নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাতিস্মর

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১২:২৮

বিজ্ঞান আমাদের দিয়াছে বেগ, কাড়িয়া লইয়াছে আবেগ । দিগ্বিজয়ের আনন্দে মানুষ দিকের সীমারেখা, কোথা হইতে যে তাহার শুরু হইয়াছিল, সে ইতিহাসও ভুলিয়া বসে । তাহারা বিজ্ঞানলব্ধ অতি যান্ত্রিকতায়, অতি তাত্ত্বিকতায় বিধাতাকে পর্যন্ত যেখানে ভুলিয়া যায়, অস্বীকার করিয়া বসে, সেখানে জাতিস্মর আর কোন মনে রাখিবার বস্তু ?

জাতিস্মর তত্ত্বটি লইয়া আমার একটি বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা আছে । তবে সেই ব্যাখ্যাটি এক্ষণে এইখানে দিব না । ছাপার কাগজে দিব । নইলে জ্ঞান চুরি হইয়া যাবে । অন্য কেউ তাহা নিজের বলিয়া দাবি করিবে- যেমনটি আগেও করিয়াছে ।

সে যাহাইহোক, আমি আমার পূর্বজন্মের অনেক কিছু আবছা আবছা স্মরণ করিতে পারি । এবং উল্লেখ্য যে, আমার পূর্বজন্ম একটি দুইটি নয়, কম করিয়া হইলেও অর্ধ শতাধিক । তাহার মধ্যে একবার আমি দেবতা হইয়াও জন্মিয়াছিলাম । আজ সেই দেবজন্ম লইয়া বলিব না।
আজ বলিব অন্য এক জনমের কথা ।

সে বড়ো প্রাচীন ইতিহাস ।
সেকালে মানব সভ্যতা বিশেষ আগায় নাই । আমাদের পূর্ব- পুরুষেরা কেবল গুহা হইতে নামিয়া আসিয়াছে এমন একটি যুগ হইবে সেটি । অবশ্য ইতিহাস ঘাঁটিয়া বুঝিলাম, তাহা আসলে প্রস্তর যুগেরও পরবর্ত্তী ঘটনা, যখন বুদ্ধের আবির্ভাব হইয়াছে তখনকার কিছু পরের হইবে ।

আমরা সে সমাজ বৌদ্ধ ছিলাম । আমরা বাস করিতাম কোন এক বিশাল সমূদ্রের উপকূলে। সে সমূদ্র এই সময়কার বঙ্গোপসাগরের ন্যায় প্রবল ঢেউ আনিয়া কূলে আছাড়িত না । তীরের ভাগটা অনেক শান্ত ছিল । সেখানে জলজ পানা আর নল খাগড়া- হোগলা সদৃশ বড়ো বড়ো গুল্মেরও অবস্থান সুনিশ্চিত ছিল ।

আমরা ছিলাম তিন ভাই । আমার নিজের নাম কী ছিল- তাহা আর স্মরণ করিতে পারি না ।
ভাইদিগের মধ্যে একটির নাম ছিল 'মাধায়'। মাধায় বড় অদ্ভুত প্রকৃতির নাম বলিয়া বোধ হইবে এই কালের মানুষের নিকট । মানুষ হিসেবেও সে অদ্ভুত ছিল । এবং সে ছিল মেজ । একটি রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মাধায় মারা পড়িয়াছিল । সেই একই সংঘাতের সূত্র ধরিয়া সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতঃ চানুও হত্যা হইয়াছিল । আমাদের একমাত্র ভগিনি 'বাসুলী' অদূরে দাঁড়াইয়া তাহার ভ্রাতাদ্বয়ের অকাল মৃত্যু দর্শন করতঃ নীরব অশ্রু বিসর্জন করিতেছিল । সে দৃশ্য আমার স্পষ্ট চক্ষে ভাসে ।

সংঘর্ষটি হইয়াছিল সাধারণত্ব আর দেবত্ব লইয়া । তৎকালে একশ্রেণির মনুষ্য আপনাকে দেবতা বলিয়া দাবি করিত । তাহাদের কিঞ্চিত দেবতুল্য যোগ্যতাও ছিল । তাহারা ধ্যান করিত সেই সমূদ্র জলে বসিয়া । বোধকরি কোন দৈবশক্তিবলে তাহারা জলে ভাসমান হইয়া ধ্যানাবিষ্ট বসিয়া থাকিতে পারিত । ডুবিত না । সেই ধ্যানের জায়গাটি এবং তাহার জল গুল্ম লইয়া মাধায়ের সঙ্গে উহাদের দ্বন্দ্বের সূত্রপাত হয় ।

সেইসব দেবত্ব দাবিকারী ব্যক্তিবর্গের ছিল অত্যধিক ছ্যুত । অত্যধিক অহংকার । যাহার দোষে তাহাদের পতন হইয়াছিল আমাদিগের হস্তে । বধ করিবার দৃশ্যও আমার স্মরণ হয় । আমি উহাদিগের একেকটিকে যুদ্ধপূর্বক মাটিতে শায়িত করিয়া স্বীয় পদপ্রস্থ দিয়া কণ্ঠনালী চাপিয়া ধরিতাম । এতই চাপ দিতাম যে মস্তক ধর হইতে বিচ্ছিন্ন হইয়া যাইত । আমার দুই ভ্রাতঃ চানু এবং মাধায়ও একই উপায়ে বধ করিয়াছে এবং নিজেরাও শেষে বধ হইয়াছে । শুধু টিকিয়া রইয়াছিলাম আমি আর ভগিনি বাসুলী । বাসুলী নারী ছিল বলিয়া তাহার ওপর কোন আক্রমণ হয় নাই ।

যুদ্ধ জয় শেষে নিয়ম অনুযায়ী আমাকে গৃহত্যাগ করিতে হইবে, কেননা আমি ও আমার ভাইয়েরা দেবতা বধ করিয়াছি । সন্ন্যাস গ্রহণবশতঃ গৃহত্যাগী হইয়া উহার প্রায়শ্চিত্ত করিতে হইবে- এমনই বিধান । বাসুলী নারী বিধায় সে সমাজে থাকিতে পারিবে । আহঃ । সেকালে নারীর বড় সম্মান ছিল ।

আমার সন্ন্যাসগ্রহণের বিধানটি পাইয়া আমি বড় উৎফুল্ল হইলাম । এখন আর আমার বাঁধা নাই । কোন পিছুটান নাই । প্রাণের মায়া নাই । এইবার আমি জীবন বাজি ধরিতে পারি নিঃসঙ্কোচে ।

দৌড়াইয়া গিয়া আমি আমার সেই লুক্কায়িত মানচিত্রটি বাহির করিলাম । এই সেই মানচিত্র ! রত্নদ্বীপে যাইবার মানচিত্র !

রত্নদীপ ! হীরে আর জহরতে ঠাসা, দুর্গম আর নিষ্ঠুর একটি দ্বীপ । যোজন দ্বীপের পরে । সুদূর কোন এক ভিন্ন মহাদেশে । তথায় যে যায়, সে আর ফিরিয়া আসে না । যাইতে যাইতে পথিমধ্যেই অনেকে মরিয়াছে । বাকিরা মৃত সহযাত্রীর মাংস আহার করিয়া জীবন ধারণ করিয়াছে । এমনই নৃশংস তাহার ইতিহাস !

বহুকাল আগে 'নিবাগী মাক্ক' মহারাজ সেখান হইতে ফিরিয়া আসিতে পারিয়াছিলেন। তিনি ফিরিয়াছিলেন বিপুল ধনরত্ন লইয়া । যাহার দৌরাত্মে তিনি অত্র অঞ্চলের রাজা হইতে পারিয়াছিলেন ।

রত্নদ্বীপে যে যাইবে তাহার ধর্ম এবং সমাজ উভয় হইতেই বিচ্যুতি ঘটিবে । এই ভয়ে আমি সেইবার বিরত হইয়াছিলাম । এবার আর চিন্তা কী ।

পিছন হইতে বাসুলীর আহাজারি শুনিতে পাইলাম । তাহার ক্রন্দনের সারার্থ এই যে, সে আমাকে কিছুতেই রত্নদীপে যাইয়া আত্মঘাতী হইতে দিবে না । আমি যাহাতে রত্নদীপে যাইতে অভিসন্ধি না করিতে পারি, তাই সে আমার সন্ন্যাস সঙ্গী হইবে ।

আহা ! এত মায়া এই সংসারে ! আমি অবাক হইয়া দাঁড়াইয়া পড়িলাম । সম্মুখে ভগিনী বাসুলীর অশ্রুসিক্ত আঁখি ।


ණ পুনশ্চঃ →
¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯¯
আমরা এই জন্মেও তিন ভাই বোন । মেজ ভাইটি ইহলোক ত্যাগ করিয়াছে ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ১:১৭

নতুন বিচারক বলেছেন: ভালো ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৭ দুপুর ২:৪২

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.