নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একে একে সব স্বপ্ন মাটি দিয়ে এখন প্রহর গুনছি দেহটা কবে আমাকে মুক্তি দেবে।

মিজানুর রহমান এএমএস

মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।

মিজানুর রহমান এএমএস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা শুধুই ফ্রেন্ড

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৪৫



শ্রাবণ মাস,মাসের শুরু থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। তুমুল বৃষ্টি, আমি আগেই ভেবে রেখেছিলাম শ্রাবণ মাসের প্রথম যেদিন বৃষ্টি হবে সেদিনই ভিজব। ভাগ্য ভাল ছিল না, মাসের প্রথম বৃষ্টি নেমে বসল। ক্লাস থেকে তো আর বের হওয়া যাবে না। জাঁদরেল এক টিচার ক্লাস নিচ্ছে, তার চেয়ে বড় কথা, লেকচার টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ক্লাস শেষে বের হয়ে দেখি বৃষ্টি শেষ । ঘণ্টা দেড়েক আড্ডা দিলাম ক্যাফেটেরিয়ায় বৃষ্টি যদি আবার নামে এই আশায়। না নামল না, হতাশ হয়ে বাসায় ফিরলাম।
পরদিন ক্লাস মাত্র একটা,
ক্লাস শুরু হওয়ার কথা এগারটায় কিন্তু স্যার কি একটা কাজে ব্যস্ত তাই এক ঘণ্টা পরে ক্লাস শুরু করবেন। বসে আছি তারা মামার টঙে । আমাদের ক্যাম্পাসের টং সম্পর্কে কিছু বলি। দশ-বারটা টং আছে। চা,আখনি,আলুর চপ, বেগুনি আর সিগারেট পাওয়া যায়। প্রত্যেকটা টঙ্গের কাস্টমার প্রায় নির্ধারিত। যেমন তারা মামার টং বিবিএ,সিভিল আর ইংলিশ এর ছেলে মেয়েরা বসে। তবে এটা একেক সময় একেক রকম থাকে। যার যেমন ইচ্ছা সেখানেও বসে, তবে এক যায়গায় বসে আড্ডা জমে ভাল এই কারণেই কিছু নির্ধারিত টং আছে। যথারীতি আমি বসে আছি বারটার অপেক্ষায় । আকাশ ধব ধবে সাদা, সোনালি রোদ উঠেছে,অর্জুন গাছের পাতা রোদে চিক চিক করছে । বোঝাই যাচ্ছে বৃষ্টি হবার সম্ভাবনা নেই। তবে বলা যাচ্ছে না । সিলেটের আবহাওয়া কখন পাল্টে যায় বলা মুশকিল। একা আর সময় কাটছিল না। সবাই ক্লাস রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। চা নিয়ে চুমুক দিচ্ছি আর ক্যাম্পাসের মানুষগুলোকে দেখছি। সবাই কেমন ব্যস্ত , কারো একটুকু সময় নেই ভাবার, ক্যাম্পাসে আসছে, ক্লাস করছে, একটু আড্ডা দিচ্ছে, চা পান করছে সবই যেন রুটিন মাফিক। উদাস হয়ে ভাববে এই সময় কোথায়?

ওই যে রিবাক, অদ্ভুত নাম,কাঁধে ব্যাগ, দৌড়ে ডিপার্টমেন্ট এ যাচ্ছে। আমি নিশ্চিত লাইব্রেরী থেকে আসছে। আমার বন্ধু বিবিএ তে পড়ে। পরিচয় এক বছর মাস তিনেক হবে। আমি একদিন লাইব্রেরীতে একটা বই খুঁজে পাচ্ছিলাম না, ওকে জিজ্ঞেস করলাম এমন ভাব দেখাল যেন আমি কোন ভিন গ্রহের মানুষ। আমি খুঁজতে ছিলাম, কিন্তু আমার ডিপার্টমেন্টের সেলফ কোথায় সেটাই জানি না। ওকে আর জিজ্ঞেস করার চিন্তাও করলাম না, কিছুক্ষণ পর রিবাকই ওই বইটা এনে দিয়ে বলল এইযে তোমার বইটা। সেখান থেকেই কথা হয়।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ক্লাসের সময় হয়ে গেছে। চায়ের বিল মিটিয়ে ক্লাসে যাব কিন্তু আকাশে মেঘ জমেছে। বৃষ্টি হতে পারে। তবুও ক্লাস এ গেলাম। শুধু ভাবছিলাম কখন ক্লাস শেষ হবে। আর বৃষ্টি যেন একটু দেরিতে শুরু হয় । ক্লাস শেষ হওয়ার আরও বিশ মিনিট বাকি কিন্তু বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমার আর সময় কাটে না।ভিতরে ধুক ধাক শব্দ করছিল ।আর মুখে সেই অস্থিরতা ফুটে উঠেছে। এ অবস্থা দেখে স্যার জিগ্যেস করলেন: তুমি কি ক্লাসে মনযোগী ?
আমি বললাম না স্যার। উত্তরে যা বললাম তা আমার বলার সাহসও ছিল। আরও বলেছিলাম আমাকে একটু যেতে হবে। স্যার বললেন যাও। কোন প্রশ্ন করলেন না। আমি তো অবাক হলামই । বাকিরাও অবাক হয়ে আমার চলে আসার দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল! আমি বেশি এক্সাইটেড ছিলাম। ক্লাস থেকে বের হয়েই ভিজতে শুরু করলাম। ভিজতে ভিজতে ডি-বিল্ডিঙের সামনে আসতেই মনে হল পকেটে মোবাইল আছে। জিনসের প্যান্ট তাই কিছুটা রক্ষা, অল্প ভিজেছে। ডি-বিল্ডিঙের গেটে কয়েকজন দাড়িয়ে আছে। একটাকেও চিনি না। কি করি এখন? বাধ্য হয়েই ব্যাগ থেকে ছাতা বের করলাম, আমার ব্যাগ এ বর্শার মৌসুমে সবসময়য় ছাতা থাকে। ভেজা শরীরে ছাতা মাথায় হাঁটছি মোবাইলকে বাঁচানোর জন্য। লাইব্রেরীর সামনে এলে একজন ডাক দিল সামিদ, ঘুরে তাকিয়ে দেখি। বন্ধু তিমা, কাছে গেলাম।
কাছে যেতেই তিমা বলল আমায় একটু হল এ দিয়ে আসবি সামিদ?
রিকসা নিয়ে যা।
এত বৃষ্টিতে রিকসাও যাচ্ছে না।
আচ্ছা ঠিক আছে, চল। বন্ধুটিকে ছাতা আর আমার মোবাইল টা দিয়ে আমি ভিজতে ভিজতে তার সাথে যাচ্ছিলাম। মোবাইলের জন্য পেইন খাচ্ছি। যেই না হলের দিকে যাচ্ছি পাশ দিয়ে যেতে যেতে আমার ক্লাসের কতিপয় বন্ধুরা বলা বলি শুরু করল ক্লাস বাদ দিয়ে এই কাজ হচ্ছে? তাইত বলি এত সাহস হল কি করে? প্রেমে পড়লে বোবারও মুখ খোলে। তিমাকে সামনে পাঠিয়ে দিয়ে বন্ধু রাজন কে বললাম আমরা শুধুই ফ্রেন্ড। আমি ভিজতে বের হয়েছি । নাহ্‌ কোন কিছুতেই রাজনরা বিশ্বাস করছে না আমরা শুধুই ফ্রেন্ড!!! ওদের ভাষ্য ওই একটাই, প্রেম!
তিমাকে হলে দিয়ে চলে এলাম। তিমা কথা গুলো শুনেছে। আমার মেজাজ এজন্যই খারাপ। আমার সাথে তিমার আজ তৃতীয় দিনের মত কথা হল। ক্লাবের একটা অনুষ্ঠানে দেখা,পরিচয় আর মাজ খানে হায়্‌ হ্যালো । আর আজ।
রাতে শুয়ে ভাবছি, আমরা কি শুধুই ফ্রেন্ড?? ----


ভাবতে ভাবতেই দুইদিন শেষ। ক্যাম্পাসে যাওয়া কঠিন হয়ে গেছে আমার জন্য। কি এমন অপরাধ করলাম যে বন্ধুরা সেই টপিক নিয়ে সারাদিন কষ্ট দেয়। যেই না আকাশে মেঘ জমছে সবাই দৌড়ে আসছে আমার দিকে এসেই বলা শুরু করে, এই সামিদ যা তোর তিমা দাড়িয়ে আছে তোর জন্য। না এভাবে আর মিছে মিছে কষ্ট পাওয়ার মানে হয় না, ভাবি আমি। কিছু একটা করা দরকার। এর বেশি ভাবতেও পারি না।
ক্লাস করে ফিরছিলাম তিমা কেন জানি অর্জুন তলায় দাড়িয়ে আছে। তিমাকে দেখেই পাশের বন্ধু আসিফ উচ্চস্বরে বলে উঠল দেখ তোর জন্যই, এর পরের টুকু বলল না বুঝে নিলাম। কিছু করার নেই পাপ যখন করেছি পাপের শাস্তিও পেতে হবে। মাথা নিচু করে হাঁটছি। একটা রিকশা ঠিক পিছনে এসে থামল। আমি আর আসিফ না দাড়িয়ে চলতে থাকি। এই সামিদ রিকশায় উঠে বস। পিছন তাকিয়ে দেখি একজন অপরিচিত মেয়ে‍., দেখতে ভালই, একটু মোটা, দেখে বড় আপুই মনে হল। বললাম আসিফ কে একা রেখেই? সে একটু রেগে বলল উঠতে বলছি উঠো। কোন উচ্চবাচ্য না করে উঠে বসলাম।
আযহার, তিমার প্রেমিক বুক ফুলিয়ে বললেন। একটু হাসলাম, হাসির অর্থ নিজেও জানি না। কঠিন গলায় বলল হাসছ কেন? রিকসা শহীদ মিনারের দিকে যাচ্ছে।
বললাম এটা আমাকে বলার কি আছে?
তোমার শুনে রাখা ভাল! একটু রহস্যময় চাহনি।
কিছু বুজলাম না তবু ও বললাম: আচ্ছা, কিন্তু আমরা শুধুই বন্ধু আপনি কে ? কোন বর্ষে পরেন?
তিমাকে জিজ্ঞেস করলেই পাবে। বলে রিকসা থামিয়ে ভাড়া দিয়ে চলে গেল। রিকসা থেকে নেমে শহীদ মিনারের সিঁড়িতে বসে বসে ঝিমচ্ছি আর গাছ দেখছি, গাছ গুলোই ভাল, কোন তর্কে নেই। কোন চাওয়া নেই, মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। আর আমরা মানুষ হয়ে হাজার বাহানায় মানুষকে ঠকিয়ে যাচ্ছি।

ভাবছি কিন্তু কোন ভাবেই মাথায় খেলছে না । যে একজন মেয়েকে দিয়ে কেন এ কাজ করবে তিমা? আমি কি তার পিছনে লেগেছি? আমার কাছে তিমার মোবাইল নাম্বার নেই। ভেবে কিচ্ছু হবে না, তাই চললাম তিমার কাছে।

তিমাকে ক্যাম্পাসেই পেলাম, সেমিনার রুমে ডেকে নিয়ে বসালাম।
সে বলল এখানে কেন নিয়ে আসলে?
আমি বললাম একটা মেয়ে আমাকে রিকসা করে শহীদ মিনারে নিয়ে বলল তোমার প্রেমিক আযহার। কিন্তু কেন বলল?
আরে আরে আমার প্রেমিক মানে? কি বলছ এসব? এই জন্য কি ডেকে এনেছ নাকি ?
জী ঠিক বলেছি। এই কথা জানার জন্যই ।
একটু চিন্তা করে তিমা বলল আস্তে, একটু আগে যে মেয়ের সাথে রিক্সায় গেলে সেই মেয়ে কি বলেছে?

হ্যাঁ , তুমি দেখেছ তাকে? যাক বাবা বাচা গেল। নামটাও বলেনি সে।

তিমা দাঁত কামড়াচ্ছে আর বলছে ,ও আচ্ছা! কিন্তু কেন বলবে এসব?

আমি তো জানি না। আচ্ছা তুমি চিনো ওকে?

হ্যাঁ, পাসের রুম এ থাকে। দাড়াও দেখাচ্ছি মজা,

কিন্তু কেন? আমার একটু সন্দেহ হচ্ছে।

চিন্তা কর না। একটু অপেক্ষা কর। আমাকে অপেক্ষা করতে বলে তিমা একটা কল করল। এর পর চলে গেল। আমি বসে বসে অপেক্ষা শব্দটা যে খুব বিশ্রী তার মমত্ব হারে হারে টের পাচ্ছি। আসলেই অপেক্ষা আমার জন্য বিষ। আমি কারো জন্য অপেক্ষা করি না , এমন কি কখনো কাউকে অপেক্ষায় রাখি না । ফান্দে যখন পড়েছি তখন কোন নিয়মের বালাই নেই। অপেক্ষা করতেই হবে।

প্রায় পঁচিশ মিনিট বসে থাকার পর তিমা ওই মেয়েকে ধরে নিয়ে এলো । আমি উঠে বড় বড় চোখে তাকালাম। মনে হচ্ছে চার তলার ছাদ থেকে ফেলে দেই। নিজেকে দমালাম। আমার দিকে না তাকিয়ে মাথা নিচু করে বসল, আমার সামনের চেয়ার এ। তিমা বলল এখন বল সুর্মি, সামিদকে কি বলেছিস? মেয়েটি মাথা নিচু করেই বলল আমার ভুল হয়ে গেছে। আমি তোকে তো বলেছি আসল ঘটনা কি? তিমা মেয়েটিকে পাঠিয়ে দিল।

শোন সামিদ এই মেয়ে তোমার প্রেমে পড়েছে। প্রচণ্ড ভাল বাসে । তুমি কি করবে?
আমি? এসব এর মধ্যে আমি নেই। আর এটা কোন উপায় হল প্রেম করার?

উপায় না। কিন্তু কি করবে আর বল? তোমাকে পেতে এই অবলম্বন বেছে নিয়েছে।

তুমিও শুনে রাখ কাল আমার এই ক্যাম্পাস এ আসা কঠিন হয়ে যাবে। তোমায় ছাতা দিয়ে সাহায্য করে কি ঝামেলায় আছি। সেটা ভাল করেই জানো। আজ এই মেয়ের সাথে রিকসায় !! অসহ্য। আর প্রেম? অসম্ভব!!

সে মিটিমিটি হেসে বলল তাইলে রুমে বসে বসে ঘুমাও । পারলে হাতে নাকে কানে ছিদ্র কইরো ক্যাম্পাস এ আসার দরকার নেই।

রুমে থাকতে নাক কান ছিদ্র কেন?

নাকে কানে দুল পড়বে, তাই।

মজা না করে একটা বুদ্ধি বাতলাও।

তিমা বলল তুমি আমার বন্ধু হয়ে যাও। ভাল বন্ধু। হবে?
হতে পারি, শর্ত আছে।

কি শর্ত

আমি একটু চিন্তা করলাম, পরে বললাম সারা জীবন ভাল বন্ধুই থাকতে হবে।

আচ্ছা তাই হবে।

কিন্তু ওরা যে আমায় চেতাবে।

তিমা এবার রেগে বলল তুমি চেতবে না তাইলেই তো হয়। আর বলবে আমরা শুধুই ফ্রেন্ড।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:৫৯

ক্লান্ত তীর্থ বলেছেন: মজা পাইলাম :P

২| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:১৪

নিলু বলেছেন: লিখে যান

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.