নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আচমকা হঠাত আজ আচানক

২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১:০৪



জুল ভার্নের কী একটা গল্প ছিল, নাম মনে নেই, আপনারাও পড়ে থাকবেন হয়ত। গল্পটা ছিল এমন যে, এক দেশের রাজা পার্শ্ববর্তী আরেক দেশের সঙ্গে হঠাত যুদ্ধ ঘোষণা করে একশো বছর আগে ঘটে যাওয়া খুবই তুচ্ছ একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে! শুধু রাজাই নয়, সেখানকার জনগণও যুদ্ধে যাবার জন্য একদম একপায়ে খাঁড়া!

সবাই অবাক, এ কেমন ব্যাপার, সেই কত আগের সামান্য একটা ঘটনা নিয়ে যুদ্ধ ঘোষণা করতে হবে কেন! পরে গবেষণা করে দেখা গেল, ওই অঞ্চলের বাতাসে স্নায়ু উত্তেজক ভিন্ন এক গ্যাস কৌশলে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছিল- যার দরুন মানুষগুলো সবাই সাধারণ বিবেচনা হারিয়ে হিংস্র হয়ে উঠল রাতারাতি!

আমি ভাবছি হঠাত আমাদের দেশের সরল শান্তিকামী মানুষগুলোর নিঃশ্বাসেও অমন কোন বিষমন্ত্র আচমকা মিশিয়ে দেওয়া হল যা নিয়ে মানুষগুলো হঠাত করেই পুজা মণ্ডপ সঙ্গীত শিল্পী মানেই জাহান্নামী এই প্রকারের বিতণ্ডা নিয়ে উঠে পড়ে লেগেছে!

সঙ্গীত শিল্পীর মৃত্যু কি এদেশে আগেও হয়নি?

হয়েছে তো। তাহলে আজ হঠাত এটা নিয়ে উদ্ভট কথা কেন?

আজ হঠাত করেই কে শেখালো যে সঙ্গীত শিল্পী মানেই জাহান্নামী??
এতদিন সঙ্গীতশিল্পী দেখেননি আপনারা? আরব দেশে সঙ্গীত নেই? ইসলামে সঙ্গীত নেই??

তাছাড়া একজন মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করা যাবে না, উল্টো তার মৃত্যুতে খুশি হতে হবে এটাই বা হঠাত কে শেখালো?

আপনাদের হঠাত করেই এই উদ্ভট উন্মাদনায় কে নামালো একটু ভেবে দেখুন তো!

এবারে মণ্ডপ নিয়ে কথা! পুজো জিনিসটাই সার্বজনীন, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সবার জন্যই এটা উন্মুক্ত, এবং আবহমান কাল ধরেই এটা এভাবেই উদযাপিত হচ্ছে, এবং বলা বাহুল্য মণ্ডপগুলোতে যে ভীড় হয় সে ভীড়ের বিরাট অংশ কিন্তু মুসলমানেরাই। নইলে আয়োজনকে ক্ষুদ্রকায়ই দেখাত। একটি ধর্মীয় উৎসব সার্বজনীন অংশগ্রহণ ও প্রয়াসে সুন্দর হয়ে উঠছে এটাই তো সুন্দর। সেখানে একজন বাজে চিন্তার মানুষ মুসলিম মেয়েদের মণ্ডপে যাওয়া নিয়ে বাজে কথা বলেছে, এজন্য সাম্প্রদায়িক উসকানির দায়ে তাকে শাস্তি দেওয়া উচিত। এমন একটা আঘাত সৃষ্টিকারী বক্তব্যের কারণে তো বিরাট হিন্দু মুসলিম দাঙ্গাই বাঁধতে পারত, যদিও ঘটেছে উল্টো, এখানেও সেই একই বিষ! ধর্মীয় উন্মাদনা!

ওই লোকটাকে এখন মুসলমানরাই সমর্থন দিচ্ছে, বলছে, ভাই আরও দুইটা গালি বাড়ায়ে দেন অগোরে, ওরা যায় কেন! কী অদ্ভুত!! যেন তারা বা তাদের পরিচিতরা কখনই যায়নি পূজো দেখতে, কিংবা পূজো জিনিসটাই নোংরা কিছু! ইসলাম কোন মূর্তির সামনে নত হওয়াকে হারাম করেছে, বেশ, মণ্ডপে কোন মুসলমান তো নত হবার জন্যে যায় না, পূজো দিতেও যায় না, উৎসব হচ্ছে তাই দেখতে যায়, এবং যে যায় বা যে গিয়ে প্রসাদ খায় বা নিজেই পূজো দিয়ে আসে সেটা তার নিজস্ব ধর্মচেতনার বিষয়, বা বলা যাক তার ধর্মচেতনারই সমস্যা, এর হিসেব পরকালে সে বা তারা দেবে! আপনি বড়জোর তাকে সঠিক পথে ডাকতে পারেন, তাকে গালিগালাজ তো করতে পারেন না!

কেউ নামাজ না পড়লে তাকে কি নাস্তিক বলে গালি দেন??

নামায না আদায় করার চেয়ে মারাত্মক অপরাধ কোনটা আছে যা এমন অহরহ ঘটছে?? কই, সেখানে তো আপনার উম্মাদনাটার বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় না কখনও! এসব উসকানীর বেলায় তবে কেন??

আমি নিজেও মণ্ডপে গিয়েছি, আগামিতেও যাব, এতে কি আমি কাফির হয়ে গেছি, না আল্লাহর উপর থেকে আমার ঈমান উঠে গেছে? আমার ঘরে কোরআন বাইবেল বেদ আছে, আমি তথ্যের প্রয়োজনে সবই পড়ি, এতে কি আমার ঈমান চলে গেছে? না আল্লাহ আমাকে পরিত্যাগ করেছেন?? আপনি ইসলামের দাওয়াত দিতে পারেন সর্বোচ্চ, উসকানি দিয়ে, গালি দিয়ে কখনও পুণ্য হয় না, আল্লাহর সন্তুষ্টি তো অনেক দূরের ব্যাপার।

আমার কথা হল, এইসব বিষয় নিয়ে এতগুলো বছরে কোন বিতণ্ডা হয়নি কোথাও, আজ হঠাত এত ধর্মীয় অনুভূতি শাণিত হয়ে ওঠার পেছনে ইন্ধনটা কার? একজন সঙ্গীত শিল্পী, মানুষের কল্যানেই কাজ করে গেছেন তিনি, তাঁকেই কিছু অত্যুৎসাহী মানুষ যারা ধর্মের ধ-ও ঠিকমত বোঝে না, তারা রায় দিচ্ছে আইয়ুব বাচ্চুকে জাহান্নামী বলে!
এরকম আমীন না লিখে যাবেন না কিসিমের নির্বোধদের নিয়ে আমার কোন মাথাব্যথা নেই, ওদের কিছু বলারও নেই, কিন্তু আপনি তো সচেতন! আপনি কেন এটাকে প্রতিহত করছেন না?

একেকজন ফেইসবুকে আর ওয়াজের মেহফিলে একদম জানে প্রাণে ধার্মিক হয়ে যাই, অথচ বছরে তেপ্পান্ন জুমুআর নামাজ আদায় করা তো দূর তেপ্পান্ন বার নেক দীলে আল্লাহকে স্মরণও করি কি না সন্দেহ আছে!

আমরা শব-এ বরাত শব-এ ক্বদরে সারারাত কঠোর সাধনা নিয়ে নফল নামাজ আদায় করে ক্লান্ত হয়ে ফজরের আ'যান শুনে ঘুমাতে চলে যাই, ফরজ রেখে নফল নিয়ে টানাটানি!!

এই হচ্ছে আমাদের ধর্মচেতনা! আমরা নিজেরা ধর্মের বিধান ঠিকমত মানিই না, অথচ অন্যের পাপ পুণ্যের রায় দিতে সবাই এগিয়ে যাচ্ছি!! সুতরাং নিজের ইয়া নাফসিটা আগে সামলাই বরং! এটাই কাজে দেবে আপনার আমার পরকালের জন্যে।

আর রইল মণ্ডপ, ওখানে যাওয়া হারাম।
মদ খাওয়াও হারাম, গোঁড়ালি পর্যন্ত পুরুষের পাজামা পরাও হারাম, নামাজে না গিয়ে ফেইসবুকে বসে থাকাও হারাম, চ্যানেল খুলে খোলামেলা নর্তন দেখাও হারাম, চটি পেইজের ব্লগ পাঠ করাও তো হারাম, পর্ন ওয়েবসাইটে ঢু মারাও হারাম, হাঁটুর ওপর কাপড় উঠে যাওয়াও হারাম!

এমন আরও অসংখ্য হাজার হাজার হারামের তালিকা আছে, যেটা আপনি আমি রোজ রোজ উঠতে বসতে দিনে রাতে হাজার বার করি, সে হুঁশ আছে???

আর আপনি আসছেন মণ্ডপে যাওয়া নিয়ে একটা নোংরা গালিকে সমর্থন দিয়ে পুণ্য ফলাতে!!

যার যার ইয়া নাফসি সে সে করুক, আখেরাতে আপনার হিসাব আপনাকে দিতে হবে, মণ্ডপে কে গেল কেন গেল সে হিসাব আপনার আমার না। হ্যাঁ, আপনি আমি দাওয়াত দিতে পারি, সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করতে পারি, তবে উসকানি আর গালিগালাজ অবশ্যই নয়।

ধর্ম কখনই বিভেদের কথা বলে না, যা শান্তি নষ্ট করে তা কখনই আল্লাহর আদেশ হতে পারে না, একদম পানির মত সহজ আর পরিস্কার হিসেব!

শুভরাত্রি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ ভোর ৫:৩৯

মাহবুবুল আজাদ বলেছেন: পুরোটাই পড়লাম,
সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে স্রোতে গা ভাসানো, যেটা কখনোই ইসলামে ছিলনা, সব সময় বলা হয়েছে জানো, জ্ঞ্যান অর্জন কর না বুঝলে আলোচনা কর। আমরা সে সবের ধারে কাছে নেই।
জীবনে একবার কয়টা মানুষ পবিত্র কোরআন অর্থ সহ পড়েছে?
সবার আগে হিসাব হবে নামাজের। এ সবের ধারে কাছে ও নেই কেউ। আসল রেখে নকল নিয়ে টানাটানি। সত্যি কথা বলতে কি মানুষের মধে হিংসা বিদ্বেষ বেড়ে গেছে, যে যেভাবে পারে অন্যকে হেয় করতে পছন্দ করে। কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে তা উনারাই ঠিক ফেলেন, আল্লাহ মনে হয় উনাদের দায়িত্ব দিছে।
ধর্ম ব্যাপারটাই ই তো শান্তির।
অতচ এর বদলে পুরা ব্যাপারটাকে বানানো হয়েছে এক বিবাদের উন্মাদনা আর উস্কানি।

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:০৬

রাজীব নুর বলেছেন: বক ধার্মিকেরা বড় ভয়ঙ্কর।

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৯

লিংকন১১৫ বলেছেন: হুজুগে বাঙালি আরকি ।
কোথায় জানি সুনে ছিলাম , এক মদ খোর আরেক মদ খোর কে বলছে এই ব্যাটা মোচ উচু করে খা , জানিস না মোচের পানি হারাম!!

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ দুপুর ২:৪৩

সাইন বোর্ড বলেছেন: লেখা ভাল লেগেছে ।

৫| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৬

কে ত ন বলেছেন: আপনি পূজা মন্ডপে গিয়েছেন, আগামিতেও যাবেন - কি আস্ফালন করে ঘোষণা দিলেন। আবার তাতে কাফির হয়ে যাবেন না - এরকম একটা ভাবও দেখালেন। দেখুন তো পূজার ব্যাপারে কুরআন কি বলে?

"হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ ও জুয়া আর প্রতিমা-মূর্তি এবং ভাগ্য-নির্ধারক তীরসমূহ অপবিত্র শয়তানের কাজ, তাই তোমরা তা থেকে দূরে থাক।" (আল-মায়িদাহঃ ৯০)

"তোমরা মূর্তিপূজার অপবিত্রতা থেকে দূরে থাক" (হাজ্জঃ৩০)

"তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে কতগুলো নারীমূর্তিকে আহবান করে আর তারা কেবলমাত্র অবাধ্য শয়তানকে আহবান করে।" (নিসাঃ১১৭)

হাদীসে এসেছে, "অচিরেই আমার উম্মাতের কতক সম্প্রদায় মূর্তি পূজায় লিপ্ত হবে আর আমার উম্মাতের কতক গোত্র মুশরিকদের সাথে যোগ দিবে।" সুনানে ইবনে মাজাহঃ ৩৯৫২

আল্লাহ তায়ালা মূর্তিপূজাকে শয়তানের কাজ বলেছেন, এই কাজকে অপবিত্র বলেছেন এবং তা থেকে দূরে থাকতে আদেশ করেছেন। আর আপনি? এসব আদেশকে তুচ্ছ করে দাম্ভোক্তির মত একটা উদ্ভট দিলেন।

আল্লাহকে অস্বীকার না করার কারণে আপনি হয়ত কাফির হবার হাত থেকে বেঁচে গেলেন, কিন্তু আল্লাহর অমোঘ বাণী কুরআনকে অস্বীকার করে আপনার ঈমানকে কোথায় নিয়ে গেলেন বলুন তো?

মূর্তিপুজার অনুষ্ঠানে ডাই হার্ড উপস্থিত হয়ে আপনি কি প্রমাণ করতে চান? হিন্দু ধর্মের প্রতি আপনার ভালোবাসা নাকি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি আপনার একাত্মতা? এই করে কি ফায়দা হাসিল করতে চান? ভাবছেন এইটুকু করে তাঁদের মন পাবেন, তাঁদের শ্রদ্ধা আদায় করবেন? কস্মিনকালেও হবেনা, ব্রাদার। আপনার আমার চেয়ে মুশরিক জাতকে আল্লাহ তায়ালা ভালো চেনেন। তাঁদের পরিচয় তিনি দিয়েছেন সূরা মায়েদার ৮২ নং আয়াতে। পড়বেন, যদি তাতে আবার আল্লাহ সম্পর্কে আপনার ভাল ধারণা পালটে না যায়।


২০ শে অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৬

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: আমি জানি কুরআনে কী বলা আছে। আর আমার বক্তব্য অবশ্যই পজিটিভ এবং বিধানকে লঙ্ঘনের উদ্দেশ্যে নয়। আপনি হয়ত রাগ নিয়ে পোস্টটি পড়েছেন, তাই ধরতে পারেননি। চাইলে আরেকবার পড়ে দেখতে পারেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.