নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
তৈয়ব আলী সোৎসাহে এগুচ্ছেন, আমি তাঁর পেছনে হাঁটছি৷ উনার হাঁটাকে এখন আর হাঁটা বলা যাচ্ছে না, উনি প্রায় লাফিয়ে লাফিয়ে চলছেন! একটু পর পর পেছন ফিরে মুখ দুলিয়ে আমাকে তাগাদা দিচ্ছেন, কই আসেন! আমি এগিয়ে পাশাপাশি হই, উনি বলতে শুরু করেন, বুঝলেন ভাই, মারাত্মক জ্ঞানী লোকটা! কী পড়াশোনা রে, ভাই রে ভাই! কত অগাধ জ্ঞান! চলেন, কথা বলে মজা পাবেন! এরকম ট্যালেন্টেড লোক খুব একটা দেখা যায় না!
আমি মানুষটা মোটেই আলাপী না৷ আলাপী না বলতে, কী বলব ভেবে পাই না৷ কারণ হল, আমার মাথার ভেতরে যেসব চিন্তা ঘোরপাক খায় তা আর দশটা মানুষের কাছে এ্যাবঝার্ড কিংবা হাস্যকর, এগুলো শেয়ার করাও যায় না, তাই উদাহরণ দিচ্ছি না৷ এ কারণেই কী নিয়ে কথা বলব ভেবে পাই না, অন্যরা যা নিয়ে আলাপ টালাপ করে তাতেও একাত্ম হতে পারি না! যেমন একজন খুব আড্ডা দিচ্ছে, চারপাঁচজন তাকে ঘিরে হাঁ করে দাঁড়িয়ে তার বক্তব্য শুনছে! বক্তব্যের বিষয়বস্তু তাদের এমপি সাহেবের পাওয়ার এবং সেই পাওয়ারের বহিঃপ্রকাশ! যেন একদম সিনেমার গল্প, সবাই খুব মন দিয়ে শুনছে, তাদের চোখেমুখে একটু পরপর বিস্ময় বা সমীহ ফুটে উঠছে! আরেকজনের পাওয়ার নিয়ে এসব গল্প শুনে আমার কোন কাজ নেই৷ আমার মাথায় যা আসে তা সাধারণ সমাজে প্রযোজ্য নয়! আমি খানিকটা আনফিট৷
যাইহোক, ট্যালেন্টেড ভদ্রলোকের কাছে পৌঁছলাম, উনার নাম গালিব! অনার্সে উঠে উনি বুঝলেন এইসব বৈষয়িক লেখাপড়া উনার মনের খোরাক মেটাতে পারবে না! উনি ঢাকা ভার্সিটির স্টুডেন্টশিপ রেখে নিজের ইচ্ছেমত পড়া শুরু করলেন! বলতে গেলে দুনিয়ার তাবৎ বই পড়ে ফেলেছেন! যে কোন লেখক- শিল্পী সম্পর্কে খৈ ফুটিয়ে মন্তব্য করে চলেছেন! চেখভ, দান্তে, তলস্তয়, কাফকা, মার্কেজ- একের পর এক বলে যাচ্ছেন, তাঁরা কোথায় কী করে গেছেন, বলে গেছেন! আবার তাঁদের সম্পর্কে অন্যান্য লেখক কী বলেছেন সেটাও বলছেন!
আমার প্রথমে কানব্যথা হল, তারপর মাথাব্যথা আরম্ভ হল!
তৈয়ব আলীর ধারণা ছিল, আমি অনেক জানি, দুই শেয়ানে শেয়ানে টক্কর হবে!
অথচ আমি চুপসে বসে আছি! তৈয়ব আলীকে হতাশ মনে হচ্ছে! গালিব সাহেবও টের পাচ্ছেন যে, উনার জানার পরিধির কাছে আমি কিচ্ছু না!
আমার উঠে আসতে ইচ্ছে করছে, কিন্তু চক্ষুলজ্জায় বলতেও পারছি না!
গালিব সাহেব এরমধ্যে ভিঞ্চিকে টেনে এনেছেন! মোনালিসা নিয়ে তুমুল আলাপ চলছে, লাস্ট সাপারের কথা কখন আসবে সেটার অপেক্ষা করছি থমথমে মুখে!
লাস্ট সাপার আসছে না, আমার প্রস্রাবের বেগ পেতে শুরু করেছে!
অবশেষে তৈয়ব আলীকে বললাম, ভাই, আশেপাশে কোথাও ডায়াবেটিস মাপার মত ফার্মেসী আছে?
তৈয়ব আলী এবং গালিব সাহেব দুজনেই হতবাক! কীসের মধ্যে কী! মোনালিসা চলছে, সেখানে কিনা ডায়াবেটিসের আলোচনা!
গালিব সাহেব বললেন, আপনার ডায়াবেটিস নাকি?
বললাম, মনে হচ্ছে তাই! সকাল থেকে চারবার হয়ে গেছে! এখন আবার যাওয়া দরকার! মনে হচ্ছে ফেটে যাবে, ভাই!
অতঃপর তৈয়ব আলীকে নিয়ে বের হলাম৷ প্রস্রাবের নামে কেবল গেলাম আর এলাম! তৈয়ব আলী বললেন, কই, আপনার না ফেটে যাচ্ছিল? কেবল গেলেন, এরমধ্যেই খালি?
হাসতে হাসতে বললাম, হু!
তৈয়ব আলী বললেন, ঘটনা কী? চুম্বকের বিকর্ষণ? এক জ্ঞানী যে আরেক জ্ঞানীকে সহ্য করতে পারে না, আমার মনেই ছিল না!
আমি বললাম, উনি জ্ঞানী নিসন্দেহে, তবে আমি জ্ঞানী কি না সে বিষয়ে অনেক সন্দেহটিক ব্যাপারস্যাপার আছে!
হে হে, তা তো থাকবেই! গালিব ভাইরে জিজ্ঞেস করলে উনিও এমনই জবাব দেন!
বললাম, তৈয়ব ভাই, জ্ঞান কথাটা আসছে কোত্থেকে খেয়াল করেছেন? জানা থেকে জ্ঞান! আমরা যতই জানি, ততই আমরা জ্ঞান লাভ করি, সে অর্থে আমিও জ্ঞানী, আপনিও জ্ঞানী, বাসার নিচের ফোকলা দাঁতের দোকানদার কলিম চাচা- সেও জ্ঞানী, আমরা প্রত্যেকেই জ্ঞানী! কিন্তু জ্ঞানী বলতে আসলে আমরা যেভাবে মীন করি, তা কমই পাওয়া যায়!
বুঝি নাই, আরেকটু খেলাসা করেন!
বললাম, সহজ ব্যাপার! গালিব সাহেব অনেক পড়েছেন, অনেক জানেন৷ যা যা জানেন, তার সবই কোন না কোন বই থেকে নেওয়া! যদি অন্যের কথাই বলতে হয় তবে নিজের বোধের প্রকাশটা কই! যেসব নিয়ে উনি কথা বলছেন, সেসব বইতে আমিও পড়েছি, আমি খুব খুশি হতাম যদি উনি নিজের কোন বক্তব্য প্রকাশ করতেন! নিজের মাথা হতে একটা লাইনও বের হল না, কেবল অমুক তমুক লেখকের মহিমা আলাপকে আমি কোন জ্ঞান মনে করি না! আমি যদি উনার সাথে এইসব বই নিয়ে আলাপে নামতাম তাহলে সেটা হত প্রতিযোগিতা- কে কতটা জানি তার প্রতিযোগিতা! এটা একপ্রকার ছোটলোকি, নিজেকে জাহির করা!
আবার উনি কেবল অমুক তমুকের কথা বলছেন, নিজের মাথা হতে কিছুই বলতে পারছেন না এটাও যদি উনার সামনে বলতাম তাতে ব্যাপারটা ছোটলোকি হত, কেন আমি কাউকে মুখের ওপর হেয় করব!
কিন্তু ভাই, উনি তো কয়েকবার আপনার সাথে এটাই করলেন! আপনি হজম করে গেলেন!
হু, এজন্যই মানুষ আমাকে বলদ মনে করে!
০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৭
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: গল্প দিয়ে একটা ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করাই উদ্দেশ্য ছিল৷ যাইহোক, আরো তীব্র আকারে বলা যায় এভাবে- কাউকে মুখের ওপর চ্যালেঞ্জ করতে যে গাটস লাগে সেটা যার থাকে না সে-ই পরে হেন কারেঙ্গা তেন কারেঙ্গা বলে!
ধন্যবাদ!
২| ০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:২৪
রাজীব নুর বলেছেন: গালিব সাহেব সঠিক।
জ্ঞানী লোক।
০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৫:৩৪
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: গালিব সাহেবকে ভুল বলার অবকাশও নেই৷ আমি বোঝাতে চেয়েছি, আমরা যা জানি তা আমাদের চিন্তায় প্রয়োগ হয় কি না বা সেটা আমাদের বোধকে সমৃদ্ধ করে কি না সেই জিজ্ঞাসাটা নিজের মধ্যে আসা উচিত৷
৩| ০৩ রা মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৪৪
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: আমি বরং বোকাই রব - এটাই আমার অ্যম্বিশন।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মার্চ, ২০২১ বিকাল ৪:১৭
মা.হাসান বলেছেন: সামনা সামনি খারাপ বলাটা আসলেই ছোটলোকি, পিছনে পিছনে নিন্দা করাই ভালো।