নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
"কন্যার বাপ সবুর করিতে পারিতেন, কিন্তু করিতেছেন না, বরং অবস্থাদৃষ্টে যাহা মনে হইতেছে, তিনি প্যান্টের তলায় ল্যাঙটের বদলে লুঙ্গিই পরিধান করিয়াছেন এবং আজ ঘর হইতে বাহির হইবার সময় সেই লুঙ্গি কাছা দিয়া কসম কাটিয়া নামিয়াছেন যে, মেয়েকে এই দিনের মধ্যেই এই পাত্রের সঙ্গেই বিবাহ সাব্যস্ত করাইয়া দিতে হইবে!"
পাত্রের বাপের কথা আর বলার মতোন নেই, বেচারা হাসফাস করছেন, নিঃশ্বাস টানতে তাঁর কষ্ট হচ্ছে! পাত্রের অবস্থা তৎকিঞ্চিৎ অধিক দুরূহ, বেচারা মুরুব্বিদের উপরে মুখ তুলে কিছু বলতে পারছে না, অমন শিক্ষা তো সে পায়নি!
এদিকে রায়বার (ঘটক) মশায় প্রশংসার দড়ি এমনভাবে পেচাতে শুরু করেছেন যে তাতে অমত করবার মতো কোন কথা সাঁধানোর সুযোগই নেই! বেজায় এক মুশকিল মনে মনে খচখচ করে চলেছে গোটা আসর জুড়ে!
রায়বার মশায় সম্পর্কে পাত্রের বাপ সোবাহান সাহেবের মামা হন, অর্থাৎ পাত্রের দাদা-সম্পর্কীয় গার্জেন! তার ওপর কন্যার বাবা ও মা উপস্থিত যেখানে সেখানে মুখের ওপর কোন কিছু না বোধক বলতেও বিবেকে বাঁধে। ফলস্বরূপ পাত্রের বাপ চুপ, মামার অসম্মান হয় এমন কিছু এদের সামনে বলা যাচ্ছে না। মনে মনে তিনি চাইছেন পাত্র ইদ্রিস গলা ঝেড়ে বলেই উঠুক যে পাত্রী তার পছন্দ হয়নি!
এখানেও প্যাচ লেগে আছে, আরো বিশদে বলি, পাত্র পাত্রী দেখাদেখি হবার কথা আজ, কিন্তু রেস্টুরেন্টে হাজির হয়েছে কেবল কন্যার বাপ আর মা! এসেমাত্রই কন্যার জীবন বৃত্তান্ত আর সাথে মোবাইল হতে প্রিন্ট করা একটা ছবি পাত্রের হাতে ধরিয়ে দিল কন্যার বাপ! পাত্র মাথা নিচু করে খামটা খুলে কেবল ছবিটাতে চোখ বুলাল, নিমিষেই রাজ্যের হতাশা তার চোখেমুখে স্থায়ী আসন করে বসল!
পাত্রকে কন্যার বাপ মোতালেব সাহেব এর আগে দুইবার দেখেছেন এবং পাত্রের সাথে কথাও বলে গেছেন! পাত্রকে পছন্দ হয়েছে বলেই তাদের এত তাড়াহুড়া এমনটাই আভাস পাওয়া যাচ্ছিল! কিন্তু আজ তো দৌরাত্ম্যের সীমা একেবারে আন্দামানে গিয়ে ঠেকেছে, কন্যার ছবি আর সিভি দেখিয়েই তারা সোজা চাপ প্রয়োগ করে বসলেন, আমাদের মেয়েকে পছন্দ হয়েছে কি না বলেন?
পাত্র ইদ্রিসের তো ভেতর ভেতর গা জ্বলে উঠল, মেয়ে দেখার খবর নাই, ল্যাঙড়া না লুলা কালা না বোবা তা না বুঝেই এদের এখন বলে দিতে হবে পাত্রী পছন্দ হয়েছে কি না! মনেমনে ইদ্রিস পাত্রীপক্ষের বিবেকের গুষ্ঠি বর্ধন করতে লাগল! অতঃপর পাত্রের বন্ধু মুখ খুলল, বলল, সরাসরি না দেখে আমরা পছন্দ অপছন্দ কিভাবে বলি!
এই জবাবে পাত্রীপক্ষ স্পষ্ট বিরক্তি ঝাড়ল! পাত্রীর মা বলে উঠলেন, আগে একটা খুবই ভালো পাত্র আমরা পছন্দ করেছিলাম, বুঝলেন, কিন্তু পাত্রের সাথে একটা বন্ধু ছিল, এত যে কিলিকবাজ, আহারে খোদা খোদা, খুঁৎ বাছতে বাছতে সম্বন্ধটাকে এগুতেই দিল না, বলি, একটা ঘর পারলে জোড়া লাগাও- তা না, পেচিয়ে পেচিয়ে সম্বন্ধ পণ্ড করতে আসো কেন বাপু! সাক্ষাৎ গজব পড়বে আল্লাহর এদের উপর, কী বলেন ভাই সাহেব?
এ কথার পর পাত্রের বন্ধুর আর মুখ থাকে কী, বেচারা পারলে তখনই উঠে পালায় গজবের ভয়ে। অতঃপর ইদ্রিসই সরাসরি বলল, কেবল সিভি দেখে বা একদিনের কথাতেই তো বিয়ের মত আজীবনের একটা সিদ্ধান্তে আসা যায় না, পাত্রীকে আমি সরাসরি দেখে কথা বলে তারপর সিদ্ধান্ত নিতে চাই এবং আমার মনে হয় পাত্রীর জন্যও এটা ভালো হবে!
পাত্রীর বাপ মোতালেব সাহেব গদগদ হয়ে বলে উঠলেন, দেখাদেখি তো কতই হবে, সেটা সমস্যা না, তা ছবি দেখে মেয়েকে কি পছন্দ হইছে?
ইদ্রিস মনে মনে দাঁত কিড়মিড় করে বলতে লাগল, ওই ইঁদুরের মতো চেহারা আর ব্যাঙের মত হাঁড় জিরজিরে মেয়ের ছবি দেখেই যে কারো বমি আসতে পারে -এই হুঁশটাও কি এই সরল মানুষটার নাই?
লোকটা সরল এতে সত্যিই সন্দেহ নেই। কিন্তু মেয়ে না দেখিয়েই কথা পাকাপাকি করবার এই ব্যাপারটা সন্দেহের ঠেকছে! কেবল সন্দেহ না, ঘোর সন্দেহ!
যাইহোক, অতঃপর সিদ্ধান্ত হল পরের শুক্রবার মেয়ে দেখানো হবে। মেয়ের ছবি ইদ্রিস ওই একবারই দেখেছে! এরপর আর দেখবার আগ্রহ হয়নি। রং যেমনই হোক, মুখের আদল যেন ঠিক ব্যাঙের মতোন!
যথারীতি শুক্রবারে পাত্রীর মুখদর্শন হল, রোগা মেয়ে, মাথার দুই পাশ কেমন যেন বাঁকানো! চোখ কোটরগত ! ইদ্রিসের সন্দেহ হল, মেয়ের নিশ্চয়ই বড়ো কোন রোগ আছে, যার কারণে এরা চাইছে কোনমতে মেয়েটাকে গছিয়ে দিতে!
মোতালেব সাহেব আবারও ইঙ্গিত দিলেন ছেলে কী কী চায় তাঁরা সবই দিতে রাজি! ওদিকে আবারও পাত্রীর খালা মেয়ে দেখানোর পরই সরাসরি চাপ দিলেন, দেখে পছন্দ হয়েছে কি না বলতে হবে!
ইদ্রিস খুবই বিরক্ত হল, বলল, ভেবেচিন্তে বলি!
খালা বললেন, এত ভাবাভাবির কী আছে, দেখলাম, পছন্দ হয়েছে ব্যস! নাকি পছন্দ হয় নাই?
ইদ্রিস বলল, পরে জানাবো আমরা!
বের হবার সময় ইদ্রিস দেখল মোতালেব সাহেবের সিঁড়ি ভেঙে নামতে কষ্ট হচ্ছে, অগত্যা ধরে নামাল তাঁকে! রুগ্ন লোকটার চোখে পানি এসে গেল, তিনটি মেয়ে, কোন ছেলে নেই তাঁর! এই ছেলেটিকেই তাঁর জামাই হিসেবে চাই!
ইদ্রিস খুব টাকার সমস্যায় আছে, তার ব্যবসায়ের ভগ্নদশা, লাখপাঁচেক টাকার খুবই দরকার, নইলে পাওনাদারদের কেসকাণ্ড হয়রানি ইত্যাদি মিলিয়ে যা পরিণাম দাঁড়াবে তাতে আত্মহত্যা করা লাগবে মান বাঁচাতে হলে! এমতাবস্থায়, আর্থিক সহায়তা করবে এমন একটা পাত্রী দরকার ছিল তার! এমনি এমনি তো কেউ তাকে টাকা দেবে না!
পাত্রী দেখে আসার পরও কিছু জানানো হয়নি, আকারে ইঙ্গিতে বোঝানো হয়েছে যে পাত্রী পছন্দ হয়নি, কিন্তু তাঁরা যেন বুঝেও বুঝছেন না! রায়বার দাদুকে বারবার বলা হচ্ছে ছেলে কী চায় তাই দেব আমরা! যতবারই কথাটা কানে আসে ততবারই ইদ্রিস শিউরে ওঠে, না জানি কোন বিরাট অসুখের মেয়ে গছিয়ে দেবার চেষ্টা চলছে রে! রায়বার দাদুকে শেষমেশ কথাটা সরাসরি বলেই ফেলল যে, মেয়ের কোন অসুখ নেই তো?
দাদু মাথা নেড়ে বলেন, কী অসুখ হবে? কী সব আবোলতাবোল কথা বল? আর অসুখ তো যেকোন সময় যে কারও দেখা দিতে পারে! এখন যাকে সুস্থ দেখে বিয়ে করবা দুইদিন পর তার যে কোন বিরাট অসুখ হতে পারবে না তার কি কোন গ্যারান্টি আছে?
ইদ্রিস কথা খুঁজে পায় না! মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দেয়- অভাবের কারণে এখন এরকম একটা রোগী মেয়েকে বিয়ে করতে হবে! মেয়েকে পাত্রস্থ করার জন্য পাঁচলাখ টাকা দেবে, জায়গাজমি দেবে, কারণট কী?
ওদিকে পাওনাদারদের টাকা দেবার সময়ও ঘনিয়ে আসছে, এরকম আপদের কাছে টাকার জন্য নিজেকে বলি দিয়ে দেবে তবে?
টাকার কাছে হার মানতে হল অবশেষে, যতই মুখে বলুক মেয়ের কোন অসুখ নেই, এ বিশ্বাস করা যায় না। আবার এরকম কথা পাত্রীপক্ষকে আঘাত করে জিজ্ঞাসা করাও তো যায় না! একটা কৌশলের আশ্রয় নিতে হল তারপর। ইদ্রিস বলল, বিয়ের আগে স্বামী স্ত্রী দু'পক্ষেরই ডাক্তারি পরীক্ষা করা দরকার যে কোন রোগ আছে কি না!
রাজি হল সবাই। রিপোর্টে দেখা গেল, মেয়ে সম্পূর্ণ নীরোগ অথচ ইদ্রিসের ধরা পড়ল লিউকেমিয়া! মোতালেব সাহেবের সরল মুখটা ভেসে উঠল ইদ্রিসের মনে! লোকটার ছেলে নেই, তিন তিনটা মেয়ে। ভালো একটা ছেলে পেতেই লোকটা তাঁর সম্বলের সবটুকু দিতে প্রস্তুত ছিলেন!
২| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:২৬
রাজীব নুর বলেছেন: শিরোনামটা ভালো হয়েছে।
১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪৩
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই।
৩| ১২ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৪২
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
হায়রে নিয়তি !!
বড়াই করা ঠিক না!!
৪| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সকাল ৯:৫২
অন্তরা রহমান বলেছেন: দ্যাট এন্ডিং ম্যান!
৫| ১৩ ই আগস্ট, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৪০
মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: দুঃখজনক গল্প ।
আসলে কে যে আমরা কোথায় কিভাবে ফেসে যাই আগে থেকে বলা মুশকিল।
পাত্র-পাত্রী উভয়ের জন্যই সহানুভূতি।
৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭
জাওয়াত আররাজ বলেছেন: ধ্বস নামিয়ে দিলেন শেষমেশ।
১০ ই জানুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৩৭
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ধন্যবাদ, ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই আগস্ট, ২০২০ রাত ১০:০২
রাজীব নুর বলেছেন: ইদ্রিসের জন্য মায়া লাগছে।