নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বাড়ির কাছে আরশিনগর সেথা পড়শি বসত করে, একঘর পড়শি বসত করে আমি একদিনও না দেখিলাম তারে।

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য

মানুষ পথিক বেশে ঘুরছে দেশে দেশে একটু ছায়াতলে থমকে দাঁড়ায়, স্মৃতিটুকু রেখে শুধু একদিন তো চলে যায়।

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য › বিস্তারিত পোস্টঃ

"মেঘনাদবধ কাব্য"

১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ৮:৫৪

সম্মুখ সমরে পড়ি, বীর-চূড়ামনি
বীরবাহু, চলি যবে গেলা যমপুরে
অকালে, কহ, হে দেবি অমৃতভাষিণি,
কোন বীরবরে বরি সেনাপতি- পদে,
পাঠাইলা রণে পুনঃ রক্ষঃকুলনিধি
রাঘবারি? কি কৌশলে, রাক্ষসভরসা
ইন্দ্রজিৎ মেঘনাদে- অজেয় জগতে-
উর্মিলাবিলাসী নাশি, ইন্দ্রে নিঃশঙ্কিলা?

মাইকেল মধুসূদন দত্তের "মেঘনাদবধ" কাব্য বাংলা সাহিত্যের প্রথম সার্থক মহাকাব্য । এই মহাকাব্য সর্বমোট নয়টি সর্গে লিখিত । "মেঘনাদবধ" কাব্য তৎকালীন সময়ে শুধু আলোচিতই হয় নাই, বেশ কয়েকটি কারণে ছিলো সমালোচিতও । বাল্মীকি রচিত রামায়ণের ভাবকে সম্পূর্ণরূপে অগ্রাহ্যপূর্বক রাবণপুত্র মেঘনাদকে বলিষ্ঠ চরিত্রের বর্ণনা, রামচন্দ্রকে গুরুত্বপরিমাপে হেয় করা- সমালোচনার কারণ ছিলো প্রাথমিক ভাবে । ধর্মান্তরিত, সদ্য খৃষ্টান মধুসূদনের মহাকাব্যিক উপহাস, এই শিরোনামে বাংলা গেজেট ধারাবাহিক কয়েকটি খবরও প্রকাশ করে । সেইসময়ের কবি সাহিত্যিকগণও ইহা হইতে ব্যতিক্রম ছিলেন না । এমনকি মাইকেল মধুসূদন দত্তের মৃত্যুর পরও তাহা চলমান ছিলো অনেককাল ।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এই মহাকাব্যের সমালোচনা করিয়া বেশ কয়েকটি লিখা দেন সংবাদপত্রে । রবীন্দ্রনাথ তাঁহার এক লিখায় লিখেন: সমাধানপূর্বক শোক সংবরণ করার মধ্যে রাবণের যে মহান ভাব প্রকাশিত হইতেছে, তাহা যদি ইংরাজি-পুথি-সর্বস্ব-পাঠকেরা দেশীয় কবি বাল্মীকি লিখিয়াছেন বলিয়া বুঝিতে না পারেন, এইজন্য ইংরাজি কবি মিলটন হইতে তাহার আংশিক সাদৃশ্য উদ্ধৃত করিয়া দিতেছি,
Thrice he essay'd and thrice, in spite of scorn,
Tears, such as angels weep, burst forth।
কতকগুলি পাঠকের আবার পাত্রাপাত্র জ্ঞান নাই, তাঁহারা জিজ্ঞাসা করিবেন রাবণের সভা মহান করিতেই হইবে তাহার অর্থ কী? না-হয় সুন্দরই হইল, ইঁহাদের কথার উত্তর দিতে আমাদের অবকাশ নাই এবং ইচ্ছাও নাই । এককথায় বলিয়া রাখি যে, কবি ব্রজাঙ্গনায় যথাসাধ্য কাকলি, বাঁশরি, স্বরলহরী, গোকুল, বিপিন প্রভৃতি ব্যবহার করিতে পারিতেন, কিন্তু মহাকাব্য রচনায়, বিশেষ রাবণের সভা-বর্ণনায় মিষ্টভাবের পরিবর্তে তাঁহার নিকট হইতে আমরা উচ্চ, প্রকাণ্ড, গম্ভীর ভাব প্রার্থনা করি ।
কিছু ভ্রান্তি রবীন্দ্রনাথ প্রকাশ করেন উপহাসের সুরে । বিশ্লেষণের এক ধাপে কবিগুরু নিয়ে আসেন ম্যাকব্যাথ । সেনাপতি সিউয়ার্ডের পুত্র যুদ্ধে হত হইলে রস্ আসিয়া তাঁহাকে নিধন সংবাদ দিলেন । সিউয়ার্ড জিজ্ঞাসা করিলেন, ‘সম্মুখভাগেই তো তিনি আহত হইয়াছিলেন'?
রস ।–হাঁ, সম্মুখেই আহত হইয়াছিলেন ।
সিউয়ার্ড ।–তবে আর কি! আমার যতগুলি কেশ আছে ততগুলি যদি পুত্র থাকিত, তবে তাহাদের জন্য ইহা অপেক্ষা উত্তম মৃত্যু প্রার্থনা করিতাম না ।
ম্যাল্কম ।–তাঁহার জন্য আরও অধিক শোক করা উচিত ।
সিউয়ার্ড ।–না, তাঁহার জন্য আর অধিক শোক উপযুক্ত নহে । শুনিতেছি তিনি বীরের মতো মরিয়াছেন, ভালোই, তিনি তাঁহার ঋণ পরিশোধ করিয়া রব তাঁহার ভালো করুন ।
আমরা দেখিতেছি, মাইকেলের হস্তে যদি লেখনী থাকিত, তবে এই স্থলে তিনি বলিতেন যে,
হা পুত্র, হা সিউয়ার্ড, বীরচূড়ামণি কী পাপে হারানু আমি তোমা হেন ধনে!
অ্যাডিসন তাঁহার নাটকে পুত্রশোকে কেটোকে তো ক্ষুদ্র মনুষ্যের ন্যায় রোদন করান নাই! স্পার্টার বীর-মাতারা পুত্রকে যুদ্ধে বিদায় দিবার সময় বলিতেন না যে,
এ কাল সমরে,
নাহি চাহে প্রাণ মন পাঠাইতে
তোমা বারংবার!
তাঁহারা বলিতেন, ‘হয় জয় নয় মৃত্যু তোমাকে আলিঙ্গন করুক!'
রবীন্দ্রনাথ সামান্য উপহাস করিয়া যুক্তি দেখাইলেও সেইসময় বা এখন পর্যন্ত তাঁহার বিশ্লেষণগুলোর বিরোধিতা করেন নাই । করিবার কথাও না "এ কাল সমরে, নাহি চাহে প্রাণ মন পাঠাইতে তোমা বারংবার!" এই লাইনে তিনি দেখাইয়াও দিয়াছেন যে, যুদ্ধের মহাকাব্যগুলোর পংক্তি সাধারণত কীভাবে হইয়া থাকে । ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিককার কথা এইগুলো ।
শেষ বয়সে কবিগুরু নিজেই তাঁহার লেখায় অনুশোচনা করিয়াছিলেন তাঁহার সমালোচনামূলক লিখার জন্য । সংস্কৃত কবি কালিদাসের পর মহাকাব্য চর্চা বিশেষ করেন নাই । সেইদিক হইতে মাইকেল মধুসূদন দত্ত বেশ কিছু নতুন ধারা অানিয়াছিলেন বাংলা সাহিত্যে ।
মাইকেল মধুসূদন দত্ত এক ভিন্নতার নাম ছিলেন সাহিত্যে, যারা বিকশিত হোন ধীরে কিন্তু স্থায়িত্বতার সাথে । (রবীন্দ্র
ভাষ্য)

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ৯:২৮

শায়মা বলেছেন: মাইকেল মধুসূদন দত্ত এক ভিন্নতার নাম ছিলেন সাহিত্যে, যারা বিকশিত হোন ধীরে কিন্তু স্থায়িত্বতার সাথে।


মাইকেল মধুসূদন দত্ত!! উনাকে আমার এই পৃথিবীর সর্বকালের সর্বযুগের সবচাইতে বড় জিনিয়াস মনে হয়!

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:১৯

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: যথার্থই ।

২| ১২ ই মে, ২০১৬ সকাল ১০:২৮

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: উনি আসলেই একটা জিনিয়াস ছিলেন! প্রাথমিক অবস্থা থেকেই যদি বাংলা সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত থাকতেন, বাংলা সাহিত্য অনেককিছু পেতে পারতো তাঁর কাছ থেকে ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:২০

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: একদম!

৩| ১৩ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৪:১২

বিদ্রোহী চাষী বলেছেন: ভালো লেগেছে

০৩ রা জুলাই, ২০১৭ সকাল ৮:২০

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: শুভেচ্ছা ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.