নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহাবুদ্দিন শুভ

শাহাবুিদ্দন শুভ

শাহাবুদ্দিন শুভ লেখালেখির নেশাটা ছাড়তে পারিনি। তাই এক সময় জড়িয়ে গেলাম সাংবাদিকতায়। কাজ করেছি দেশ ও দেশের বাহিরের পত্রিকাতে। আর এখন পুরোপুরি একজন ব্যাংকার স্বত্ব সংরক্ষিত e-mail- [email protected] ০০৮৮ ০১৭১৬ ১৫৯২৮০ e-mail- [email protected] +৮৮ ০১৭১৬১৫৯২৮০

শাহাবুিদ্দন শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্মরণ: আমাদের হাবিবুর রহমান স্যার

২৮ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১১:০২

প্রফেসর হাবিবুর রহমানের দশম মৃত্যুবার্ষিকী ছিল গতকাল বুধবার। তিনি ছিলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় উপাচার্য। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের আগে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগে প্রায় ২৬ বছর শিক্ষকতা করেছেন।


সময় নিয়ে যখন কোন কিছু বলা হয় বা কোথাও পড়ি তখনি স্যারের কথা আমার মনে পড়ে। আমরা যখন দেখলাম দেশের অন্যতম গ্যাস ক্ষেত্র বিবিয়ানা থেকে এলাকাবাসী গ্যাস পাবে না তখন সিলেটে অবস্থানরত হবিগঞ্জ জেলার ছাত্ররা মিলে আন্দোলন শুরু করলাম। আমি ছিলাম তার সভাপতি। স্যার আমাদের বিভিন্ন বিষয়ে উপদেশ দিতেন কি ভাবে কি করতে হবে। স্যার আমাকে উনার লেখা সিলেটের স্থানীয় পত্রিকাতে প্রকাশিত একটি লেখে দিবেন বললেন। পরে দিন বর্তমান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত ও বাউল শাহ আব্দুণ করিমের সাথে স্যারের একটা অনুষ্ঠান ছিল সিলেটে সিটি কর্পোরেশনের মিলনায়তনে। স্যার আমাকে যে সময় দিয়েছিলেন ঠিক তার আগে অনুষ্ঠান স্থলে উপস্থিত ছিলেন এবং আমাকে দেখা মাত্র বুক পকেট থেকে ফটোকপি করা লেখাটি বের করে দিলেন। মানব বন্ধনের দিনও আমাদের আগে স্যার এসে উপস্থিত হন সিলেটে শহীদ মিনারের সামনে। স্যার ছিলেন সময়ের প্রতি সচেতন তিনি কখনও নাকি এক সেকেন্ড দেরিতে আসতেন না ( হাবিবুর রহমান স্যারের অনেক ছাত্র সময়ের ব্যবাপারেও বিভিন্ন সময় লিখেছেন)। আমিও কোন অনুষ্ঠানে স্যারের আগে গিয়ে উপস্থিত হতে পারিনি।

আমি যেহেতু স্যারের সরাসরি ছাত্র ছিলাম না কিন্তু উনার অনেক ছাত্রের কাছ থেকে শুনেছি অভিনব ছিল তার লেকচার ডেলিভারি। তখনও ভার্সিটি গুলোতে মাল্টিমিডিয়ায় পাওয়ারপয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে লেকচার দেওয়ার প্রযুক্তি ছিল না। প্রফেসর রহমান ইংরেজি-বাংলা মিশিয়ে ক্লাসে বক্তব্য দিতেন। তার বক্তব্য ছিল খুবই স্পষ্ট এবং অতি জোরালো। উদাহরণ উপস্থাপন করতেন মানুষের প্রতিদিনের জীবন, সমাজ এবং রাষ্ট্র থেকে। বক্তব্যগুলো অকাট্য যুক্তি ও প্রমাণ দিয়ে ঘোষণা করতেন। হৃদয় ছুঁয়ে যেত আমাদের। মন্ত্রমুগ্ধের মতো আমরা তার কথা শুনতাম। সেই প্রফেসর হাবিবুর রহমান আমাদের সবার মন খারাপ করে দিয়ে চলে এলেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেটা ছিল ১৯৯২ সাল। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়টি তখন একেবারেই নবীন। মাত্র এক বছর আগে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করেছে।

যদিও অনেকে জানেন তারপরও লিখছি ১৯৯৭ সালে প্রফেসর হাবিবুর রহমান শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আমি তখন বিদেশে। সেখান থেকেই উপাচার্য হাবিবুর রহমান স্যারের নানা সাফল্য সম্পর্কে অবহিত হতে থাকি। উপাচার্য হওয়ার আগে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য, সামাজিক বিজ্ঞান স্কুলের ডিন, সিন্ডিকেট সদস্যসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তার নেতৃত্বে এবং প্রফেসর মুহম্মদ জাফর ইকবালের সহযোগিতায় অপটিক ফাইবার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়কে ইন্টারনেট প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা হয়। দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ই প্রথম ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার শুরু করে। তিনি উপাচার্য থাকাকালেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিস্টার পদ্ধতি চালু হয় এবং সেটিও সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে প্রথম ছিল বলে জেনেছি। এ দুটি অর্জন নিঃসন্দেহে ঐতিহাসিক।

একাডেমিক ভবন, শিক্ষার্থীদের জন্য আবাসিক হল, শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন, ডরমিটরিসহ নানা নয়নাভিরাম স্থাপনা গড়ে তুলতে তিনি সমর্থ হন। শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্ভবত দেশের মধ্যে সবচেয়ে চমৎকার 'শহীদ মিনারটি' নির্মাণের ব্যবস্থা করেন তিনি। বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের শিশুদের জন্য তৈরি করেন 'বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল'। মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্য নির্মাণের জন্য সব আয়োজন সম্পন্ন করা হলেও উপাচার্য হিসেবে তার মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সেটা অসমাপ্ত থাকে।

উপাচার্য হিসেবে প্রফেসর হাবিবুর রহমান ব্যাপক সাফল্য লাভ করলেও এক পর্যায়ে তিনি সাম্প্রদায়িক শক্তির রোষানলে পতিত হন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট শিক্ষার্থীদের আবাসিক হল ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ভবনের নামকরণ দেশের বরেণ্য ব্যক্তিদের নামে করার জন্য সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। উপাচার্য সিন্ডিকেটের এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে গেলে মৌলবাদী গোষ্ঠী তার তীব্র বিরোধিতা করে। এমনকি তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের কেউ কেউ বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট কর্তৃক গৃহীত নামকরণ সংক্রান্ত সিদ্ধান্তটি মেনে নেননি। ফলে এক জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয় এবং দীর্ঘদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকে। রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসেবে নামকরণের সিদ্ধান্ত স্থগিত করলে বিশ্ববিদ্যালয়ে আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে।

প্রফেসর হাবিবুর রহমান আপাদমস্তক ছিলেন একজন অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিত্ব। তিনি তার মতাদর্শে ছিলেন অতি উচ্চকণ্ঠ। আপসহীন এবং নির্ভীক চরিত্রের অধিকারী প্রফেসর রহমান কখনও অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি। আত্মবিশ্বাসী ও কর্মনিষ্ঠ এই শিক্ষক তার ব্যক্তিত্বের কারণেই বিরোধী মতাদর্শের অনেকের মনও জয় করতে পেরেছিলেন।

স্যার বেচেঁ থাকলে আমাদের নবীগঞ্জ, সিলেট তথা দেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে আর অবদান রেখে যেথে পারতেন। যতদিন শাবি থাকবে। যতদিন রাজশাহী বিশ্বদ্যলায় ও শাহাজালালা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ কর্মবিভাগ থাকবে ততদিন হাবিবুর রহমান স্যারের নামও থাকবে একজন ভাল ভিসি, একজন সবার প্রিয় ভাল শিক্ষক ও সর্বপরি একজন ভাল মানুষ হিসেবে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৩

ঋতো আহমেদ বলেছেন: হাবিবুর রহমান স্যারের ভিসি হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় আমি শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের আই পি ই বিভাগের ছাত্র ছিলাম। আপনার লিখার মাধ্যমে স্যারকে আবার মনে পড়ল। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.