নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
উপরের এই শব্দগুলো প্রায়ই আমাকে ভাবায়। আমার মনে হয় মনের অজান্তেই এই শব্দগুলোর সাথে মানুষের জীবন ওতপ্রতভাবে জড়িত। আমি এটা বিশ্বাসও করি মানুষের প্রতিটা কর্মই ফিরে ফিরে আসে।
জ্ঞানীরা বলবেন, History Repeats!
কেউ বলবেন, Tit for Tat!
আমি এটাও বলি, Newton’s Third Law: Every action has a reaction.
এটাও প্রচলিত আছে, আগের ফাল যেদিকে যায়, পরের ফালও সেদিকে যায়।
মুনীষিরা বলবেন, আয়নার নিজের দিকে তাকিয়ে দেখ!
সিনেমাতে দেখবেন, বিবেক নামের একটা চরিত্র থাকে।
প্রবাদ আছে, বাপকা বেটা, সিপাই কা ঘোড়া!
এভাবে নানাভাবেই উপরের শব্দগুলোর মতো মানুষের জীবনে ঘুরে ফিরে আসে।
এই যেমন আমি আমার আম্মার গুণ একটাও পাইনি! কেবল শারীরিক বৈশিষ্ট্যই কিছুটা মেলানো যেতে পারে। আমাদের পাড়ার খালাম্মারা আম্মাকে জিজ্ঞ্যেস করতেন, এইটা কি আপনার সতীনের মেয়ে? বা পালক এনেছেন?
আমার আব্বা অবশ্য ছোটবেলায় আমাকে প্রায়ই একটা গল্প শোনাতেন, হাজীগঞ্জ পোলের (ব্রিজের) নিচে একটি বাচ্চা মিঁউ মিঁউ করে কাঁদতে ছিল। আম্মা আর আব্বা রিকশায় করে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথে আমার কান্না শুনে থামলেন, তারপর আমাকে কাঁদামাটি থেকে তুলে নিলেন। এরপর লালন পালন করে এতোটুকু বড় করলেন।
এটা শুনতে শুনতে আমি একরকম প্রায় বিশ্বাসই করে ফেলেছিলাম! যদি না বড় হয়ে আব্বার লেখা ডায়েরীটা না পড়তাম! সেটা পড়ে আমার আক্কেল গুড়ুম। আমার জন্ম চট্টগ্রাম হালিশহরের কোন এক হাসপাতালে! আম্মা নানুর বাসায় ছিলেন তখন। এর আগে পরে নানা –নানুর কাছে শুনেছিলাম, কিন্তু আমার আব্বার কথাই বেশি বিশ্বাস হতো!
আমার দাদু, আব্বা- ফুফুদের চেহারা, চুলের সাথে মেলালে অবশ্য বৈজ্ঞানিকভাবে যুক্তিযুক্তভাবে বোঝা যাবে, আমি এই পরিবারেই জন্ম নিয়েছি, পালক নই!
ওই যে বললাম, আম্মার কোন কাজের গুণ আমি পাইনি, পেয়েছে আমার বড় ভাইটা বৌ। সে সম্পর্কে আমাদের ফুফাতো বোনও হয়। আবার আম্মা নাকি বিয়ের আগে যাই টুকটাক কাজ করতেন নানা বাড়িতে, সাংসারিক রান্না-বান্না, কাজ কর্ম বেশি দাদু – ফুফুদের কাছ থেকেই নাকি শিখেছেন। তাহলে তো মিললোই, ভাই-এর বৌ তার মায়ের কাছ থেকে শিখেছে। দুয়ে দুয়ে চার। ঐই আম্মার মেয়ে!
আম্মা নিজেও মেজ, নানুর মতো আম্মাও উনার মেজ সন্তানকে বেশি প্রায়োরিটি দেন যে কোন কাজে। তার মতের মূল্য বেশি আমাদের পরিবারে, ঠিক আমার মেজ মামার মতো! দেখুন, কি আশ্চর্য মিল!
আমার ছোট ছেলেটি আমার মতোই বেড়ু বেড়ু পার্টি হয়েছে। অংক করতে বসলে মাশাল্লাহ খুবই কনফিডেন্ট! এটা তো আমার হাতের তুড়ির মতো ব্যাপার! আমার কাছেও গণিত পরীক্ষার দিনটা ছিল ঈদের মতো!
আমার মেয়েটা আমার থেকে আরেকটু বেগুণা। তবে আমার কানের অসুখটা ঠিকই পেয়েছে! আমার দুই ছেলেরই কিছুটা হলেও আমার কাশিজাতীয় এলার্জির মতোই সমস্যা আছে। যদিও তাদেরটা আরো সিভিয়ার! কি অদ্ভূত!
তবে মেয়েটাকে আমি ওর দাদুর দর্শন অনুযায়ী গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি, যাতে ফুফুদের গুণগুলো কিছুটা থাকে।
বিজ্ঞান কিন্তু এটাই বলে, মেয়ে – মা – নানী – পরনানী … মা হাওয়া - ইভ ডিএনএ।
মায়ের জিন মেয়ের শরীরে যাবেই, কনফার্ম। বংশের ধারাবাহিকতা নারীদের দ্বারা প্রবাহিত হয়। এজন্য দেখবেন বিয়ের সময় মেয়েদের গুণ, বংশ, টাকা পয়সা, ঈমানদারী এগুলো বেশি যাচাই বাছাই করা হয়।
আমাদের পুরুষশাসিত সমাজে মনের অজান্তেই একটা বাজে প্রচলন আছে, সন্তান খারাপ হলেই মাকে দায়ী করা হয়। সমাজের প্রচলিত গালিগুলো মা-কে ঘিরে। এটা ঠিক বিজ্ঞান জেনে মেনে হয়েছে তা নয়, তবে সামাজিক ধারণাটাও সেরকমই। মাকে খুব দায়িত্ববান, নিষ্ঠাবান, সাংসারিক, ভাল চরিত্র, ধৈর্য, ভাল রাধুনী, দক্ষ ম্যানেজমেন্ট, সীমিত আয়ে চলতে পারার দক্ষতা – সব ভাল গুণে গুণান্বিত হতে হয়! সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং চাপ বেশি।
তাই দেখবেন, একটা মেয়ের একটা দোষ হাজারভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়, পুরুষের হাজার দোষ নিয়ে কেউই ওতোটা মাথা ঘামায় না। মানে, ভাবখানা এমন নারীর জন্য সব বরবাদ হয়!
যদিও আমাদের সামাজিক নেতৃত্ব পুরুষকেন্দ্রিক! পুরুষরাই মূল ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে আছে, কিন্তু যত দোষ নন্দ ঘোষ, নারীর!
এই প্রাকৃতিক ব্যাপারটা কি করে যে পুরুষতান্ত্রিক হয়ে গেল!
অদ্ভূত ব্যাপার, এই ছেলেগুলোও মায়ের হাতে বেড়ে উঠে, যত বড়ই হোক খুব মা মা কেন্দ্রিক ভাব দেখায়। অন্ততঃ বৌ-কে খোটা দেয়ার বেলায়। কিন্তু এই ছেলেগুলোরই বাইরের আচরণ অনেকটাই তাদের বাবার ব্যক্তিত্ব দ্বারা নিয়ন্ত্রিত থাকে। সে ঘরে মা-এর প্রতিচ্ছবি পেতে চায়, বাইরে বাবার। তাহলে কেউই বাবা-মা এর প্রতিচ্ছবি এড়াতে পারে না।
তাহলে সবাই সাবধান, আপনার আমার যে কোন আচরণ আমাদের পারিবারিক শিক্ষাকেই পুরষ্কৃত করবে অথবা প্রশ্নবিদ্ধ করবে।
কথায় কথায় এরকম অনেকেই বলে, ছোটলোক, ইতর শ্রেণী, বাবা মা কিছু শেখায়নি! পরিবার বেশি ভাল না!
যদিও যে কোন ব্যক্তি তার পরিবারের পরে অনেক কিছুই পারিপার্শ্বিক অবস্থা থেকে শেখে, অনুপ্রানিত হয় অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি বা শিক্ষক দ্বারা, বস দ্বারা, পীর দ্বারা, আলেম দ্বারা ইত্যাদি ইত্যাদি।সারাজীবনই সে কিছু না কিছু শেখে, সেটা করার চেষ্টা করে, কিন্তু দিনশেষে গালিটা পরিবারের বাবা-মাই খায়! বিশেষ করে মা!
আবার রত্নগর্ভা মা-ও হয়!
তো, সারকথা কি দাঁড়ালো? আমাদের জিন আমাদের অনেক আচরণই নিয়ন্ত্রণ করে। আবার আশ পাশের বিভিন্ন ঘটনা আমাদের আচরণের নিয়ামক হয়ে ওঠে। একই ঘটনায় একেকজন একেকভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়। এর অনেকটাই বংশগত, অনেকটা স্কুল-কলেজ-ইউনিভার্সিটি-আড্ডা-পাঠাগার-মোবাইল-ইন্টারনেট-সভা-সমিতি-টিভি এসব থেকে শেখা, কিছুটা নিজের উপলব্ধি বা অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান, আর কিছুটা হঠাত ঝোঁকের বশে, রাগের বশে ( যদিও সাইক্রিয়াট্রিস্টরা বলেন, এটাও তার লুকায়িত অভিজ্ঞতা, ছোটবেলার কোন স্মৃতি থেকে এই আচরণগুলো হয়)।
বিজ্ঞানের ভাষায় আরেকটু বলা যায়, প্রত্যেক কার্যকরণের পিছনে কোন একটা কারণ (reasoning) থাকে।
একটা বিশাল জাতি বা কমিউনিটি কিছু নির্দিষ্ট আচার আচরণ, সংস্কৃতি, ভাল লাগা, মন্দ লাগাকে ধারণ করে। এটা সেই গোষ্ঠীর নৃ বা জিনগত বৈশিষ্ট্য। একটা ভাষার উদ্ভব, গানের কথা, কবিতার গাঁথুনী তার সমসাময়িক চারপাশের বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই প্রতিফলিত করে।
তাহলে কি করণীয়?
আসুন, আমাদের এই বাঙালী জাতিসত্ত্বাকে আরো বোঝার চেষ্টা করি, আমাদের নিজেদের আরো পড়ি, জানি বৈজ্ঞানিক উপায়ে।কি করে দ্রাবিড় এলো, কি করে অস্ট্রীয় এলো, আমরা কি অসুর থেকে এলাম, নাকি আর্য থেকে? কার বৈশিষ্ট্য আমাদের মাঝে বেশি দেখা যায়? আমরা পূর্বপুরুষের কোন কোন বৈশিষ্ট্য ভাল? কি নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি? কোন আচরণ নিয়ে আমরা লজ্জিত হতে পারি। কিভাবে নিজেদের বদলাতে পারি?
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৫
নাজনীন১ বলেছেন: আজকাল মানুষ বদলাতে চায় না, পঁচতেই চায়!
২| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৬
কামাল১৮ বলেছেন: পুরুষ শাসিত সমাজে যত দোষ সব মেয়েদের।এমন কি তার নিজের কোন বড়ীও নাই।একটা বাপের বাড়ী অন্যটা স্বামীর বাড়ী।এবার নিজের বাড়ীর চিন্তা করতে হবে নারীর।
৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৫
নাজনীন১ বলেছেন: এখন অনেক মেয়ের নিজের ফ্ল্যাট আছে। বিশেষ করে যারা শোবিজ এ আছে! বা ভাল ব্যবসা করে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:২১
নয়া পাঠক বলেছেন: সুন্দর একটি লেখা, সহজ সরল ভাষায় নিজের উদাহরণ দিয়ে বিজ্ঞানের অনেক ব্যাখ্যাই সহজে বুঝিয়ে দিলেন।
তবে মানুষের জিন নিত্য পরিবর্তনশীল, মানুষ চালিত হয় মূলত: বাবা-মায়ের বৈশিষ্ট্য দ্বারা, পারিপার্শ্বিক ঘটনাবলী দ্বারা আর নিজের শিক্ষা-বিদ্যা যা সে অর্জন করে তা দ্বারা। মানুষের আচরণ নিত্য পরিবর্তনশীল। 'মানুষ বেঁচে থাকলে বদলায়, আর মরে গেলে পচে যায়'- এটা কোন একটি ব্ইয়ে পড়েছিলাম, নামটা ঠিক মনে নেই।
ভালো লাগলো আপনার সরল বিশ্লেষণ।