নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
জাতিসংঘ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার বিষয়ক ঘোষণাপত্র দিয়েছে ২০০৭ সালে। আমি বিষয়টা তখন খতিয়ে দেখিনি, এখন আদিবাসী না উপজাতি বলা হবে তা নিয়ে পুনরায় বিতর্ক ওঠায় আমি একজনকে বললাম, আপনার পূর্বপুরুষ যে ভারতীয় কিংবা আরবীয় কিংবা ইরানি আফগানি নয় তার নিশ্চয়তা কী? হতেই পারে আপনার আট নয় পূর্বের পুরুষটি অন্য কোন অঞ্চল থেকে এদেশে এসেছেন, এবং আপনার পূর্বপুরুষ হতে পাঁচশো বছর ধরে আপনি আপনার গ্রামে বাস করছেন, এখন কি আপনাকে আমি বহিরাগত বলব? বলা উচিত আদৌ? কোন ভিটায় একটি পরিবার চার প্রজন্ম পার করলে তাদের আর সেখানে বহিরাগত বলার উপায় থাকে না যদি না তাদের বসতি অস্থায়ী হয় এবং তারা ভিন্ন একটি সার্কেল নিয়ে জীবনযাপন করে। যাহোক, আপনার পূর্বপুরুষ এদেশের না হলেও আপনি রক্তমাংসে পুরোদস্তুর বাঙালি এ তো অস্বীকার করা যাবে না!৷ তাহলে ষোড়শ শতকে পার্বত্য চট্টগ্রামে উপজাতিরা এসে বসবাস শুরু করার এত বছর পরও কেন তাদের আমরা বহিরাগত বলে কটাক্ষ করব??
এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি বললেন, তাদের আমরা আদিবাসী বলতে পারি না, বিষয়টা কেবল উদার হয়ে স্বীকার করার মত সহজ সাধারণ নয়, এটা স্বীকার করা হলেই তারা আলাদা রাষ্ট্র গঠনের সাহস বা অধিকারও পেয়ে যাবে এবং বাংলাদেশ থেকে আলাদা হয়ে যাবে! জাতিসংঘ আইনে এমন অধিকারই দেওয়া হয়েছে! আপনি বোধহয় জাতিসংঘ আইনটি ঘেঁটে দেখেননি।
তখনও তো ঘেঁটে দেখিনি, অগত্যা দেখার দরকার হল। ৪৬ অনুচ্ছেদের ঘোষণাপত্রটি পড়লাম, এবং প্রতিটা অনুচ্ছেদেই আমি বিরক্ত হয়ে জবাব খুঁজতে লাগলাম, আরে ভাই, আদিবাসীটা কারা, সেটার সংজ্ঞা কই??
৪৬টা অনুচ্ছেদ লেখা হয়েছে, অথচ ঠিক কাদের আদিবাসী বলা হবে, সেটাই তারা বলতে পারে নাই! এ তবে কেমন অন্ধের হস্তি দর্শন হয়?
তাহলে প্রথমেই আদিবাসী বলতে কাদের বোঝানো হয় তা নিরূপণ করা জরুরি, এরপরে বাকি আলোচনা। জাতিসংঘ বা আন্তর্জাতিক আইনে আদিবাসীর কোন স্বীকৃত সংজ্ঞাই নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে আদিবাসী বলতে বোঝায় এমন সম্প্রদায়কে যারা ভৌগোলিকভাবে স্বতন্ত্র, ঐতিহ্যবাহী বাসস্থান বা পূর্বপুরুষের অঞ্চলেই বসবাস করে বা সংযুক্ত থাকে এবং নিজেদের একটি স্বতন্ত্র সাংস্কৃতিক গোষ্ঠির অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে। কিন্তু এই সংজ্ঞা নৃগোষ্ঠী বা উপজাতি হিসেবে যথাযথ হয়, আদিবাসী কথাটার সঙ্গে ওই যে আদি শব্দটা আছে, এটাই এই সংজ্ঞায় অনুপস্থিত। অতএব, এ আলাপ আর প্রয়োজন দেখি না।
আদিবাসী সম্পর্কে এপর্যন্ত সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য সংজ্ঞা হিসেবে স্বীকার করা হয় প্রখ্যাত নৃবিজ্ঞানী লুইস হেনরী মর্গানের প্রদত্ত সংজ্ঞাকে। তাঁর মতে, ‘কোনো স্থানে স্মরণাতীত কাল থেকে বসবাসকারী আদিমতম জনগোষ্ঠী যাদের উদ্ভব-উৎপত্তি, ছড়িয়ে পড়া, বিকশিত হওয়া কিংবা বসতি স্থাপন সম্পর্কে কোনো সুনির্দিষ্ট ইতিহাস নেই তারাই সেই স্থানের আদিবাসী।’
এই সংজ্ঞাকেই বিশ্লেষণপূর্বক সার্বিক বিবেচনা যোগ করলে বিষয়য়টি এমন দাঁড়ায়— যারা নির্দিষ্ট জনপদের সৃষ্টিলগ্ন থেকে সেই জনপদের বাসিন্দা এবং যারা আদিম সংস্কৃতির ধারক এবং বাহক। আদিম সংস্কৃতির কোনো কিছু তারা ত্যাগ করেনি। আদিবাসীদের কাছে সভ্যতার আলোকবর্তিকা পৌঁছায়নি এবং তারা অনগ্রসর এবং পশ্চাৎপদ।
তাহলে সে অর্থে পার্বত্য অঞ্চলের নৃগোষ্ঠী বাসিন্দাগণ এদেশের আদিবাসী নন। তাঁরা যদি এখন বলেন যে, ষোড়শ শতকে তাঁরা আসেননি, ওটা তাঁদেরই বানানো ইতিহাস, চম্পকনগর কনসেপ্টটাও কাল্পনিক, তাতেও লাভ নেই। কারণ এই অঞ্চলের নৃতাত্ত্বিক পরিচয় অনেক আগেই ব্যাখ্যা করা হয়ে গেছে।
এই ভূখণ্ডে জনসমাগম ও উৎপত্তির ধারা বিচারে পাঁচটি ভাগ করা হয় আমরা জানি, যার প্রথম ভাগ নেগ্রিটো বা নিগ্রোয়েড। এটি একমাত্র শ্রেণি যা এই ভূখণ্ডের সৃষ্টিলগ্ন হতে এখানে বাস করছে, যার সঙ্গে সংকরায়নের ফলে (প্রথমে অস্ট্রিক, পরে অন্যান্য বিবিধ) আমাদের দৈহিক গড়ন ও মুখাবয়বের বর্তমান আকার এসেছে। এ আমরা নেগ্রিটো গোষ্ঠীর নিরেট ধারক বাহক নই, তবে আমরাই উত্তরসূরী। বাকি যে কয়টি ধাপ বা শ্রেণি রয়েছে তাদের গড়ন ও বৈশিষ্ট্যে আলাদা স্বাতন্ত্র্য আছে। আমরা বিস্তৃত জনগোষ্ঠী, কেবল একটা গোত্র হয়ে আমরা থাকিনি, আমরা গোটা দক্ষিণ এশীয় জনপদে ছড়িয়ে রাজত্ব করেছি। এজন্য আমাদের কোন বেষ্টনীতে দেখানো যায় না। ইতোমধ্যে বলেছি, নেগ্রিটো বাদে বাকি সবাইই অভিবাসী। কারণ পরের যে ধাপটি এসেছে তারা অস্ট্রিক গোষ্ঠী। অনেক বিজ্ঞ গবেষকই বলেন, বাঙালি জাতির প্রধান অংশ গড়ে উঠেছে অস্ট্রিক গোষ্ঠী হতে। কিন্তু নেগ্রিটোদের সঙ্গে সহাবস্থান ও সংকরায়নের বিষয়টি সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে বলা হয় না। যাহোক, অস্ট্রিকেরাও এই ভূখন্ডে অভিবাসী, আনুমানিক ৫০০০ বছর পূর্বে আসে এখানে। প্রাচীন হিসেবে এই জনগোষ্ঠীকে আদিবাসী মেনে নিতে চাইলেও বড় একটি প্রশ্ন ওঠাতে চাই আমি, অস্ট্রিক জাতির প্রধান উত্তরসূরী সাঁওতালগণ, তাহলে এরাই আমাদের অন্যতম আদিবাসী। এই আদিবাসীদের জন্য কে কবে কেঁদেছেন, কে কী পদক্ষেপ নিয়েছেন, কে কী আওয়াজ তুলেছেন, কে কী করণীয় ভেবেছেন এই জাতির পৃষ্ঠপোষকতার লক্ষে? ভাবেননি। কেন ভাবেননি? কারণ তারা একটি ভূখণ্ড দখল রেখে অস্ত্রসজ্জিত বাহিনী নিয়ে আলাদা রাষ্ট্রের প্ল্যান করেনি। সরল অনগ্রসর সাঁওতাল জনগোষ্ঠী এসব অস্ত্রের খেলা বোঝেনি বলেই তাদের কেউ তোয়াজ করেনি! এদেশে সাঁওতালের সংখ্যাও মাত্র ১,২৯,০৫৬ জন। মাত্র এক লাখ ত্রিশ! নদীয়ার সাঁওতালদের কথা বাদ, আমার দেশের আমার আদিপুরুষের কী হাল? কী সুব্যবস্থা? কী সুদৃষ্টি???? পার্বত্যায় নমোঃ করছেন, এই দিকটায় কেন তাকান না?? এখানে স্বার্থ সুবিধা সুশীলতার ব্যানার নেই বলেই?
অস্ট্রিক গোষ্ঠীর আর যে কয়টি ধারা আমাদের দেশে বিদ্যমান আছে সেগুলো হল, মুণ্ডা সম্প্রদায় (৩৮,২১২ জন মাত্র), কোল সম্প্রদায় (২,৮৪৩ জন মাত্র), মালপাহাড়ি (২,৮৪০ জন মাত্র), ভিল (মাথা গোণা মাত্র ৯৫ জন!!) আমাদের আদিপুরুষদের বিলুপ্তির এই শেষদশা, এদিকে কেউ তাকাননি, ভিল আর মালপাহাড়ি নাম তো অনেকে এখনই প্রথম শুনলেন! বড়ই নৃগোষ্ঠী প্রেম আমাদের! এখন প্রেমের ধারাটি এদের দিকেও প্রবাহিত করার সময় এসেছে, এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে চলেছে।
এরপর এদেশের জনগোষ্ঠীকে সমৃদ্ধ করে মেধাবী দ্রাবিড় গোষ্ঠী। এরা এসেছে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল থেকে। এবং নেগ্রিটো অস্ট্রিক মিশ্রণের সঙ্গে এরাও মিশ্রিত হয়ে আমাদের বর্তমান শেইপ প্রদানে ভূমিকা রেখেছে। এরপরে এদেশে অভিবাসী হয়ে আসে ভোটচিনীয় বা মঙ্গোলয়েডরা। পার্বত্য অঞ্চলের যে উপজাতি দেখেন তাদের অধিকাংশই এরা। আরেকটি গোষ্ঠী আছে তিব্বত-বর্মী। আশা করি, এ নিয়ে আর তাহলে বিস্তারিত বলার দরকার হবে না।
আদিবাসী তো কেউই নয়, তাই বলে সবাইকেই বিপন্ন হবার পথে ছেড়ে দেব আমরা?? এমনও তো হওয়া উচিত নয়। তাহলে এখন কথা বলা যায় আমাদের (উপজাতি বলব না, তাদেরকে আমরা আমাদেরই অংশ মনে করি) নৃগোষ্ঠীগুলোকে নিয়ে। এই নৃগোষ্ঠীগুলো স্পষ্টতই বিশেষ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক! এই ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে উত্তরোত্তর, অতএব, এ নিয়ে আমাদের প্রত্যেকেরই কথা বলা উচিত। ঐতিহ্যগুলো হল নাচ গান, প্রবাদ, উপকথা, পোষাক খাবার এবং ভাষা ও বর্ণমালা! ত্রিপুরা নারীদের পোষাক রিনাই রিসা এখন আর পরা হয় না, পাহাড় ও টিলায় বিন্নি ধানের বাইশটি জাত এর কোন সংরক্ষণ বা গবেষণার কথা শোনা যায় না! আমাদের এসব সংরক্ষণের কথা এখনও ভাবা উচিত, জাতিগুলো হারিয়ে যাচ্ছে এই দিকে খেয়াল করা উচিত, এদের জীবনধারণ ও টিকে থাকা নিয়ে আমাদের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। নৃগোষ্ঠীগুলোর প্রকৃতি ও পরিবেশ হতে অর্জিত জ্ঞান, উপকথা প্রবাদ ইত্যাদি সমূহ নিয়ে লেখালেখি দরকার, পুস্তক সংরক্ষণ দরকার। আমরা নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য রক্ষার কথা বলি অথচ মিশনারীরা সেবা ও সহায়তার নামে ধর্মান্তরিত করে যে তাদের সংস্কৃতি উৎখাত করে চার্চভিত্তিক জীবনচর্চা এনে দিয়েছে এই বিষয়টা নিয়ে কাউকেই কথা বলতে দেখা যায় না!
আরেকটা জিনিস, নৃগোষ্ঠীর ঐতিহ্য নিয়ে ভাবলেও, দেশ থেকে তাঁত যেভাবে হারিয়ে গেল তা নিয়ে কোন চেষ্টা খুব একটা হল না।
এবার জাতিসংঘের কাছে ফিরে আসি। জাতিসংঘের পুরো ঘোষণাপত্রের সারাংশ হিসেবে তারা নিচের বারোটি পয়েন্ট উল্লেখ করেছে। ৪৬ নং অনুচ্ছেদে বলেছে কোন ব্যাখ্যা করা যাবে না।
১. আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার
২. ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর অধিকার
৩. আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি ও ভূখণ্ডের ওপর সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার
৪. মানবিক ও বংশগত সম্পদসহ সাংস্কৃতিক অভিপ্রকাশের ওপর নিয়ন্ত্রণের অধিকার
৫. ভূমি ও ভূখণ্ড হতে উচ্ছেদ থেকে রেহাই পাবার অধিকার
৬. সাংস্কৃতিক প্রথা ঐতিহ্য অনুশীলন ও পুনরুজ্জীবিতকরনের অধিকার
৭. নিজস্ব ভাষায় নিজস্ব সংবাদ মাধ্যম প্রকাশের অধিকার
৮. মাতৃভাষায় শিক্ষার অধিকার
৯. উন্নয়নের অধিকার: অগ্রাধিকার ও কর্মকৌশল নির্ধারণ
১০. নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী ঔষধ ও স্বাস্থ্যসেবা সংরক্ষণের অধিকার
১১. ছিনিয়ে নেওয়া সম্পত্তি ও সম্পদ ফিরে পাবার অধিকার
১২. স্বীয় নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, উন্নয়ন ও প্রতিষ্ঠান নির্ধারণের অধিকার
১ নং অধিকার সব দেশের সব নাগরিকেরই থাকে।
২ নং অধিকারও সবার থাকে। সরকার বা রাষ্ট্র যখন আমাদের জমি একোয়ার করে তখন আমরা ছেড়ে দিতে বাধ্য হই, যেহেতু এটা জাপান নয়। তবে যত্রতত্র ভূমি দখলের প্রতিবাদ আমাদের করতেই হবে। এখানে আরেকটু ব্যাখ্যা প্রয়োজন ভূমি অধিগ্রহণ একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়লে সরকার ওই ভূমির বাসিন্দাদের পুনর্বাসনেরও ব্যবস্থা করে, এটা নিয়ে বলা হয় না, শুধুই ভূমি দখল নিয়ে বলা হয় কেন!
৩ নং— আমাদের দেশের মধ্যে যে উগ্রপন্থী এবং বিচ্ছিন্নতাবাদী ৬৯টি সশস্ত্র বাহিনীর কথা শোনা যায় যার কোন তালিকা অবশ্য কোথাও পাওয়া যায় না সেভাবে। সশস্ত্র বাহিনীর তাণ্ডব আমরা সবাই কমবেশি জানি, কিন্তু শুধু শান্তি বজায় রাখার জন্য এ নিয়ে আমরা কোথাও কথা বলি না। কোন ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ায় ইউপিডিএফ, জেএসএস, জেএলএ, পিসিজেএস এসব নাম সহজে উচ্চারণও করতে দেখা যায় না। বিভিন্ন আঞ্চলিক পত্রিকা ঘেঁটে এই কয়টি নামই পাওয়া যায় কেবল। আমাদের মানবাতাবাদী অনেককেই পাহাড়ের পক্ষে কথা বলতে দেখা যায়, কিন্তু এসব সশস্ত্র বাহিনীর হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, চাঁদাবাজি নিয়ে এদের কথা বলতে দেখা যায় না! আমাদের মানবতাবাদী অনেককে পাহাড়িদের আলাদা রাষ্ট্র দিয়ে দেবার মত দাবিও করতে দেখা যায়! পাহাড়িদের ওপর অত্যাচার আর অত্যাচার হচ্ছে এই বলে ক্রন্দন করতে দেখা যায়, কোথায় কী অত্যাচার হয়েছে, মূল ঘটনা কী, উৎস কী তা আর বলতে দেখা যায় না! ভূষণছড়া হত্যাকাণ্ডের কথা তো এরা জানেই না। এদের মানবতা একচক্ষুবিশিষ্ট!
তো দেশের সার্বভৌমত্বের স্বার্থেই, নিরাপত্তার স্বার্থেই সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। সেনাবাহিনী কাউকে নিরাপত্তা দিতে গেলেই কোন অন্যায়ে হস্তক্ষেপ করতে গেলেই যদি সামরিক কার্যক্রম বন্ধের অধিকার চাওয়া হয় এবং জাতিসংঘ ওইটুকুই বোঝে, বাকিটুকু বোঝে না, তাহলে জাতিসংঘের কাছে এই বিষয়ের সুষ্ঠু চিত্র আবারও পাঠানো দরকার। পাহাড়ের মধ্য দিয়ে রাস্তা করা কেন হচ্ছে এ নিয়ে এরা পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে বলে অপপ্রচার চালায়, যখন রাস্তা ছিল না তখন রোগী আনার ব্যবস্থা না হবার দরুন, শস্য বিক্রয়ের লক্ষ্যে পরিবহন ব্যবস্থা না থাকার দরুন শস্য পচলে, মানুষ মরলে বলা হত আমরা অবহেলিত, আমাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে! আবার রাস্তা করতে গেলেই পাহাড় ধ্বংস করা হচ্ছে। পাহাড়ে রিসোর্ট সব দেশেই আছে, রিসোর্টে উপার্জন পাহাড়িদেরই হয়, রিসোর্টের প্ল্যান করে ব্যবসায় সৃষ্টি করা ও উপার্জনে পরিকল্পনা পাহাড়ের বাসিন্দা থেকেই আসে। সেটাও বাংলাদেশের দোষ বলে প্রচার করা হয়৷ সমতল থেকে যারা পাহাড়ের হয়ে এই অপপ্রচারের রাজনীতি করেন, তারা দেশের কোন ভালোটা চেয়ে করেন আমার জানা নেই। উত্তর সম্ভবত তাদের কাছেও নেই।
৪ নং এ সাংস্কৃতিক অধিকারের কথা বলা হয়েছে, তাদের অধিকার তো তাদের কাছে আছেই, বাংলাদেশ সরকারও তাদের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান নিয়মিত প্রচার করে।
৫ নং নিয়ে আগেই বলা হয়েছে। আর সব পয়েন্ট অনুমেয়, এর পক্ষে কাজও হচ্ছে, আরো বেশি এর পক্ষে কথা বলাও উচিত। আমি শুধু ১০ নং পয়েন্টটা বলতে চাই আলাদাভাবে। নিজস্ব ঔষধ কবিরাজি, ভেষজ ইত্যাদি জ্ঞান খাটো করে দেখার উপায় নেই, এই জ্ঞানগুলো লিপিবদ্ধ হওয়া উচিত এবং এগুলোর ওপর বিজ্ঞান সম্মত গবেষণা ও কবিরাজি চেষ্টার পৃষ্ঠপোষকতাও থাকা উচিত। সেই সঙ্গে কুসংস্কার এবং ভুল চিকিৎসাকেও প্রমোট করার সমান অধিকার দিতে হবে এই বিষয়ে জাতিসংঘ কোন বুঝটা বুঝেছে আমিই বুঝতে পারছি না।
এই দীর্ঘ আলাপ এখন শেষ করব। আদিবাসী ঐতিহ্য ধরে রাখা বলতে অস্বাস্থ্যকর প্রথা ও আচার ধরে রাখতে হবে এমন ক্ষেত্রে আমার এবং আমার মত অনেকেরই আপত্তি আছে।
নৃগোষ্ঠীদের আদিবাসী স্বীকৃতি দেবার তো কারণই নেই, দেওয়া হলেও যে তারা আলাদা রাষ্ট করার চিন্তা করতে পারবে শুধু, আর চেষ্টার নামে অরাজকতারই চেষ্টা করতে পারবে- এ বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশের উল্লেখযোগ্য নৃগোষ্ঠীর তালিকা ও জনসংখ্যা নিম্নরূপ—
চাকমা ৪,৮৩,৩৬৫ জন। মঙ্গোলীয় আরাকান
মারমা ২,২৪,২৯৯ জন। মঙ্গোলীয় আরাকান
ত্রিপুরা ১,৫৬,৬২০ জন। মূল ভারত।
গারো ৭৬,৮৫৪ জন। তিব্বত-বর্মী। ভারতীয়, গারোরা ৯০ভাগই খ্রিস্টানে কনভার্টেড।
ওঁরাও ৮৫,৮৫৮ জন।
তঞ্চঙ্গ্যা ৪৫,৯৭৪ জন। মঙ্গোলীয়।
মুরং ৩৯,০০৪ জন। আরাকান হতে ১৪৩০ সালে আসে। সবচেয়ে প্রাচীন এরা।
বম ১২,৪২৪ জন। মঙ্গোলীয়।
কোচ ১৬,৯০৩ জন। তিব্বত-বর্মী।
মণিপুরী ২৪,৬৯৫ জন। সর্বপ্রাচীন ১০০০ খ্রিস্টাব্দ
রাখাইন ১৩,২৫৪ জন। মঙ্গোলীয়
এই রাষ্ট্র বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলকে ত্রাণ ঔষধ ও নিরাপত্তা সহায়তা দিতে সর্বাত্মক যত্নশীল সবসময়, পার্বত্য অঞ্চলের পিছিয়ে থাকা আমাদের ভাইদের চাকরি ও শিক্ষায় উৎসাহী করা হচ্ছে কোটা দেওয়া হচ্ছে, তারা অনেকেই শহরমুখী হয়ে উন্নত জীবনযাপনে আকৃষ্ট হচ্ছে। এর সবই ইতিবাচক। ইতিবাচক নয় যা তা হল নিজেদের দেশের অংশ না ভেবে আলাদা ভাবা। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষও এই দেশ স্বাধীন করার মহান যুদ্ধে অংশ নিয়েছে। রাষ্ট্র তাদের গুরুত্ব দেয়, তারা ডাক দিয়ে কিছু চাইলে রাষ্ট্র তা সবার আগে শোনে। রাষ্ট্রের প্রতি তাদেরও ভালোবাসা পোষণ করতে হবে, আর দশটা নাগরিকের মতই রাষ্ট্রের কাছে যেকোন কিছু চাইতে হবে, রাষ্ট্রকে পরামর্শ দিতে হবে। নিজেকে পৃথক ভেবে আচরণ করলে তফাতটা রয়েই যাবে। আসুন সবাই দেশ নিয়ে পজিটিভ হই, নেগেটিভিটি না ছড়াই, সত্যকে সত্য বলি, মিথ্যাকে মিথ্যা বলে পরিহার করি।
©somewhere in net ltd.