নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চুপ থাকা, নির্লিপ্ততা! আপাততঃ ধ্যান করছি।

নাজনীন১

আমি বাংলাদেশি নারী।

নাজনীন১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি বিলাসিতা, বর্ষাবরণ, কাদা মাখামাখি বা পিছল খাওয়া! পর্বঃ ১

০২ রা আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৩২

পর্বঃ ১

নোয়াখালী অঞ্চলে বড় হবার কারনে বর্ষা বা ঝুম বৃষ্টি আমাদের বাৎসরিক জীবনের অঙ্গাঅঙ্গি ব্যাপার।বাদল হাওয়া, কাকভেজা বৃষ্টি, প্রচন্ড ঘূর্ণি হাওয়া, শেওলা ধরা মাটিতে আছাড় খাওয়া, পানি মারামারি, কদম ফুলের ঘ্রাণ নেয়া, জোঁকের ভয় – কি নেই অভিজ্ঞতার ঝুলিতে!

নোয়াখালীর প্রধান শহরে থাকাতে নৌকার চড়ার অভিজ্ঞতা সেখানে না হলেও, এই ঢাকার জলাবদ্ধতাতেই নৌকা বিলাসিতার অভিজ্ঞতাও আছে ঝুলিতে। আজকে সেই ঝাঁপিই খুলে বসছি! যদিও টমেটো, বারবিকিউ রুচি চানাচুর, বাদাম, সরিষা তেল দিয়ে মাখানো মজার ককটেল বা ইলিশ খিচুড়ি বেগুন ভাজা কোনটাই আপাতত সামনে নেই, তবু সেই মজার খাবারগুলোর চমৎকার স্বাদের স্মৃতির জাবর কাটতে কাটতেই আজকের এই স্মৃতিচারণ।

বুঝলেন কিনা বুড়ো হয়ে গেছি! অনেক মৃত্যু আজকাল আর বিহবল করে না! আর্মিদের সংস্পর্শে এসে প্রাণ কঠিন হয়ে গেছে! আরো মৃত্যু যেন কামনাতেই আছে, আরো রক্ত চাই, আরো রক্ত! এই বাংলার মাটি বৃষ্টির সোঁদা গন্ধে আর তৃপ্ত নয়! আরো রক্ত চাই এই মাটির, অনেক তৃষ্ণা!

সেই ছোটবেলার বর্ষাকালের একটি দিনও আমরা স্কুল কামাই করতে পারতাম না। হাঁটু পানিতে জোঁক ভেসে বেড়াতো, সেই পানি দিয়ে হেঁটে হেঁটেই, পাজামা গুটিয়ে ছাতা মাথায় স্কুলে যেতাম প্রতিদিন। জোঁকের ভয় ছিল, পা ক্ষয়ে যাবার যাবার আশংকা থাকতোই, তবু আমরা স্কুল ছাত্রীরা অকুতোভয়! অত রিকশাভাড়া আব্বার দেবার সামর্থ ছিল না। আমাদেরঅ এই নিয়ে কোন চাহিদা ছিল না সেসময়গুলোতে। পায়ে হেঁটে একজন, দুইজন স্কুল সাথী নিয়ে স্কুলে যাওয়া আর বাড়ি ফিরে আসা নিত্য ব্যাপার, একেবারেই স্বাভাবিক ঘটনা! কোনদিন এর ব্যত্যয় ঘটেনি। কোনদিন জ্বর, সর্দি কাশি – এর জন্য হয়নি। তবে আমার একজিমা ছিল ছোটবেলায়, এখনো এলার্জির একটা প্রাদুর্ভাব আমার পিছু ছাড়েনি। এসব নিয়ে একটু ঝামেলা পোহাতে হত। পায়ে ঘা হলে পটাশ ছিল, আম্মা মাখিয়ে দিতেন, পরের দিন স্কুলে যাবার জন্য তৈরী!

ছাতাটা খুবই প্রয়োজনীয় ছিল!

আজকাল রিকশা – গাড়ি চড়ে অফিসে আসি, ছাতার কথা প্রায় মনেই থাকে না! ফলশ্রুতিতে বৃষ্টিতে মাঝে মাঝে ভিজতেই হয়, ভালই লাগে। মাঝে মাঝে অবশ্য বিরক্ত হই। বিশেষ করে ঢাকার রাস্তার জলাবদ্ধতার পানির রঙ যদি হয় কালো! তাহলে তো মেজাজ সপ্তমে চড়ে! তখন আর সেটা বিলাসিতা নয়! নেহাতই শহুরে জলাবদ্ধতার অত্যাচার!

এই অফিসে আসতে গেলে ভার্সিটির সামনের খানা খন্দকে কখন যে রিকশা উলটে পড়ে যাই, এটা নিয়ে যথেষ্ট তটস্থ থাকা লাগে! এক কলিগ পরামর্শ দিয়েছে এক সেট জামা অফিসে রেখে দিবেন। যে কোন মুহুর্তে রিকশা চিৎপটাং হবার সম্ভাবনা আছে!

তবে ছোট বেলায় সবসময় কি নিয়ম মানতে ইচ্ছে করতো? একদম না!

সে কেচ্ছাটাই বলি এবার! বরাবরই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরি পাকা রাস্তা ধরে, যদিও সেখানে ইটে শেওলা থাকলেও পিছল খাবার সম্ভাবনা ছিল। তবুও একটু দেখে চললে এড়ানো যেত। একবার মাথায় ভূত চাপলো! আমি আর মুক্তা, আমার স্কুল লাইফের অনেক প্রিয় বান্ধবী! কালের ফেরে আড়ি, তারপরে হারিয়ে গেছে সেই বান্ধবী!

দুজনে মিলে ঠিক করলাম স্কুলের পেছনের কর্ণারের সেই বাড়িগুলো আছে, সেগুলোর উঠান দিয়ে গেলে কোনাকুনি বাসায় পৌঁছানো যাবে! কি দরকার অতো পাকা রাস্তা ঘুরে যাবার! ক্যাডস, কোজা খুলে হাতে নিলাম, পিঠে ব্যাগ ঝোলানো আছে! খালি পায়ে রাস্তা থেকে উঠোনে নামলাম। একজন একজনকে সাবধান করছি, সাবধানে পা ফ্যাল, সাবধানে। অনেক বৃষ্টি তখন মাথার উপরে! ভিজে চুপ চুপে!

বৃহস্পতিবার ছিল, চিন্তা নেই! বাড়ি গিয়ে জামা কাপড় তো এমনিতেই ধোয়া হবে! বৃষ্টিকাহনও হলো! তো, শেষমেষ! যা হবার কথা তাই হলো!
কি হলো?





ধপাস! আমি একদিকে, মুক্তা আরেকদিকে। একবার ও পড়ে গিয়ে জুতা একদিকে পড়ে, সে আরেকদিকে গড়ায়। আমি হাসতে হাসতে কুটোকুটি! আরেকবার আমি পড়ি তো সে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি! এরক্ম কয়েকবার আছাড় খেয়ে খেয়ে অবশেষে বাসায় ফেরা হলো, কাদায় মাখামাখি! সে কি বিচ্ছিরি অবস্থা! ভাগ্যিস জিলা স্কুলের কোন ছেলে সেদিন দেখেনি এসব! নির্ঘাত নগদে মানসম্মান যেত!

এস।এস।সি। পরীক্ষা শেষ! আব্বার কুমিল্লায় পোস্টিং তখন। আমার ছোট ফুপির শ্বশুড়বাড়িও কুমিল্লায়। তো প্ল্যান হলো, ছুটিতে ফুপির বাসায় গিয়ে বেড়াবো, কুমিল্লা শহর বেড়াবো! অনেক মজা হবে। সত্যিই আব্বার বাড়িওয়ালা আপার মেয়েদের সাথে ভিক্টোরিয়া কলেজ, সেই কলেজের মেয়েদের হোস্টেল, মাটির ঘর এসব দেখে খুবই আহ্লাদিত আমি! আমার আব্বাও এই ভিক্টোরিয়া কলেজের একজন গর্বিত ছাত্র ছিলেন। অনেক গল্প শুনেছি উনার কাছে এই কলেজের। মুক্তিযুদ্ধের সময় কেমন করে টুকরি মাথায় দিয়ে সবজি নিয়ে হকার সেজে বাড়ি থেকে কলেজে আসতেন, আবার যেতেন… কেন রাজশাহী ইউনিভার্সিটিতে চান্স পেয়েও, ভাইভা ভাল দিয়েও চান্স পাননি… এরকম অনেক রোমাঞ্চকর ঘটনা! আব্বার বিজ্ঞানের ছাত্র ছিলেন, আঁকার হাত অনেক ভাল ছিল। আমার ইন্টারের বায়োলজির প্র্যাক্টিক্যাল খাতাগুলোর হাড়ের ড্রয়িংগুলো উনিই এঁকে দিতেন। স্যার তো কি খুশী! আমার খাতা দেখে! আমি তো আসল তথ্য গোপন রেখেছি! ক্রেডিট সব আমার!

আসল গল্পে ফিরে যাই! ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে গিয়েও একবার কাদায় পা পড়ে গিয়েছিল। উনার ননদ ফুফুর সাথে বেড়াতে বেড়িয়েছিলাম। তখনো বর্ষা, আর ওটা ছিল গ্রামের রাস্তা! এই কাদায় পা পড়াটা আমার কাছে কখনোই উপভোগ্য বিষয় ছিল না! আজো না! আমাদের প্রতি বর্ষায় প্লাস্টিকের স্যান্ডেল কিনে রাখতে হতো, এই কাদা পানি ( আমার ভাই-এর ভাষায় হ্যাঁক – লোদ!) খুবই বিরক্তিকর!

কি আর করা! এরপর আসল সেই ভয়াবহ রাতের অভিজ্ঞতার সময়! সেদিন খুব আকাশ কালো করে মেঘ হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার বিকেল। আব্বা এদিন রাতের ট্রেনে নোয়াখালি যান, আবার শনিবারে ফিরে আসেন। তাই আমাকে নিতে এসেছেন। ফুফু, উনার শ্বাশুড়ি দাদু হাজার নিষেধ করলেই উনি উনার কর্তব্য কর্ম থেকে এক পা পেছোবেন না। উনাকে শনিবার এ ফিরতে হবে, তাই আমাকে আজকেই যেতে হবে। কি আর করা! আব্বার কথা অমান্য করবার মতো সাহস আমার তখনো হয়নি! বেরিয়ে পড়লাম উনার সাথে!

রিকশায় কিছুদূর আসবার পরেই আকাশ প্রায় ভেঙ্গেই পড়লো মাথার উপর! এতো জোরে দমকা হাওয়া! রিকশা উড়ে যায় যায়! কারণ দু’পাশে খোলা মাঠ, গাছপালা নেই! একেবারে পুরো বাতাসটা সরাসরি রিকশার গায়ে লাগছে। রিকশাওয়ালা প্যাডেল ছেড়ে হেঁটে হেঁটে রিকশা টেনে নিচ্ছিল! আমাদেরকে প্লাস্টিক কাভার দিলেও ওতে কোন কাজ হচ্ছিল না। আমি একেবারেই কাকভেজা হয়ে গেলাম!
লাকসাম স্টেশন পর্যন্ত আসতে আসতে দেরী হয়ে গেল, আমার বাতাসে বৃষ্টিতে অনেক শীত লাগছিল, কিন্তু আব্বাকে কিছু বলারই সাহস পাচ্ছিলাম না! এরপর ট্রেন মিস করে ভেঙ্গে ভেঙ্গে বিপুলাশার-সোনাইমুড়ি দিয়ে চৌমুহানী চৌরাস্তা পৌঁছালাম! তখন আমি রীতিমত কাঁপছি! আমার চোখ দিয়ে পানি দরদর করে গড়িয়ে পড়ছে, আব্বা আমার হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছিলেন, যেন আমি পড়ে না যাই, তখন অন্ধকার হয়ে গেছিল। আর অনেক বৃষ্টি হবার কারণে রাস্তায় গাড়ি-রিকশা খুবই কম ছিল!

এতো ভয় পাচ্ছিলাম আমি সেদিন, সেটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না! কিন্ত আব্বার সাথে রাগও করতে পারছিলাম না। এখন পথে কোথায় দাঁড়িয়ে থাকবো, সবখানেই অন্ধকার!

এরপর কোনভাবে ট্যাক্সি, রিকশা, লোকাল বাস এসব করে বাসায় এসে পৌঁছালাম! আম্মাকে জড়িয়ে ধরেই কান্না, ভিজে চুপচুপে, ভীষণ কাঁপছি! আমার এরক্ম পরিস্থিতিতে সাধারণত কাশি বেড়ে যায়! আম্মা তাড়াতাড়ি আমার কাপড় ছাড়িয়ে গরম কাপড়, কাঁথা দিয়ে চেপে দিলেন! একটু শান্তি পেলাম!

ভাববেন না আব্বা কেবলি নিষ্ঠুর! হ্যাঁ, আমার আব্বা অনেক রাগী মানুষ ছিলেন, কড়া ছিলেন্ শাসনের ব্যাপারে, ঘরে বাইরে ডিসিপ্লিন-এর ব্যাপারে, পারিবারিক নিয়ম, লেখাপড়া ইত্যাদি ব্যাপারে। আবার উনার একটা কোমল স্নেহবৎসল দিকও ছিল, যেটা আমরা সন্তানরাই দেখতে পেতাম, আমার চাচা ফুফুরা বা অফিসের কলিগরা সেই দিকটা দেখতে পেতেন না। তাই আমাদের পক্ষপাতিত্ব আব্বার দিকেই ছিল, আম্মার চেয়েও!

সেই ৯১-এর ঘূর্ণিঝড়ের কথা মনে আছে? সেই রাতের আগের দিন মাত্রই আমরা নতুন বাড়িতে উঠেছি! তখনো বাড়ির টিনশেডটা ভাল করে লাগালো হয়নি! রাতে তো প্রচন্ড ঘূর্ণি বাতাস, সেই সাথে ভীষণ বৃষ্টি শুরু হলো! আমি তো বেঘোরে ঘুম! ক্লাস এইটে পড়ি। ঘূর্ণিঝড়ের বিপদ কি, সেটা তখনো বুঝি না। বাতাসে টিনের চাল উড়ে গেল! শহর বলে জলোচ্ছাসের ভয় তেমন নেই, এতেই রক্ষা! ছাউনি দিয়ে আমার বিছানার উপর বৃষ্টির পানি পড়তে লাগলো। তোষক, বালিশ, কাঁথা অর্ধেকটার মতো ভিজেই গেল! আম্মা আমাকে ধাক্কা দিয়ে জাগালেন, তখন রাত প্রায় দুইটা! ধড়ফড় করে উঠে বসলাম। বাতাসের এমন শো শো শব্দ! ভীষণ ভয়ানক! যারা ঘূর্ণিঝড়ের শব্দ শোনেননি, তাদের বোঝানো কঠিন! ভীষণ গুরুগম্ভীর একটা শব্দ, যেন পুরো দুনিয়াটাই মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ছে! আমরা দোয়া দুরুদ পড়ছি।

আমি জিজ্ঞ্যেস করলাম, আব্বা কই? উনি নাকি চালের উপরে! বলে কি! এই বাতাসে, এই বৃষ্টিতে!
ওখানে কি করেন? চালগুলো উলটে গেছে, ঘর বৃষ্টির পানিতে ভিজে যাচ্ছে, উনি চাল ঠিক করে দিয়ে ইট দিয়ে চাপা দিতে গেছেন টর্চ হাতে! কি ভীষণ সাহস!
প্রায়ই বৃষ্টির রাতে আমার গায়ের থেকে কাঁথা সরে যায়, আমি কাশতে থাকি ঠান্ডায়, কিন্তু জেগে উঠি না, টের পাই না! আব্বা উঠে এসে গায়ে কাঁথা টেনে দিতেন। কতদিন মশারী ছাড়াই ঘুমিয়ে পড়তাম! মশার কামড় খাচ্ছি, কোন মালুম হচ্ছে না! আব্বা এসে মশারী টাঙিয়ে দিতেন। সকালে উঠলে কথা শোনাতেন, বোঝাতেন, বকা দিতেন, সতর্ক করতেন! এ কান দিয়ে ঢুকিয়ে ঐ কান দিয়ে বার করে দিতাম! কে মনে রাখে! আব্বা তো আছেনই। বকা দিলেও সেই রাত হলে একই কাজই করবেন! মেয়ে তো উনার একটাই আছে, নাকি! আর কি কাজ উনার!

গোসল করে জামা-কাপড় নিজ হাতে ধুই, এটাই তো অনেক কাজ করি! স্কুল ড্রেস-এ নীল দিতাম, শুকোলে ইস্ত্রি করতাম, নিজের পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখতাম। মাঝে মাঝে ঘর ঝাড়ু দেই! আর কত!

এই বর্ষায় প্রচুর কচু গাছ জন্মাতো, আমাদের বাসার পিছনে আম্মা লাগিয়েছেন কিছু। চিকন লতি খাবার জন্য। মাঝে মাঝে আমি পরিষ্কার করতাম আগাছা! সেই জোঁক! কচু গাছে জোঁক থাকে, আমি সাবধানে দূর থেকে দা দিয়ে আগাছা, বাড়তি গাছ, পাতা, ডাল কেটে দিয়েছি। ভেবেছি রক্ষে! ঘরে এসে ভাল করে জামা কাপড় চেক করতে গিয়ে দেখি আমার পাজামা বেয়ে জোঁক বাবাজি ঠিকই উপরের দিকে উঠে এসেছে। চেক না করলে নিশ্চয়ই পেটে বা পিঠে কামড় দিত! উফ বাবা! কি ভয়ানক! গা শিউরে উঠে এই জোঁক দেখলে! কত যে দেখতে হয়েছে!

আর হলো শুয়ো পোকা! আমরা বলতাম জোড়া! কাঁটা কাঁটা গায়ে, পিল পিল হেঁটে চলতো বাসার চালের নিচের ছানি বেয়ে। পরে জানলাম বিচ্ছিরি এই পোকা বাসা বেঁধে কিছুদিন পর সুন্দ প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়! কি বীভৎস সুন্দর বিষয়! এই জোড়া গায়ে লাগলেই সেই জায়গাটা লাল হয়ে যেত, চুলকাতো, চুন না দিলে এই চুলকানি থামতো না! অন্ধকারে খুবই সম্ভাবনা ছিল এই জোড়া হাতের নিচে বা পায়ের নিচে পড়ার! এটা একটা বিব্রতকর, ভয়ার্্ গা ঘিন ঘিন করা অভিজ্ঞতা ছিল, সেই ছোট সময়ে!

চমৎকার ভাল লাগার বিষয় ছিল, আমাদের একটা কদম ফুলের গাছও ছিল। এই বর্ষায় এর চেয়ে অপরূপ দৃশ্য আর হতে পারে না! ঝরে পরা কদম ফুলের পাপড়ি ছাড়িয়ে ভিতরের সবুজ গোলাটা দিয়ে চাকা বানিয়ে কাঁঠাল পাতা দিয়ে ভ্যান গাড়ি বানিয়ে চালানো তো সেই ছোটবেলা থেকেই আমাদের শিল্পচর্চা! বা সৃজনশীলতার বিষয়! বা সুপারী গাছের পাতায় কাউকে বসিয়ে টেনে টেনে চলা! তবে এতোটা রোমান্টিক ছিলাম না, বা সেই সুযোগও ছিল না, কারণ চুল ছোট ছোট ছিল। তাই খোঁপায় কদম ফুল গুঁজে ছবি তোলার অভিজ্ঞতা নেই! বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় সিজনাল ফুল সবই পাওয়া যায়, কদম ফুলও পাওয়া যায়! একটা নস্টালজিক অনুভূতি থেকে মাঝে মাঝে কিনি! দেখি, সৌন্দর্য্য উপভোগ করি! কিন্তু এই ফুলটার ঘ্রাণ ঠিক বেলীর মতো নয়, কেবলি দৃষ্টি শীতল করা অনুভূতি!

বাদল দিনেরও প্রথম কদম ফুল…তৃষিত নয়নে…

ক্রমশ…

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:৫৩

রানার ব্লগ বলেছেন: আমার জন্ম গ্রামের আতুর ঘরে হলেও বেড়ে ওঠা শহরের চাকচিক্কোময় জগতে। আপনার মতো বর্ষার অভিজ্ঞতা আমার হয় নাই কিন্তু বর্ষা আমাকে বড্ড প্রভাবিত করে। যখন ছোট ছিলাম মায়ের রক্ত চক্ষু কে আড়াল করে ঠিকি মাঠে ছুটে যেতাম কাদার মধ্যে লাফানর জন্য ( এর জন্য অবশ্য আমার মাতাস্রী কে লাঠি হাতে তুমুল বর্ষায় আমার পেছন পেছন প্রায় অলেম্পিকের দৌড় দৌড়াতে হতো) ছুটে যেতাম পাশের দিঘিতে, বর্ষায় পানির খলবলালির মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে দিতে। আহা!! কি দিন ছিল :) আর এখন কি দিন :(

০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:১৫

নাজনীন১ বলেছেন: আরো অনেক কিছু লেখার আছে, এই বর্ষার অনুভূতি নিয়ে। টিনের চালের উপর ঝুম ঝুম বৃষ্টির শব্দ! এটা নিয়ে তো কিছুই লিখিনি!

ঝড়ো বাতাসে জীর্ণ বাড়ি যখন পড়ে যায় যায় দশা! তখন সেই ঘরের অধিবাসীদের মনের আশংকা, ভয়ার্ত অনুভূতি!

কৈ মাছ ধরা, কৈ মাছ এপাড় থেকে ঐ পাড়ে রাস্তা পার হয়ে যাওয়া… আরো কত কি! আরো একটা দুইটা পর্ব লেখা যাবে, নিজস্ব প্রত্যক্ষ অনুভূতি নিয়ে! পানির দেশের লোক আমি!

নোয়া খাল –এর অধিবাসী!

মেঘনার পাড়ের মেয়ে!

ডাকাতিয়া নদী আমার বাড়ির খুব কাছ দিয়ে বয়!

২| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৩:১০

আফলাতুন হায়দার চৌধুরী বলেছেন: উফ্‌ কি সুন্দর! কি সুন্দর লেখনী!
অনেকদিন পর বুক ভরে নিশ্বাস নিলাম। কতদিন পর ব্লগে কিছু পড়ে ভালোলাগায় ছেয়ে গেলো মন। নিজের ছেলেবেলার প্রতিচ্ছ্ববি দেখলাম।
অসংখ্য ধন্যবাদ।


পূনশ্চঃ- আমার উচিত ছিলো আপনার সাথে ঝগড়া শুরু করে দেওয়া। দেশের এই অবস্থা, অতচ আপনি এই, আপনি সেই, . . .
কিন্তু না, ওই লেভেলের পাকনামী করার মত আঁতেল আমি নই। দুঃখিত।

- - - তবে অপেক্ষায় আছি। আসবে কিছু একটা :D :D :D :D :D

০২ রা আগস্ট, ২০২৪ বিকাল ৪:১৬

নাজনীন১ বলেছেন: তো, চলুক অপেক্ষা!

৩| ০২ রা আগস্ট, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৪

শায়মা বলেছেন: হা হা আপুনি। কচুর পাতার পরে স্ফটিক স্বচ্ছ জল দুলদুল করে দুলতো! আমি তো অবাক!
কদমফুলের পাপড়ি ছাড়াতেই হবে তারপর আমি মাঝখানে গোল করে চুল ওয়ালা সিংহ বানাতাম! তারপর সেটাকেও ছিড়ে নেড়া মাথা। অমন সৃষ্টিশীল প্রতিভা এখনকার শহুরে বাচ্চারা জানেও না শুনতেও চায় না।

১৭ ই আগস্ট, ২০২৪ দুপুর ১:১৮

নাজনীন১ বলেছেন: সেই কচু পাতা দিয়ে ছাতা বানিয়ে মাথায় দিয়ে চলা!
সেই বৃত্তাকার বৃষ্টির ফোঁটাটা আমার কাছে একটা বিস্ময়ই ছিল!

একটু ধাক্কা লাগলেই গড়িয়ে পড়া, আবার পাতা সোজা করে ফেলা, পড়তে না দেয়া, এটা একটা খেলা ছিল আমার কাছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.