নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শাহাবুদ্দিন শুভ

শাহাবুিদ্দন শুভ

শাহাবুদ্দিন শুভ লেখালেখির নেশাটা ছাড়তে পারিনি। তাই এক সময় জড়িয়ে গেলাম সাংবাদিকতায়। কাজ করেছি দেশ ও দেশের বাহিরের পত্রিকাতে। আর এখন পুরোপুরি একজন ব্যাংকার স্বত্ব সংরক্ষিত e-mail- [email protected] ০০৮৮ ০১৭১৬ ১৫৯২৮০ e-mail- [email protected] +৮৮ ০১৭১৬১৫৯২৮০

শাহাবুিদ্দন শুভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হালাম

২৪ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:১৯

হালাম

হালাম ১একটি আদিবাসী জনগোষ্ঠী। এটি তিববতী-বর্মণ জনগোষ্ঠীর একটি শাখা। ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ব্রিটিশ শাসনামলের মধ্যবর্তীকালে হালামদের এদেশে আগমন ঘটে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলায় এদের বসবাস করতে দেখা যায় এবং এদের সংখ্যা অনধিক পাঁচ হাজার। সিলেট ও হবিগঞ্জ জেলার চা বাগানে এরা চা-শ্রমিক হিসেবে জীবিকা নির্বাহ করে।


ভাষা::
হালাম জনগোষ্ঠীর প্রধান ভাষা বাংলা। বিদ্যালয়ে পাঠগ্রহণসহ সব কাজই বাংলাভাষার মাধ্যমে চলে। তবে প্রবীণ হালামরা কক্বরক ভাষায় কথা বলেত দেখা যায়।

গোত্র::
হালামরা মোট ১২টি গোত্রে বিভক্ত। গোত্রগুলি হচ্ছে: বংচের, চারাই, হ্রাংখল, কাইপেং, কাল্জাং, কালই, লাংকাই, মাচাফাং, মিগ্লী, মিতাহার, মল্সম এবং রূপিনী। ছেলেমেয়েরা পিতার গোত্র নামই ব্যবহার করে থাকে। বিয়ের পর মেয়ে গোত্রান্তরিত হয়। তাদের অনেকেই বিশ্বাস করে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় তাদের সামাজিক অবস্থান মধ্যবর্তী স্থানে। পরিবারে পিতাই মূল নিয়ন্ত্রক ও পরিবার প্রধান। তবে হালাম নারীরা সামাজিক স্বাধীনতা ভোগ করে এবং তাদের অবস্থান অনেকটাই সুসংহত। যে কোনো সমস্যা নিরসনে তাদের মতামতকে গুরুত্ব দেওয়া হয়। সমাজে প্রবীণদের সম্মানজনক স্থান রয়েছে। সমাজে কোনো সমস্যার উদ্ভব ঘটলে প্রবীণেরা প্রথমে সমস্যা নিরসনে এগিয়ে আসে।

ধর্ম ::
হালামরা সনাতন হিন্দুধর্মে বিশ্বাসী। হিন্দু দেবদেবীর পাশাপাশি তাদের কতিপয় ঐতিহ্যবাহী দেবদেবী রয়েছে যা তারা নিজস্ব পদ্ধতিতে পূজা করে। তারা লক্ষ্মী, সরস্বতী, শনি, কার্তিক, গণেশ প্রভৃতি হিন্দু দেবদেবীর পূজা করে। হিন্দু দেবদেবীর পূজায় তারা ব্রাহ্মণ এবং আদি বিশ্বাসের দেবদেবীর পূজায় নিজস্ব পুরোহিতের সাহায্য গ্রহণ করে থাকে। আদি ধর্মের পুরোহিতকে তারা আচাই নামে অভিহিত করে। মাট্লীকুচাং, টইকেলটাং, বাক্লা প্রভৃতি তাদের আদি দেবদেবী। এছাড়া হালামদের অইপুমাঙ্গই নামে একজন রক্ষাকর্তা দেবতা রয়েছে যার পূজা নিয়মিত করতে হয়। তারা বছরে একবার সম্মিলিতভাবে এই দেবতার পূজা করে থাকে। হালামদের সবচাইতে বড় পূজার নাম খের পূজা। খের পূজা চলাকালে তারা কোনো বহিরাগতকে নিজ এলাকায় প্রবেশ করতে দেয় না। নিজস্ব দেবদেবীর পূজায় তারা পাঁঠা, হাঁস, মোরগ প্রভৃতি উৎসর্গ করে এবং সেই সঙ্গে প্রচুর পরিমাণে মদ পান করে। বর্ণহিন্দুদের মতো জন্মান্তরবাদ, তীর্থভ্রমণ, পিন্ডদান সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা নেই। বর্ণহিন্দুরা তাদের সঙ্গে কোনো সামাজিক যোগাযোগ রক্ষা করে না বরং তাদেরকে অন্ত্যজ শ্রেণীর আদিবাসী হিসেবেই বিবেচনা করে।

বিবাহ ব্যবস্থা::
হালাম সমাজে একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। সাধারণত ছেলের বয়স কুড়ি আর মেয়ের বয়স ষোল বছর হলে বিবাহের উপযুক্ত বলে বিবেচিত হয়। হালাম সমাজে পিতামাতা বা অভিভাবক বা তৃতীয়পক্ষের (পিলাই) মাধ্যমে বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়া প্রেমভালোবাসার মাধ্যমে আবার হরণ করেও বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়। এক্ষেত্রে পিতামাতা বা অভিভাবক মহলের সম্মতি গ্রহণ করে সামাজিক অনুমোদন লাভ করতে হয়। কেবল বিয়ের দিন কনে সিঁথিতে সিঁদুর অথবা লাল কোনো পদার্থ ধারণ করে। হালাম সমাজে একবিবাহ প্রথা প্রচলিত। তবে অনিবার্য কারণে হালাম পুরুষ প্রথম স্ত্রীর অনুমতি গ্রহণ সাপেক্ষে একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করতে পারে। হালাম সমাজে বিবাহবিচ্ছেদেরও প্রচলন রয়েছে এবং তাদের ভাষায় একে রট্টই বলা হয়। বিবাহবিচ্ছেদের পর সন্তানসন্ততি পিতার কাছেই থাকে। পরে স্বামী বা স্ত্রী পুনর্বিবাহ করতে পারে। একইভাবে বিধবা এবং বিপত্নীকেরাও পুনর্বিবাহ করতে পারে।


বিয়ের অব্যবহিত পরে কমপক্ষে এক বছরের জন্য নবদম্পতিকে কনের পিতৃগৃহে বসবাস করতে হয়। এই সময়ে বর বিনা পারিশ্রমিকে তার শ্বশুর-শাশুড়ির জন্য কায়িক শ্রমদান করে। পরে দম্পতির ঠিকানা হয় বরের পিতৃগৃহে। বিয়ের প্রস্তাব হয়ে গেলে উভয় পক্ষের পিতামাতা বা অভিভাবকগণ বিয়ের দিনতারিখ নির্দিষ্ট করে। নির্ধারিত দিনে বর তার দলবলসহ কনের পিতৃগৃহে আগমন করে। বিয়ের লগ্ন হলে বরকনে পাশাপাশি বাড়ির উঠানে দাঁড়ায়। সে সময় পুরোহিত (আচাই) একটি জলপাত্র থেকে জল হাতে নিয়ে বরকনে উভয়ের মাথায় মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে ছিটিয়ে দেয়। সেই মন্ত্রপূত জলকে হালামরা আর্থাংতেই বলে। এই জল মঙ্গলদেবতা আর্থাংনাই-এর নামে উৎসর্গীকৃত। এর পর আচাই বরকনের উদ্দেশ্যে উপদেশ বাণী প্রদান করেন এবং বিয়ের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেন। এর পর পানভোজন এবং নাচগানের পালা শুরু হয়।

সৎকার::
হালামরা মৃতদেহ দাহ করে। মৃতদেহ দাহের নির্দিষ্ট স্থান বা শ্মশানকে তারা থান বলে। মৃতদেহ শ্মশানে নেওয়ার আগে তারা থিবুপেক নামে একটি অনুষ্ঠান পালন করে। এই অনুষ্ঠানে এক আঘাতে একটি মোরগ মেরে রান্না করে ভাতসহ মৃত ব্যক্তির আত্মার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়। মৃতদেহ শ্মশানে নেওয়ার পর উপস্থিত বয়স্ক নারীপুরুষ চিতায় কাঠ সাজিয়ে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে। হালামরা একে মাংরুচাক্রাং অনুষ্ঠান বলে। হালাম সমাজে মৃতের পরিবারে মৃতাশৌচ পালন করা হয়। সাম্সুপাই সম্পন্ন না করা পর্যন্ত মৃতাশৌচ পালন করতে হয়।

বিচার ব্যবস্থা::
প্রতিটি গ্রামে হালামদের একটি সামাজিক কাউন্সিল রয়েছে। এই কাউন্সিলে শালিসের মাধ্যমে সমস্যার নিরসন করা হয়। কাউন্সিলের প্রধানকে চৌধুরী বলা হয়। বিচারকাজে চৌধুরীকে সহযোগিতা করেন কয়েকজন প্রবীণ ব্যক্তিত্ব। এছাড়া কয়েকটি গ্রামের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কাউন্সিলও আছে। এই কাউন্সিলের প্রধান ও তার সহকর্মীকে গ্রামের লোকজনেরা মনোনয়ন দিয়ে থাকেন। এই কাউন্সিলের প্রধানকে রায় বলা হয়। তাঁর সহকর্মীদেরকে যথাক্রমে বলা হয় কাঞ্চন, চাপিলাথম, কর্মা, সেঙ্গিয়া, টার এবং প্লান্টা। এদের দায়িত্ব হচ্ছে সমাজে শান্তিশৃংখলা বিধান, অন্যায়অবিচারের প্রতিকার এবং সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ। গ্রাম কাউন্সিলের বিচার কারোর মনঃপুত না হলে সে সমাজ কাউন্সিলের নিকট আবেদন জানাতে পারে এবং সমাজ কাউন্সিলের বিচারই চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হয়। দোষী ব্যক্তিকে এই কাউন্সিল অর্থদন্ড, সমাজ থেকে বহিষ্কার, দৈহিক শাস্তির বিধান করতে পারে। আন্তঃজাতিগোষ্ঠিক গোলযোগ নিরসনের জন্য হালামরা গ্রাম পঞ্চায়েতের স্মরণাপন্ন হয়ে থাকে।

পোষাক::
হালামরা বাঁশ ও বেতের সাহায্যে নানা ধরনের ঝুড়ি ও কাপড় বুননে পারদর্শী। এছাড়া তারা বিভিন্ন উৎসবে গৃহ প্রাঙ্গণে আল্পনা অাঁকতেও দক্ষ। তাদের মধ্যে লোককাহিনী প্রচলিত আছে। কথায় কথায় ধাঁধা, হেঁয়ালি, ছড়া পরিবেশন করা হালাম সমাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

তথ্য সূত্র বাংলাপিডিয়া

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.