নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষ পথিক বেশে ঘুরছে দেশে দেশে একটু ছায়াতলে থমকে দাঁড়ায়, স্মৃতিটুকু রেখে শুধু একদিন তো চলে যায়।
স্বাধীন দেশের নতুন বছর। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পাকিস্তানীদের বন্দীদশা থেকে দেশে ফেরার সপ্তাহ খানেক আগের কথা। ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই। যশোরে ঢোকার মুখের সড়কে সশস্ত্র একদল মুক্তিযোদ্ধার ঘেরাওয়ে পড়লো দুটো গাড়ি। একটি টয়োটা করোনা ও একটি মাইক্রোবাস- আরোহীরা যা তা গোত্রের কেউ নন। করোনায় ছিলেন মেজর জলিল, মুক্তিযুদ্ধের সময় ৯ নম্বর সেক্টরের অধিনায়ক। তার সঙ্গী ১৬ জনের সবাই নামকরা মুক্তিযোদ্ধা ও সেক্টরের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। ১৭ ডিসেম্বর খুলনায় পাকিস্তানী সেনাবাহিনী আত্মসমর্পন করেছিলো এদের হাতেই। মিত্রবাহিনীর সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত অধিনায়ক জেনারেল দলবীর সিংয়ের সঙ্গে বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর অধিনায়ক হিসেবে ছিলেন মেজর জলিল।
ফিরে আসি সেই গ্রেপ্তারে। অনেকদিক থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এই গ্রেপ্তার, এবং এর প্রেক্ষিত নিয়ে রয়েছে অসংখ্য বিভ্রান্তি। স্বাধীনতা বিরোধীরা মুক্তিযুদ্ধের যে কটি বিষয় নিয়ে সুকৌশলে তাদের অপপ্রচার চালিয়েছে, তার মধ্যে এটি অন্যতম এবং তালিকার ওপরের দিকেই। সবচেয়ে বড় হচ্ছে, খোদ মেজর জলিলের অনেক আত্মকথাই ঘটনাটির রাজনৈতিক রং রাঙানিদুষ্ট। এর মধ্যে অন্যতম ভারত বিরোধীতা এবং এখন পর্যন্ত আমার ধারণা সবাই জানে এবং বিশ্বাস করে যে ভারতীয় বাহিনীর লুটপাটের প্রতিবাদ করার কারণে গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মেজর জলিল। স্বাধীন বাংলাদেশের তাঁর ওপর সব নিগ্রহের পেছনে এটিই একমাত্র কারণ। সঙ্গতকারণেই এটি আমার অন্যতম একটি আগ্রহের বিষয় হয়ে ছিলো অনেকদিন ধরেই। এ ব্যাপারে অথেনটিক একটি সোর্স আমি খুঁজছিলাম, পেয়েওছি । তারপরও কিছু পয়েন্টে নিশ্চিত হওয়ার একটা তাগিদ ছিলো। সেই সন্তুষ্টির পরই আমার মনে হয়েছে এই বিতর্কে জল ঢালার এটাই উপযুক্ত সময়। শুরু গ্রেফতারের তারিখ নিয়ে। যদিও খোদ জলিলের রচনাবলী তুলে দিয়েছেন একজন ব্লগার আর তাতে উল্লিখিত হয়েছে ৩১ ডিসেম্বরের কথা। অন্যদিকে এই পোস্টের তথ্যসূত্র অনুসারে বঙ্গবন্ধুর দেশে ফেরার এক সপ্তাহ আগে হয় ৩ জানুয়ারি। ওই একই পোস্টে জলিল তার সঙ্গী ১৫ জন মুক্তিযোদ্ধার কথা উল্লেখ করেছেন, সংখ্যাটা জানা গেছে ১৬।
এ ব্যাপারে আমরা স্বাক্ষ্য মানতে যাচ্ছি ওবায়দুর রহমান মোস্তফাকে। পেশায় সুপ্রীমকোর্টের এডভোকেট এই ভদ্রলোক মুক্তিযুদ্ধের ওপর একটি বই লিখেছেন- মুক্তিযুদ্ধে নবম সেক্টর ও আমার যুদ্ধকথা। তার সবচেয়ে বড় পরিচয় তিনি ৯ নম্বর সেক্টরের সদর দপ্তরের স্টাফ অফিসার ছিলেন। পদের কারণেই মেজর জলিলের সার্বক্ষণিক সঙ্গী হতে হয়েছে তাকে। এবং সেদিনের সেই গ্রেপ্তারের শিকার মুক্তিযোদ্ধাদের একজন ছিলেন তিনি। টয়োটা করোনায় মেজর জলিলের ডানপাশেই বসা ছিলেন। ভদ্রলোক তার স্মৃতিকথাটিকে একটি ডায়িং ডিক্লেয়ারেশন বলে উল্লেখ করেছেন বইয়ের ভূমিকাতেই। জীবনের শেষ পর্যায়ে পৌছে যাওয়া একজন মুক্তিযোদ্ধার মৃত্যুপূর্ব স্বীকারোক্তি। এবং ঘটনাকাল ও পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে তার বক্তব্যকে গ্রহণ না করার কোনো কারণই ব্যক্তিগতভাবে আমি পাইনি।
সেই বিচারে পুরো অধ্যায়টি মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী অত্যন্ত কলঙ্কজনক একটি ঘটনা। আর শুধু ভারতীয় বাহিনীকে এতে জুড়ে দেওয়া আসলে নেপথ্যের সত্যটুকু থেকে নজর সরানোর জঘন্য একটি প্রয়াস মাত্র। আবার জলিলের স্মৃতিকথায় দেখা গেছে তাদেরকেই দুষতে, এই অবস্থানের পেছনে তার পরবর্তীকালের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গীর প্রভাব কতখানি সেটাও বিবেচ্য। প্রসঙ্গতই বলতে হয় দূরত্বগত নৈকট্যে আর সব সেক্টর কমান্ডারের চেয়ে জলিলই ছিলেন ভারতীয় বাহিনীর সবচেয়ে কাছাকাছি। মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময়ই তিনি বাড়তি সুবিধাদি পেয়েছেন। এমনকি মে মাসের শুরুতে সুন্দরবনের বুড়ি গোয়ালিনী রেঞ্জে পাক বাহিনীর এমবুশে দু লঞ্চ বোঝাই অস্ত্র খোয়ানোর পর কলকাতায় ভারতীয় সেনা সদর ফোর্ট উইলিয়ামে মেজর জলিলকে সন্দেহ করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও সে দায় থেকে তিনি মুক্তি পান। এবং পরবর্তী সময়ে জেনারেল অরোরার আস্থাভাজনদের একজন ছিলেন খুলনা মুক্ত হওয়া পর্যন্ত।
তাহলে জলিল কার রোষের শিকার? দুঃখজনক উত্তরটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি খোদ কর্ণেল ওসমানীর বিরাগভাজন ছিলেন তিনি। ওসমানী জলিলের ওপর বিতৃষ্ণা প্রকাশে ঘুটি হিসেবে ব্যবহার করেছিলেন মেজর জয়নাল আবেদীন ও কর্ণেল মঞ্জুরকে (প্রেসিডেন্ট জিয়া হত্যার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে সেনাসদস্যদের হাতে নিহত)। জলিলের গ্রেপ্তারের ঘটনায় নেতৃত্ব দেন মঞ্জুর তার অধীনস্থদের দিয়ে এবং বন্দী করে নিয়ে যান যশোর সার্কিট হাউজে। আর ওসমানীর রোষের আরেকটি উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে নয় নম্বর সেক্টরের অগণিত দুঃসাহসী মুক্তিযোদ্ধার পদকবঞ্চিত থাকা, যেখানে মুক্তিযুদ্ধে একটিও গুলি না ছুড়ে কলকাতার সদর দপ্তরে ফাইলপত্র নাড়াচাড়ার দায়িত্বে থাকা মেজর নুরও (বঙ্গবন্ধু হত্যার আসামী) বীরত্বের খেতাব পেয়েছেন স্রেফ সেনাপতির আস্থাভাজন হওয়ার কারণে।
এই দ্বন্দ্বের শুরু কিন্তু অনেক আগে থেকেই। তেলিয়াপাড়ায় এক কনফারেন্সে মেজর জিয়া, মেজর খালেদ মোশাররফসহ সেক্টর কমান্ডাররা ওসমানীর যুদ্ধ পরিচালনায় যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, সুবাদে তাৎক্ষণিক পদত্যাগ করেছিলেন ক্ষুব্ধ ওসমানী। পরে প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ তাকে বুঝিয়েসুজিয়ে রাজী করান সিদ্ধান্ত পাল্টাতে। ওসমানী ব্রিটিশ সেনাবাহিনীতে ছিলেন, তার যুদ্ধজ্ঞান কনভেনশনাল। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের ওই শুরুতে হালকা অস্ত্র, অল্প প্রশিক্ষিত জনবল নিয়ে পাকিস্তানী সেনাদের মতো একটি সুপ্রশিক্ষিত ও ভারী অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর বিরুদ্ধে সামনা সামনি লড়াইয়ে নামা ছিলো আত্মহত্যারই নামান্তর। গোটা যুদ্ধে মুক্তিবাহিনীর সাফল্যের ভিত্তি ছিলো হিট অ্যান্ড রান। গেরিলা যুদ্ধের সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি এটি। নয় নম্বর সেক্টর প্রশিক্ষিত মুক্তিযোদ্ধাদের সীমান্ত পাড়ির সবচেয়ে নিরাপদ জায়গাগুলোর একটি হিসেবে দাড়িয়ে গেছে ততদিনে। অল্প দিনের ট্রেনিং নিয়ে গেরিলাদের দেশের ভেতরে অপারেশনের এই পদ্ধতি সামরিক বাহিনীতে ইনডাকশন বলে পরিচিত ।
ওসমানী জলিলের গেরিলা ওয়ারফেয়ার পদ্ধতির ওপর নাখোশ ছিলেন, তবে পদ্ধতিটির সাফল্য, ভারতীয় সেনাসদরের আনুকুল্য ও সংবাদ মাধ্যমে প্রচারণার কারণেই সরাসরি কোনো পদক্ষেপ নিতে পারছিলেন না। তারপরও একদিন কলকাতার ৮ নং থিয়েটার রোডে মুক্তিযুদ্ধকালে প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের সদর দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয় জলিলকে। তার সঙ্গী ছিলেন মোস্তফা এবং সেক্টর এডজুটেন্ট ফ্লাইট সার্জেন্ট ফজলুল হক। ওসমানী জলিলকে সরাসরি নির্দেশ দেন ইনডাকশন বাদ দিয়ে রেগুলার রেজিমেন্টেড পদ্ধতিতে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে সম্মুখ যুদ্ধের। জলিল তার সিদ্ধান্তে অটল রইলেন এবং ভারতীয় সেনা সদরের মাধ্যমে এ ব্যাপারে ওসমানীর প্রভাবমুক্ত থাকলেন। জলিলের যুদ্ধপদ্ধতি নিয়ে ওসমানী প্রকাশ্যে ক্ষোভ দেখান পারুলিয়া ব্রিজ ধ্বংসের পর। মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পারুলিয়া ব্রিজ পরিদর্শনে এসে এটি ধ্বংস করা উচিত হয়নি বলে মত দেন তিনি, আর এজন্য সবার সামনেই দূর্ব্যবহার করেন মেজর জলিল, সাব-সেক্টর কমান্ডার ক্যাপ্টেন হুদা এবং অপারেশনটির দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন বেগের সঙ্গে। জলিলের কোনো যুক্তিই মানতে অস্বীকার করলেন ওসমানী।
জলিল এরপর টের পেতে শুরু করলেন নোংরা এক ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন। মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ ওসমানী নির্দেশ দিলেন পাকিস্তান থেকে পালিয়ে আসা মেজর জয়নুল আবেদীনকে নয় নম্বর সেক্টরে সহঅধিনায়ক করা হয়েছে, তার সঙ্গে যেন জলিল দায়িত্ব ভাগাভাগি করে নেন। ডিসেম্বরের শুরুতে এলো নতুন ফরমান। মঞ্জুর একই সঙ্গে ৮ ও ৯ নম্বর সেক্টর সুপারভাইজ করবেন যশোরের হেডকোয়ার্টার থেকে। কিন্তু যুদ্ধ তখন শেষ পর্যায়ে, ভারতীয় বাহিনী প্রকাশ্যেই লড়াইয়ে নেমেছে। খুলনা মুক্ত করার অভিযানে জয়নুল আবেদীনকে গল্লামারিমুখী মুক্তিযোদ্ধাদের কমান্ডার করে পাঠানো হয়। অন্যদিকে মঞ্জুর তার একমাত্র সুপারভাইজেশনটি চালান সদ্যমুক্ত কালীগঞ্জের উকসা বিওপি ঘুরে দেখে। নয় নম্বর সেক্টরে তার দ্বিতীয়বার আগমনটিই জলিলের গ্রেপ্তারে মূখ্য ভূমিকা রাখে।
খুলনা পতনের পর সার্কিট হাউজে অস্থায়ী সদর দপ্তর করে নয় নম্বর সেক্টর, আর এর অধীনস্থ মুক্তিযোদ্ধারা থাকার জন্য বেছে নেন খুলনা শহীদ হাদিস পার্কের উত্তরে খান এ সবুরের প্রতিষ্ঠিত ইউনাইটেড ক্লাবে। ১৯ ডিসেম্বর মঞ্জুর খুলনা আসেন এবং সার্কিট হাউজে ঢুকে জলিলকে খবর পাঠান। সেই সময় কিছু বিদেশী সংবাদ মাধ্যমে সাক্ষাতকার দিচ্ছিলেন তিনি। তাকে অপেক্ষায় রাখার এই ধরণটা পছন্দ হয়নি মঞ্জুরের, বরং ব্যক্তিগত অপমান হিসেবে নেন তিনি। যাওয়ার আগে বলে যান- ওকে এজন্য উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে। কদিন পর জলিল বরিশাল গেলেন, সেখানে হেমায়েতউদ্দিন মাঠে তাকে গণসংবর্ধনা দেয়া হলো। যাওয়ার আগে ক্যাপ্টেন নুরুল হুদাকে ভারপ্রাপ্ত সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে যান। ফিরে এসে শুনলেন জয়নুল আবেদীন জলিলের পরিবর্তে সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দাবি করে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছেন এবং মঞ্জুর এসে এই দায়িত্বের পক্ষে তার সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেছেন।
নতুন বছর চলে এসেছে ততদিনে। ফেরার পর সেরাতে ইউনাইটেড ক্লাবে জরুরী এক সভায় মিলিত হলেন জলিল ও তার যুদ্ধকালীন বিশ্বস্ত সাথীরা। সিদ্ধান্ত হলো বঙ্গবন্ধু দেশে না ফেরা পর্যন্ত মঞ্জুরের সঙ্গে কোনো ধরণের দ্বন্দ্বে যাবেন না তিনি। বৈঠকেই ফোন এলো মঞ্জুরের। জেনারেল ওসমানী নাকি জরুরী তলব দিয়েছেন সব সেক্টর কমান্ডারকে ঢাকায়। এজন্য পরদিন জলিল যেন যশোর থেকে নির্দিষ্ট কার্গো বিমানে মঞ্জুরের সঙ্গী হন, তাকে সকালেই রিপোর্ট করতে বলা হলো। জলিল বাকিদের সঙ্গে আলোচনা করে জানালেন যে তার সঙ্গে আরো লোকবল থাকায় সড়কপথেই তিনি ঢাকা যাবেন। পরদিন সকাল আটটায় যশোর রোড ধরে ঢাকা রওনা দিলেন জলিল। তিনি ও তার সঙ্গী সবাই সশস্ত্র। মাইক্রোবাসে জলিলকে এসকর্টের দায়িত্ব নেন ক্যাপ্টেন সুলতানউদ্দিনের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি দল। তার সঙ্গীদের অন্যতম ছিলেন জাতীয় পার্টির সাবেক মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।
বেনাপোলমুখী ও যশোরের প্রবেশমুখের সংযোগকারী রাস্তাটিতে জলিলের করোনা থামানো হলো। দুপাশের ঝোপে ১৫ থেকে ২০টি লাইটমেশিনগান ধারী মুক্তিযোদ্ধা- সবাই ৮ নম্বর সেক্টরের। একটু পিছিয়ে পড়া মাইক্রোবাসটি আসার পর গোলাগুলির একটি সম্ভাবনা তৈরী হলেও জলিল ‘সুলতান ডোন্ট ফায়ার’ বলে থামিয়ে দেন। এরপর ১৭জন বন্দীকে নিয়ে যাওয়া হয় যশোর সার্কিট হাউজে, একটি কক্ষে গাদাগাদি করে রাখা হয় সবাইকে। । খানিকপর মঞ্জুর আসেন। দরজা খোলার পর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয় জলিল ও তার মাঝে। কেন, কার হুকুমে এমনটি করার সাহস হলো তোমার- জলিলের প্রশ্নের জবাবে মঞ্জুর ইংরেজিতেই জানান-জেনারেল ওসমানীর নির্দেশে। এরপর জলিলকে বাকিদের কাছ থেকে আলাদা করে ফেলা হয়।
চমকপ্রদ কিছু তথ্যের সন্ধান মিলে এরপর। মোস্তফা জানাচ্ছেন বরিশালের বাসিন্দা ও ৮ নম্বর সেক্টরের সহঅধিনায়ক মেজর কেএন হুদা (‘৭৫এর ৭ নভেম্বর নিহত) পূর্ব পরিচয়ের সূত্রে তাদের আশ্বস্ত করেন জলিল ছাড়া বাকিদের আটকাদেশ সাময়িক। আর জলিলের বিরুদ্ধে সেনাবিধি অনুসারে হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য, বিদ্রোহ এবং খুলনা পতনের পর লুটতরাজ পরিচালনার পাশাপাশি ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে তার বিভিন্ন বিরোধীতামূলক বক্তব্য ও পদক্ষেপের অপরাধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা অর্থাৎ কোর্ট মার্শালে বিচার করা হবে। গোটা কাহিনীতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে জলিলের অবস্থান এই একবারই পাওয়া গেছে। তার গ্রেপ্তার থেকে শুরু করে প্রহরার কোনোটাতেই আর কোনো উল্লেখ নেই তাদের।
তবে এই ব্যাপারে ভিন্ন সূত্রে একটি উল্লেখ পাওয়া যায় যে আত্মসমর্পনের পর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অস্ত্রশস্ত্রের ব্যাপারে জলিল অবস্থান নেন এই বলে যে জেনারেল ওসমানীর নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত এসব অস্ত্র যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। ঘটনায় ফেরা যাক। এরপর একজন ম্যাজিস্ট্রেট আসেন বন্দীদের সঙ্গে পাওয়া জিনিসপত্রের সিজার লিস্ট করতে। সবার ব্যাগেই কাপড় ও গুলি ছাড়া কিছু পাওয়া যায়নি। এরপর আসে জলিলের ব্যাগ খোলার পালা। তার অনুপস্থিতিতে এই ব্যাগ খোলার ব্যাপারে তীব্র প্রতিবাদের পরও সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে তালা ভাঙা হয়। ম্যাজিস্ট্রেট ব্যাগের ওজন সন্দেহজনক রায় দেন তার আগে
খোলার পর এতে পাওয়া যায় বিখ্যাত সমরনায়কদের লেখা গেরিলা যুদ্ধের মোটা মোটা সব বই, যা কলকাতা থেকে ফেরার পথে বিভিন্ন বুকস্টল থেকে কিনে আনতেন জলিল। হতভম্ব ম্যাজিস্ট্রেট এরপর স্টাফ অফিসার মোস্তফাকে জানান, তাকে বলা হয়েছিলো মেজর জলিল ও তাদের সঙ্গীরা খুলনা থেকে লুট করা ব্যাগ ভর্তি সোনাদানা, অলঙ্কার ও টাকা পয়সা নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথ তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে!
এর মধ্যে খবর আসে জয়নুল আবেদীন সদর দপ্তরের দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন। আর নয় নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা যশোর আক্রমণ করে তাদের কমান্ডারকে উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সদ্য স্বাধীন দেশে দুটো সেক্টরের মধ্যে সম্ভাব্য রক্তক্ষয়ী যুদ্ধটি চিরকুটের মাধ্যমে ঠেকানো হয়। এর মধ্যে দেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু। তার আগমনী সরাসরি সম্প্রচারিত হয় রেডিওতে। ওসমানীর নেতৃত্বাধীন সব সেক্টর কমান্ডারের নাম উল্লেখিত হয়, জলিলের জায়গায় নেওয়া হয় জয়নুল আবেদীনের নাম। ১৭ দিনের বন্দীদশা শেষে অবশেষে জলিলের সঙ্গীদের মুক্তি দেওয়া হয়। মঞ্জুরের সাক্ষর করা এক চিঠিতে সবাইকে দুই সপ্তাহের ছুটি দিয়ে অফিসারদের আবার চাকুরিতে যোগ দিতে বলা হয়। মেজর জলিলকে ইতিমধ্যে স্থানান্তর করা হয় ঢাকা রেসকোর্সের আর্মি ক্যাম্পে। সেখানেই নির্ধারিত হয় উর্ধ্বতনদের সঙ্গে অহমের লড়াইয়ে বলি সাহসী এই সেক্টর কমান্ডারের নিয়তি। সে এক অন্য গল্প।
সংগৃহীত
২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৩
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:০২
শাহ আজিজ বলেছেন: অনেক না জানা কাহিনী জানলাম । মুলত ভারতের মাটিতেই ডিফেক্টটেড পাক সেনারা অন্তঃদন্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন । মেজর জলিল ভারতীয় বাহিনির হাতে গ্রেফতার শুনেই আমার চমকে ওঠার মত অবস্থা। ভদ্র লোককে ধন্যবাদ একটা ডকুমেন্টারি রেখে গেলেন ।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৪
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ।
৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:০৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
ওকে
২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৫
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: ধন্যবাদ ।
৪| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:১৪
মাহিরাহি বলেছেন: He was appointed commander of the Sector 9. He was, however, removed from the position in the month of November. After Bangladesh Liberation War he was arrested by the Indian army for what they alleged was his "misconduct" towards them. He claimed he was arrested because he tried to prevent Indian soldiers from Looting. This was a visible instance of the tension that existed between the Indian Army in Bangladesh and the Mukti Bahini. [2]
https://en.wikipedia.org/wiki/M._A._Jalil
উইকির তথ্য সংগ্রহে আরো বেশি গবেষণার দরকার, যেমনটি আপনি করেছেন।
২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৬
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: অশেষ ধন্যবাদ ।
৫| ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:০০
আমিই মিসির আলী বলেছেন: ভালো লাগিলো
২৩ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৪৩
অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: শুভেচ্ছা জানবেন ।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:৫৭
আহমেদ জী এস বলেছেন: অনিকেত বৈরাগী তূর্য ,
সংগৃহীত হলেও তথ্যসূত্র উল্লেখ থাকলে ভালো হতো ।