নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
১.
চোর এসেছে চুরি করতে। তার অনুভূতি প্রকাশ পাচ্ছে গানে গানে—
"এখন অনেক রাত,
খোলা আকাশের নিচে
জীবনের অনেক আয়োজন
আর আমি বসে আছি
দরজার ওপাশে!"
এরপরে সে কসরৎ করে ভেতরে ঢুকল, কিন্তু বাড়ির মালিক গিয়েছে জেগে। অগত্যা চোর বেচারা লুকালো খাঁটের তলায়। এখন গৃহকর্ত্রী গাইছেন—
"আমার চোখেতে ধরা
পড়ে গেছ আজ,
আমার চোখেতে ধরা
পড়ে গেছ আজ!"
পঙ্কজ উদাসের এই গান বেশিক্ষণ সুযোগ পেল না। গৃহকর্তাও মাহমুদ কলি ও ববিতার একটি ছায়াছবির গান দিয়ে হুমকি দিচ্ছেন—
"তুমি বাঘের মুখে পড়ছ
ছাড়া যে পাবে না
বড় ভুল করছ!
তুমি বাঘের, ও তুমি বাঘের.."
এই বলে গৃহকর্তা চোরকে তালে তালে খোঁচাতে লাগলেন একটি লম্বা লাঠি দিয়ে।
চোর তখন মিনমিন করে গাইছে—
"আমাকে আমার মতো থাকতে দাও
আমি নিজেকে নিজের মতো
গুছিয়ে নিয়েছি.."
কিন্তু কতক্ষণ আর এভাবে থাকা যায়! চোর বেরিয়ে আসতে বাধ্য হল। অতঃপর চোরকে বাইরে এনে গাছের সঙ্গে বাঁধা হল। চোর এখন গাইছে—
"একি বাঁধনে বলো
জড়ালে আমায়
ভাবি যতবার
মরি লজ্জায়..."
২.
এবারও এক চোর ঢুকেছে চুরি করতে। যার বাড়িতে ঢুকেছে, সে আরো বড় চোর। চোর বেচারা চুরি করে নেবার জন্য মেঝেতে লুঙ্গি বিছিয়ে রেখে জিনিস খুঁজতে গেল। এসে দেখে লুঙ্গি নেই! বাড়ির মালিক খাঁটে বসে মুচকি হাসছে, চোর চেঁচিয়ে বলল, "চোরের ব্যাটা চোর, আমার লুঙ্গি চুরি করে হাসছিস!"
এই গল্প নিয়ে আর কিছু বলব না। রস এতটুকুই যথেষ্ট।
৩.
এক চোর চুরি করতে একটি ঘরে ঢুকে দেখতে পেল অলরেডি একজন চোর ভেতরে ঢুকে বসে আছে। মুখে পেন্সিল টর্চ ফেলে চোর আঁৎকে উঠে বলল, "হা ভগবান! এ যে দেখছি ব্রাহ্মণ!!"
ব্রাহ্মণ জলদি এসে তার মুখ চেপে ধরে ফিসফিস করে প্রবোধ দিয়ে বলল,
"কইস নং, কইস নং,
তোরেও অর্ধেক দেবো নং"
৪.
এক লোক বাসের দরজার লাগোয়া সিটে বসে তার ব্যাগ রেখেছেন দরজার কাছেই, এমনভাবে, যেন চাইলেই নিচ থেকে টান মেরে নেওয়া যায়। পাশে দাঁড়ানো এক লোক সাবধান করে বলল, "এখানে ব্যাগ রাখবেন না, যেকোন মুহূর্তে চুরি হয়ে যাবে।"
লোকটা খুবই ঘাঘু চিজ। মুচকি হেসে বলল, "আমার সামনেই তো ব্যাগ। আমার চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে নেবে?"
লোকটা বলল, "এইভাবে ব্যাগটা ধরবে, তারপর ঝপাং করে দেবে লাফ!"
ততক্ষণে লোকটা ব্যাগ নিয়ে লাফ দিয়ে ফেলেছে!
৫.
এই গল্পটা আপনারা সবাই জানেন, তবুও শেষ দানের আগে আরেকটু মুখ গরম করি।
চোর এসেছে ঘরে। বাড়ির মালিক দার্শনিক টাইপের। জেগে গেছেন তিনি। তবুও ঘুমানোর ভান করে শুয়ে রইলেন। মনে মনে বলছেন, দেখি চাঁদু, তুমি কর কী!
চোর মনের আনন্দে একে একে তল্পি গোছাতে লাগল। বাড়ির মালিক চোখ আধবোজা করে সব দেখছেন আর মনে মনে হাসছেন, ব্যাটা, ঘরের দামি জিনিস রেখে চুরি করছে থালাবাসন! করবি তো সিন্দুক চুরি কর। ব্যাটা বলদ!
এই ভেবে তিনি চাবির গোছাটা বিনাশব্দে সিথানে রাখলেন। সচেতনভাবে তিনি চোরটাকে নিয়ে খেলছেন।
চোরটা সত্যিই বোকা। থালাবাসনের পর এবার নজর দিল ঘরের কাপড়চোপড়ের দিকে।
মালিক কৌতুকবোধ করছেন খুব, দেখি ব্যাটা, এরপর কী করিস!
জামাকাপড় বস্তায় ভরার পরও চাবিটা খুঁজে পেতে বোকা বেচারার বেশ সময় লাগল। এরপর সে সিন্দুক খুলে টাকা পয়সা গহনাগাঁটি বের করে বস্তায় ভরল।
মালিক চোরটার নির্বুদ্ধিতা দেখে মনে মনে নিরন্তর গাল দিচ্ছেন। ব্যাটা, এত গহনা আর টাকা পাবার পর তোর আবার ঐ বস্তার দরকার কী? অতবড় বস্তা বহন করার আর দরকার আছে? ব্যাটা গর্দভ! আচ্ছা, দেখি, এরপর তুই কী করিস।
চোর অতঃপর বস্তা কাঁধে তুলে বের হল! মালিক কাণ্ড দেখে হাসছেন।
কিছুক্ষণ পর মালিকের খেয়াল হল, অবুক, চোরাইয়া তো ধাই গেইয়ে!!
৬.
এই গল্পটা আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে। এক চোর রাজার ঘরে গিয়েছে চুরি করতে। গিয়ে দেখল, রাজা আর রাণী দুজনেই জেগে আছেন। সে অগত্যা লুকিয়ে রইল। শুনতে পেল রাজা আক্ষেপ করে বলছেন, "কী হবে বলো রাণী? এই রাজ্য দিয়ে আর কী হবে? আমাদের তো কোন সন্তান নেই, কে ভোগ করবে এই রাজ্য? কাকে দিয়ে যাব এই বৈভব?"
রাণী ফোঁপাতে ফোঁপাতে বললেন, "সবই আমাদের কপাল, মহারাজ! কী হবে এই রাজ্যে? চলুন, আমরা এটা দান করে দিই।"
ব্যথিত রাজা বললেন, "হ্যাঁ, তাই দেব। মন্ত্রীকে নাহয় সেনাপতিকে দিয়ে দিই?"
রাণী বললেন, "না, ওরা লোভী। ওরা অসৎ।"
"তাহলে?"
রাণী বললেন, আমরা সৎ দেখে কাউকে দেব।
কোথায় পাব সৎ লোক?
বুদ্ধিমতী রাণী বললেন, এই রাজ্যের শেষ প্রান্তে একটি গুহায় কিছু সন্যাসী বাস করেন বলে শুনেছি। তাঁদের মধ্য থেকেই কাউকে দেই। তাঁরা সৎ লোক।
তাহলে কাল প্রত্যূষেই যাই চল।
এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজা রাণী শুয়ে পড়লেন।
ওদিকে সব শুনে চোর তড়িঘড়ি করে বের হল। হিসেব সে কষে ফেলেছে। রাজা হবার সুযোগই যখন পাওয়া গেল তখন আর চুরিতে কাজ কী!
রাতের মধ্যে সে কোনমতে একটা সাদা কাপড় যোগাড় করে সূর্যোদয়ের আগেই সে পৌঁছে গেল সন্ন্যাসীদের গুহায়। গুহায় গিয়ে সন্ন্যাসীদের মতো কাপড় পেঁচিয়ে গুহার মুখটায় এমনভাবে বসল যাতে রাজা রাণী এসে প্রথমেই তাকে দেখতে পায়।
সকালে রাজা রাণী এলেন এবং তার পরিকল্পনা ভণ্ডুল করে দিয়ে ঢুকে গেলেন গুহার মধ্যে, গিয়ে দাঁড়ালেন প্রধান সন্ন্যাসীর কাছে এবং তাঁকে এই রাজ্যের ভার নিতে অনুরোধ করলেন।
চোর উৎকর্ণ হয়ে শুনছে, মনে মনে আফসোস করল, ইশ রে, একটুর জন্য রাজ্যটা হাতছাড়া হয়ে গেল রে! রাজ্যটা ওই বুড়ো হাবড়াটাই পেয়ে গেল!
ওদিকে সন্ন্যাসী সব শুনে উহুঁ উহুঁ করে মাথা নাড়লেন। বললেন, আমার এই তুচ্ছ রাজত্ব চাই না, মা। আমার শিষ্যদের মধ্য হতে কেউ নেয় কিনা বলে দেখ।
চোর তো ভীষণ অবাক! বলে কী এই লোক! রাজ্য তার কাছে তুচ্ছ?
এরপরে রাজা রাণী একে একে লাইন দিয়ে বসা সন্ন্যাসীদের সামনে এসে দাঁড়াতে লাগলেন এবং রাজত্ব গ্রহণের অনুরোধ করতে লাগলেন। কিন্তু সন্ন্যাসীগণ প্রত্যেকেই উত্তর দিলেন যে, রাজত্ব তাঁরা চান না। এর চেয়ে বড় সম্পদ তাঁরা পেয়ে গেছেন!
চোর প্রত্যেকবার উত্তরটা শুনে অবাক হতে লাগল। এঁদের কাছে রাজত্বের চেয়েও বড়ো সম্পদ আছে! কী সেই সম্পদ?
সবশেষে যখন রাজা রাণী তার কাছে এসে দাঁড়াল, চোরও তখন গম্ভীর গলায় বলল, "এই তুচ্ছ রাজত্বে আমার দরকার নেই মা। এরচেয়ে বড়ো সম্পদের দেখা আমি পেয়ে গেছি!"
৭.
এটা বড়দের গল্প। তিন আঠারো চুয়ান্ন প্লাস। এখানে বলা যাবে না।
শুভরাত্রি।
©somewhere in net ltd.