নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পর্বঃ ২
এরপর আরেকটু বড় হলাম! আব্বা আম্মাকে ছেড়ে, কৈশোর ফেলে আজকের ভার্সিটি পড়ুয়াদের মতো আমিও গর্বিত ঢাবি ছাত্রী হলাম! রোকেয়া হলে উঠলাম! সবুজ চত্বরের বুকে গড়া লাল ইটের ইমারত কার্জন হলে ভর্তি হলাম!সে কি আনন্দ! কি বুকভরা স্বপ্ন! ভাগ্যিস সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আল্লাহ্তাআলা আজো বাঁচিয়ে রেখেছেন! আবু সাঈদের মতো মরে যাইনি!
অনেক অনেক আলহামদুলিল্লাহ! আল্লাহ্ আমার অনেক বড় বড় স্বপ্ন পূরণ করেছেন! এখন মরে যেতে আমার একটুও আফসোস নেই! বলা যায় একেবারেই প্রস্তুত! কিন্তু হলো কি! এই বয়সে কেউ প্রাণে মারে না! অসুখে মরে মানুষ! বুকের তাজা রক্ত লাগে যখন তাখত থাকে, মানে যখন অন্যায় দেখলে, অত্যাচার দেখলে আমরা হই হই করে উঠি, চিৎকার করি! শ্লোগান দেই! তখনই অনেক রক্তচক্ষু দেখি, লোকে মারতে আসে! মেরে ফেলতে আসে! সেই যৌবন পার হয়ে গেছি! এখন শুধু ডায়াবেটিস, হার্টের রোগ আর ক্যান্সারে মৃত্যুর ঝুঁকি আছে, অথবা লঞ্চ ডুবি না হয় বাস দুর্ঘটনা!
রিমান্ড এখনো কিছুটা ফিরে আসলেও ততটা আগের মতো তেজ নিয়ে নয়! অতোটা ভয়ংকর নয়! বা ভয় পাওয়াটা আত্মস্থ হয়ে গেছে! অভ্যস্ত!
তো এবার উইকেন্ডে হয় নানার বাসা, নয়তো ফুফুর বাসা, নয়তো চাচার বাসায় বেড়াতে যাই। বাসাবোতে ফুফুর বাসায় গেলে আবারো সেই ছোটবেলার বর্ষা ফিরে আসে! চারপাশের খালি, নিচু জমিগুলো পানিতে ভরে যায়। মাঠগুলো পেরিয়ে যাদের বাড়ি, তাদের একমাত্র ভরসা নৌকা!
৮৮ এর বন্যায় এরশাদের আমলেও এই ঢাকা শহরে বুক পানি উঠেছে, এই রাজধানীতে নৌকা চলেছে! শুনে আমরা মফস্বল থেকে হাসতে হাসতে কুটি কুটি! ঢাকা শহরে নৌকা চলে! বন্যার ভয়াবহতা, দুর্যোগ বোঝার বয়স তখনো হয়নি!
তো, এই নৌকা দেখে তো আমি অনেক খুশী! প্রথম একটা সুযোগ হলো নৌকায় চড়ার। আমার কাজিন আপু সহ মহা উৎসাহে নৌকা চড়তে গেলাম!সে কি রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা! ভউ শুধু একটাই, সাঁতার পারি না! নৌকা উলটে যদি পানিতে পড়ি, রক্ষে নেই! এরপর আরো নৌকাইয় ওঠার সুযোগ হলো, বুড়িগঙ্গার কালা পানিতে, এই বাসাবো এলাকাতেই অন্যান্য নদী বা খালে! অনেক ব্যালেন্স রাখতে হয়! একটু হেলে পড়লেও ভীষণ আতংক হয়। এখানেও নৌকা থেকে নামতে গেলে কাদায় পা পড়ে গেছিল একবার। নিউটনের তৃতীয় সূত্র মোতাবেক নৌকা ভীষণবেগে পিছনে চলে গেছিল, আমার পা পাড়ে না পড়ে কাদাপানিতে!
এহ হে! ভাগ্যিস যে অল্পের জন্যে পানিতে উলটে পড়িনি! তাহলে বোধ হয় সেদিনেই নদীতে খাবি খেতে হতো! মরেও যেতে পারতাম! এরকম কত মৃত্যু কাছ থেকেই ফিরে এসেছি বারে বারে। আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া!
যমুনার জলেও নৌকায় চড়েছি! পদ্মাতেও চড়েছি! সেই আরেক ভীষণ অভিজ্ঞতা! ব্রহ্মপুত্রে চড়েছি! কেবল আমার মেঘনাতেই নৌকায় চড়তে পারলাম না! এতো ঢেউ, এতো দুলে নৌকা, আমাদের আত্মীয় স্বজন, বা বন্ধু বান্ধব, কারো সাহস হয় না! আমারো সাহস হয় না ট্রলারে বা সী ট্রাকে করে এই ভরা বর্ষায় নোয়াখালীর চেয়ারম্যান ঘাট থেকে হাতিয়া ভ্রমণ করার। সেটা নাকি এক ভীষণ দুঃসাহসিক অভিযান, যারা চলাচল করে তাদের মুখে শুনেছি! এই বর্ষায়, মেঘনার মোহনা যারা পাড়ি দেয়, সত্যিই তারা বীরপুরুষ, নিঃসন্দেহ!
আব্বার মাঝে মাঝেই এই গভীর বর্ষায় হাতিয়ায় ট্যুর পড়তো! আম্মা তো সেই এক সপ্তাহ কেবল আল্লাহ্ আল্লাহ্ করেই কাটাতেন।
আমাদের অপেক্ষা হলো কবে আব্বা ফিরবেন আর দশটাকার মজার ইলিশ খাব! বা রিকশা মাছ! বই-এর ভাষায় তাপসে মাছ!
হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন! আব্বা মাত্র ১০০ টাকায় দশটা ইলিশ নিয়ে আসতেন আমাদের জন্য, সাথে মহিষের দই!
এই আনন্দ ভাষার প্রকাশ করার মতো না। আম্মা ইলিশ লবণ দিয়ে রাখতেন, তখন আমাদের ফ্রিজ ছিল না। গরম গরম ইলিশ ভাজা তো খেতামই, আরো যে কিভাবে কিভাবে রান্না করতেন! যা রানতেন, তাই খেতে মজা! ইলিশের ডিম খেতে মজা! একসাথে কতগুলো ইলিশ এক লোকমায় খেয়ে ফেলছি! গুণে শেষ করা যায়! নিজেকে ভীষণ দৈত্য মনে হতো! বাংলাদেশের ডিম ভরা ইলিশ পাওয়া যেত সেই সুদূর কোরিয়াতেও! অনেক তেল তেলে, ভীষণ স্বাদের।
ইলিশ বন্দনা বাঙালীর বরাবর, আমি আর নতুন কি লিখবো!
বর্ষা মানেই কদম ফুল, বর্ষা মানেই ইলিশ!
আজকাল নতুন নতুন রেসিপি আবিষ্কার করেছি। কে যেন শিখিয়েছে, ইলিশের তেল দিয়ে মুড়ি ভাজা। সত্যিই চমৎকার! আপনারাও ট্রাই করুন! লবণ ইলিশের মরিচ খোলা, সেটাও একবার চেখে দেখুন! আম্মা আরো করেন লাউ পাতায় ইলিশের মরিচ খোলা! এগুলো একবার যারা খাবে, তারা এই জীবনে এই স্বাদ ভুলবে না! আমার শ্বাশুড়ির রান্না করা ইলিশ-বেগুনের শুকনো শুকনো চচ্চড়ি, এতো ভাল লেগেছিল! আমি সেই রেসিপি নিজে কয়েকবার ট্রাই করেও করতে পারলাম না! আমার বেগুন তরকারীর পানসে ভাবটা যায়ই না! আর কুমড়ো ইলিশ, ইলিশের পাতোড়া, সরষে ইলিশ, ইলিশ ফ্রাই, দোপেঁয়াজা, কচুর ছড়া দিয়ে ইলিশ কারী – এরকম কতই আছে!
কিন্তু ঐ যে তাজা ইলিশ ফ্রাই, জাস্ট নদী থেকে তুলে নদীর পাশের হোটেলেই সব মসলা মাখিয়ে কড়কড়ে ভাজা, এটা কেবল আপনি এই বর্ষাকালে মেঘনা বা পদ্মাঘাটে পাবেন। আমি মাঝেই মাঝেই এই ভরা বর্ষাই লুকিয়ে লঞ্চে করে চাঁদপুর গিয়ে মেঘনা ঘাটে নেমে খেয়ে আসি, বাসার জন্যও নিয়ে আসি! বলবেন তো, লুকিয়ে কেন?!
যদি আমার আম্মা জানে তো, শত মুখে নিষেধ করবেন, নদীতে এখন এতো ঢেউ! তোর সাহস তো কম না! এখন কেন লঞ্চে উঠিস! নিষেধ করেছি না! সাঁতার পারা লোকেও কূল পায় না যদি একবার লঞ্চ ডুবে এরকম সময়ে! ডুবুরীরাও এঁট খেয়ে যায়! তার যত খাদ্য বিলাসিতা! বলেন এসব বলে কি ইলিশ-বর্ষা বিলাসিতা থেকে বিরত থাকা যায়। খেয়ে মরলে কোন আফসুস নাই! না খেয়ে ঘরে বসে মরলে তো রাজ্যের আফসুস থেকে যাবে! ইলিশ খেলে তবেই জীবন সার্থক! বাঙালী বলে কথা! মেছো বাঙালী!
অনেক বক বক করে ফেললাম! আজকে দুটো রিকশা কাত হয়ে পড়ে গেল, আমার এই অফিস আসবার পথে। একটা আমার সামনেই দেখলাম পড়ে ছিল, ওঠাচ্ছিল। আরোহীর কোলে দুই কি তিন মাসের এক বাচ্চা! ভাগ্যিস যে বাচ্চাটা গর্তের পানিতে ভিজে নি, ডুবেও যেতে পারতো! একটু আগে নাকি আরেকটা রিকশা উল্টালো! রিকশাওয়ালার নাক ফেটে গেছে! একেবারে টাটকা লাইভ নিউজ! এই রাস্তায় নাকি আরেকটু বেশি বৃষ্টি হলে নৌকা চলে! এখনো আমার সেই অভিজ্ঞতা হয়নি! রাস্তাটা কোথায় বলুন তো! এই হাজী ক্যাম্প পার হয়েই। এই হাজী ল্যাম্পের সামনে সরকারের চমৎকার উন্নতি চলছে, আন্ডারপাসের। কিছুদিন আগে থার্ড টার্মিনালের উদ্বোধন হয়েছে! হাঁটার দূরত্ব! কাওলা বা হজ্জ ক্যাম্প থেকে আসিয়ান সিটি!
এবার শেষ করি পদ্মায় নৌকায় ভ্রমণ, গরম গরম ইলিশ ভাজা আর গরম গরম রসগোল্লার গল্প দিয়ে। ছাত্রদের নিয়ে প্লেজার ট্যুরে গেলাম মৈনট ঘাট! ওদের জানা আছে এই ম্যাডাম নাচুনে বুড়ি, তার পরে ঢোলে বাড়ি দিলেই হলো! এক পায়ে রেডই থাকে বিশ্বভ্রমণের জন্য! দেশ তো বটেই!
তো ছাত্ররা আমার পিছ ছাড়ে না! ম্যাডাম এবার কই যাওয়া যায়, এরপরে কোথায়? পরীক্ষা শেষ হলে কোথায়? স্টাডি ট্যুরের জন্য কোথায়? মোটামুটি এক বছরের প্ল্যান হালকা পাতলা করাই থাকে! কেবল সময় এবং সুযোগ মেলার অপেক্ষা! গত বারের বেরসিক বর্ষার জন্য কক্সবাজার সাবমেরিন ল্যান্ড স্টেশন ঘোরা বাতিল হলো, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেকট্রিসিটি জেনারেশন এলাকায় যাই যাই করে হয়ে উঠছে না! আজকাল মাতারবাড়ি আর পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র আর রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট এরিয়া ঘুরে আসার মতলবে আছি, কেবলি সুযোগের অপেক্ষা! ওয়ালটন, কালিয়ারকৈর, বিএসআরএম এর ফ্যাকটরি, বসুন্ধরার অটোমেশন … আরো কতো জায়গা! আর ব্যক্তিগতভাবে বেড়ানোর লিস্ট তো আরো বড়!
সেই পদ্মা ঘাটে গিয়ে নৌকা ভাড়া করা হলো! প্ল্যান হলো ঠিক সোজাসুজি নদী পার হব সবাই। এত্তো ঢেউ! মাঝ বরাবর গিয়ে নৌকা তো প্রায় উলটে যায় যায়, এতো কাত হয়ে যাচ্ছিল! কেউ কেউ ভয়ে নৌকার ভিতরে শুয়েই পড়েছে! আমি বেশি নার্ভাসও হতে পারছিলাম না! এতোগুলো ছাত্রছাত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্ব আমার হাতে! আমি হাল ছেড়ে দিলে, বাকীদের কি অবস্থা হবে! কারো কারো ভীষণ পেট গুলোচ্ছিল! বমি করে করে। এরপর মাঝিকে থামালাম! বললাম আর নয়, চলেন ফিরে যাই! উল্টালে মরে গেলে তো বাঁচলাম! বেঁচে গেলে জবাবদিহিতা! জেল, জরিমানা! নিজের এবং ভার্সিটির ইমেজ! তার উপরে এতোগুলো তরুণ জীবন! অথচ অন্যান্য নৌকাগুলো দিব্যি পার হয়ে যাচ্ছিল! আমাদের অভিজ্ঞতার অভাব। আর সাহস করিনি! ফিরে এসেছি!
আজ বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে কত কথাই না মনে উঁকি দিয়ে গেল! কালও ভিজেছিলাম। আজকাল সেই বৃষ্টিবিলাসিতা কিছুটা ভয় পাই, কাশির ব্যমোটা বাড়তে দিতে চাই না, কষ্ট সহ্য হয় কম!
তবে আমার ছেলের ভিতরে এটা ঢুকে গেছে, ভীষণ মজা পায় বৃষ্টিতে ভিজতে পারলে! ছোট্ট বেলার ভয়হীন অসতর্ক, পরিণতি না ভাবতে পারা আনন্দ-অনুভূতিগুলো সত্যিই অনন্য!
০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:০৮
নাজনীন১ বলেছেন: আমি কতদিন পরে ব্লগ লিখছি! আমি দিনে দশটা পোস্ট দিব!
আগে কত রাত জেগে থেকে তক্ক বিতক্ক, বুদ্ধিজীবি কমেন্ট দিয়ে দ্যাশ জাতি উদ্ধার করছি! আমারে চিনেন?!
২| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:৩৯
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: সুন্দর!
৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:৪১
আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: আপনি নোয়াখাইল্লা?
হিঁছা মার!
আমার বাড়ী ফেনী।
০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:০৫
নাজনীন১ বলেছেন: এরই, আঁনরাও জানি
হেনী কলেজের ট্যাঁআ লই চুদুর বুদুর চইলতো না, চুদুর বুদুর কইরলে হিডের চামরা থাইকতো ন! হেনী কলেজের ফ্রিন্সিপফলে হাঁসি চাই, হাঁসি চাই!
৪| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:০৬
নাজনীন১ বলেছেন:
৫| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩
শায়মা বলেছেন: নাজনীন আপুনি।
কতদিন পর এলে। বর্ষা বন্দনা অনেক ভালো লেগেছে।
অন্য রকম সময় পার করছি আমরা।
১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১৫
নাজনীন১ বলেছেন: আপু, এখনো বেঁচে আছি! কতজনেই তো মরে গেল! শুকরিয়া!
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৫৬
রানার ব্লগ বলেছেন: এটা আগামিকাল দিলেই ভালো হতো। প্রতিদিন একটা করে পোস্ট দিবেন। এতে অন্যরাও সুজুগ পায় তাদের পোস্ট কে সবার সামনে উপস্থাপন করার।