নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশের সংবিধান সাধারণভাবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মৌলিক নীতিগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তবে কিছু ক্ষেত্রে বাংলাদেশের আইন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের মধ্যে দ্বন্দ্ব বা অসঙ্গতি দেখা দিতে পারে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরা হলো যেখানে বাংলাদেশের আইনি ব্যবস্থা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে অনেক সমালোচকরা মনে করেন:
১. মৃত্যুদণ্ড
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের অনেক অংশ বিশেষ করে আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তি (ICCPR) মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। যদিও কিছু দেশ মৃত্যুদণ্ড রাখার অনুমতি পায়, জাতিসংঘ মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বাংলাদেশে এখনও বেশ কিছু অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সমালোচনার কারণ।
২. সমকামিতা এবং এলজিবিটিকিউ+ অধিকারের অভাব
বাংলাদেশের দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৩৭৭ ধারা সমকামী যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করে, যা মানবাধিকার রক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক নীতিমালা বিশেষ করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্র (UDHR)-এর সমতার অধিকারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আন্তর্জাতিকভাবে সমকামীদের অধিকারকে মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে, কিন্তু বাংলাদেশে এটি এখনও অপরাধ বলে গণ্য।
৩. গণমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা
বাংলাদেশের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, ২০১৮ মতপ্রকাশের স্বাধীনতার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করার অভিযোগে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছ থেকে সমালোচনা পেয়েছে। এই আইনের অধীনে ব্যক্তি ও গণমাধ্যমকর্মীরা অনলাইনে প্রকাশিত কন্টেন্টের জন্য দণ্ডিত হতে পারেন, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণাপত্রের (UDHR) ১৯ নম্বর অনুচ্ছেদে প্রদত্ত মতপ্রকাশের স্বাধীনতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে।
৪. নারী ও শিশুদের অধিকার
বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭ কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের অনুমতি দেয়। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, ১৮ বছরের নিচে কোনো ব্যক্তির বিবাহকে মানবাধিকার লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হয়, যা আন্তর্জাতিক শিশু অধিকার কনভেনশন (CRC)-এর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
৫. নির্যাতন ও পুলিশ হেফাজতে মৃত্যুর অভিযোগ
বাংলাদেশে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতন এবং কিছু ক্ষেত্রে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে, যা নির্যাতন ও অন্য নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণবিরোধী কনভেনশন (CAT)-এর বিরুদ্ধে যায়।
৬. ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার
ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অধিকার সংরক্ষণে যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকা নিয়ে সমালোচনা আছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম থাকার কারণে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জন্য বিশেষ কিছু অধিকার রক্ষা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে, যা আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতার নীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে করা হয়।
৭. স্বেচ্ছাচারী আটক ও বিচারবহির্ভূত আটক
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক বিচারবহির্ভূত আটক, গুম, এবং বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ উঠেছে, যা আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার সম্পর্কিত চুক্তি (ICCPR)-এর ৯ এবং ১৪ অনুচ্ছেদের অধীনে অধিকার লঙ্ঘন হতে পারে। এই চুক্তি স্বেচ্ছাচারী আটক এবং ন্যায্য বিচার পাওয়ার অধিকারের নিশ্চয়তা দেয়, যা অনেক ক্ষেত্রে মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
৮. আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার অধিকার
আদিবাসী ও ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষের অধিকার সংরক্ষণে পর্যাপ্ত আইনি ব্যবস্থা না থাকায় আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে বাংলাদেশে পার্থক্য রয়েছে। জাতিসংঘের আদিবাসী অধিকার সম্পর্কিত ঘোষণাপত্র (UNDRIP) অনুযায়ী, আদিবাসীদের জন্য বিশেষ অধিকার ও স্বাধীনতার নিশ্চয়তা দেওয়া প্রয়োজন, যা বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি বলে সমালোচনা রয়েছে।
৯. প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সুরক্ষায় আইন থাকলেও, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অধিকার সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, কাজের সুযোগ, শিক্ষা এবং চলাচলের সুবিধার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য যথেষ্ট ব্যবস্থা না থাকা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
উপরোক্ত বিষয়গুলোতে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন ও নীতিমালা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বা কনভেনশনগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৩৭
প্রগতি বিশ্বাস বলেছেন: প্রশ্নটা সুস্পষ্ট নয়
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩০
কামাল১৮ বলেছেন: রাষ্ট্র ধর্ম ইসলাম কি মানবাধিকারের মধ্যে পরে?