নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মৃত ব্যক্তির কোন অভিব্যাক্তি থাকতে নেই। স্বপ্নেরা নিছে ছুটি, আমি রয়ে গেছি দেহ টা বয়ে বেড়াতে।
আমরা ছয়জন ছেলে একটা ফ্লাট নিয়েছি। আমি, সোহান,সামি, মুস্তাক,রাহুল আর পুতুল। শুধু আমরা থাকলেই হত সাথে দুজন বড় ভাই এসে উঠেছে। দোতালা ডুপ্লেক্স বাসা। নিচের ফ্লাটে পরিবার নিয়ে থাকেন এক ভদ্রলোক। দুজন ছেলে একজনের নাম রাহাত অন্যজন আরিফ। চার রুমের বাসায় আমরা দুজন করে থাকি আর নিচের ওরা মাত্র চারজন। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে নামতে দেখা হয় ওদের সাথে এর বেশি পরিচয় হয়নি। ওদের ডাইনিং রুম দিয়ে উপরতলার সিঁড়ি। কতবার যে আফসোস হয়েছে মা বাবা বিয়ে করাচ্ছেন না কেন? মেসের বুয়ার রান্না জঘন্য। কত হাজার বার যে দেখি ওরা সুস্বাদু খাবার খাচ্ছে, একবার ঐ রান্নার বাতাস এলে মেসের খাবার আর খেতে মন চায় না। এই বাসায় উঠেছি প্রায় মাস ছয়েক। এই চারজনের পরিবারে কোন দিন আত্মীয় দেখিনী। প্রতিদিন কমপক্ষে চারবার বাইরে যাই। মাঝে মাঝে দশবার বার ও হয়ে যায় তবু কোন গেস্ট দেখি না। আজব একটা পরিবার। মাঝখানে একটা পূজা হল। পূজাতেও চিরাচরিত সদস্য সংখ্যার বাইরে কাউকে পেলাম না। কর্তার বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ হবে। বড় ছেলে কলেজ এ পড়ে। কারো সাথে তেমন কথা বলে না। একদম ভিতর-বিদ্যা, ছোট ছেলে একটু চঞ্চল কিন্তু কোন এক অদ্ভুত কারণে উপড়ের কারো সাথে কথা বলে না। মাঝে মাঝে ফুল ভলিউম এ টিভি ছাড়ত । অনুরোধ করায় এখন এই ভুল করে না ।
বাসাটি একটা খালের পাশে। সামনে খেলাধুলার জন্য যায়গা আছে কিন্তু কেউ খেলাধুলা করে না। খালের ধারে কয়েকটা পুরাতন হিজল গাছ আছে। খালের পানি খুব নোংরা, কাল আর আবর্জনায় ভরা। এলাকার মানুষজনকে বলতে শুনি এখানে আগে অনেকে বসে বসে আড্ডা দিত, একসময় গোসল ও করত । স্বচ্ছ পানি ছিল তখন। আমরা কেউ পারতপক্ষে খালের ধারে কাছে যাই না। ভয় ভয় লাগে, হটাত হটাত মানুষের মরা দেহ ভাসতে দেখা যায়।
আমাদের প্রায় সবার অভ্যাস হয়ে গেছে ঘুম থেকে দেড়ি করে ওঠা। সকাল মানেই দশটা, ক্লাস থাকলে ভিন্ন কথা। পুতুল মাঝে মাঝে খুব ভোরে ওঠে, একটু হাঁটাহাঁটি করে এসে আবার ঘুমায়। জিগ্যেস করলে বলে সারারাত ঘুম আসে না। সকালে হাঁটাহাঁটি করলে তার গাড় ঘুম হয়। অথচ রাত বারটার একমিনিট পর ডাক দিলে বলে ঘুমে চোখ তুলতে পারছে না। এরকম আমাদের আটজনের একেক রকম রীতি। এই যেমন সোহান বাইরের সবার সাথে একটু কম কথা বলে, কিন্তু রুম এলে তার কথায় হাঁসতে হবে নিশ্চিত। আমার কোন রীতি নেই তবে কিছু নীতি আছে।
একদিন রাত চারটা পর্যন্ত মুভি দেখে শুয়ে বাকি রাত গড়াগড়ি করেও ঘুমের দেশে পাড়ি দিতে পারলাম না। একটু ঘুমের ঘোর আসে তো দুঃস্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যায়। শুয়ে না থেকে পুতুলের থিওরি কাজে লাগাতে বেড়িয়ে পরলাম হাটতে। সকালের ক্যাম্পাসটা অপূর্ব সৌন্দর্য নিয়ে অপেক্ষা করছে আমার জন্য। সূর্যের কিরণ সবুজ পাতার ফাঁকফোকর দিয়ে শিশির ভেজা শুকনো পাতায় পড়ছে। ক্যাম্পাস যেন গভীর ঘুম থেকে জেগেছে মাত্র, এক কিলোর প্রেমে অনেক আগেই পড়েছি,আজ নতুন করে গভীর প্রেমে আবদ্ধ হলাম। আজ ক্লাস করব না। প্রেমিকদের দু একদিন ক্লাস না করলেও চলে। একটু পর দেখি পুতুল গোল চত্বর দিয়ে ফুড কোর্ট এর দিকে আসছে। আমার পাশে বসে বলল তুই এত সকালে ক্যাম্পাসে ? আমি কিছু না বলে চা অফার করলাম। সূর্য বেড়ে চলছে আস্তে আস্তে, ক্যাম্পাস ভরে যাচ্ছে ছাত্রছাত্রী দিয়ে। পুতুল আর আমি ফিরলাম সকাল এগারটার দিকে।
সিঁড়ি দিয়ে উঠতেই চোখে পড়ল নতুন একজন মানুষ । ডাইনিং এ বসে খাবার খাচ্ছে। আমি থমকে দাড়িয়ে পুতুলকে জিগ্যেস করলাম। মানে কি? পুতুল ছিল সামনে আমাকে না দেখেই উত্তর দিল, মানে হল আজ ক্লাস করতে যাচ্ছিস না? বুঝলাম পুতুলের ঘুম চলে আসছে। একটু দুষ্টামি করে বললাম ভূত নাকিরে? এবার পুতুল পিছনে তাকাল, আমার দাড়িয়ে থাকা দেখে বলল তুই চশমাটা রেখে গেছিস। চলে আয় পরে দেখে যাস। পুতুল দেখেছে কিন্তু এতটা লক্ষ করে নি। চিন্তা করতে করতে রুমে এলাম। ঘণ্টা খানেক পরে দরজায় নক শব্দ, আমি একটু বসে বসে সিগারেট টানছি। দরজা খুলে দেখি মেয়েটি আমার দরজায় দাড়িয়ে মিটিমিটি হাসছে। আমি চোখের দিকে তাকিয়ে ভয় পেয়ে দরজা লাগিয়ে দেব এমন সময় বলল আমাকে একটু সাহায্য করবেন? আমি বললাম আপনার চোখ এমন কেন?
কেমন?
ধূসর,আর অনেক বড়।
আমি একটু বড় করেই তাকিয়েছিলাম যাতে আপনি ভয় পান। আর আমার চোখ ধূসর।
আমাকে ভয় দেখিয়ে কি লাভ?
একটু আগে আপনি তো বললেন যে ভূত দেখছেন কিনা।
আমি আর কথা বাড়ালাম না, সোজা প্রশ্ন করলাম, কি চাই?
এখানে মুস্তাক নামের কেউ থাকে?
হ্যাঁ থাকে কিন্তু কেন?
আমার দরকার আছে ওর সাথে দেখা করতেই এসেছি।
সে তো রুমে নেই, ক্লাস করতে বেড়িয়ে গেছে।
কখন ফিরবে?
ক্লাস শেষ হলেই ফিরবে।
ততক্ষণ কি আপনার রুম এ বসতে পারি?
হুম পারেন কিন্তু, আমি আমতা আমতা করতে ছিলাম এই সুযোগে রুমে গিয়ে বিছানায় বসল। আমি কিছু বলার সাহস করলাম না। চুপচাপ ফেসবুক ব্যবহার করছি। কোন কথা নেই দুজনের মাঝে। কিছুক্ষণ পর আমার নাম জিগ্যেস করল।
বললাম আমি শাহিন, আপনার নাম?
জয়িতা। আমাকে তুমি করে বলতে পারবে না?
কেন? আর আমি অপরিচিতদের আপনি করে বলি।
আমি মাত্র কলেজ শেষ করে ভর্তি হলাম আপনাদের ভার্সিটিতে। আচ্ছা ভাইয়া আপনার এখানে কিছু খাবার নেই?
আছে, কিন্তু...
কিন্তু কেন? আমাকে দেখিয়ে দিন, আমি হাত দিয়ে খেতে জানি।
আমার লজ্জা হচ্ছিল, বিস্কিটের কিছু ছোট টুকরা ছাড়া কিছু নেই। তবুও বের করে দিলাম। দেখে মুখটা একটু বাঁকা করে বলল, আপনি এসব খান?
লজ্জাটা গায়ে লাগল, এই মেয়েকে নিয়ে রুমে বসে থাকা মানে বিপদ। বললাম আমি ক্লাস করতে যাব, সে যেটা বলল এতে চমকে উঠলাম।
আপনি জান, আমি ঘুমাই।
কি করে বলি যে বিশ্বাস করতে পারছি না। আর অসম্ভব রকম বিরক্ত হচ্ছি। মুখ ফোরা টাইপের মেয়েরে বাপ। আমার ভাব দেখেই বলল, আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন, আপনি না আশা পর্যন্ত যাব না। এমনকি কিচ্ছু হারাবে না। নির্দ্বিধায় ক্লাসে যেতে পারেন।
ভরসা পাই কি করে? কিছুদিন আগে সামির রুম থেকে মোবাইল উদাও। রুম খোলা রেখে ছাদ এ গিয়েছে একটু উকি মারতে। দশ মিনিটের মধ্যে মোবাইল নেই। তখন আমাদের কেউ বাসায়ও ছিল না। কেউ ক্লাস এ আবার কেউ আজাইরা কামে ক্যাম্পাস এ ।
একটু ভাবছি এমন সময় বললঃ আমার ঘুম পেয়েছে, আপনি যা ইচ্ছে করেন আমি ঘুমালাম।
২| ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
মিজানুর রহমান এএমএস বলেছেন: চলবে.........
©somewhere in net ltd.
১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:৫৯
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: তারপরে কি হল ? পর্ব কি চলবে ?
ভালো থাকবেন