নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
১৯৮৭ সালে আইনজীবী হিসাবে ময়মনসিংহ বারে এবং পরে ঢাকা বারে যোগদান করি। ১৯৯২ সালে সুপ্রিম কোর্ট বারে যোগ দেই।
সংবিধানের ত্রুটি-বিচ্যুতি, অসঙ্গতি: (৬)
জাতিবিদ্বেষের (Racism) একটি স্বারক:
বাংলাদেশের সংবিধান জাতিবিদ্বেষের একটি প্রামাণ্য দলিল। কোন একটি দেশ বা জাতি এমন প্রকাশ্যে জাতিবিদ্বেষ (Racism) প্রকাশ ও প্রচার করতে পারে তা এই সংবিধান না পড়লে বিশ্বাস করা কঠিন।
সংবিধানের ৬ ধারার (২) উপধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এবং নাগরিকগণ বাংলাদেশী বলিয়া পরিচিত হইবেন।
[The people of Bangladesh shall be known as Bangalees as a nation and the citizens of Bangladesh shall be known as Bangladeshies.]
জাতি হলো একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং রাজনৈতিক সত্তা। একটি জন-গুষ্ঠি তার ইতিহাস, ভাষা, ধর্ম এবং সংস্কৃতির মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে। বাংলাদেশে বাঙালি ছাড়াও প্রায় ৫০টিরও বেশি জাতির মানুষ বসবাস করে। প্রতিটি জাতির নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, এবং ঐতিহ্য রয়েছে। যেমন, চাকমা, মারমা, গারো, সাঁওতাল, মণিপুরী, রাখাইন, খাসিয়া, মুরং, বম, তঞ্চঙ্গ্যা, হাজং, বনযোগী, পাংখো প্ৰভৃতি। এদের সংখ্যা বাঙালির চেয়ে কম হতে পারে কিন্তু প্রতিটি একটি স্বতন্ত্র জাতি, এরা কেউ বাঙালি নয়।
কিন্তু সংবিধানে উল্লেখিত জাতিসমূহকে পরিষ্কার ভাষায় অস্বীকার করে বাংলাদেশে বসবাসকারী সম্পূর্ণ জন গুষ্টিকে বাঙালি জাতি হিসাবে ঘোষণা করে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী। সংবিধানের এই ঘোষণার মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিসমূহকে জাতি হিসাবে অস্বীকৃতি জানানো হয়েছে। চাকমা, মারমা, গারো প্রভৃতি জাতিসমূহ কোন অবস্থাতেই এবং কোন বিবেচনায় বাঙালি নয়। তাদের জাতি সত্তাকে অস্বীকার করা এবং জোর করে তাদেরকে বাঙালি বানানো জাতিবিদ্বেষের একটি প্রামাণিক দলিল।
জাতিবিদ্বেষ বা জাতিগত বিদ্বেষ (Racism) বলতে একটি নির্দিষ্ট জাতি, নৃগোষ্ঠী বা সম্প্রদায়ের প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা, বৈষম্য বা নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করাকে বোঝানো হয়। বাংলাদেশের জনগণ জাতি হিসাবে বাঙালী এই কথার মাধ্যমে বাংলাদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতির প্রতি বিদ্বেষ, ঘৃণা, বৈষম্য ও নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়েছে।
বাঙালি ব্যতীত অন্যান্য জাতিসত্তাকে অস্বীকারের মাধ্যমে এক দিকে যেমন বাংলাদেশ একটি জাতিবিদ্বেষী ও বর্ণবাদী রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে তেমনি রাষ্ট্র হিসাবে এর সংহতি, ঐক্য, ভৌগোলিক অখণ্ডতা প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে। তাছাড়া অন্যান্য জাতিসমূহের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা এই সংবিধানের দ্বিতীয় ভাগে বর্ণিত রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি এবং তৃতীয় ভাগে বর্ণিত মৌলিক অধিকার সংক্রান্ত বিধানাবলীর সাথে সাংঘর্ষিক এবং পরস্পর বিরোধী। সংবিধানের এই বিধান মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা (Universal Declaration of Human Rights), জাতিসংঘের সনদ (United Nations Charter) এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী।
জনরাষ্ট্র ভাবনা-১০
©somewhere in net ltd.