নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একে একে সব স্বপ্ন মাটি দিয়ে এখন প্রহর গুনছি দেহটা কবে আমাকে মুক্তি দেবে।

মিজানুর রহমান এএমএস

মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।

মিজানুর রহমান এএমএস › বিস্তারিত পোস্টঃ

বৃষ্টি

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২১


কষ্টের পাহার বুকে নিয়ে রেল স্টেশনে দাড়িয়ে আছে রাজন। নিজেকে সান্ত্বনা দেয়ার মত ভাষা নেই তার। ট্রেন একটা এসে ভিড়ছে তো আরেকটা ছেড়ে যাচ্ছে নিজস্ব গন্তব্যে। কিন্তু রাজনের যে যাওয়ার কোন মন বাসনা নেই। কেউ আসবে এই অপেক্ষায় । স্টেশন যেমন একই ভাবে অপেক্ষা করে, আবার যারা বিদায় নিচ্ছে তাদের হাসিমুখে বিদায় জানায় সেও একদিন একজন মানুষকে এক রেল স্টেশন থেকে বিদায় দিয়েছিল। সে বিদায় ছিল অশ্রুসিক্ত, বুকফাটা কান্নায় । হাজার মানুষের আনাগোনা আছে কিন্তু আসল মানুষটি আর আসে না। ভাল লাগার পরিবর্তন হয় তার, শান্ত থেকে অশান্ত হয়ে ওঠে সে। যে রাজন কাঙ্ক্ষিত মানুষটির উপস্থিত হতে একমিনিট দেরি হলে রেগে কথা বলা বন্ধ করে দিত,আজ সেই রাজন ঘণ্টার পর ঘণ্টা, দিনের পরে দিন অপেক্ষা করে সেই মানুষটির অপেক্ষায়। নদী ছিল যার একমাত্র ভালোলাগার যায়গা, সেই আজ নদী দেখে না। নদীর তীরে আনমনে হাটতে হাটতে উড়ে না কল্পনার আকাশে । কল্পনা শক্তি তার স্থির হয়ে রয়েছে শুধু মাত্র একটি মানুষের অপেক্ষায়। আসবে বলে কথা দিয়ে চলে গেছে সেই ২০১১ সালের মার্চের নয় তারিখ সোমবারে, বলে ছিল ঠিক এই স্টেশনে কোন এক সোম বারে দেখা হবে দুজনের।


রাজন প্রতি বিকালে ময়মনসিংহ ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে একা একা হাঁটত। মে মাসের এক বিকালে হঠাৎ বৃষ্টি এসে ভিজিয়ে দেয় রাজনের সব কিছু, তখন সে খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন নিয়ে আকাশে উড়ে বেড়াচ্ছিল। বৃষ্টিতে কোন বাধাই পড়েনি তার উড়ার। বৃষ্টি শেষ হবার কোন সম্ভাবনা নেই । জুম বৃষ্টিতে নদের পানিতে মন মাতানো শব্দ হচ্ছিল। রাজন স্বপ্ন থেকে ফিরে শব্দে মনোযোগ দিয়ে হাঁটছিল, অনেক পরিবার এসেছিল একটু সময় পরিবারের সবাইকে নিয়ে কাটাতে। বৃষ্টি তাদের বিনোদনের বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে কিন্তু রাজনের বিনোদনে দিয়েছে ফুল ভলিউম। সন্ধ্যা হতে আরও আধাঘণ্টা কিন্তু অন্ধকার চারদিক থেকে ঘিরে ধরছে সবাইকে। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ আপন গাড়িতে চলে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ গাছের নিচে দাড়িয়ে কাক ভেজার মত বৃষ্টি বিলাস করছে। রাজপ্রাসাদের বেলকুনিতে দাড়িয়ে একটু পরশ মেখে যেমন বৃষ্টি বিলাস করে তার চেয়ে এদের বৃষ্টি বিলাস শতগুণ ভাল। রাজপ্রাসাদে ছুঁয়ে যায় না কিন্তু এদের কে কিছুটা হলেও বৃষ্টি ছুঁয়ে যাচ্ছে। রাজন রুমে ফেরার জন্য পা বাড়াল কিন্তু পা শরীরের ভারে উপরে উঠাতে পারছে না। মাথা ঝিম ঝিম করছে। অনেক কষ্টে রিকসা ডেকে উঠতেই পরে গেল।

যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখে ঘড়ির কাটা সকাল ঘরে।জানালা খোলা, সূর্যের আলোয় ঘর আলোকিত, মানে পরের দিন সকাল দশটা । আসে পাসে কেউ নেই তবে বেড একটাই, সিঙ্গেল, মেডিকেলের কেবিন হবে মে বি । পূর্ব- পাসে কাচের জানালা, রোদ এসে পড়েছে মুখের উপর। দরজায় পর্দা টানানো, মুখে অক্সিজেন এর মাস্ক পড়ানো আর ডান হাতে স্যালাইন চলছে। মাথার পাসে মনিটরে হার্ট-বিটের শব্দ হচ্ছে। খুব সুন্দর গোছানো। জ্ঞান ফেরার পর রাজন মাথা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। রিকসার ড্রাইভার ভর্তি করালে এত আধুনিক হসপিটাল হওয়ার কথা না। মনে অনেক প্রশ্ন জাগছে কিন্তু কোন কিনারা খুঁজে পাচ্ছে না। এমন সময় নার্স এসে বলল। ভাল লাগছে এখন ? রাজন মাথার ইশারায় স্বীকারোক্তি দিল। নার্স একমুহুর্তের জন্য উদাও হয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর এক ভদ্রলোক এসে পাসে চেয়ার টেনে বসল, নার্সও পাসে দাঁড়াল। রাজন মাস্ক খুলতে চাইলে নার্স খুলে দিল। ভদ্রলোক জিগ্যেস করার আগে পরিচয় দিল। আমি মেজর এমদাদ। আমার ওয়াইফ তোমাকে ভর্তি করিয়েছে। সে আমাকে পাঠিয়ে দেখার জন্য। একটু আগে দেখলাম জ্ঞান ফিরেনাই। নার্স এখন গিয়ে বলল তোমার জ্ঞান ফিরেছে। তুমি কিছু বলবে?
রাজন শুধু বলল: অসংখ্য ধন্যবাদ। এমদাদ সাহেব একটু হেসে উঠে নার্সকে কিছু একটা বলে চলে গেল।
অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় জ্ঞান হারিয়েছিল । মেস থেকে কেউ জানে না। বৃষ্টির পানিতে মোবাইল ভিজে গেছে। নার্সের নিকট জেনে নিল এটা স্বদেশী হসপিটাল। কিছুক্ষণের মধ্যে একজন মহিলা এক মেয়েকে নিয়ে প্রবেশ করল। রাজন আন্দাজ করে নিল মহিলাটি মিসেস এমদাদ। পাসে বসেই মাথায় হাত দিয়ে বলল এখন কেমন লাগছে বাবা? রাজনের কেন জানি দুচোখ বেয়ে পানি এলো। মা আজ কাছে থাকলে এভাবেই বলত। কিন্তু সে অনেক দূরে হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। নার্সকে বলল তুমি যাও। রাজনকে বলল: তোমার পকেটে যা ছিল সব ভিজে গেছে। কলেজের আইডি কার্ড থেকে জানলাম তুমি রাজন। আমাদের কলেজেই পড়। কিন্তু এভাবে ভিজিতেছিলে কেন? রাজন বলল: আমার খুব ভাল লাগছিল নদীর পানির শব্দটা। তাই শব্দের তালে হাটতে ছিলাম কিন্তু ভিজে যে এতটা দুর্ভোগ পোহাতে হবে জানতাম না। আপনার সাথে ও কে? মিসেস এমদাদ বললেন আমার মেয়ে। কাল ওর পছন্দের একটা পাগলকে দেখতেই গিয়েছিলাম নদীর তীরে।আজব এক পাগল নাকি সে।
রাজন বলল: ওহ, পছন্দের আবার পাগল ও থাকে?
এবার মেয়েটি বলল: আমি যে কয়দিন পার্কে ঘুরতে গিয়েছিলাম ওই অদ্ভুত পাগলটি দেখতাম নদীর তীর ধরে হাঁটছে আর আনমনে কি যেন বলছে। আম্মুকে বলেছিলাম আজ বৃষ্টি হচ্ছে চল দেখি সে কি করে। আম্মুর একটু কিউ রিসিটি ছিল। রাজি হয়ে গেল।
দেখা পেয়েছিলে? বলল রাজন।
মেয়েকে থামিয়ে দিয়ে বলল তুমি সুস্থ হয়ে ওঠ।
রাজন বলল আমি এখন সুস্থ, আমাকে রিলিজ দেবে না?
নাহ তোমাকে এখানে আরও দুদিন থাকতে হবে।
আজ বিকালে নদীতে না গেলে আমি মরে যাব।
দু একদিন না গেলে কিচ্ছু হবে না। আর আবহাওয়া ভাল না যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। তোমার কফ জমে গেছে। বৃষ্টিতে ভিজলে নিউমোনিয়া হতে পারে। বৃষ্টি তুমি একটু বস আমি ডাক্তারের সাথে কথা বলে আসি। রাজন এতক্ষণে শুনল মেয়েটির নাম বৃষ্টি, মিস চলে গেলে রাজন বলল: ওই পাগলটাকে আমি দেখব, নিয়ে যাবেন?
আমাকে আপনি করে বলছেন কেন? আমি মাত্র ক্লাস টেন এ পড়ি। আপনি করে আমিও বলতে পারি না। তুমি অথবা তুই। তুই খুব কাছের মানুষদের সাথে আর তুমি প্রায় সবার সাথে বলি। তুমি কেন যাও নদীর তীরে? রাজনের অনুমতির অপেক্ষা না করে তুমি বলা শুরু করে দিল বৃষ্টি।

রাজন বলল নদী, নদীর পানি, আর তীরের কোন ডালে বসে থাকা মাছরাঙ্গা আমার ভীষণ ভাল লাগে।
বৃষ্টি বলল: আমার নদী আর পানি ভাল লাগে। কাল কে আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়েছিলাম। আপনার যদি কিছু হয়ে যায়।
আচ্ছা আমাকে একটু বিকালে নদীর তীরে নিয়ে যাবে? রাজন বলল।
না তা হবে না ডাক্তার মানা করেছে। রুমে প্রবেশ করতে করতে বলল মিস এমদাদ। তবে বিকালে ছেড়ে দিতে বাধা নেই। কথাটা শুনে রাজনের মনে একটু আশার সঞ্চার হল। যাওয়ার সম্ভাবনা আছে তাহলে। কিন্তু পরের কথাটায় মুখ কাল হয়ে গেল রাজনের। এখনি ছাড়িয়ে নিয়ে সোজা বাসায় মানে কোয়ার্টারে নিয়ে যাবেন তিনি। কোন কথা শোনার অপেক্ষা না করে মিস এমদাদ বেড়িয়ে গেলো।

সব শেষে তাকে যেতে হল বৃষ্টিদের সাথে। বিকাল হতে না হতেই অস্থির হয়ে গেল রাজন। বৃষ্টি এতক্ষণ পাসে পাসেই ছিল। এবার মায়ের নিকট গিয়ে বলল আম্মু চল গাড়ি দিয়ে নিয়ে গিয়ে একটু দেখিয়ে নিয়ে আসি। নইলে দম বন্ধ হয়ে আসছে নাকি ভাইয়ার।
মিস এমদাদ কি মনে করে রাজি হয়ে গেলেন । গাড়ি দিয়ে নদীর কাছে দাঁড়াল। জানালা খুলে বলল নাও বুক ভরে নিশ্বাস নাও। কতক্ষণ থাকতে হবে রাজন?
একটু তীরে যেতে পারলে ভাল হত। বলল রাজন
না, এখান থেকেই নাও। পাগলামি করো না বাবা। কোন কথা বলল না রাজন। মানুষের কাছে কোন কিছু আকুল ভাবে চাইতে পারে না। কিছুক্ষণ পর বাসায় চলে গেল।

পরের দিন রাজন অনেক জোর করে মেসে চলে গেল। মেসের অনেকে চিন্তায় ছিল। এর বেশি কিছু না। মেসে গাড়ি এসে দিয়ে গেছে। প্রতিজ্ঞা করে এসেছিল চার-পাঁচদিন নদীর তীরে যেতে পারবে না। বিকাল হলেই দম বন্ধ হয়ে যেত তার কিন্তু কথার বরখেলাপ করতে পারবে না। তিনদিন পর বৃষ্টি মেস এ এসে ডেকে নিয়ে গেল। গিয়ে দেখে গাড়িতে ড্রাইভার ছাড়া কেউ নেই। রাজন বলল নদীতে যাওয়া যাবে না, তাহলে প্রমিস থাকবে না। বৃষ্টি বলল আজ তোমাকে নিয়ে মধু-টিলায় যাব আম্মু অনুমতি দিছে।
রাজন কিছু বলল না, সোজা গাড়িতে উঠে বসল।
যেতে যেতে পাগলটির কথা জিগ্যেস করল রাজন। বৃষ্টি হাসি দিয়ে বলল ওই পাগলকে আমার অনেক পছন্দ, যেদিন থেকে দেখছি সেদিন থেকেই প্রেম এ হাবুডুবু খাচ্ছি, আর যেদিন কথা হল তখন থেকে আমি মরে যাচ্ছি তাকে দেখার ইচ্ছায়।
সে আর আসে না ওখানে?
না, কয়েকদিন ধরে আসছে না।
চল আজ ওই পাগল দেখতে যাব।
আম্মুর কিন্তু মানা আছে।
থাক মানা, পানির কাছাকাছি যাব না, দূর থেকে দেখব।
উনি এখন নেই ওই খানে।
কিভাবে বুঝলে নেই?
কারণ ওই দিন গিয়ে দেখি পাগলটি বৃষ্টিতে ভিজিতেছে। অনেকক্ষণ পর রিকসায় উঠতে গিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। আর সেই পাগল এখন আমার পাশে।
রাজন চমকে গেল। কি বলে এ মেয়ে? ড্রাইভাররে দিকে তাকিয়ে দেখল উনি কানে হেড ফোন দিয়ে গান শুনছে , সুতরাং এসব শুনছে না, শুনলেও হয়ত কিছুই হবে না বৃষ্টির । (আংশিক)

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৯

এহসান সাবির বলেছেন: ভালো লাগল
কিন্তু
আংশিক কেন?

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৯

মিজানুর রহমান এএমএস বলেছেন: পরের অংশ আজ দেব ভাই

৩| ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩০

অবনি মণি বলেছেন: ভালো লিখেছেন । শুভেচ্ছা রইলো !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.