নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
আমি আমার জীবদ্দশায় একটা দুর্ভিক্ষ দেখেছি। তখন এসব অর্থনীতি, বিশ্বায়ন কিছুই বুঝতাম না, শুধু বুঝতাম ক্ষুধা!
সকাল হলেই ঘরে খাবারের চিন্তা শুরু হত, কোথাও ধার পাওয়া যায় কি না! অবশ্য ধার দেবার মত সচ্ছল তেমন কেউ ছিল না, যারাও ছিল, তাদের কাছ থেকে ধার করা সারা! চালের খুদ সেদ্ধ করে খিচুড়ির মত বানিয়ে খাওয়া হত, খাবার পছন্দ হয়নি বা খেতে ভালো লাগছে না এরকম চেতনাই কখনও মাথায় কাজ করেনি, এখন ভাবলে অবাক লাগে! ভাত না থাকায় শাপলার যে ঢেপ হয়, তার বীজ সেদ্ধ করেও মানুষ খেয়েছে শুনেছি, মাঝবিলে খাগড়া বনের মত একটা ঘাস হত যার ডগায় চিড়ের মত ফুল হত, আজ এত বছর পরে এই শহুরে সভ্যতায় জীবন কাটিয়ে সেই ফুল বা নল খাগড়ার নাম মনে তো নেইই, যাদের কাছে এখন এই গল্প বলছি তারাও এসব ব্যাপারে অজ্ঞাত!
যাইহোক, সেই খাগড়া ঘাসের ফুল সেদ্ধ করেও মানুষ খেয়েছে!
আমরা সকাল হলে বের হতাম, গহীন বাগানে ঢুকতাম এটা ওটা ফল পাওয়া যায় কি না, ফুলের মধু, ফল- এমন কিছু গুল্মও থাকত যার ডগা মিঠা লাগে চিবোতে! অপেক্ষা করতাম কখন জোয়ার নামবে, কখন ভাটা পড়বে, খালের জল শুকাবে! আগা খাল প্রায় মৃত তখন, ওখানে পানি পায়ের গোড়ালি সমান নেমে আসে, তখন কচুরিপানার স্তুপ ঘাটলে দুয়েকটা খয়রা মাছ, টাকি মাছ বা কুচো চিংড়ি পাওয়া যেত, যদিও তা পরিমাণে এমন বেশি না। দেখা গেল বিকেল নাগাদ খালের কাদা ঘেটে অল্প কিছু মাছ নিয়ে ঘরে ফিরতাম ভাই বোনের সাথে, কাকিমা সেগুলো রাঁধতে বসত খুশি মনে। আমরা অবশ্য সব মাছ দিয়ে দিতাম না, ছোট একটা পুটি মাছ বা দু'চারটা চিংড়ি রেখে দিতাম নিজের জন্যে, সে কেমন? ওই চিংড়ি বা পুটিমাছ নিয়ে চুলার পাশে গোল হয়ে বসতাম, দিন শেষে ভাত খুদ যা যোগাড় হল তা চুলায় চড়ত, আমরা গোল হয়ে ঘিরে বসতাম সেই জ্বলন্ত চুলার পাশে, চুলার ফাঁক দিয়ে যে আগুনের শিখা বের হত, তাতে আমাদের ওই চিংড়ি সেকতাম, চুলার কান্দায় লাইন করে ছোট মাছগুলো পাতিয়ে রাখতাম, আগুনের ছোঁয়ায় ছোঁয়ায় মাছগুলো লাল হয়ে উঠত, কাঁচা পুড়ত, এখন ছেলেপেলেরা যে বারবিকিউ খায় অনেকটা ওরকমই!
আমরা সেই আধপোড়া মাছ খেয়েই খুব আনন্দে থাকতাম, ভাত হল কী না কখন হবে, সারাদিনের না খাওয়া এসব কিছুই মনে আসত না! অথচ তখন ছেলে মানুষ ছিলাম, তখন খাবারের জন্য হাউকাউ করিনি, কিন্তু এই বুড়ো বয়সে এসে কতই না খাবার বাছি! নিরামিষ খেতে পারি না, স্বাদ একটু ঊনিশ-বিশ হলেই খেতে পারি না! এই করোনা ভাইরাসের বন্দীদশা যে হারে আমাদের একঘরে করে দিচ্ছে তার উপর খাবারের সংকট আরম্ভ হয়েছে, তাতে সেই দুর্ভিক্ষের দিনের অভিজ্ঞতা আবার ফিরে আসবে মনে হচ্ছে!
অনলাইনে কত রান্নার রেসিপি দেখি, কত কত আইটেমে ঠাসা! কিন্তু এই গরীবী হালে, খাদ্য সংকটের কালে সাশ্রয়ী উপাদান দিয়ে খাবার তৈরি বা রেসিপি বানানোটা খুব জরুরী। একই ডাল আলুভর্তা কয় বেলা খাওয়া যায়? খাবারে বৈচিত্র্য আনা জরুরি! আমি কয়েকদিন ধরেই ভাবছি, একই খাবার না খেয়ে একই খাবার অন্য কী উপায়ে খাওয়া যায়, বা কম উপাদানে পেট ভরে তৃপ্তি করে কিভাবে খাওয়া যায়!
আমার মাথায় এক্ষেত্রে প্রথমেই এসেছে পান্তাভাতের কথা, যদি আপনার ডাল আলুভর্তা খেতে খেতে গলা মরে আসে আপনি একদিন পান্তাভাত নুন দিয়ে মেখে খেয়ে দেখবেন, খরচ অনেক কম, দুইটা মরিচ, পেয়াজ দিলে দিলেন, না দিলে নেই, আর একটু লবণ, ব্যস! রোজ রোজ ডাল আলুভর্তা না খেয়ে একদিন চাল ডাল আলু দিয়ে খিচুড়ি করুন, একদিন শুকনো খিচুড়ি তো আরেকদিন ঝোল খিচুড়ি যা অনেকটা ভাতের জাঁউয়ের মত হবে। ও হ্যা, ভাতের জাঁউও খেতে পারেন, সাথে একটু মরিচ ভর্তা বা শুটকি ভর্তা মেখে নিলেই হল! শুটকির দাম অনেক, তবে শুটিতে বরকতও আছে, পাঁচ ছয় টুকরো ছুরি শুটকি হলে খানিকটা পেয়াজ দিয়ে ভুনা করলে এক পিস শুটকি আর পেয়াজ মাখা শুটকির ঝোল দিয়ে দুই প্লেট ভাত খাওয়া যায়!
এছাড়া রুটি করতে পারেন, রুটি দিয়ে ডাল একদিন, রুটি দিয়ে আলুভাজি একদিন, একদিন রুটি দিয়ে হালুয়া একদিন ডিম! একই খাবার সচ্ছলতার সময় যেমন স্বাদ লাগে, অভাবের সময় তেমনটা আর লাগে না। যখন অভাব শুরু হয়, তখন খাবারও কেমন জানি তার স্বাদ হারায়, তরকারিতে লবণ কম হয়ে যায়, নয়ত হলুদ মরিচের সামঞ্জস্য ঠেকে না! কিছু করার নেই, আমাদের মানিয়ে নিতে হবে। আমরা চার প্লেট ভাত খাওয়া ভেতো বাঙালি, যদি একটা রুটি দিয়ে ব্রেকফাস্টের অভ্যেস আর একবাটি ভাত দিয়ে লাঞ্চের অভ্যাস হত তবে হয়ত আমাদের খাবারের খরচটা অন্যরকম হতে পারত! এখন আমাদের মানিয়ে নিতে হবে, যদি না পারি তবে করোনা আক্রান্ত হই বা না হই না খেয়ে মরতে হবে এটা নিশ্চিত।
আমি রান্নার মানুষ নই, যাঁরা রান্নাকে শিল্প হিসেবে গ্রহন করে আছেন, তাঁরা এবার মাথা খাটান, আমরা সাশ্রয় করে কিভাবে খেয়ে বাঁচতে পারি। নিঃসঙ্কোচে আপনারা আপনাদের রেসিপি প্রচার করুন, লজ্জার কিছু নেই!
এখন এটাকে গরীবি ছোটলোকি মনে হলেও অচিরেই এই না খেয়ে মরার পালা শুরু হতে যাচ্ছে এদেশে! আমরা তো সমস্যা ঘাড়ের ওপর আসার আগ পর্যন্ত সেটাকে গুরুত্ব দিই না, সবার খাবার কেনার সামর্থ্য নেই, সবার খাবার কেড়ে নিয়ে খাওয়ার মত গায়ের জোরও থাকবে কি না সন্দেহ আছে, তাই যা আছে, তা দিয়ে কিভাবে বেশিদিন টেকা যায় তার একটা সুরাহা দরকার।
সরকারের তরফ থেকে কোন রেশন রিলিফ পাবার আশা করি না, তবু সরকারের যদি দয়া হয় সে ভিন্ন কথা, বেঁচে থাকলে পটাকা ফুটিয়ে মুজিব বর্ষ ২০২১ সালে আমরা আরেকবার পালন করব ইনশাআল্লাহ!
২| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৫৭
নেওয়াজ আলি বলেছেন: গ্রাম কিংবা শহরের খেটে খাওয়া মানুষ না খেয়ে মরবে। হে দুনিয়ার মালিক তুমি ক্ষমা করো। বাঁচতে দাও সবাইকে তোমার সুন্দর পৃথিবীতে।
৩| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:০০
রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের ১২ কোটি মোবাইল গ্রাহকদের থেকে ১০ টাকা করে কেটে নিন।আর এই ১২০ কোটি টাকা দিয়ে ICU বানান। আমরা সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই।
৪| ২৫ শে মার্চ, ২০২০ রাত ২:২৭
শের শায়রী বলেছেন: না খেয়ে থাকার কষ্ট যে কি ভয়ানক সেটা এই ব্লগারদের বুজানো যাবে না যতক্ষন না সত্যিকারের পরিস্থিতি আসে। আশা রাখি আমার শত্রুও যেন তেমন অবস্থায় না পরে। ধন্যবাদ আপনাকে।
©somewhere in net ltd.
১| ২৪ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:২৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আমরাও ছোট বেলায় এক আধবার দুর্ভিক্ষের পাল্লায় পড়েছি। আব্বা সেনাবাহিনীতে চাকুরী করতেন। আগের তেমন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো ছিলো না। তখন দেখতাম আম্মা নানা বাড়ী গিয়ে টাকা ধার আনতেন। অল্প খেয়ে কয়েকটা দিন কেটে যেত আব্বা না আসার আগ পর্যন্ত। তেমনটা অনুভব করিনাই তখনো। আল্লাহ ভরসা