নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

নৈলতলার ভূত

২৬ শে জুলাই, ২০২১ দুপুর ১২:৪১


দীর্ঘ দশ বৎসর পরে গাঁয়ে ফিরিতেছি৷ শহুরে জীবনে অন্নরুজির ব্যস্ততায় গাঁয়ে আসিবার ফুরসৎ মিলে নাই এতগুলো বৎসরে৷ এতদিনে বোধকরি পিতৃভূমির মানুষজন আমার চেহারাটিও ভুলিয়া গিয়াছে, পরিচয় না দিলে কেউ দেখিবামাত্রই চিনিবে তেমন প্রত্যাশা আপাতত ছাড়িয়াছি৷ পাঠক নিশ্চয়ই লেখনীর ভাষা মারফত ইতোমধ্যে আন্দাজ করিয়া লইয়াছেন, যাহা লিখিতেছি তাহা বেশ প্রাচীন সময়কার কথা হইবে, নচেৎ এহেন সাধুভাষা এই কালে আসিয়া খাটাইবার কোন কারণ থাকিতে পারে না!

আমাদের নদীমাতৃক অঞ্চল, যাতায়াত ব্যবস্থা একমাত্র নৌযান, এমনকি ঢাকা হইতেও নৌপথে স্টীমারে করিয়া আসিতে হয়৷ আগের সন্ধ্যায় যাত্রারম্ভ করিলে পরদিন দুপুরকার খানা বাড়িতে আসিয়া খাওয়া সম্ভব হয়৷ তবে এইবার যাত্রায় তেমনটি আর হইলো না, স্টীমারে কী একটা গোলযোগ হওয়ায় শহরতলীর ঘাটে আসিয়া পৌঁছাইলাম বেলা তিনটা নাগাদ৷ এই শহরতলী হইতে আমাদের যে গাঁও, তাহা আরো মাইল তিরিশেক হইবে৷ সৌভাগ্য যে এই পথটা অন্তত নৌকায় যাইতে হয় না, তিন চাকার ভ্যানগাড়ি করিয়া যাওয়া যায়৷ উঠিলাম ভ্যানগাড়িতে, আদাজুড়ি পৌঁছাইতে পৌঁছাইতে সন্ধ্যা ঘনাইয়া আসিল৷ দীর্ঘকাল পরে বাড়িতে ফিরিতেছি, চারপাশে যাহাই দেখিতেছি মুগ্ধলোচনে চুমিয়া যাইতেছি, খেয়ালই করি নাই বেলা কত হইল! যখন সূর্য ডুবিল, অমনি বুকের ভেতর ছ্যাৎ করিয়া একটি দুশ্চিন্তা উঁকি দিয়া গেল- নৈলতলার পথটা কীভাবে যাইব একা!

এই নৈলতলা নিয়া অনেক কাহিনী আছে, শুধু নৈলতলাই নয়, পাগলবাড়ি পার হইবার পর প্রথম যে আতঙ্কটি পথিকের কলিজা খামচাইয়া ধরে -তাহা শিবের আমগাছ! শিবের আমগাছের ব্যাপারটা হইতেছে এই যে, এককালে অবিকল শিবঠাকুরের মতোনই দীর্ঘদেহী এক যুবক ছিলেন ঋষিপাড়ায়৷ পাগলবাড়ি পাড় হইবার পর প্রথম যে বাঁকটি পড়ে সেখানে বিশাল এক আমগাছ আছে৷ আমার জন্মেরও আগের কথা, ওই আমগাছের গোঁড়াতে শিবকে ভূতে ঠাসিয়া মারিয়াছে বলিয়া শোনা যায়৷ ওই মৃত্যুর উপকথা ধরিয়াই হউক বা গাছটির বিশালতা এবং বয়সের কারণেই হউক, একদম ভরদুপুরেও গাছটির চারপাশ এমন অন্ধকার হইয়া থাকে যে গোটা পথটাই গা ছমছমে ভূতুড়ে শিহরণ ছড়াইয়া দেয়! দিনের বেলাতেও ওইখান দিয়া হাঁটিবার সময় পথিকের পা কাঁপে! অনেকে তো পথটা পড়িমরি করিয়া অতিক্রম করিতে গিয়া ভোঁ দৌড় দিয়া হোঁচট খাইয়াই অক্কা পাইয়াছে! এমনই এক লোকপ্রচারের দৌরাত্ম্য এই পথকে ঘিরিয়া৷ শিবের আমগাছ অতিক্রম করিতে পারিলেই আসে নৈলতলা! এ যেন কড়াই হইতে নামিয়া সরাসরি চুল্লীতে ঝাঁপ দেওয়া! অর্থাৎ পথের এই পর্বটি আরো ভয়ঙ্কর! এখানে যদিও শিবের মৃত্যুর ন্যায় কোন ভীতিপ্রদ কিংবদন্তি নাই, তবু ভয়ের পরিমাণটা এখানেই সবার বেশি! নৈলতলা বলিতে যে স্থানটিকে বোঝায়, তাহা বড়জোর দুইশো মিটার দীর্ঘ একটি পথ- যাহার দুইপাশে মনুষ্যসৃষ্ট বাগান, অথচ সেই মনুষ্যসৃষ্ট বাগানের বট আর হিজল গাছগুলোই ডালপালা ছড়াইয়া এমন ভয়ানক আকৃতি লাভ করিয়াছে যে তাহা ভাষায় বলিয়া বুঝাইবার মত নয়! এই অংশটা পার হইতে অনেকে চিৎকার করিতে করিতে ছুটিয়াছে, অনেকে ছুটিতে গিয়া খালে পড়িয়া কাদামাটি গিলিয়াছে, কেউ বা সারারাত ওই খালেই হাঁপুড় হাঁটিয়া সকালে বলেশ্বরের অন্য কোন বাঁকে নিজেকে আবিষ্কার করিয়াছে!

নৈলতলায় কখনও কোন পথচারীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে নাই, কিন্তু এই পথটাকেই সবাই বেশি ভয় পায়! আমার শৈশবের একটি ঘটনা বলি, দাদীর সঙ্গে করিয়া আমি আর আমার কাকাতো ভাই বাড়ি ফিরিতেছিলাম, আমাদের বয়েস তখন সাত কি আট, হাঁটিতে হাঁটিতে নৈলতলা পার হইবার কালে আমাকে কাকাতো ভাই হাত ইশারায় পাশের বাগানটি দেখাইয়া বলিল, ওই যে দ্যাখ, ওখানটাতেই থাকে ভূত! আমি ভেতরকার বিকটদর্শন একটি গাছ দেখিয়া শিহরিয়া উঠিলাম, বলিলাম, জোরে হাঁটো ভাই, নয়তো আমাদেরকেও ভূতে ধরবে কিন্তু!
এই বলিয়া আমরা জোরে পা চালাইতে চালাইতে সামনে তাকাইয়া দেখি দাদী নৈলতলার ব্রিজ পার হইয়া অনেক দূরে আগাইয়া গিয়াছেন, আমরা এখনও নৈলতলার বাঁকেই রইয়াছি! ইহা দেখিয়াই আমাদের বুক শুকাইয়া গেল- কারণ, সারাটা পথ আমরা দাদীর সঙ্গে সমান তালেই হাঁটিয়াছি, কখনও দূরত্ব সৃষ্টি হয় নাই, বরং দাদী বৃদ্ধ হওয়ায় আমরাই আগাইয়া থাকিতাম, কিন্তু এই অংশে আসিয়া আমরা কেন পিছাইয়া পড়িলাম তাহা বুঝিতে বাকি রইল না! ভয়ে আমরা দুই ভাই দিলাম দৌড়, কিন্তু এ কী, দাদী দূর হইতে দূরেই চলিয়া যাইতেছে, আমরা সর্বশক্তি দিয়া দৌড়াইতেছি, অথচ দাদীর সঙ্গে পথের দূরত্ব কমিতেছেই না! দাদীও কেমন- আমাদের রাখিয়া কেন চলিয়া যাইতেছে? গলা ফাটাইয়া ডাকিতে আরম্ভ করিলাম, ও বু, দাঁড়াও, আমাগো নিয়া যাও!
কিন্তু যতখানি বুঝিলাম, আমাদের গলার শব্দ হয়ত গলা হইতেই বাহির হয় নাই, কারণ নিজে কী বলিয়াছি নিজেই জানি, অথচ যাহা বলিয়াছি তাহার শব্দ নিজের কানেই শুনি নাই! আমরা প্রাণভয়ে দৌড়াইতেছি, আর পথটি যেন আমাদের ধরিয়াই রাখিতেছে, দাদীকে ধরা যাইতেছে না! আমরা থামিলাম না, একসময় দাদীকে ধরিতে পারিলাম, চেঁচাইয়া অভিযোগ করিতে লাগিলাম, আমাদের রাখিয়া কেন তুমি চলিয়া যাইতেছ?
উত্তরে দাদী যেন সম্বিত ফিরিয়া পাইলেন, এবং তখন তাঁহার হুঁশ হইল যে এতক্ষণ আমরা সাথে ছিলাম না! আরেকবার নানার সঙ্গে করিয়া আসিবার সময়ও এই পথে নানা ভয় পাইয়াছিলেন, কী দেখিয়াছিলেন জানি না, কিন্তু আমাকে কিছুই বুঝিতে দেন নাই৷ পাগলবাড়ি আসিয়া মাথা ঘুরাইয়া পড়িয়াছিলেন৷

এই হইল নৈলতলার অভিজ্ঞতা, এরপরে আরেকটি ভয়ংকর জায়গার নাম উল্লেখ করিতে হয়, যেখানে বেশ সংখ্যক মানুষ ভয় পাইয়া প্রাণ হারাইয়াছে! থাকুক সে অংশ, আরেক গল্পে তাহা বলা যাইবে!

এতক্ষণ যে সমস্ত আষাঢ়ে গল্প শুনিয়া নাক সিঁটকাইলেন, তাহা মূল গল্প নহে, ভূমিকা মাত্র! আমি ছেলেবেলার এই অভিজ্ঞতা প্রথমে বলিলাম এই জন্য যে, যাহাতে আপনারা বুঝিতে পারেন এই পথটা কীভাবে পার হইব তাহা ভাবিয়া আমার বুক ছ্যাৎ করিল কেন! জোয়ান, শিক্ষিত তদুপরি বিজ্ঞানমনস্ক হইলে এইসব ভূতের ভয় আমলে আনিবে না ইহাই স্বাভাবিক, কিন্তু যতই নিজেকে কুসংস্কারমুক্ত দাবী করি না কেন, এই পথটাকে যতবার পার হয়েছি একবারও অন্তরাত্মায় নির্ভীকতা বজায় রাখিতে পারি নাই- পথটা এতটাই গহীন আর ভয়জাগানিয়া! সবাই চেষ্টা করে এই পথ হাঁটিয়া যাইবার বদলে নৌকা বা ট্রলার করিয়া যাইতে৷

যাহাহোক, মূল ঘটনায় আসি৷ আদাজুরি যখন পৌঁছিলাম তখন আন্ধার ঘনাইয়াছে পুরোদমে, সন্ধ্যার আকাশ মাথা গুঁজিয়া শুইয়া পড়িয়াছে রাত্রির কোলে৷ ঘাট হইতে জানিলাম, শেষ ট্রলারটি বেশ আগেই ছাড়িয়া গিয়াছে, কোন নৌকাও আর নাই! ভয়ের কারণে বসিয়া আছি এমনটা দেখানোও মানায় না, ঘুটঘুটে অন্ধকার ঠেলিয়া কয়েকটি সুপারির পাতা একত্র করিয়া মশাল জ্বালাইয়া আগাইতে আরম্ভ করিলাম! পাগলবাড়ি পর্যন্ত নির্বিঘ্ন পথ, হাঁটিয়া আসিতে সমস্যা হইল না৷ পাগলবাড়ির ব্রিজটি পার হইলেই তাহার পরে সেই শিবের আমগাছ পড়িবে৷ হাতে সুপুরির ডাল একের পর এক জ্বলিতেছে৷ এমন সময় ব্রিজের শেষ মাথায় একজনকে দাঁড়াইয়া থাকিতে দেখিলাম৷ বোঝা গেল, আমার হাতের আগুন দেখিয়াই লোকটি দাঁড়াইয়াছে, উদ্দেশ্য- একসঙ্গে যাইবে, যেহেতু ভযের পথ! আমি কাছে আসিতেই লোকটি বলিল, আজ্ঞে, নৈলতলা দিয়া যাবেন, দাদা?
বলিলাম, জ্বী, আপনার কোন গ্রাম?
উত্তর আসিল, আমি মালবাড়ি তামাত যাব, আমনে কোন তামাত যাবেন?
বলিলাম, রামভদ্রা!
লোকটি বলিল, তয়লে তো ভালোই অইলো, একলগে যাওয়া যাইবে!
আমি হাসিমুখে বলিলাম, আসেন, যাই৷

আমি জোরে জোরে পা ফেলিয়া সামনে আগাইতেছি, আমার হাতে সুপারির মশাল, লোকটি আমার পেছন পেছন হাঁটিতেছে৷ ভয়ের পথে একজন সঙ্গী হইলে ভয় অনেকটাই ভুলিয়া থাকা যায়৷ টুকটাক বার্তালাপসহযোগে পথ চলা গেলে তাহা আরো সুগম হয় বলাই বাহুল্য৷ নাম জিজ্ঞাস করিলাম, লোকটি জানাইলো, তাহার নাম শুক্লা! হৈমন্তী শুক্লার নাম শুনিয়াছি, তিনি নারী৷ পুরুষের নাম শুক্লা হয় জানিতাম না!
শুক্লা বলিল, আজ্ঞে, একজোড়া ইলশা মাছ কেনছালাম৷ এহন এই মাছ লইয়া রাত্তিরে বাড়ি পৌঁছানুর মোতো সাহস মোর নাই, বোঝেনই তো পথে যা কীর্তি অয়! ভুল হরছি যে ছিরামকাডী (শ্রীরামকাঠী, ওখানকার বড় গঞ্জ) এতক্ষুণ থাহা উচিত অয় নাই!

এমনিতেই ভূতুড়ে পথ, তার ওপর আবার এই মাছ লইয়া ভূতুড়ে প্রসঙ্গ আমার পছন্দ হইতেছিল না৷ কিন্তু শুক্লা বলিয়াই যাইতেছে- বোজ্জেন, ব্রিজের গোঁড়ায় বইয়া রইছি অনেক্ষুণ, এই মাছ লইয়া আউগামু কি না দিশা হরতে পরছেলাম না! একবার তো চিন্তা হরলাম, এইয়া বোঝা বাইয়া নেতে যাইয়া পরে না মোর জানডাই খুয়াই! এয়ারচাইতে গাঙ্গে হালাইয়া দি! অথচ এমন সরেস মাছ দুগ্গা হেলাইতেও মন চাইতেছেল না! মোর মাইয়াডায় আইজ আসপার সোমায় বারবার হইরগা কইয়া দেছে যেনো হাটেগোনে ইলিশ লইয়া আসি!

বলিলাম, চিন্তা নাই, আর তো একটু পথ, কোন ভয় নাই!

শুক্লা বলিল, ভয় নাই কইলে কি অয় দাদো, হিদিনগোও (সেদিনও) একজোনরে খালে হালাইয়া ঠাসছে এই নৈলতলায়ই, এইরোহম উদভাগ রোজ অইতে থাকলে কি আর হাঁডাচলা করা যায়, কয়ন?

আমি শুক্লার কথায় সায় না দিয়া বলিতে লাগিলাম, আসলে মাইনসে ভয় পায় মনের ভয়ের কারণে! এই যে দেহেন শিবের যে কাহিনীডা, সবাই কইল শিবরে মারছে অইন্য কিছুতে, কিন্তু একবারও কি চিন্তা হরছেন, ওইডা তো খুনও অইতে পারে৷ শিবের জায়গাসম্পতি তো কম ছিল না, তার উপর কোন ছেলেপুলেও নাই, জায়গা আত্মসাৎ করার জন্য যে কেউ মারে নাই তা কেমনে বোঝলেন?

খুব যৌক্তিক একটা জবাব বের করিয়াছি ভাবিয়া বেশ উৎফুল্ল মুখে শুক্লার দিকে পিছন ফিরিলাম শিবের মৃত্যু সংক্রান্ত কথাটা বলিয়া, কিন্তু কোথায় কে! কেউ তো নাই আমার পিছনে! বুকে মোচড় দিয়া উঠিল, দ্রুত সামনে ফিরিতেই ধাক্কা খাইলাম সম্ভবত একটা গাছের সঙ্গে! গাছটা যেন হাঁটিয়া পথের মাঝখানে চলিয়া আসিয়াছে! কিংবা ওটা হয়ত গাছ ছিল না, যখন ধাক্কা লাগিল, আমার নিঃশ্বাসে ভুড়ভুড় করিয়া যে ঘ্রাণটা ঢুকিতেছিল, তাহা নিশ্চিত ইলিশ মাছের! হুমহুম হুমহুম শব্দ তুলিয়া কেউ যেন ব্যাঙ্গ করিয়া বলিতেছিল, ধরা খাইছো রে দাদো, আর বাঁচপা না!
এরপর আমার আর কিছু মনে নাই৷

আমার জ্ঞান ফেরে পরদিন, সারা শরীরে ব্যথা লইয়া আমি বিছানায় উঠিয়া বসি! জানিতে পারি, আমাকে মালবাড়ির সুপারি বাগানে পাওয়া গিয়াছে আজ সকালে! আমি যে ব্যাগটি সঙ্গে করিয়া শহর হইতে ফিরিতেছিলাম সেটি পাওয়া গিয়াছে নৈলতলার ব্রিজের ঠিক মাঝখানে! আমার স্পষ্ট মনে আছে, আমি যেখানটায় মুর্ছা যাই তাহা ছিল নৈলতলার বাঁক, ব্রিজ যেটিতে আমার ব্যাগ পাওয়া যায়, সেই ব্রিজে উঠিবার আগে আমি জ্ঞান হারাই! আর মালবাড়ি? সে তো আরো মাইলখানেক দূর! দিন দুই বিশ্রামান্তে সুস্থ হইবার পর আমি মালবাড়িতে শুক্লা নামে কেউ থাকে কি না খোঁজ লাগাইলাম, জানিলাম, শুক্লা নামের এক দরিদ্র যুবক বছর দুই আগে নাকি ইলিশমাছ লইয়া ফিরিবার কালে নৈলতলায় মারা পড়িয়াছিল, তাহার লাশ পাওয়া গিয়াছিল নৈলতলার খালে৷ বেচারা হাত হইতে মাছ ছাড়ে নাই, সেই মাছের অর্ধেকেরও বেশি কিছুতে চাবাইয়া খাইয়াছিল! নৈলতলায় মানুষ মারা পড়ে নাই এই কথা তাহলে আর সত্যি নয়!

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে জুলাই, ২০২১ বিকাল ৩:০৩

নেপচুন০০৭ বলেছেন: ভালো তো লিখেছেন, পড়ে আরাম পেয়েছি। প্রায়শই এমন লিখবেন আশা করি।

২| ১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ২:০১

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই৷

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.