নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
বই পুস্তকের সঙ্গে আমার যোগাযোগ নেই বেশ কয়েক বছর হয়। বর্তমান সময়ে কে কেমন লিখছে তার একদম কিছুই আমি জানি না বললে চলে। বই মেলায় ঘটা করে কখনও যাইনি খুব একটা আগে, অনেক বছর পর গতবছর গিয়েছিলাম আর সেখানে গিয়ে এতই হতাশ হয়েছিলাম যে, ক্ষোভ প্রকাশ করে সমালোচনা লেখারও প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, পরে ক্ষান্ত হই, কারণ, এটা কেবলই বিদ্বেষ তৈরি করবে, কিছু মানুষ উৎসাহ হারাবে; অর্থাৎ এতে খুব ভালো কিছু হবে না।
এটা সত্য যে, বাংলাদেশ এখন লেখক সঙ্কটে ভুগছে। আমি ঠিক নিন্দা করছি না, তবে সত্যটা অনুধাবনও জরুরি। গত বই মেলায় আমার হতাশ হবার কারণগুলোর মধ্যে একটি ছিল, দোকানে প্রদর্শিত নতুন বই বলতে শতকরা আশি ভাগই দেখলাম অনুবাদ বই! এটাই আমাকে সবচেয়ে বেশি কষ্ট দিয়েছে। সব অনুবাদ, ধার করা অন্যের কথা, মৌলিক বই কেন থাকবে না!! আমার দুর্ভাগ্য, হয়ত কেবল বেছে বেছে খারাপ বইগুলোই আমার সামনে পড়েছিল! নতুনদের বইয়ের সব তো আর আমি দেখিনি এবং যা দেখেছি, তার অধিকাংশই ফেইসবুকের চটুল পোস্টগুলোরই ছাপানো পাতার গাট্টি!
আমি এই ক্ষেত্রে প্রথমেই ক্ষমা চাইব যে, নতুনদের না জেনে বুঝে অমূল্যায়ন করার দোষীদের মধ্যে আমিও একজন। আমরা যারা বড় বড় লেখকের ভারী ভারী লেখা পড়ে স্বাদ নিয়েছি, তারা নতুনদের দেখলেই প্রথমে নাক সিঁটকাই এই বলে যে, ধুর, এ ছোকরার বয়স কত? জীবনের দর্শনের কতটুকুই বা জানে!! সাধারণত নতুনদের প্রধান সমস্যা হয় গভীরতার অভাব! আর অসাধারণত যা হয় তা অসাধারণই হয়। এটাও সত্য কথা, সবাই এক দিনেই রবীন্দ্রনাথ হয় না; কিন্তু কথায় আছে- বাড়ন্ত মূলো পত্তনেই চেনা যায়। বড় লেখকদের প্রথম দিকের লেখা পড়েও আপনি গভীরতা অবশ্যই পাবেন, এটাই জীবন বোধ! লেখক যে বোধ ধারণ করে সেটাকেই সে টেনে নিয়ে যায় শুধু! এটা যার থাকে, প্রথম থেকেই থাকে।
এখন কথা হল, নতুন বলে আমরা যদি প্রথমেই নাক সিঁটকে এড়িয়ে যাই, তাহলে আরেকটি নজরুল আদৌ কোথাও উদীয়মান কি না -সেটা আমরা জানব কিভাবে?
বাংলাদেশে মানসম্মত লেখকের সংখ্যা খুবই অল্প এখন। হ্যাঁ, লেখক অনেকই আছেন, খারাপ লিখছেন না সত্য, কিন্তু আমি প্রায়ই প্রশ্ন করি, একটি লেখা দেখাতে পারেন, যেটা আগামি একশো বছর টিকবে? আমার আফসোস হয়, আমরা এখনও ১৮৬৬ সালের "কপাল কুণ্ডলা" উপন্যাসকে শীর্ষ সৃষ্টি হিসেবে মাথায় করে বসে আছি, অথচ কেউ এরপর আর কেন এগুতে পারল না! প্রথম যে সৃষ্টি, পরেরগুলো তো তারচেয়ে আরও ভালো হবার কথা, আমরা সেই বোধটাকে ধারণ করি কি?
কালজয়ী লেখার পরিমাণ কম হবার কারণ, এই গভীরতাবোধের অভাব! জহির রায়হান "হাজার বছর ধরে" উপন্যাসের শেষে যে বলেছেন, রাত বাড়ছে, হাজার বছরের পুরনো সে রাত!- এই একটি কথা দিয়েই তিনি বাংলা সাহিত্যে হাজার বছরের জন্য স্থান করে নিলেন। যতবারই মানুষ এই বাক্যের মুখোমুখি হবে, ততবারই মানুষ তার বিগত জীবনের স্মৃতি নিয়ে মোচড় খাবে সেটা যত যুগ পরেই হোক! এই রকম জীবনের চিরন্তন রূপকে আঁকার মাধ্যমেই একজন লেখক যুগ কালকে জয় করে একই সত্য নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন শতাব্দীর পর শতাব্দী। সেই রকম একটা জীবন বোধ নতুনরা কেন দিতে পারছেন না? বা দেবার কথা আদৌ কি কখনও ভাবছেন?
গত বইমেলায় নতুনদের প্রতি আস্থাহীনতার কারণেই আমি দেখা করতে আসা সবাইকে বিভূতিভূষণ আর মানিক কিনে উপহার দিয়েছিলাম। কিন্তু আজ আমি ক্ষমাস্বীকার করি যে, নতুনদের অমূল্যায়ন করা আমার ঠিক হয়নি। আমার এই ভুলটা ভাঙিয়ে দিয়েছে নাহিদা নাহিদএর "যূথচারী আঁধারের গল্প" নামক বইটি! বইটি পড়ে আমার প্রথমেই মনে বদ্ধমূল ধারণা জন্মে গেছে যে, এইবার বাংলা সাহিত্যে আরেকটি মাইল ফলক, আরেকটি নতুন ধারার সৃষ্টি হতে যাচ্ছে! আমি মোটেও অত্যুক্তি করার মানুষ না।
আলোচ্য বইয়ের "কেউ ফিরে আসেনি" নামক গল্পটি আমাকে ভীষণভাবে আবেগতাড়িত করেছে। সমাজ সংসারে যুদ্ধ করে টিকে থাকা একটি মেয়ের দিন শেষে সব রুক্ষ্মতা ঝেঁড়ে অবুঝ কিশোরীর মত মৃত পিতার নিকট আত্ম কথনের মধ্যে যে করুণ আবেদন, যে দাবীগুলো উঠে এসেছে, মেয়েটির চোখে জীবনকে দেখার যে ব্যতিক্রমী সারল্য- তা আমার বুকে মোচড় দিয়েছে। এই মেয়েটির মাঝে যেন আমি পথের পাঁচালীর দূর্গাকে দেখতে পেলাম, কিংবা মেয়েটির মাঝে যেন আমার নিজের মেয়েকেই দেখতে পেলাম! আমার চোখ তখন ভিজে এল।
বইটির আরেকটি গল্প আছে "মৃত্যু পদযাত্রা"! এই গল্পটি পড়ে আমার গর্ব হয়েছে এই ভেবে যে, জর্জ বার্কলি বা হেগেল কেবল বিদেশেই জন্মায় না, এদেশই এখন তারচেয়ে উন্নত ধারণা পোষণ করে! আমরা যে এখন আর প্রার্থনা আর ঈশ্বরে সীমাবদ্ধ না থেকে ঈশ্বরের নিয়ম ও বিধানকে একদম কাছে গিয়ে পর্যবেক্ষণ করার মত গভীর চেতনা রাখি এই বোধটিই আমার বুক গৌরবে চওড়া করে দেয়!
"দ্বৈরথে বিভোল ঘুম" নামে আরেকটি গল্প আছে এই বইতে। বাংলা সাহিত্যে অস্তিত্ববাদ আর সংশয়বাদ নিয়ে কেউ যে এখনও কাজ করতে পারে, বা কারও মাথায় যে একই বীজ থাকতে পারে এই লেখিকা তা একটি ছোট্ট গল্পের মাধ্যমেই প্রমাণ করেছেন। সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ যেখানে থেমেছিলেন, সেখান থেকেই যেন বাংলা সাহিত্যে এই আবার কেউ হাল ধরতে এল। এই গল্পের চমৎকারিত্ব হল, অমীমাংসার দ্বন্দ্ব! শরৎচন্দ্রের মত এই লেখিকাও আমাদের কিছু দ্বন্দ্বের মুখোমুখি করে দিয়েছেন, যেখানে উত্তর আমাদেরকেই খুঁজতে হয়, রায় আমাদেরকেই ধার্য করতে হয় নিজ নিজ মত করে! এই সংশয়ের মাঝে দর্শন খুঁজে ফেরার প্রয়োজনটা আমাদের সাহিত্যে এখনও অনেক বেশি।
আরেকটি গল্প আছে নাম "বিষহরীর প্রথম যৌবন"! দেহজ যে প্রেম, তার রূপকে মানিক বন্দোপাধ্যায়ের পর এই এত বছর পর কাউকে দেখলাম ঐকান্তিক বিকলনে বিশ্লেষণে চৌচির করতে। যৌবনের উন্মেষকালে মানুষের যে চোখের সামনে পাওয়া কোন ব্যক্তিকে নিয়ে নিজের মত করে fantasyর জগত তৈরি হয়, তারই চমৎকার বিশ্লেষণ দেখলাম গল্পটিতে!
এছাড়া "দাসমানুষ" গল্পটির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করতে হচ্ছে। পাপবোধ, এবং পাপের প্রতিক্রিয়া- উত্তরসূত্রিতা ইত্যাদি নিয়ে সংশয়বোধ আর তার মাঝেই একটি বিকৃত ভালোবাসা কী অদ্ভুত এক জিজ্ঞাসার মুখোমুখি করে দেয় আমাদের! এই না হলে সাহিত্যের স্বাদ!!
"শরীর" নামের গল্পটি আমাদের আলাউদ্দিন আল আজাদকে স্মরণ করিয়ে দেয়, স্মরণ করিয়ে দেয় হাসান আজিজুল হককে! আলাউদ্দীন আল আজাদের মতোই শ্রেণী সংগ্রাম, প্রতিবাদের জোটবাধা রূপ আর হাসান আজিজুল হকের মতোই কাব্যিক শব্দ সম্ভারে গল্প লেখন সেই বই পড়ার। চিরচেনা স্বদকেই ফিরিয়ে দিয়েছে!
আমি আবারও ত্রুটিস্বীকার করছি, আমার মত অনেকেরই এই দোষ আছে, আমরা কোন না কোনভাবে তুলনা করতে চাই, অমুকের মত হল কি না, তমুকের চেয়ে ভালো হল কি না; কিংবা নতুনের মাঝে পুরনোর ছাপ খুঁজে পেতে চাই! এ কারণেই আমি পঠিত গল্পগুলো নিয়ে আলোচনার বেলায় পূর্ববর্তী কারও না কারও সঙ্গে মিল খোঁজার চেষ্টা করেছি এবং এর মানে মোটেও এই নয় যে লেখিকা নাহিদা নাহিদ পূর্ববর্তীদের নকল করেছেন! তাঁর প্রতিটি লেখাই মৌলিক এবং স্বতন্ত্র আর সে কারণেই আমি প্রথমেই বলেছি, এই লেখিকা বাংলা সাহিত্যে নিঃসন্দেহে নতুন একটি ধারার প্রবর্তন করতে যাচ্ছেন, যদি এইভাবে লিখে যেতে পারেন। এই একজনের লেখার মাঝেই আমি সাহিত্যের সব উপাদান, সব কলাকে দেখতে পাচ্ছি, সব পূর্বজদের স্বাদ ফিরে পাচ্ছি- এটা নিঃসন্দেহে অনেক বড় ব্যাপার!
যাইহোক, সবশেষে বলছি, আমি এখন থেকে নতুনদের বই কিনব, তাঁদের খাটো করে দেখার কোন অবকাশ নেই! নাহিদা নাহিদকে ধন্যবাদ, তিনি আমার ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। আর আমি কেবল আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া জানালাম একজন সমালোচক হিসেবে, আমি যেহেতু বাংলা সাহিত্যের দিকপাল বা কর্ণধার কেউ নই, আমার এখানকার কোন অভিমতকে কেউ রেষারেষির পর্যায়ে নেবেন না বলেই আমি বিশ্বাস করি। "যূথচারী আঁধারের গল্প" বইটি পাওয়া যাবে বইমেলার ৬৬০ নং স্টলে, মূল্য একশো পঁয়ত্রিশ টাকা।
এই পাঠপ্রতিক্রিয়া প্রকাশে আমার বা লেখিকার ব্যক্তিগত কোন স্বার্থ নেই, আপনারাও আপনাদের লিখিত বা পঠিত ভালো বইয়ের কথা আমাকে জানাতে পারেন, আমি সেক্ষেত্রেও পাঠ প্রতিক্রিয়া দেবার চেষ্টা করব।
দেখা হয়ে যেতে পারে আপনাদের সাথে বইমেলায়। লেখিকার প্রতি রইল শুভ কামনা, উনি বাংলাদেশকে এবং বইমেলাকে অত্যন্ত ভালো মানের একটি বই দিয়ে সাহিত্যসমৃদ্ধিতে অবদান রেখেছেন!
উনি ব্যক্তিগতজীবনে এমনিতেই সবক্ষেত্রে সফল, আমি তাঁর উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করি।
২| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩০
চাঁদগাজী বলেছেন:
নাহিদা নাহিদ কি ব্লগার?
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: না, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিকা।
৩| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ৮:৪৭
রাজীব নুর বলেছেন: বেশ গুছিয়ে সুন্দর করে লিখেছেন। লেখাটা পরে আরাম পেলাম।
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: পরে? :p
৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ১০:৫২
বিজন রয় বলেছেন: আপনিও কি শিক্ষক?
৫| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৪৪
জাহিদ অনিক বলেছেন:
নাহিদা নাহিদ ম্যাম'কে আমি চিনি। খুব ভালো লিখে থাকেন।
গতবার তার একটি বই বেরিয়েছিল অলকার ফুল। এটাও কিনে নেয়ার ইচ্ছে আছে
পোষ্টটির জন্য ধন্যবাদ
৬| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৮
আল ইফরান বলেছেন: বইয়ের পর্যালোচনা খুব সুন্দর হয়েছে
১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:১৪
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: পর্যালোচনাকে অতিরঞ্জিত মনে হতে পারে, তবে বইটি পড়লে নিশ্চিত সত্যতা পাবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
আপনার ভাবনাগুলো সঠিক, মনে হচ্ছে