নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা যারা এখন চাকুরী বা ব্যবসা করি, তারা সবাইই কোন কাজ করতে গেলে কত টাকা ইনকাম করবো, সেটা আগে হিসেব করি।
কিন্তু যখন ছাত্র ছিলাম, বা নতুন জবে ঢুকেছি, তখনো অনেক কাজ করেছি বেহিসেবি। ভলান্টারিলি। মানে কোন কিছু পাবার আশা না করে। মনে হতো এই আমার যেন অনেক দায়িত্ব, দেশের জন্য অনেক কিছু করবার!
যখন রোকেয়া হলে ছিলাম, ৯৮ এর বন্যায় ঢাকা শহর প্রায় ডুবেই যাচ্ছে।সারা দেশের অনেক জায়গায়ই তখন পানির নিচে। দুর্গতদের জন্য যারা যেভাবে পারছে ত্রাণ সংগ্রহ করছে। আমরা তখনো মাত্র সেকেন্ড ইয়ার! বড় আপুরা কোথা থেকে যেন খবর আনলো সবাইকে রুটি বানাতে হবে। শুকনো রুটি বন্যার্তদের জন্য পাঠাতে হবে। আটা আনা হয়েছে। যার যার রুমে পিঁড়ি- বেলুন আছে, তাই নিয়ে দেশ উদ্ধারে ঝাঁপিয়ে পড়!
আমার আবার রান্নার সরঞ্জাম ছিল না রুমে। যাদের ছিল সবাই সাথে সাথে হলের রিডিং রুমে রুটি বানাবার কাজে নেমে গেল! সাময়িক সেই রুমটাকে ভলান্টারি কাজের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছিল। অনেক আনাড়িই সেদিন রুটি বানানোর হাতে খড়ি পেয়েছিল। রুটির সাইজ যাই হোক! গোল হলেও কাফি, বাংলাদেশের মানচিত্র হলেও কাফি! সাহস করে বানিয়ে ফেললেই হলো! কে যে আটাগুলি কাঁই করে দিচ্ছিলেন, এখন আর মনে নেই! আমার পাশের রুমের উর্মির সে কি বিজয়ের আনন্দ! রুটি বানাতে পেরেছে! আমার তখনো সাহস হচ্ছিল না! জীবনে এই কাজ করিনি!
তবে দুঃস্থ কাউকে সাহায্য করার হলে, তখনকার সময়ে আমরা ১০ টাকা দিতাম সেই সাহায্যের বাক্সগুলোতে। অনেক গ্রুপই আসতো, বিশেষ করে কারো ক্যান্সার হলে। আমরা টাকাগুলো দিতে একটুও দ্বিধা করতাম না। কারণ, একদিন রিকশা না চড়লেই হবে, মাসে ১০০ টাকার মতো দান করলে এমন কিছু কমে যাবে না ছাত্র বয়সে। বেশি টানাটানি না পড়লে আইসক্রিম না হয় নাই খেলাম! হুমায়ন আহমেদের বই পড়ে, আমরা মোটামুটি তখন সবাই উজ্জীবিত দানশীল তরুণ - তরুণী! কখনোই ভাবিনি ঐ টাকাগুলো কেউ মেরে খেয়ে ফেলবে!
ঢাকা ভার্সিটিতে ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ফুল বিক্রি করে, চকলেট বিক্রি করে। ভার্সিটির ফুটপাথে হেঁটে হেঁটে ওরাও পরিশালিত, জানে ভিক্ষে করতে নেই। তাই ফুল অনেক ভালবেসেই কিনতাম, চকলেট না খেলেও কিনতাম! পারলে ঈদে একটা জামা কিনে দিতাম, যেই বাচ্চাটাকে বেশি দেখতাম, প্রায়ই আশপাশে ঘুরঘুর করতো! কেউ কেউ এসব বাচ্চাদের পড়াতো! এখনো অনেকেই কাজগুলো করে!
এগুলো করে অনেক আনন্দ!
একসময়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টের কিছু ক্লাসমেটের উদ্যোগে করেছিলাম ‘ড্রপস’। প্রতিমাসে ১০০ টাকা করে একেকজন চাঁদা দিতাম। প্রায় ৩০ জনের একটা গ্রুপ। মাসে তিন হাজার টাকা উঠতোই। দুই তিনজন দায়িত্ব নিয়ে হাসপাতালগুলোতে খুঁজতে বেরোতো মেধাবী অসহায় অসুস্থ ছাত্র বা ছাত্রী খুঁজতে। চিকিৎসার কিছু সাহায্য করার চেষ্টা করতাম।
এরপর ছিল রক্তদান কর্মসূচী! প্রথম রক্ত দিয়েছিলাম এক ডেঙ্গু রোগীকে। প্রায় মোটা এক ব্যাগ রক্ত। ওই সময়ে ডেঙ্গুটা নতুন আবিষ্কৃত রোগ। অনেকে ভয় পেত এতো মোটা সূচে রক্ত দিতে। আমি হলাম বীর বাঙালী, অকুতোভয়! মোটা সুই তো কি হয়েছে! রক্ত দিবই যখন, একটু না হয় বেশিই দেই!
তবে গুলি খেয়ে বা বোমা খেয়ে মরার সাহস এখনো হইনি! একটু ভীতুই তাহলে! মানে অনেকটা রাজনীতিবিমুখ! শ্লোগানের জায়গাটাতে বড্ড আনাড়ী, সংশয়ী! বাকী পন্ডিতিগুলোতে সাহসের কমতি নেই! ।
যা হোক, গত ৩০-৩৫ বছরে অনেকগুলো ভলান্টারী সার্ভিসের কথা বলতে পারবো, যেগুলোর রিটার্ন পাবার কথা আজোন আমরা ভাবতে পারিনি, অংক কষিনি কয় টাকা কামাই করতে পারতাম এরকম মানবাধিকার এনজিও করে! অনেকেই বুদ্ধিমান! বিদেশ থেকে ফান্ড এনে করছে। আমাকে এ জন্য কেউ কেউ বৈষয়িক বুদ্ধি নাই, এরকম মন্তব্য করে। কেউ কেউ টোকাই বলে!
এবার দেখলাম, ছাত্ররা কি উল্লাসে ট্রাফিকিং করছে। একটুও ভুল হচ্ছে না, ভজঘট পাকাচ্ছে না। দেখলাম, পুলিশ ছাড়া দেশ ভালই চলছিল! আমার মনে হলো, এই বাচ্চাগুলো সেই নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের অকুতোভয় সৈনিকেরা যারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে তখন ট্রাফিক আইন শেখাচ্ছিল সবাইকে!
অনেকের দাবী তখন বের না হলেও, যেহেতু তারা রাস্তায় প্রতিদিন চলে, তাই দেখে দেখেই অনেক কিছু শিখে ফেলেছে। এটা শুনে ভাবছি, আমার ছোট ছেলেটাও এখন কিছুটা ট্রাফিক সাইন চিহ্ন দেখে বুঝতে পারে। আমি শিখিয়েছি, কিছুটা চুচু কার্টুন দেখে, বাকীটা নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে। যদি কেজির বাচ্চা পারে, তাহলে ওদের পারারই কথা। বিদেশে কিন্তু কিন্ডারগার্টেনের বাচ্চাদেরকে স্কুল থেকে হাতে করে শেখানো হয়। আমাদের দেশে সেই ব্যবস্থা নেই! তবুও ছাত্ররা কত স্মার্ট!
কেউ কেউ বায়না ধরলো, যদি কমিউনিটি পুলিশের মতো করা যায়, তাহলে ছাত্ররা পার্ট টাইম হিসেবে এই জবটায় ট্রাফিক পুলিশদের সারা বছরই সহায়তা করতে আগ্রহী! অনেক বেরসিক অভিভাবক বাদ সাধলেন!
কেউ কেউ এ কদিনের জন্য কিছু টাকা পুরষ্কার চাইলেন, কেউ চাইলেন ঐ আর্মি ক্যাপ্টেন ভাই এর মতো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটা পদক পেতে। আর্মিরাই কি কষ্ট করছে শুধু! এতো এতো ছাত্রের জীবন গেল, এতো এতো আহত, কত রাষ্ট্রীয় সম্পদ উদ্ধার করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিল, ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্বও পালন করলো, কিছুই কি স্বীকৃতি হবে না?
যা হোক, পুরষ্কার পেলে ভাল। না পেলে ক্ষতি কি?
একটা গান আছে, ইতিহাসের পাতায় তোমাদের নাম লেখা হবে না, কিন্তু বিজয়ী বীর, মুক্তি সেনা, তোমাদের এ দান কোনদিন ম্লান হবে না!
সত্যিকারের অবদান কেউই এড়িয়ে যেতে পারে না। নাম মুছে ফেলতে চাইলেও নিজস্ব মহিমায় সেই নামগুলো বেঁচে থাকে! ছাত্ররা এ যুগে আর বেহিসেবী নয়, তবে পড়াশোনায়ও এখন আরো দায়িত্বশীল হবে, এটাই স্বাভাবিক চাওয়া। দেশকে এখনো আরো অনেক দিতে হবে! সবে শুরু! তাই যোগ্য হতে হবে।
কান্ডারী হুশিয়ার!
২০ শে আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৬
নাজনীন১ বলেছেন: এই তো একজন সমসাময়িক সাক্ষী পাওয়া গেল, বলা যায় সহযোদ্ধা!
©somewhere in net ltd.
১| ২০ শে আগস্ট, ২০২৪ সকাল ১১:৪৪
পদ্মপুকুর বলেছেন: সুন্দর লেখা। সাধারণত যেকোনো ঘটনায় যে অংশটা পর্দার সামনে থাকে, ফ্রন্টলাইনে থাকে, তাদের ওপরেই স্পটলাইটটা পড়ে, কিন্তু প্রত্যেক ঘটনাতেই অসংখ্য পার্শ্বনায়ক থাকে, যারা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়, নিরবে কাজ করে যায় এবং কোনো সময় সে কৃতিত্ব দাবী করতে আসে না।
আপনার কথায় মনে পড়ে গেল, ৯৮-এ ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তির পরপরই বন্যার কারণে ইউনিভার্সিটি বন্ধ হয়ে গেল আর আমরা কোন এক স্রোতে মিশে টিএসসির ক্যাফেটেরিয়ায় গিয়ে জুটলাম। ওখানে দল বেঁধে রুটি বানানো চলছে। আমাদের কাজ ছিল আপুদের বানানো রুটিগুলো পলিথিনের প্যাকেটে আবদ্ধ করা।
পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে আমিও চিকিৎসা সহায়তার ফান্ড রাইজিংয়ে কাজ করেছি আপনার মতই। সম্ভবত আমরা সেকেন্ড ইয়ারে থাকতে রাজুতে ক্যান্সারাক্রান্ত কোনো একজন স্টুডেন্ট এর চিকিৎসার্থে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছিল, আমার নামটা মনে পড়ছে না, আপনি যেহেতু সমসাময়িক, মনে করতে পারবেন হয়তো।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার পাশাপাশি অপরের সাহায্যে এগিয়ে আসার এ শিক্ষাগুলোই বড় একটা পাওয়া হয়ে থাকবে।