নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্বঃ ৩
মাঝখানে কড়কড়ে রৌদ শুরু হলে বলে বর্ষা নিয়ে লেখার মুড আসছিল না। অনেকগুলো মজার গল্প জমা রেখেছিলাম। কিন্তু এর মাঝেই হঠাত এলো দুর্যোগের আকস্মিক বন্যা! আর বিলাসিতার করার মুড নেই! এখন বেঁচে থাকাটাই মুখ্য বিষয়! নিরাপদ আশ্রয়ে যাওয়া, একটু শুকনো খাবারের আশায় থাকা! একটু সহযোগিতা এখন অনেক বেশি কাম্য, কাব্য নয়।
রবীন্দ্রনাথের শেষের কবিতার অমিতবাবুর লাবণ্যেকে নিয়ে লেখা কবিতা পড়ে মেঘালয় যাবার অনেক শখ! অনেকেই এই বর্ষায় মেঘালয়ে যায়! পাহাড়ের বৃষ্টি দেখতে। কিন্তু বেরসিক ঝুম বৃষ্টি বিলাসিতা ছাপিয়ে যখন বন্য হইয়ে ওঠে, অস্থির হয়ে উঠে, পাহাড় বেয়ে বিপুল গতিতে নেমে এসে প্রচন্ড আক্রোশে জমিনে ঝাঁপিয়ে পড়ে, নদীর দু-কূল ভাসিয়ে, বাড়ি-ঘড় ভাসিয়ে, বুক সমান, মাথা সমান পানির নিচে মানুষকে ডুবিয়ে ছাড়ে! তখন কেবল আল্লাহকে ডাকো, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দাও, বাঁচার আকুলতা, মৃত্যুর জন্য তৈরি হওয়া!
এছাড়া আর কি! প্রমত্তা পদ্মা, মেঘনা, গোমতী, হাল আমলে মহুরী, পশুর নদীর উত্তাল ঢেউ, মানুষের কবিমন আজ আতংকিত! পানি দ্বারা নিষ্পেষিত!
লিখছিলাম, নিজস্ব অভিজ্ঞতাগুলো নিয়ে। মানুষের গুলো না লিখে পারলাম না। এড়ানো যায় না এসব দুর্যোগের মুহূর্তগুলো। মাত্র দুই দিন আগে ভাবছিলাম, এবার খুব একটা বন্যা হয়নি, অল্প স্বল্প যাই হয়েছে, তাদেরকে সাহায্য করতে জারি, সারি, ভাটিয়ালী, মুর্শিদী গান, কবি গান, পালা গান, বিভিন্ন জেলার আঞ্চলিক গানের আসর জমিয়ে সব জেলায় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। বর্ষাও উদযাপন হবে, অনেক ছাত্র-জনতা আহত হয়ে হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, তাদেরও উপকার হবে! এখন সবখানে থৈ থৈ পানি!
তবে এখনো মানুষের মাঝে দুর্যোগকে আপন করে নেবার সাহস আছে, রাস্তায় জাল ফেলে মাছ ধরছে। সকল পুকুর, জলাশয় ভেসে গেছে, সকল প্রজেক্টের মাছ ভেসে গেছে! এখনি তো কিশোরদের আনন্দ। মাছগুলোর মালিক সবাই! কে কাকে বাঁধা দেবে!
এরকম কিছু অভিজ্ঞতা আছে ছোটবেলার। অনেক মেঘ গড়গড় করলেই পুকুরের কৈগুলো উঠে আসে, মাটির উপর দিয়ে যেতে থাকে, মুষুলধারে বৃষ্টি হলে কৈ মাছের কেন জানি সাঁতার বেড়ে যায়। পুকুর, রাস্তার হাঁটু পানি, রাস্তার উপর পানির স্রোত, কিছুই ফারাক করতে পারে না। এসময় যারা ছাতা মাথায় রাস্তায় চলে সহজেই সেই কৈ গুলো ধরতে পারে। আমার আব্বা এরকম একবার একঝাঁক কৈ-এর সামনে পড়েছিল। দৌড়ে বাসায় এসে জগ নিয়ে গেলেন, হাতে দুইটা। এগুলো রেখে বাকীগুলো ঘরতে গেলেন। বেশ কয়েকটাই নিয়ে আসতে পারলেন। একবার স্কুল যাবার পথে আমাদের পায়ের নিচেও পড়েছিল কৈ মাছ। এক গড় থেকে রাস্তা পার হয়ে আরেক গড়ে যাচ্ছে। কাঁটার ভয়ে মাছ ধরার সাহস হলো না। আর, মেয়েদের স্বভাব! কিছু দেখলেই জোরে এক চিৎকার দেয়া। তাহলে কৈ সহ সবই পালাবে! আমাদের চিৎকারেও কৈ পালিয়ে কূল পায় না!
এসময়ে কিন্তু সাপও ভেসে ভেসে চলে আসে। এই বন্যায় বাসা বাড়িতে সাপ ঢোকা কোন ব্যাপারই নয়। ভীষণ আতংকের বিষয় এটা। আমাদের বাসায়ও টিউবওয়েলের পানি যাবার ছিদ্র দিয়ে সাপ ঢুকেছিল। যখন আমরা নতুন বাড়িটা করেছিলাম। এর কিছুদিন আগেও এটা খোলা জমি ছিল, সাপ, বিচ্ছু, ব্যাঙ, সবারই চলাফেরা উন্মুক্ত ছিল। তাই মনের ভুলে বাসায় এসে ঢুকেছে! আর আমাদের দেখে ভয়ে পালানোর চেষ্টা করছে! আসলে সাপও মানুষ ভয় পায়! আর যে ঘরে আমার আম্মা, দাদু থাকে, সে ঘরে ডাকাত আসতেও ভয় করে! সাপ তো দূর কি বাত!
আরেকবার এক মামা বাসায় বেড়াতে এসেছিল, আম্মা কথা বলছে উনার সাথে। হঠাতই আবিষ্কার করে আম্মার মাথার উপরে খাটের স্ট্যান্ডে সাপ প্যাঁচানো, এক হাত সমান লম্বা ছিল। তাড়াতাড়ি আম্মা সেখান থেকে সরে গিয়ে লাঠি দিয়ে মারে সাপটাকে। আরেকদিন আমি প্রায় একটা গোল পেঁচিয়ে থাকা সাপের উপর পা দিয়ে ফেলছিলাম! প্রথম এক বছর এরকম ঘরে সাপ ঢুকে যাবার ঘটনা ঘটছিল। পরে ধীরে ধীরে কমেছে। সাপেরা বুঝতে পেরেছে এটা এখন মানুষের বাড়ি।
এই সাপ ট্রমাটা আমার বড় হবার পর আবার ফিরে এসেছিল। তখন চাকুরী শুরু করেছি, বাচ্চাদের নিয়ে ঘুমাই। মাঝে মাঝেই স্বপ্ন দেখি আমার পায়ের কাছে সাপ, ভয়ে জেগে উঠলে দেখি কিছু নাই। কেমন জানি অস্বস্তি হতো, ভয় লাগতো! এখনো সাপ দেখলে আমার এরকম অস্বস্তি হয়!
এবার বন্যা একটা নতুন রেকর্ড করেছে অনেক বছর পর! প্রায় ৪০ বছর চাঁদপুরের মানুষ বন্যা দেখে না, ৯৮ এর পর নোয়াখালীর মানুষও বন্যা দেখে না। কুমিল্লা-ফেনীর মানুষেরা প্রায় ১৩-১৪ বছর এরকম বন্যার পানি দেখেনি। এবার এইসব অঞ্চলের মানুষের বন্যার অভিজ্ঞতা হলো, ফেনীর অবস্থা ভয়াবহ! লা নিনোর প্রভাব! এবার বাংলাদেশ রেমালের মতো শক্তিশালী সাইক্লোন, মে মাসের অত্যধিক গরম, রাতের আকাশে পৃথিবীর মানুষের অনেক অনেক বেশি অরোরা প্রত্যক্ষ করেছে, বন্যার একটা শঙ্কা ছিলই। সেটাও সত্যি হলো, ধেয়ে আসছে গ্রহাণু এপোফিস, যে কোনদিন পৃথিবীতে আছড়ে পড়তে পারে। নাসা কাউন্ট ডাউনে আছে।
আরেকটা ভয়ের বিষয় হচ্ছে ডাকাতি। একবার আমি অনেক ছোট, এরকম ভরা বর্ষা। আব্বা হাতিয়ায় ট্যুরে গেছেন। দুই তিনদিন ধরে মুষুলধারে কুত্তা বিলাই বৃষ্টি! আম্মা তো আব্বাকে নিয়ে অনেক চিন্তা করছেন। আমি বুঝতে পারছি ভয়াবহ কিছু। উঠানে অনেক পানি! বাইরে যাওয়া যায় না! সারাদিন ঘরে থাকা লাগছে। আবার পুরো বিপদটা বুঝতেও পারছিলাম না! এর মাঝে এক রাতে আমাদের বাড়িওয়ালার দরজায় গভীর রাত প্রায় দুইটা তিনটার দিকে আমাদের সামনের বাসার দারোয়ান এসে জোরে জোরে ধাক্কা দিচ্ছে, আর ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার দিচ্ছে। প্রায় হাঁটু সমান পানি বাইরে, তখনো বৃষ্টি হচ্ছিল খুব! বাড়িওয়ালা দাদু ভিতর থেকে সব জানতে চাইলেন, আম্মার সাথে সাথে আমারও ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সব শুনে যা বুঝলাম, ওই দুবাইওয়ালা দাদার বাসায় রাতে ডাকাত এসেছে। সবাইকে পিছমোড়া করে বেঁধে রেখে বাসা থেকে দামী সব নিয়ে গেছে! ডাকাত চলে যাবার পরে দারোয়ান কোনরকম নিজেকে ছাড়িয়েছেন। এরপর আমাদের ডাকতে এসেছেন! সবারই খুব আতংক হচ্ছিল! এবারও পানিবন্দী রাস্তায় গভীর রাতে সেই ভয় হচ্ছে কুমিল্লা, চট্টগ্রামের রাস্তাগুলোতে। গাড়িগুলো সব জ্যামে আটকানো! মানুষের বেহাল দশা, তুমুল পানির স্রোত ফেনী থেকে সমুদ্রের দিকে।
২০২৪ নানাভাবেই ঘটনাবহুল!
১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৯
নাজনীন১ বলেছেন: হ্যাঁ, খুব মুষলধারে বৃষ্টি হলে গভীর রাতে ডাকাত পড়ে পাড়ায়! সাবধান থাকবেন।কারণ, কাউকে ডাকলেও শুনবে না কেউ। দরজায় জোরে জোরে আঘাত করার সময়ে আপনিও শুনবেন না। এটা খুব ভাল সুযোগ!
©somewhere in net ltd.
১| ৩১ শে আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৩
মিরোরডডল বলেছেন:
পাহাড়ে বৃষ্টি কি ভীষণ সুন্দর!
সেই বৃষ্টিই আবার বিপদ হয়ে আসে মানুষের জীবনে।
আর যে ঘরে আমার আম্মা, দাদু থাকে, সে ঘরে ডাকাত আসতেও ভয় করে! সাপ তো দূর কি বাত!
কেনো আপু?
দুর্যোগে এমনিতেই মানুষের কষ্টের শেষ নেই, তারমাঝে আবার ডাকাতি!!!!