নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেনামী রাত্তিরের কথা

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২১

রাত তিনটা চল্লিশ

ঘরভর্তি সিগারেটের ধোঁয়া। ডিম লাইটের আলোয় সাদা আর নীলচে রঙের প্রলেপে হরেক রকমের আঁকাবাঁকা রঙধনুর জাল খেলছে, অবাক হয়ে দেখছে নাজিম বিছানায় চিত হয়ে। রাত সাড়ে তিনটার ঘর অতিক্রম করছে। চারটা বাজার পর যদি ঘুম আসে। অভ্যাসটা বদ অভ্যাসের জায়গা করে নিয়েছে এখন! শরৎ বাবুর কথা মনে পড়ছে! শরৎ বাবু বলেছিলেন, গগনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা চোখ পেতে রেখেও এক লাইন কবিতা মাথায় আনতে পারেননি তিনি! নাজিমেরও সেই অবস্থা, এই অন্ধকার আর আলোর সঙ্গমে ধোঁয়া ছড়িয়ে রাত্রির যে চিত্র তৈরি হল তাকে সে কোন নাম দিতে পারছে না! ময়ূরের পেখমে যে ঝলমলে কালোর একটা পরত আছে, তার সাথে এই রাত্রির অন্ধকারের তুলনা করতে ইচ্ছে করছে জোর করেই; কিন্তু বাস্তবে যা দেখছে তার সাথে পেখমের সেই রঙটার কোন মিল নেই! কবিতার সঙ্গে এভাবে মিথ্যেবাদিতা করা যাচ্ছে না কোনভাবে! অথচ এখন খুব করে একটা কবিতার লাইন আসা দরকার! একটা মোক্ষম লাইন কেবল এলেই হবে! ওই লাইনটাকে প্রতিষ্ঠা করতে গিয়েই বাকি ডালপালা সমেত একটা কবিতার গাছ হয়ে যাবে! কৌশলটা সহজ! কবিতা পানিভাত! শুধু ওই একটা লাইন মাথায় আসাই সমস্যা!

ঠকঠক!
খুবই অনুচ্চ শব্দ হল দরজায়! এত রাতে দরজায় কে আসবে!
নাজিম চুপ করে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে মনোযোগ দিয়ে!

শব্দটা আবার হল! যেন খুব সঙ্কোচ নিয়ে কেউ দরজায় টোকা দিচ্ছে! রাত তিনটা চল্লিশ।
অগত্যা উঠে এগুলো দরজার দিকে।
কে?
দোস্ত, দরজা খোল!
ফিসফিস করছে রফিকের গলা!
এত রাতে! দরজা খুলে যা দেখল তার জন্য নাজিম প্রস্তুত ছিল না একেবারেই! রফিক মেয়েদের একটা স্যালোয়ার পরে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে আছে কাচুমাচু ভঙ্গিতে!
ঠোঁটে আঙুল দিয়ে ইশারা করে শব্দ করতে নিষেধ করল রফিক! চুপচাপ ভেতরে এসে দরজা লাগালো। নাজিম বাতি না জ্বালিয়ে আগে লুঙ্গি এনে দিল! ঘটনা কী, কিছুই বোঝা যাচ্ছে না।
বাতি জ্বালার পর রফিক বোকার মত হাসল!
নাজিম সিগারেট ধরায়, ঘটনা কী?
রফিক সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলে আজ বিরাট ধরা খেয়েছি দোস্ত!

কী রকম? কার বৌয়ের কাছে গিয়েছিলে?

বৌ না। একটা বাসায় গেছিলাম।

কার বাসায়?

একটা ফ্ল্যাট টাইপের বাসায়, ওখানে কাজ হয়!

নাজিম বুঝতে পারছে কাজ বলতে কী বোঝাচ্ছে ও। এটা এখন শহরে অহরহ আছে। বাসা ভাড়া নিয়ে কাউকে বুঝতে না দিয়ে দেহব্যবসা!
হু, তারপর?

এরকম ফালতু জায়গায় আর কখনও যাই নাই দোস্ত।

তোমাকে ডেকে নিয়ে সব রেখে দিল?

নাহ, তা না। আবার অনেকটা সেরকমই!

আচ্ছা, ঝেড়ে কাশো।

শোনো, গেছিলাম ঠিক জায়গাতেই। কাজ শুরু করেছি, শেষ না হতেই হঠাত করে ছয়জন হুড়মুড় করে রুমে ঢুকে পড়ল!

দরজা দেয়া ছিল না?

নাহ, দরজার দরকার পড়ে না, রুম সেইফ ছিল।

এটা কেমন সেইফ হল?

ধুত্তোরি, তুমি বাকিটা শোনো।

হু, বল।

ছয়জন লোক ঢুকল, আমাকে থাপ্পড় দিল কয়েকটা এলোপাতাড়ি। তারপর মেয়েটাকে পাঁচজন একে একে কাজ করল!

নাজিমের কান ঝাঁ ঝাঁ করছে! গ্যাং রেইপ!

রেইপ আর কী, ও মাইয়া তো এসবই করে।

নাজিম দাঁতে দাঁত চেপে আছে, পতিতাও যে রেইপড হতে পারে এ শালা এটা বুঝবে না! অতএব বলে লাভ নেই একে।
আচ্ছা, এই কাহিনী? তারপর ওরা তোমার সব রেখে তোমাকে বের করে দিল?

বের করে নাই। ওরা কাজ সেরে চলে গেছে। আমার মোবাইল মানিব্যাগ শার্ট প্যান্ট এমনকি জাইঙ্গাটাও নিয়া গেছে!

হু। এবার তো শিক্ষা হল? তওবা পড়ে বাদ দাও এসব এরপর থেকে।
রফিক চুপ করে আছে। ওর চোখ ছলছল করছে নাজিম খেয়াল করল।
রফিকের পিঠে হাত রেখে বলল, ব্যাপার না দোস্ত, কেউ তো জানছে না এটা। বাসায় না গিয়ে আমার এখানে এসেই ভালো করেছ।
নাজিম একা এক ঘর নিয়ে থাকে, কেউ জানার ভয় আসলেই নেই।

রফিক, হাঁটুতে থুতুনি রেখে গম্ভীর হয়ে বলল, কীভাবে আসলাম জিগাইলা না?

হু, কীভাবে?

শোনো, ছেলেগুলো চলে যাবার পর মেয়েটা হাউমাউ করে কাঁদতেছিল। ওদের সামনে কাঁদে নাই। ওরা যাবার পর কাঁন্দা শুরু করল। নিজেরই অবস্থা খারাপ আমার, মোবাইল মানিব্যাগ সব নিয়ে গেছে ওরা। মেয়েটাকে যে আরো কিছু টাকা দিয়ে আসব তার উপায় নাই। আমি বললাম, যা হইছে ভুলে যা, আমি তোকে পরে আবার কিছু টাকা পাঠাইয়া দেব। মন খারাপ করিস না।

মেয়েটা চোখ মুছতে মুছতে বলল, টাকা লাগবে না ভাই। ছয়জনের মধ্যে যে ছেলেটা কিছু না করে মাথা নীচা করে খাড়াইয়া ছিল, সে আমার পাশের বাসায় থাকে। আমাকে চেনে!
সবাই জানে আমি চাকরি করি, এই কাজ যে করি তা জানে না কেউ। আজকে ও জেনে গেল। আমি আর বাসায় যাব কিভাবে!
মেয়েটা আবার হাউমাউ করে কানতে লাগল! দোস্ত আমি বুঝতেছিলাম না তখন কী করব!

নাজিম দেখতে পাচ্ছে রফিকের চোখ বেয়ে পানি পড়ছে! রফিক একটা বিবেকহীন গাড়ল বলেই জেনে এসেছে এতদিন।
হু, তারপর কী হল?

তারপর ওরা ওদের ঘর থেকে একটা পুরনো পায়জামা যোগাড় করে দিছে, আমি এটা পরে বাইর হইছি। পথে এক পুলিশ আমার কাহিনী শুনে আমারে একটা সিএনজিতে তুলে দিছে। ভাড়া পুলিশই দিছে, আমার কাছে তো টাকা নাই!

হু, দোস্ত। টেনশন করো না এসব নিয়ে আর, ঘুমাও এখন।

রফিক আচ্ছা বলে চুপ করে শুয়ে রইল! নিজাম ভাবনায় ডুব দিল এবার। এই যে মেয়েগুলো, গার্মেন্টসে চাকরি করলেও তো মাসে বারো চৌদ্দ হাজার টাকা বেতন পেতে পারে! তা বাদ দিয়ে কেন এই পেশা বেছে নিতে হবে?

রাত্তিরের বুকে অনিদ্রা করেছে ঠাঁই
অভাবী কিছু পতিতার হয়ে
শহরের রাজপথে হাত পেতে আছে যত ভিক্ষুক
তারচেয়ে বেশি ক্ষুধা বেশি আকুতি নিয়ে
অনিদ্রা করেছে ঠাঁই, সামর্থ্যের চেয়েও অভাবী কিছু পতিতার হয়ে...

হু, কবিতা এসেছে। কবিতার লাইন এসে গেছে। এই কবিতাটাকেই চালিয়ে নিতে হবে! নাজিম ঝটপট উঠে বসলো, এখনই লিখে রাখতে হবে যে, নইলে হারিয়ে যাবে কবিতাটা!

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: মেয়েটার এত কান্নার কিছু হয় নাই।

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০৫

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: তবুও মেয়েটি কাঁদল!

২| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৫১

চাঁদগাজী বলেছেন:


লেখাটা কেমন যেন অস্বাস্হ্যকর

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:০২

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: এবং খাপছাড়া মনে হবে, কারণ এটা একটা উপন্যাসের একটি খণ্ড মাত্র।

৩| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: তবুও মেয়েটি কাঁদল!

আসলে মেয়েদের জন্মই হয় কানা রজন্য। সুখে দুঃখে তাদের বারবার কাঁদতে হয়।

৪| ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৫৭

আহমেদ জী এস বলেছেন: Zeon Amanza,





হুমমমমমম... বেনামী রাত্তিরের অনামী কবিতা!

একদম শেষের লাইনে - "....... নইলেও হারিয়ে যাবে কবিতাটা!" "নইলে"র পরে "ও" অক্ষরটি বসবে কি?

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৫

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: সংশোধিত হয়েছে।

৫| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সকাল ১০:৫১

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: তারপর ওরা ওদের ঘর থেকে নাকি সেই মেয়েটা ওর ঘর থেকে ..........।হবে।

পাশের বাসার ছেলেটা ইচ্চাকৃতভাবে এই কাজ করালো? বেনামী রাত্তিরে এমনই ঘটে।

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩৪

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: না, পতিতা ব্যবসায়ীদের এরকম হামলার স্বীকার হতে হয় কখনও কখনও! এলাকার ছেলেপেলেরা খুব উত্সাহ নিয়েই এরকম অভিযান চালায়! সর্বোপরি এই সিরিজে সব সত্য ঘটনাই রাখা হয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.