নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।
কি করব ঠিক বুঝে উঠতে সময় লাগছে। শরীর বেয়ে ঘাম ঝরছে, মাথা কিছুই কাজ করছে না। মেস-মেটদের যে ডাক দেব ! সে সাহসটাও পাচ্ছি না। রুম থেকে বের হতেই ভয় করছে, যদি একমাত্র সঙ্গী ল্যাপটপ টা নিয়ে ভেগে যায়। মোবাইল এর ব্যাল্যান্স শেষ হয়েছে গত রাতে আম্মুর সাথে কথা বলে। মহা মুশকিলে পড়লাম তো। পাশের রুমে পুতুল ঘুমিয়েছে ডাকার চেষ্টা করা ভুল, কারণ ডাকলেও উঠবে না। তবু হাঁক ছাড়লাম, যা ভেবেছিলাম তাই হল। সাহস করে রুম থেকে বের হলাম, প্রত্যেক রুমে এক এক করে নক করলাম, কারো কোন সাড়া শব্দ নেই। এবার রুমে ফিরে এসে দেখি মেয়ে মাথায় কাঁথা টেনে শুয়ে আছে। কয়েকটা ডাক দিলাম, হ্যালো, হ্যালো, এই যে আপু, ভয়ে ভয়ে মাথার কাঁথা সরানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু শক্ত করে মাথার নিচে আটকে আছে।
রুমে আমি আর জয়িতা । সারা রাত ঘুম নেই সুতরাং ঘুমে পরে যাওয়ার কথা আমার কিন্তু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বসে আছি দোলনা চেয়ারে। এক একটা মিনিট যাচ্ছে যেন মনে হচ্ছে এক ঘন্টা শেষ হল, অনেকক্ষণ পর মনে হল সব মানুষদের একই রকম ভাবা ঠিক না, মেয়েটি তো বলেছে মুস্তাক এর সাথে দেখা করতে এসেছে। আন্দাজে নাম বললে তো ভুল হয়ে যেত । তবুও ভয় কাটে না, ঘুমানোও দরকার আবার রুম ও পাহারা দিতে হবে। রুমে ল্যাপটপ ছাড়া মূল্যবান কিছু নেই, ঘুমাইলে ল্যাপটপ বালিশের নিচে রেখেও ঘুমানো যায়।
শুয়ে শুয়ে ভাবছি এত সুন্দর একটা মেয়ে আমার রুমে কি রসের আলাপ করব! তা না করে বরং ভয়ে আঁকুপাঁকু হয়ে শুয়ে আছি। শুধু সুন্দরি বললে ভুল হবে অসাধারন সুন্দরী। লম্বায় সারে পাঁচ ফিট। মুখটা গোলগাল, চোখ দুটো অন্যদের তুলনায় একটু বড় কিন্তু গোল ও ধূসর। ভরাট গালে হাসলে চোখের নিচে এক প্রেমী প্রেমী ভাব আছে সেই সাথে টোল পরে । চাহনিতে আছে মায়াবী টান, চুলে দুইটা বেণি গেঁথে ঘাড়ের দুপাশে ফেলে রেখেছিল, মনে হচ্ছিল মনের অদৃশ্য দড়ি দিয়ে বেদে ফেলেছে। চোখ বন্ধ করলেই দেখতে ছিলাম মেয়েটিকে। ভাবনার জগতে কখন চলে গেছি সেটা জানি না। ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পাড়ি দিয়েছি।
হটাত করে চেয়ে দেখি আমি ছাড়া রুমে কেউ নেই। হুড়মুড় করে উঠে বেলকুনিতে, ছাদে, নীচতলায় খোজ করলাম কিন্তু পাওয়া গেল না। মেয়েটিকে অস্থির হয়ে খুঁজছি, বিছানায় এখনো একটা গন্ধ রয়ে গেছে। আমি বালিশ আর কাঁথা থেকে ঘ্রাণ নিচ্ছি এমন সময় একটা শব্দ কানে ভেসে এলো কিন্তু ঘ্রাণকে অতিক্রম করে সচেতন মনে প্রবেশ করল না। কি করছেন?
চমকে উঠে বললাম কিছু না। কোথায় গিয়েছিলে ?
দেখলেন তো কোথায় ছিলাম । ক্লাস করতে যাননি কেন?
তোমাকে একা রেখে যেতে মন চাইল না, তাই।
আচ্ছা শুনুন না, আমার প্রচণ্ড খিদে পেয়েছে। যদি পারেন কিছু খাওয়ান।
মিল হয়েছে, খেয়ে নিতে পারেন,
ওহ, তাহলে তো ভালই হল, ঘুম থেকে উঠলে আমার খুদা পায়।
আচ্ছা, চল খাবার নিয়ে এসে খাই,
সিগারেট শেষ, মুস্তাককে কল করে জানাতে হবে জয়িতার কথা, সুতরাং মোবাইল এ ফ্লেক্সি দিতে হবে। জয়িতাকে রেখে ক্যাম্পাস এর গেট এ যেতে হল। ফ্লেক্সি করে সিগারেট নিলাম। রুমের দিকে পা বাড়িয়েছি সেই মুহূর্তে সাফিন , ডিপার্টমেন্ট এর বড় ভাই ধরল তাঁর সাথে এই অবস্থায় বাস স্ট্যান্ডে যেতে হবে। কিছু মালপত্র আসছে আনতে হবে। তাঁর কথা কখনই ফেলতে পারি না। সাফিন ভাই বার বার বলতেছিল আমাকে কেন এত বিমর্ষ দেখাচ্ছে। বলার মত ঘটনা হলে বলতাম, আমার জন্য মেয়েটি চলে এলে বলতে দ্বিধাও ছিল না, হাজার হলেও অন্যের ব্যক্তিগত ঘটনা বলা ঠিক হবে না। রুমে অনেক কাপড় ভেজানো আছে বলে ছাড়া পেলাম, তাও তাকে সাহায্য করে রুমে ফিরতে ফিরতে তিন ঘণ্টা দেড়ি হল। এসে সিঁড়ি বেয়ে উঠছি এমন সময় মনে হল বের হওয়ার সময় চাবি নেয়া হয়নি। কি বলে ডাক দেব আনমনে ভাবতে ভাবতে রুমের দরজায় তাকিয়ে থ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। দরজা খোলা, রুমে না প্রবেশ করেই আন্দাজ করে নিলাম আমার প্রিয় ল্যাপটপ চলে গেছে, সেই সাথে আরও কি কি নেই কে জানে? ভয়ে ভয়ে রুমে প্রবেশ করে দেখি মেয়ে কাঁথা মোড়ে দিয়ে আছে, ল্যাপটপ বিছানার পাশে ব্যাক মাই লাভ টু ইংলিশ গান চলিতেছে। আত্মায় পানি ফিরে এলো। কিন্তু রুম খোলা কেন এই প্রশ্নের সমাধান খুঁজতে পুতুলকে ডাকলাম, সাথে সোহান আর সামি এসে হাজির। ওদের ভাষ্যমতে মুস্তাক এসেছিল রুমে। দুজনের কিছুক্ষণ কথা হয়েছে। ঠিক কি কথা হয়েছে ওরা কেউ বলতে পারল না। মুস্তাক কে ডেকে পাওয়া গেল না। রাহুল ছিল কিন্তু ও এ ব্যাপারে কিচ্ছু জানে না। জনয়িতাকে ডাক দেব কিনা ভাবছি এমন সময় বড় এক ভাই এসে বলল তোমার রুমে নাকি এক মেয়ে এসেছে, এসব কি? এ মেস এ মেয়ে আনা নিষেধ জান না? এখুনি বের করে দাও। আমি ভয়ে ভয়ে বললাম ঘুম থেকে উঠলেই বিদায় করে দেব।
না এখুনি ডাক দাও।
আমার আর সহ্য হচ্ছিল না। মুস্তাকের দায় তাকে কেন টানতে হচ্ছে। কাঁথা ধরে আস্তে করে টান দিলাম, মুখ দিয়ে ফেনা পড়ছে। ভাই দেখে অবাক হল আমি তাঁর চেয়ে বেশি ভয় পেলাম। মাথায় হাত দিয়ে ডাক দিলাম, না কোন সারা শব্দ নেই। পালস্ দেখতে বললাম ভাই কে। উনি বিনা সঙ্কোচ এ দ্রুত পালস্ দেখে খুব গভীর মুখ নিয়ে আমার দিকে তাকালেন। আমি কনফিউজড, ভাইকে জিগ্যেস করলাম: কি হয়েছে ভাই। যেটা বলল সেটা সোনার পর সবাই হতভম্ব হয়ে দাড়িয়ে রইল। আমি কেঁদে দিলাম, চোখের পানি মনে হয় শুকিয়ে গেছে এক মুহূর্তের জন্য।
দ্রুত মেডিকেল এ নেয়া হল। ডাক্তার পালস্ দেখল, আরও কয়েকটা টেস্ট করে বলল রোগীর আত্মীয় কে? সবাই আমাকে দেখিয়ে বলল শাহিন। একটু আড়ালে নিয়ে বলল কি খেয়েছে রোগী?
জানি না, আমরা কেউ পাশে ছিলাম না। তারপর বলল আমাদের কিছু করার নেই। আটচল্লিশ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখব। তারপর দেখা যাবে বাঁচানো যায় কিনা।
©somewhere in net ltd.