নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্র্যান্ড, ডিস্কাউন্ট এবং আমাদের মধ্যবিত্ত ভাবনা

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:২২

যেকোন ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা অর্জন করে তার পরিষেবার গুণগত মানের কারণে। কিন্তু সর্বাধিক পরিচিতি পায় তার দামের কারণে! শুনতে অদ্ভুত লাগল? এক্ষেত্রে আমি প্রায়ই যে সহজ উদাহরণটা ব্যবহার করি তা হল রোলেক্স ঘড়ি! যদি প্রশ্ন করা হয়, পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো ঘড়ি কোন ব্র্যান্ডের?
প্রত্যেকে একবাক্যে স্বীকার করবে, রোলেক্স!
কেন রোলেক্স? এর উত্তর খুঁজতে গেলেই প্রথমে দামের বিষয়টাই আসবে! রোলেক্স ঘড়ি খুব ভালো, টেকসই, কীভাবে জানি আমরা? কজনে ব্যবহার করে দেখেছি? বা কাকে আপনি এই ঘড়ি ব্যবহার করে রিভিউ দিতে শুনেছেন? শোনেনওনি। তবু আমরা জানি, রোলেক্স ঘড়িই বেস্ট। যে ঘড়ির দাম লাখ টাকা, তা যে ভালো হবেই এতে কারোই সন্দেহ নেই। আমি নিজেও এমন অনেক ব্র্যান্ডই চিনেছি, শুধু দাম বেশি বলে! দাম যদি চোখে পড়ার মত না হত, তাহলে ওই নাম আমার মনে জায়গা পেতও না।

ঘড়ির কথাই যখন এল, ঘড়ি নিয়েই তাহলে বলি আরেকটু। দেড়শো টাকায় যে ঘড়ি পাওয়া যায়, তা চার থেকে আট মাস যায়। ছয়শো টাকায় যে ঘড়িটি পাওয়া যায়, তা দেড় বছর চলে। দেড় হাজার টাকার ঘড়ি ব্যাটেরি পাল্টে পাল্টে চার বছর পর্যন্ত যায়, তিন হাজার টাকার ঘড়িও ব্যাটেরি পাল্টে ছয় বছর যায়। এখন কথা হল, ছয় বছর গেলেও ঘষা লেগে, চাপ লেগে, আঘাত লেগে, হয় ঘড়ির কাচ নষ্ট হয়, বা ঘড়ির চেহারা জৌলুশ হারায়। এবং যত দামি ঘড়িই হোক, ছয় বছর পর আপনার আরেকটা নতুন কিনতে ইচ্ছে করবেই। অর্থাৎ একটা ঘড়ি পাঁচ বছর অতিক্রম করলেই আপনি খুশি। এরপর আপনি ঘড়িটি পাল্টাবেন। সচল থাকলেও আরেকটি ঘড়ি নিতে চাইবেনই। এখন তিন হাজার টাকার যে ঘড়ি ছয় বছর যায় সেটার একটা বিশেষ মডেল যদি তিন হাজারের জায়গায় একুশ হাজার বিক্রয়মূল্য দিয়ে দেওয়া হয়, তাহলে জাস্ট ব্র্যান্ডটা জাতে উঠে যায়! কারণ, চালাকি এই যে, সেটা ছয় বছর পর আর গুরুত্ব পাবে না। আরো চালাকি এটাই যে, যার একুশ হাজার দিয়ে ঘড়ি কেনার শখ আছে, সে পাঁচ বছরে আরেকটা ঘড়ি এমনিতেও কিনবে সাধারণত। অর্থাৎ আকাশছোঁয়া দামে ঘড়িটি বিক্রি হোক বা না হোক, কোন ব্র্যান্ড দুয়েকটা এমন উচ্চ দাম দিয়ে ঘড়ি বাজারে আনলে তার ব্র্যান্ডের সুনামই ছড়ায়। এবং আমরাও চোখ বুজে বিশ্বাস করি, দাম যেহেতু হাই, জিনিস অবশ্যই হাই কোয়ালিটির। ব্র্যান্ড জাতে তোলার এটা একটা সহজ কৌশল বললাম। অনেক ব্র্যান্ডই বিষয়টা এভাবে ভাবেনি এখনও।

এবার আসি ভিন্ন প্রসঙ্গে। আইফোন একমাত্র ব্র্যান্ড, যার বিজ্ঞাপন লাগে না, উল্টা মানুষ আইফোন দেখিয়ে নিজের বিজ্ঞাপন করে! এই ব্র্যান্ডটা একমাত্র নজিরবিহীন! অথচ এখন আইফোন সিক্স ছয় হাজার টাকাতেও পাওয়া যায় সেকেন্ড হ্যান্ড এবং সচল! তারপরও ওই ছয় হাজার টাকার আইফোন কেউ পকেট থেকে বের করলে অনেকেই এখনও সমীহ নিয়ে তাকায়, যেখানে তার নিজের ফোনের দাম চল্লিশ হাজার!

বেশ আগে, পত্রিকায় না ফেইসবুকে পড়েছিলাম স্মরণ নেই, বাংলাদেশের কোন এক খেলার টিমের দেশীয় ম্যাচে প্লেয়ারদের মাঠে নামা প্রসঙ্গে একজন লিখেছিলেন, তাঁদের গায়ে এডিডাসের জার্সি কেন! নিশ্চিতভাবেই এডিডাস তাদের স্পন্সর করেনি। যিনি লিখেছিলেন, তাঁর বক্তব্য হল, তুমি একজন প্লেয়ার, তোমার দিকে চ্যানেল ক্যামেরা ধরে, তুমি নিজের টাকায় এডিডাস কিনে কেন ওর বিজ্ঞাপন করবে???? তুমি স্টার, ওর প্রোডাক্ট গায়ে দিয়ে তোমার যদি জাতে উঠতে হয়, তাহলে তুমি তো স্টার হতে পারইনি, বরং ব্র্যান্ড তোমার গায়ে তাদের প্রোডাক্ট তুলে দিতে পারলে ওই ব্র্যান্ড এবং তার প্রোডাক্ট জাতে উঠবে— এমনটাই হওয়া উচিত ছিল না?

এই কথাটা আমার তখন থেকেই খুব মনে ধরেছে, আমি কেন আমার টাকা দিয়ে প্রোডাক্ট কিনে ওই ব্র্যান্ডের প্রচারণা করব???? আমার ব্র্যান্ডের প্রোডাক্টের প্রতি লোভ আছে, তা শুধুই কোয়ালিটির কারণে, শোঅফের জন্য নয়। এবং কোনো প্রডাক্ট বিশেষ করে জামা বা গেঞ্জি যদি এমন হয় যে বুকের পাশে বা সামনে/ পেছনে বিশাল করে ওই ব্র্যান্ডের লোগো দেওয়া, সে মডেল আমি বর্জন করি। ব্র্যান্ডের লোগো দেখিয়ে জাতে ওঠার চেষ্টাকে সঙ্গত কারণেই আমার কাছে হীনতা বোধ হয়।

আমি সম্প্রতি একটা ব্র্যান্ডের লোগো দেখে খুব কষ্টে ভুগি, তা হল টমি হিলফিগারের টি শার্ট! গত জানুয়ারি থেকে পথেঘাটে বের হলেই যত টিশার্ট পরা মানুষ দেখছি, তাদের ৯০ ভাগের গায়েই টমির টিশার্ট, এবং বলাই বাহুল্য লোকল টমি, ফুটপাতে দেড়শো আড়াইশো করে বিক্রি হয়! এই দুঃখে আমার কিনে রাখা অরিজিনাল টমির টিশার্ট পরতে পারছি না! আমার টমি আলমারিতে বসে আমাকে অভিশাপ দেয়! আমিও অভিশাপ দেই ডুপ্লিকেট টমিকে।

ব্র্যান্ডের জুতার কথা বাদ যাবে কেন! পুমা স্বয়ং বাংলাদেশে এসেছে, এডিডাস এনেছে বাটা, নাইকি এনেছে এপেক্স! এগুলো ১৬ থেকে ৫০ হাজারে পাওয়া যায়! আমি এক সময়ে লোভ করে হামলে পড়েছি এসবে, কিন্তু একটা সময় পর খেয়াল করলাম, জুতা যতই ভালো এবং টেকসই হোক তিন বছর পর তা ফেইড হয়, তখন তা একজোড়া পুরান জুতাই। এরপর মনে হতে লাগল, তাহলে কেবল ব্র্যান্ড স্যাটিসফেকশনের কারণে এতগুলো টাকা ব্যয় না করে এই টাকায় কমপক্ষে চার জোড়া জুতো কেনা যায়, যার কোয়ালিটি ও অনুভবও একদম খারাপ নয়। এভাবে আসক্তি থেকে বের হতে পেরেছি।

এখন আমার মত মধ্যবিত্ত বাঙালির যেহেতু ব্র্যান্ডের প্রতি মোহ আছে, সেহেতু ব্র্যান্ডগুলো আমাদের অনুভূতি নিয়ে খেলা করে ডিস্কাউন্ট অফারের মাধ্যমে। আমার মত অনেক মধ্যবিত্তই মাসিক খরচ হতে এমনিতে শপিংএর বাজেট সব মাসে রাখে না, কিন্তু ব্র্যান্ড যখন ডিস্কাউন্ট ঘোষণা করে, তখন আমার মত অনেকেই হিসাবের বাইরেই দশ পনেরো হাজার টাকা গচ্চা দিয়ে বসেন! এই ডিস্কাউন্ট গেইম নিয়ে একটু বলার আছে এবার।

প্রথমত, ডিস্কাউন্ট হয় দুই ক্ষেত্রে, জুতার ডিস্কাউন্ট হয় যখন কোন নির্দিষ্ট ব্যাচের প্রোডাক্টের টেম্পার বা টেকার যে সম্ভাব্য সময়, তা যদি শেষ পর্যায়ে চলে আসতে থাকে। তখন তারা অর্ধেক দামে ছেড়ে দেয়, যেখানে আর ক্লেইম করা বা কয়েকদিন পরে গাম ছুটে গেলেও আর অপবাদ দেবার সুযোগ থাকে না। কাপড়ের ব্র্যান্ডের ডিস্কাউন্টের ক্ষেত্রে অনেক সময় দেখা যায় কোন কাপড়ের সব সাইজ বিক্রি না হয়ে যখন নির্দিষ্ট একটি সাইজ কেবল রয়ে যায়, তখন তা ডিস্কাউন্টে ছেড়ে দেবা সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, এছাড়া দীর্ঘদিন পড়ে থাকা প্রোডাক্ট, যা খুব একটা বিক্রি হচ্ছে না, অথচ ইনভেস্টমেন্ট আটকেই আছে, তেমন ক্ষেত্রে টাকা তুলে আনার জন্য ডিস্কাউন্ট দেওয়া হয়! এরচেয়ে বেশি গুমর খুলতে চাইছি না। তবে যে চালাকি নিয়ে কথা না বললেই নয়, তা হল, কিছু ব্র্যান্ড প্রয়োগ করতে শুরু করেছে ভিন্ন কৌশল। তারা একটা ড্রেসের দাম দেবে ছয় হাজার। এমন ড্রেস যা আপনি লোকাল মার্কেটে দরদাম করে দুই হাজারে হলে কিনতে রাজি থাকবেন। ছয় হাজারে জীবনেও কিনবেন না। এবং নিশ্চিত থাকুন, ওই প্রোডাক্টের কস্টিং এবং প্রোফিট যোগ করার পর দাম আসলেই দুই হাজার টাকা হলেই পর্যাপ্ত হয়। কিন্তু ব্র্যান্ডটা দুই মাস ধরে আপনাকে দেখাচ্ছে এটার দাম ছয় হাজার! এটার দাম কিন্তু ছয় হাজার! দেখতে দেখতে আপনিও মেনে নিয়েছেন, ওটার দাম ছয় হাজার! বাট আপনি কিনবেন না। এরপর দুই মাসের প্রচারণা শেষে সেই ব্র্যান্ড অমনি ঘোষণা দেবে, ৫০% ডিস্কাউন্ট!!

এইবার আপনি আর ভাববেন না যে দুই হাজার হলে কিনতাম! ছয় হাজার টাকার জিনিস তিন হাজারে পাচ্ছি, এরপর আর কী লাগে!! ব্যস, আপনি কিনে ফেললেন, এবং কোম্পানি দুই হাজারে বেচলেও যেখানে লাভ হত, সেখানে আরো এক হাজার বেশিতে বেচতে পারল! আমি এমন অনেক ব্র্যান্ডকেই চিনি, যাদের দুই তিন মাস পরপর এমন ডিসকাউন্টের অফার আসে, একদম শোরুমের শেষ সুতাটা পর্যন্ত খালি হয়ে যায়! দুই মাস সেলস ঢিমেতালে চলে, আর সব খরচ উঠে আসে ওই ফিফটি পার্সেন্ট অফারে!! ডিস্কাউন্টে কাপড় কিনতে গেলে আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, কাপড়টা যেহেতু এমন হতে পারে যে অনেক দিন ধরে স্টকে পড়ে আছে বলে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে, সেহেতু দীর্ঘদিন পড়ে থাকার দরুন কাপড়ে কোন দাগ বা ভাজের স্থায়ী দাগ পড়েছে কি না! এটা অনেকে খেয়াল না করে ঠকে যান।

আরেকটি ব্র্যান্ডকে চিনি, সঙ্গত কারণে যার নাম উল্লেখ করব না, তার চালাকি হল, তার কিছু প্রোডাক্টে ডিস্কাউন্ট থাকে, কিছু থাকে রেগুলার প্রাইসে! রেগুলার প্রাইসে যেটা তার দাম ১৫০০/- আর ৫০% ডিস্কাউন্ট যেটা, তার দাম ২৮০০/- অর্থৎ ১৪০০ টাকা, রেগুলারটার চাইতে জাস্ট ১০০/- কম! এইটা কেমন ডিস্কাউন্ট নামের ছিনিমিনি, আমি ভেবে পাই না!

ব্র্যান্ড নিয়ে অনেক বকবক করলাম, শেষ কথা হল, একটা ব্র্যান্ডকে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে কাস্টমারকে সাময়িক ঠকিয়ে নয়, দীর্ঘস্থায়ী বেনিফিট ও আস্থার সুনাম তৈরি করতে হয়। নাহলে সব শোঅফ, চোটপাট একটা সময় পর বৃথা হয়ে যায়!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.