নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি ময়মনসিংহ জেলা স্কুল থেকে ১৯৭৭ সালে এস.এস.সি এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ১৯৭৯ সালে এইচ.এস.সি পাশ করেছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৮৪ সালে এলএল.বি (সম্মান) এবং ১৯৮৫ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএল.এম পাশ করি।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ

১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।

মোহাম্মদ আলী আকন্দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১২

০২ রা অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৫৩

সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৭)

সংশোধনের অযোগ্য:

সংবিধানের ৭খ ধারায় বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদসমূহের বিধানাবলী সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সকল অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদসমুহের বিধানাবলী সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।

সংবিধান মানুষের তৈরী একটি আইন; এটা কোন ঐশ্বরিক বিধান নয়। নানা কারণে ও প্রয়োজনে সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের প্রয়োজন হয়। তাই বিশ্বের সব সংবিধানে সংশোধনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

সমাজ ও রাষ্ট্র ক্রমাগত পরিবর্তনশীল। নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ ও সুযোগ প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রের সামনে আসছে। এই সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং সুযোগ গ্রহণ করার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে, যাতে সংবিধানটি বর্তমান প্রেক্ষাপটে উপযোগী থাকে।

এই গতিশীল পৃথিবীতে মানবাধিকার ও সাম্যের সুরক্ষার নীতিগুলিও পরিবর্তন হচ্ছে। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক অধিকারগুলোকে সুরক্ষিত করার প্রয়োজন হতে পারে। বাংলাদেশ সংবিধানে সমানাধিকার সংক্রান্ত বিধানগুলি দুর্বল ও অপ্রতুল। এই বিধানগুলি আরো শক্তিশালী করার জন্য সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে।

সংবিধানে অনেক অসামাঞ্জস্যতা, ভুল ভ্রান্তি ইত্যাদি আছে। এই সব অসামাঞ্জস্যতা ও ভুল ভ্রান্তি দূর করার জন্যেও সংবিধান সংশোধন করার প্রয়োজন হতে পারে। কোনো আইন বা বিধান যদি দেশের কোন একটি জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্যমূলক হয়, তাহলে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে সেই বৈষম্য দূর করতে হবে।

অনেক সময় পরিবর্তিত পরিস্থিতির কারণে সংবিধানের বিদ্যমান বিধানগুলি রাষ্ট্রের কার্যকারিতাকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। এই ক্ষেত্রে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা ও কার্যকারিতা বৃদ্ধি করার প্রয়োজন হবে।

আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সংবিধান সংশোধন করা প্রয়োজন হতে পারে, যাতে দেশের আইনি ও সাংবিধানিক কাঠামো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে সমন্বিত হয়।

কোন কোন সময়ে রাজনৈতিক ও সামাজিক চাহিদার কারণে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে। যেমন গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে কিংবা রাজনৈতিক ব্যবস্থার সংস্কার করতে সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।

সুপ্রিম কোর্টের পর্যালোচনায় যদি দেখা যায় যে সংবিধানের কোন একটি বিধান আরেকটি বিধানের সাথে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বা সাংঘর্ষিক সেই ক্ষেত্রে এই অসামাঞ্জস্যতা দূর করার জন্য সংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন হতে পারে।

এক কথায় সংবিধান সংশোধন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রক্রিয়া যা রাষ্ট্রের আইন, নীতি এবং সমাজের পরিবর্তনশীল চাহিদার সঙ্গে সংবিধানকে সমন্বিত রাখার সুযোগ দেয়।

এইসব কারণে পৃথিবীর সব দেশের সংবিধানেই এর সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে। এমন কি বাংলাদেশের সংবিধানের ১৪২ ধারায় সংবিধান সংশোধনের বিধান রাখা হয়েছে।

১৪২ ধারায় বলা হয়েছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও-
(ক) সংসদের আইন-দ্বারা এই সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে:


১৪২ ধারার মাধ্যমে সংবিধান সংশোধনের কথা বলা হয়েছে, আবার ৭খ ধারার মাধ্যমে সংশোধন করা যাবেনা বলে ঘোষণা করা হয়েছে। অজ্ঞতা, ব্যক্তি স্বার্থ, এবং অগণতান্ত্রিক মনোভাব কি ভাবে সংবিধান প্রণেতাদের আচ্ছন্ন করেছে তা পরস্পর বিরোধী দুইটি ধারা পাশাপাশি পড়লে অনুধাবন করতে পারবেন।

৭খ ধারায় বলা হচ্ছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যাহা কিছুই থাকুক না কেন .... সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোন পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হইবে।

আবার ১৪২ ধারায় বলা হচ্ছে, এই সংবিধানে যাহা বলা হইয়াছে, তাহা সত্ত্বেও .... এই সংবিধানের কোন বিধান সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন বা রহিতকরণের দ্বারা সংশোধিত হইতে পারিবে।

দুইটি পরস্পর বিরোধী ধারা পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ৭খ ধারা অনুসারে সংবিধানের কতগুলি ধারা সংশোধন করা যাবে না। কিন্তু ১৪২ ধারা অনুসারে যেকোনো ধারাই সংশোধন করা যাবে।

৭খ ধারায় আরো বলা হয়েছে ১৪২ অনুচ্ছেদে (ধারায়) যা কিছুই থাকুক না কেন, অর্থাৎ ৭খ ধারাকে ১৪২ ধারার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। আবার ১৪২ ধারায় বলা হয়েছে এই সংবিধানে যা বলা হয়েছে, তা সত্ত্বেও, অর্থাৎ ১৪২ ধারাকে ৭খ ধারার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। উভয় ধারাকে উভয় ধারার উপর প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এটা কি ভাবে সম্ভব? এই রকম গুরুতর অসঙ্গতি পৃথিবীর কোন সংবিধানে আছে বলে আমাদের জানা নাই।

সংবিধান সংশোধনের বিধান থাকা একটি সাধারণ ব্যাপার। পৃথিবীর সব সংবিধানেই এই বিধান আছে, ব্যতিক্রম বাংলাদেশ সংবিধান। ইতোমধ্যে যেসব অসঙ্গতি আমরা দেখেছি এবং আরো যেসব অসঙ্গতি নিয়ে আলোচনা করা হবে এইসব বাদ দিলেও, শুধু সংবিধান সংশোধনের এই বিধানগুলি বিবেচনা করলে এটা পরিষ্কার ভাবে বুঝা যায় যে একজন ব্যক্তি বা একটি দলের আদর্শকে বিবেচনায় রেখে এই সংবিধান প্রণয়ন করা হয়েছে। এটা একটা ব্যক্তি বা দলের সংবিধান হতে পারে কিন্তু একটা স্বাধীন দেশের সংবিধান হতে পারে না।

জনরাষ্ট্র ভাবনা-১১

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: সময় নিয়ে লিখার জন্যে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.