নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যবসায়ী বনাম আমরা অব্যবসায়ীগণ

০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:০৪

চ্ছা, এবারে আমি বলি। হাতে ফাও সময় আছে তো?

অনেক আগে ভোক্তা অধিকার সংক্রান্ত একটা গ্রুপেও এই নিয়ে বিতর্ক হয়েছিল, এক বোতল পানির দাম রেডিসনে কেন ২৫০ টাকা?
যুক্তিতে বলা হয়েছিল, ওরা স্পেশ্যাল অর্ডার দিয়ে প্যাকিং আলাদাভাবে করে নিজেদের সীল মেরে পানিটা আনে, তাই দাম বেশি বা ওদের সুবিধামতো।

হ্যাঁ, ওদের সুবিধামতো। আপনি ভাবতেই পারেন যে লুটে নিচ্ছে, কিন্তু আমি বলব, না, লুটছে না। ওটা রেডিসন এবং আপনি রেডিসনে গেলে ওই পরিমাণ খরচের প্রস্তুতি বা সামর্থ্য নিয়েই যাবেন। টাকা আমার আছে বলেই এরকম অযৌক্তিক দাম দিয়ে দেব?
হ্যাঁ, দেবেন, কারণ ওটা রেডিসন!
বুঝিয়ে বলি, আপনি ওখানে পানির দাম দিচ্ছেন না, দিচ্ছেন পরিবেশের দাম! অমন একটি জায়গা আপনি উপভোগ করছেন, সেটার দাম!
কেন এত দাম রাখবে না? ওদের পরিচালনা ব্যয় কত আমরা ধারণা করার চেষ্টা করি কখনও?
একেকজন কর্মচারীর বেতন কেমন, কত খরচ হয় চালাতে সেটা হিসেব করে দেখি কখনও?
সেটা হিসেব করলে তখন আর ২৫০ টাকা অন্যায্য বা জালিয়াতি মনে হবে না!

রেডিসনের মত বড় জায়গার উদাহরণটা আমি কেবল পণ্যের দাম এবং বিপণন স্থানের মধ্যকার সূচক বোঝাতে ব্যবহার করেছি। বাঁশ আর কাঠের তৈরি যে দোকানে এক বোতল পানি বিশ টাকায় বিক্রিত হয়, সেই দোকানের ভাড়া কত?
কর্মচারী খরচ কত?
আবার এটা যখন আমরা কোন সুপার শপে কিনতে যাই, ওই শপটার মেইনটেনেন্যান্স কস্ট কত? হোক সুপারশপ, দাম যত তাই রাখতে হবে এমনটা যদি বলেন, তাহলে আসুন হিসেব করি, এক বোতল পানিতে লাভ কত হয়? সাত টাকা? বারো টাকা? আচ্ছা, ধরুন বিশ টাকাই লাভ, একদম বিশ টাকা। সারাদিনে ওই বিক্রেতার কয়টা পানির বোতল, কয়টা তেল, কয়টা সাবান বিক্রি হয়? তাতে মোট কত টাকা লাভ হয় দিনে?
আমি জানি, সুপারশপে একদম খারাপ বিক্রি হয় না, এবং আপনিও বলবেন এহ, লাভ না হলে কি আর ব্যবসা করতে আসছে?
হ্যাঁ, ব্যবসা হয়, এবং খরচও হয় সেই মাফিক।

আপনারা অবাক হবেন, আমি এমনও কিছু বিপণন কেন্দ্র জানি, যার প্রোডাক্ট বিক্রি হয় দৈনিক একটা থেকে সর্বোচ্চ ছয়টা।
কী ভাবছেন, দিনে কেবল একটা প্রোডাক্ট বেচেই বিজনেস করছে!! ও রে বাবা, তার মানে তো একটা প্রোডাক্টেই বিশ হাজার টাকা লাভ করে মিনিমাম! নইলে পোষায় কিভাবে!
এবং আপনার জ্ঞাতার্থে বলি, ওই একটা প্রোডাক্টে লাভ হয় ৬০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা!

বেশ, ধরা যাক ৬০০ টাকাই লাভ করে।
আচ্ছা, এটাও ধরে নিলাম, সে বিক্রেতা দিনে ৬টা প্রোডাক্টই বিক্রয় করে। তাহলে দৈনিক লাভ দাঁড়ায় ৩৬০০! তাহলে মাসে কত? চোখ কপালে উঠে যাচ্ছে না? এক লাখ আট হাজার!!
ও রে বাবা! এত লাভ?
আসলেই অনেক লাভ, লাখ টাকা বিজনেস!
কিন্তু খরচটা একটু দেখবেন না?
যে এক লাখ টাকা বিজনেসের বিক্রয় কেন্দ্রটা, ওটা কোন ঝুপড়ি দোকান নয়, ঝুপড়ি দোকান হলে আপনি নাক সিঁটকানোর চোটে সেখানে কখনও কিনতে যাবেন না। সেটা এসি ফিট করা, জমকালো লাইটিং করা একটা স্মার্ট বিক্রয়কেন্দ্র হতে হবে! ওই বিক্রয়কেন্দ্রের ভাড়া কত?
এসি এবং লাইটিং বাবদ যে খরচ হয় তার বিদ্যুৎ বিল কত?
দেখে নেন ভাই বেছে নেন, কিনলে কেনেন, না কিনলে যান এরকম অশিষ্ট ভাষা ব্যবহার করা অশিক্ষিত সেলসম্যান হলে তো আপনি কিনছেন না, আপনাকে সম্মানজনক একটা অনুভূতি দিতে মাস্টার্স পাশ করা ভদ্র সেলসম্যান রাখতে হয়!
ওই কর্মচারীদের বেতন কত?
সব মিলিয়ে অর্থাৎ বেতন, ভাড়া, পরিচালনা ব্যয় এগুলো হিসেব করলে কত আসতে পারে, কখনও ভেবেছি আমরা?
মাস্টার্স পাশ একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের স্যালারি কত হলে সে চাকরিটা করবে? তার সংসার নিয়ে চলতেই বা কত টাকা লাগে?
আমি জানি, এর উত্তর আপনি দিতে পরবেন না, কারণ আপনার চোখে ও সেলসম্যান ওর তো কোন জীবন নেই, থাকতেই পারে না। ধরে নিলাম, ও বস্তিতে থাকে, এবং তারপরও আপনার সাথে সুন্দর ব্যহার করে। এখন ওর বেতন কত হওয়া উচিত? বারো হজার? দশ হাজার?
বাদ দিন, ধরে নিই, আট হাজার টাকা।
কমপক্ষে কতজন কর্মী লাগে?
নিদেনপক্ষে হলেও তিনজন। তিনজনের বেতন কত? চব্বিশ হাজার! এসব অবিশ্বাস্য হিসাব, তবুও কমটাই ধরছি।
ভালো একটা রাস্তার পাশে বা ভালো একটা শপিং মলে ভাড়া কত আসতে পারে মাসে??
ভাই, এখানে আর ছাড় দিতে পারছি না, চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ হাজার এখানে লাগবেই। কম ধরলেও কত হয় মোট, ৬৪ হাজার?
মেইনটেন্যান্স চার্জ ধরবেন না?
কম হলেও ১০ হাজার।
কত হল তাহলে, ৭৪ হাজার।
যে বেচারা ব্যবসায়টা চালাচ্ছে, তার কত টাকা বিনিয়োগ করতে হয়েছে খেয়াল করবেন একটু? কম করে হলেও তিরিশ লাখ! তাহলে তার সেই তিরিশ লাখ টাকা হতে কত বিনিয়োগ সুদ টানতে হয়? তার নিজের আয় হিসেবে কত নিতে হয়? মাত্র চৌত্রিশ হাজার টাকা??

আবার মনে করিয়ে দেই, দিনে কেবল একটা প্রোডাক্টও বিক্রি হয়, যার লাভ মাত্র ৬০ টাকা। এবং কোন কোন দিন একদম শূন্যও যায়!

আমরা কেবলই ভাবি, ব্যবসায়ীরা টাকার পাহাড় করে ফেলছে, ডাকাতি করছে, লুটেপুটে নিচ্ছে!
এই এতক্ষণ যা বললাম, এটাই বেশিরভাগ বিজনেসের অবস্থা! বলবেন, ব্যবসায় করতে না পারলে বন্ধ করে দিক, সমস্যা শেষ।
ভালো সমাধান, বন্ধ করে দিয়ে ওই বেচারা ওই কর্মচারীটা যাবে কোথায়? চাকরি খুব সহজ, এবং সবাই ব্যবসায় বাদ দিয়ে চাকরি করবে, তাই তো?
এখানে চাকরীর সুযোগ যেমন অপ্রতুল, ব্যসায়ের সুযোগ তো আরও কম!

রেস্টুরেন্ট খুব জমজমাট ব্যবসায়, টাকা আর টাকা! আপনি খেয়াল করে দেখবেন, গত দুই বছরে সেই রমরমা রেস্টুরেন্টই কতগুলো বন্ধ হয়েছে! সারা দেশে শোরুম বন্ধ হয়েছে কতগুলো?

ব্যবসায়ী শুনলেই আমরা কেমন ক্ষোভ নিয়ে তাকাই, কেমন একটা জ্বলুনি কাজ করে আমাদের মধ্যে। আমরা ব্যবসায়ীদের প্রতি বিদ্বেষে ভুগি, কারণ একজন ব্যবসায়ী দেখলেই আমাদের মাথায় যা আসে- তা হল, আমরা গোলামী করি আর ব্যবসায়ীরা মালিকপক্ষ, সেকারণেই এই বিদ্বেষ! সুযোগ পেলেই মালিকের শোষণের প্রতি শোধ তুলি, কিংবা হারামজাদা বসে বসে টাকা কামাস, আর আমরা গোলামী করে মরি, এই ক্ষোভটা উগড়ে দিতে চেষ্টা করি।
আমরা জাতি হিসেবে ব্যবসায়ী নই, আমরা চাকর কেরানী হবার শিক্ষা পাই, ব্যবসায়ে নামার সাহসও পাই না, তাই আমাদের ব্যবসায়ী দেখলে গা জ্বলে!আমরা কিছু একটা হলেই ভোক্তা অধিকারের কথা বলি, কিন্তু ব্যবসায়ী কখনও বলতে পারে না ভাই কষ্টে আছি, ব্যবসা ভালো না, দয়া করেন!

চট্টগ্রামে গরীবুল্লাহ শাহ মাজারের বিপরীতে একটা পোষা জন্তুর খাবারের দোকান আছে, দোতলায় বিরাট স্পেইস নিয়ে দোকান, আমি যতবারই ওদিকে যাই, আগ্রহ নিয়ে তাকাই যে ভেতরে কাস্টমার কজন আছে! একবারও এখনও কাস্টমার দেখিনি! একে খান হয়ে খুলশি ঢুকতে আমি প্রায়ই একটা টি শার্ট গেঞ্জির দোকান দেখতে পাই, পুরনো জীর্ণ কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে বসে থাকে রাত একটা পর্যন্ত!
আমি জানি না, সবাই সময় কাটাতে দোকান খুলে বসে থাকে কি না। তবে যদি ব্যবসায়ের জন্য হয়, তবে এরকম একেকটা শপে যদি সারাদিনে দশজন কাস্টমারও না ঢোকে, পাঁচটা প্রোডাক্টও বিক্রয় না হয় তাহলে হয় ওই ব্যবসায়ের আড়ালে অন্যকিছু হচ্ছে, নয়ত ওই ব্যবসায়ী কেবল সময় কাটাতেই এটা খুলে বসেছে।

ব্যবসায়ে এখন কেউ ভালো নেই। গত দুই বছরে অনেকগুলো কোম্পানি তাদের শোরুম বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে। ষোলোশহরের প্রক্তন বৈসাবির বিরাট শোরুম স্পেইসটা গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে খালি পড়ে আছে। এমন বড় স্পেইস এখন কেবল সিম কোম্পানি আর ব্যাংকগুলোই নিতে পারে। অবশ্য সিম কোম্পানিও এখন পেছাচ্ছে। বাংলালিংক এখন ছোট ছোট দেকানের মত স্পেইস নিচ্ছে চট্টগ্রামে।

ব্যবসায়ে কেউ ভালো নেই, এক মদের ব্যবসায়ী ছাড়া। মদের বিজনেস আর ড্রাগ বিজনেস এমন এক বিজনেস, যেখানে আপনাকে কোন বিজ্ঞাপন দিতে হবে না, ক্রেতা নিজেই খুঁজে নেবে, এখানে কোন ভোক্তা অধিকার নেই, দাম যা বলা হবে তা, কোন দরদাম করতে পারবেন না, দাম বেশি কেন সে প্রশ্ন করতে পারবেন না, এবং কোন বিক্রয় সৌজন্যেরও দরকার নেই, আপনিই গিয়ে হাত পা ধরবেন, ভাই, একটা দেন প্লিজ, বারটেন্ডার আপনাকে স্যার বলে তোয়াজ করবে না, অইতো ন বাজি, বান্ধি ফালাই, যাগুইছুনা বলে তাড়িয়ে দেবে! আপনি তবুও পা ধরবেন! এখানে আর ভদ্রতা লাগে না!
আর ওই ব্যবসায়ে ঝড়বৃষ্টি যাই হোক, খদ্দের কখনও কমে না!

এমনিতে স্বাভাবিক ব্যবসায় করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায় না, দুয়েকটা রেস্টুরেন্ট বড়জোড় পারে, বেশিরভাগই শুধু খরচটা তুলে কোনোরকমে টিক থাকার চেষ্টা করে। এমনিতেই বিক্রি মন্দা, এর উপর কাস্টমার যদি ঘাউড়া হয় তখন ওই ব্যবসায়ী রিয়্যাক্ট করলে ম্যাজিস্ট্রেটের কেইস খায়!

আমি ব্যবসায়ের এই ভেতরটা বোঝার পর থেকে এখন কোথাও কোন দোকানদার আমার কাছ থেকে বেশি নিলে আর জিজ্ঞেস করি না, কী রে ভাই, বেশি নিলেন কেন!

খরচ তুলতে কতটা পানি বের হয় সেটা এখন আমিও বুঝি।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:২৩

ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:




সামান্য ব্যাপার লিখেতে লেবু ‍চিপে তিতা করে দিয়েছেন। যাইহোক ভালো লিখেছেন। ধন্যবাদ।

২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:৫৭

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: আমার তো মনে হয়, অনেক কাস্টমারকে একদম আড়তের মূল্য তালিকা দেখালেও বিশ্বাস করে না, তখনও তারা ভাবে সবই ভুয়া, ব্যবসায়ীরা অনেক টাকা লাভ করে!

৩| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:৪৩

নেওয়াজ আলি বলেছেন: ভালো ।

৪| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২০ বিকাল ৫:২০

রাজীব নুর বলেছেন: কোথাও কোনো নিয়ম কানুন নেই। যার যেভাবে ইচ্ছা দাম নিচ্ছে। বাসের ভাড়া বলেন, আর জিনিসপত্রের কথাই বলেন।
সরকারের নিয়মিত মনিটরিং থাকলে এই সমস্যা অনেক কমে যেত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.