর! তবে ধ্রুবতারাও ঠিক বুঝতে পারি না। একদিনের এক ফালি চাঁদ দেখা, বৃষ্টিস্নাত দিগন্তে রংধনু দেখা, অনেক আকাশ কালো করা মেঘের ঝুম করে ধরনী স্পর্শ করার আগে ভীষণ গর্জন আর প্রচন্ড বিজলী চমকানো দেখেছি, সেই আকাশ থেকে মাটি পর্যন্ত বিস্তৃত বিজলী! কি ভয়ংকর সুন্দর! বাতাসে এক অফালি মেঘের ভেসে থাকা দেখেছি, পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা মেঘের রাজ্য দেখেছি, স্তরে স্তরে আষাট শ্রাবণের অনেক অনেক গহীন সাদা মেঘ দেখেছি! আকাশ থেকে ভোরের সূর্য ওঠা দেখেছি!
জীবন পুরোটাই প্রায় সার্থক! দার্জিলিং দেখার আর লোভ নেই। দেখলে ভাল!
আমার বাড়ির জানালা দিয়ে পূর্ণিমার একেবারে হলদে গোল সাঝের চাঁদ দেখেছি, জ্বলজ্বলে শুকতারা দেখেছি, দেখেছি সবসময়ই চাঁদের পিছু নেয়া তারাগুলোকেও, লাল মঙ্গলের পাদটীকাও দেখেছি! কি চাই আর! অমাবস্যার রাত দেখেছি, ভরা পূর্ণিমার রাত দেখেছি! গাঢ় সবুজ পাতার বেষ্টনী দেখেছি! ঝাঁকে ঝাঁকে চেরী ফুল দেখেছি। অনেক অনেক গোলাপী পদ্ম ফোটা বিল দেখেছি, কচুরী পানা ফুল ছাপানো খাল দেখেছি! কি অপূর্ব দৃশ্য! এগুলো কিন্তু রূপকথা বা গল্প নয়, বাস্তবেই দেখেছি। রাস্তার পাশে ফুটে থাকা কলমি ফুল, বুনো লতার ফুল, নাইট ও’ক্লক ফুল! কবিরা এগুলো নিয়ে অনেক কাব্য লিখে। এসব নৈসর্গিক সৌন্দর্যের আমিও একজন দর্শক বটে! দু চোখ জুড়ানো দিগন্ত জুড়ে হলুদের সম্ভার দেখেছি সর্ষের ফুলের ক্ষেতে! দেখেছি নরম তুলতুলে কাঁশবন! বর্ষার হলদে কদম, শরতের সবুজ ঘাসের মখমলের উপর সাদা-কমলা প্রিন্টের শিউলি ফুলের নকশা! কুড়িয়েছি বকুল ফুল! ভোরের আবছা আলোয় শিউলিও। গেঁথেছি বকুলের মালা, পরেছি বেলীর ফুলের সুগন্ধি মালা, কত শুকেছি প্রাণভরে! কত লাল, হলুদ গোলাপ রাস্তার পাশ থেকে কিনে বাসায় গ্লাসে পানি ভরে ঘরের সৌন্দর্য বাড়িয়েছি! একসময়ে রজনীগন্ধা, রডেডেন্ড্রনও ছিল আমাদের বিশবিদ্যালয় সময়কার ফুলবিলাস!
সরষের হলুদ মোড়ানো ক্ষেতে শাহরুখ কাজলের গানও স্বপ্নে দেখেছি, স্বপ্নে এসেছে রিয়াজ, পূর্নিমা, ফেরদৌস, সিয়াম, পুজাচেরী, আমির খান, সালমান খান আরো কত শত রূপালী পর্দার নায়ক নায়িকারা! ইয়া মাবুদ! শাবানা – ববিতা, সূবর্ণা মুস্তফা আপারাও এসেছিল! এসেছিল মৌসুমি, মাহি, বিদ্যা সিনহা মিম, মেহজাবীন, নুসরাত ফারিয়া সহ আরো কত শত সুন্দর মুখ। মাধুরী, জুহি, রানী মুখার্জি, দেব, রাহুল, নচিকেতা, মীরদা, অক্ষয়, শিল্পা, বিগ ব্রাদার আরো কত কে!
ভাবছেন কি পাগলের পাল্লায় পড়া গেল! আরে এটাই তো স্বপ্নের ফ্যান্টাসী!
এই স্বপ্নের ভেতর দিয়ে বোরাকে করে সাত আসমান যাওয়া যায়! আমি না হয় সিনেমার নায়ক নায়িকাদের সাথেই দেখা করলাম! বা তারা আমাকে দেখতে এলো!
পরিকল্পনা আছে আমি আঅ্যালিটা হবো, মঙ্গলগ্রহের রাজকন্যা! তোমরা আমাকে দেখতে এসো কিন্তু! কি সুন্দর গোলাপী – লাল একটা পৃথিবী! আমাকে অনেক টানে! দেখ সত্যি একদিন সেখানে চলে যাবো! আমাকে তোমরা আকাশের গোলাপী পরীর মতো দেখতে পাবে!
মাঝে মাঝে মৎস্যকন্যা রূপেও নিজেকে দেখতে ইচ্ছে করে! সাঁতার পারি না! কিন্তু মন পাখনায় সাঁতার কেটে চলে যাই সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে সুদূর আফ্রিকায় অথবা অস্ট্রেলিয়া, নয়তো বাড়ির কাছেই মেঘনার ত্রিমোহনায়! যেখানে তীব্র স্রোত সবকিছুকে টেনে নিচের দিকে নিয়ে যায়! আমিও সেই ঘূর্ণির সাথে দোল খেতে চাই। যদি খিজির (আঃ) এর সাথে দেখা হয়ে যায়! তবে তো আবে হায়াত পান করে পেতে পারি অসীম জীবন! এটা ভাল হবে কি? ঠিক, বুঝতে পারছি না!
আগ্নেয়গিরির ফুঁসে ওঠার আগে যদি নির্জীব পর্বতের লাভার উপরে একটু বসে থাকতে পারতাম! টগবগ করে ফুটছে, অথবা এই তো আগেও আইসল্যান্ডে সেই পর্বতের ভিতরে ঘুমিয়ে ছিল যে লাভা, তার উপরে যদি এক্কা দোক্কা খেলতে পারতাম! কিংবা দ্য মিস্টারিয়াস আইল্যান্ডে গিয়ে গোপন সুড়ঙ্গ পানিপথে ভিতরের দুর্গে পৌঁছে যেতে পারতাম! কি এডভ্যঞ্চারিয়াস জীবন হতো সেটা! ওয়াইল্ড লাইফের সে সাবেক মার্কিন আর্মির মতো!
অথবা সেই যোগী বা মুনি, ঋষির মতো! যে অনেক শীত, বর্ষা, বরফ, শৈল্যপ্রপাত পেরিয়ে কৈলাস পর্বত দর্শনে যায়! সেই মানস সরোবরে ডুব দেয়! সেই রাজহাঁসগুলোর সাথে জলকেলী করে! জীবনটা কি আনন্দেরই না হতো!
কেউ কেউ অবশ্য গুপ্তধনের খোঁজে, ডায়মন্ডের খোঁজে সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার চাঁদের পাহাড়ে যায়, অথবা সোনার খনিতে! অথবা কোন গহীণ বনে, কিংবা পিরামিডের ভিতরে মমির সন্ধানে! কোথায় কোথায় যেন গুপ্তধন সেই আমলের রাজা বাদশারা লুকিয়ে রেখেছে! আমার অবশ্য এরকম এডভেঞ্চার ভাল লাগে না!
আমি ঘুরবো, বেড়াবো, নতুন ফল খাবো, নতুন ফুলের ছবি তুলবো! বিস্তীর্ণ আকাশ দেখবো, সাগরের ঢেউ এর গর্জন শুনবো, বুকের জমাট ব্যাথা তাতে তরল হয়ে যাবে! মরিশাসের সমুদ্রের রংধনুর মতো সাতরঙ্গা ঝর্ণা কিংবা এন্টার্টিকা! উত্তর মেরুও হতে পারে! লবস্টার খাব অথবা বারবিকিউ! রূপচান্দাও হতে পারে বা বাঁশের খোলের ভেতরে তরকারী নতুবা শাপলা মাছের কারী বা নতুন নাম না জানা কোন আইটেম!
এতেই জীবন বিশ আনা সার্থক! আর কি চাই!
একটু আছে, বাড়ির কাছের আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে বসে আন্তর্জাতিক খেলোয়াড়দের খেলা দেখা, এটা এখনো হয়ে ওঠেনি, জীবনের শখ একটু অপূর্ণ রয়েছে! এটা করতে পারলে ত্রিশ আনাই সফল!
যা চেয়েছি আমি তা পাইনা, যা পেয়েছি তা তো আমার না!
অন্তবিহীন পথে চলা এই জীবন, শুধু জীবনের কথা বলা এই জীবন!
[কল্পকাহিনী]
২| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৬
কামাল১৮ বলেছেন: এখন রাজাও নাই রাজ কুমারও নাই।গোড়ায় চড়ে আসে কিছু পুলিশ।এখন সেটাও দেখা যায় না।এখন স্বপ্নের পুরুষ আসে মার্সিডিসে চড়ে।
৩| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২১
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আমার ছোট ফুফু ধারাবাহিক স্বপ্ন দেখতে পারতেন। মানে গতকাল যতটুকু দেখেছেন পরের দিন তার পরের অংশ দেখতেন। আমাদেরকে বললে আমরা হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি দিতাম।
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১২
শায়মা বলেছেন: আমাদের ছিলো কল্পলোকের গল্পগাঁথা।
এখনকার বাচ্চারা এসব আর পড়েই না।