নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলা বানান সমস্যা ও স্বরূপ

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৭

বাংলা নিয়ে মাতামাতি আর চেতনার বহিঃপ্রকাশ কেবল এই ভাষার মাস এলেই দেখতে পাওয়া যায়। অতএব সচেতনতা গেলানোরও মোক্ষম সময় এই ফেব্রুয়ারি।

বাংলা নিয়ে আগেও অনেক চেঁচিয়েছি, এবার আর সেসব ভূমিকা টানব না। সরাসরি সমস্যা নিয়ে আলাপ করব। একজন শিক্ষিত লোক যদি বানান লিখতে ভুল করে তবে সেটা কি লজ্জার নয়?

লজ্জার এই কারণে যে, শিক্ষার অপর নাম সচেতনতা, সার্টিফিকেট নয়। আপনি কী লিখছেন সে সম্পর্কে সচেতন নন। এই আপনি শিক্ষিত? আপনি রসায়ন পড়েছেন, ইংরেজিতে পড়েছেন তাই বলে এটা হতেই পারে না যে আপনি আপনার মাতৃভাষায় ভুল করবেন।

যুক্তির অত অবকাশও নেই, আপনার লজ্জা হওয়া উচিত, এবং লজ্জার কারণে হলেও আপনার এবার বানানের প্রতি অন্তত যত্নবান হওয়া উচিত।

আমাদের বানানে ভুল হওয়ার কারণগুলো কী?

প্রথম কারণ আমাদের উচ্চারণ। আমরা মনে মনে যা উচ্চারণ করি সেটাই তো লিখি। এখন আপনি যদি "রিশকা" উচ্চারণে অভ্যস্ত হন, আপনি বানান জানা সত্ত্বেও লেখার সময় "রিশকা"ই লিখবেন।
আঞ্চলিক উচ্চারণে অনেককেই এই সমস্যায় ভুগতে দেখা যায়। চট্টগ্রামের অনেকে মনের অজান্তেই কোথায়'কে "কুতাই" লিখে ফেলেন, "তারে" বা তাকে লেখার জায়গায় লিখে বসেন থার বা থাকে! এটা কেবলই উচ্চারণ প্রবণতার দোষ।

সংশোধনটা আপনাদের হাতে।

আমাদের বানান ভুল হবার দ্বিতীয় কারণ হল, আমরা পড়ার সময় ঠিকভাবে অক্ষর বা শব্দগুলোর দিকে তাকিয়ে দেখি না। লেখার সময় আমরা যেমন মনে মনে লেখ্যকে আউড়াই, তেমনই শব্দটাকে কল্পনাও করি। আমরা যাই বলি বা লিখি তার একটা ছবি আমাদের মস্তিষ্কে সংরক্ষিত থাকে। বলার বা লেখার সময় সেখান থেকে মস্তিষ্ক review করে। আপনি যখন অবস্তুবাচক কোন শব্দ লিখতে চাইবেন, ধরুন, লিখতে চান আমার, তখন খেয়াল করে দেখবেন আপনার মনে ভেসে উঠবে আমার শব্দটির লিখিত রূপ। আপনি নিরীহ লিখতে গিয়ে যদি নীরিহ লিখে বসেন, আপনাআপনিই আপনার মনটা খচ্ করে উঠবে। কারণ এরকম শব্দ আপনার মস্তিষ্কে নেই বলেই আপনার কাছে শব্দটি বেমানান লাগছে।

তাহলে আপনাকে যেটা করতে হবে, যখন কিছু পড়বেন, শব্দগুলোর ছবিও মনে গেঁথে নেবার চেষ্টা করবেন। কাজটা মোটেও কঠিন বা কষ্টের কিছু নয়।

আমি জানি আপনারা প্রত্যেকেই শিক্ষিত। এবং শিক্ষিত মানুষের ঘরে একটি বইও থাকবে না এটা অসম্ভব। আর আমি যে ঘরেই বই দেখি, বিশেষ করে বইয়ের সংগ্রহ দেখি, সে ঘরেই আমার চোখ প্রথম খুঁজতে থাকে একটি বাংলা অভিধান। যার ঘরে পাই না, সেই ঘরের পাঠক কর্তাটির প্রতি আমার আর শ্রদ্ধা থাকে না। কেননা তখন আমি নিশ্চিত জানি যে এই লোকটা বানানে প্রতিনিয়ত অজস্র ভুল করে।

আবারও বলি, আপনার ঘরে টলস্টয় বা বোদলেয়ার থাক বা না থাক, একটি অভিধান থাকা আপনার রুচি এবং সচেতনতা প্রকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি।

অনেকেই গা বাঁচাতে বলেন, বাংলা খুব কঠিন ভাষা। তাঁদের জ্ঞাতার্থে বলি, ইংরেজি ভাষার article এবং preposition কতটা কঠিন, ভেবেছেন? জার্মান ভাষার প্রত্যেকটি শব্দের জন্য তার article এবং gender জানা জরুরি। ফ্রেঞ্চ ভাষার কঠিনতম অধ্যায় হচ্ছে pronoun; আর এ দুটি ভাষাতে উচ্চারণের ব্যাপক ঝামেলা তো আছেই। আপনি লিখবেন একটা, সেটাকে পড়া হবে অন্য একটা! লেখা এবং উচ্চারণে আকাশ পাতাল পার্থক্য! সে অর্থে আমাদের বাংলা লক্ষগুণে সহজ, কেবল আপনি এই ভাষাটির প্রতি যত্নবান ছিলেন না কোন দিন।
আর হ্যাঁ, যে ব্যক্তি তার মাতৃভাষায় দক্ষ নয়, তার পক্ষে অন্য ভাষায় দক্ষতা অর্জন করা অসম্ভব।

সমস্যা আপনার, নিজের ভুলকে সংশোধন করার দায়িত্বও আপনার। নইলে আপনারই ব্যক্তিত্বে ত্রুটি থেকে যাবে।

বানানের ভুল সম্পর্কে আরেকটু বলি, আপনারা অনেকেই "ই" এবং "য়" এর পার্থক্যটা বোঝেন না। কারণটা কী?

যায় এবং যাই, খায় এবং খাই ইত্যাদির পার্থক্য কি আপনারা একদমই বোঝেন না??

জিজ্ঞেস করা হল, তুমি কোথায়?
উত্তর এল, বাসাই।

"যাই" বললে যে আমার যাওয়া বোঝায়, "খাই" বললে যে আমার খাওয়া বুঝায় এবং একইভাবে "যায়" "খায়" বলতে যে অন্য কারো যাওয়া খাওয়া বুঝায় এটা কি আপনারা ছেলেবেলা থেকেই দেখে আসছেন না?
(উদা: আমি যাই। সে যায়।)

"য়" এর উচ্চারণ সংক্ষিপ্ত "এ" ধ্বনির মতো। বাসায় লিখলে অনেকটা বাসাএর মতো শোনায়, সেখানে "সায়" উচ্চারণের বদলে "সাই" উচ্চারণটা কীভাবে আপনার মস্তিষ্ক সমর্থন করে আমি ভেবে পাই না!

চট্টগ্রাম অঞ্চলে শিশুশিক্ষার পর্যায় হতেই গলদ ঢুকিয়ে দেওয়া হয় শিশুর মস্তিষ্কে। সেখানে "ও" কে উচ্চারণ করা হয় "উ", "ঔ" কে উচ্চারণ করা হয় "আউ"। "স্বরে অ" কে পড়া হয় "স্বর-উ"!

স্বরপাঠে ও এবং ল লিখলে উচ্চারণ কী হয়, প্রশ্ন করলে উত্তর আসে উল!
ভুল তো ওখান থেকেই গিলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ কারণে সমস্ত শিক্ষকের উচ্চারণ শুদ্ধতার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা খুবই জরুরি।

আলোচনার প্রসঙ্গ এবার একটু অন্য দিকে নেব।
বাংলা বানানে বৈচিত্র্য বিস্তর। এই বৈচিত্র্য শুরু হয়েছে সেই প্রাচীন কাল হতেই। একেক কবি বা লিপিকার শব্দের বানান তখন থেকেই একেক রকম লিখে আসছেন। সেই যে প্রভেদ, তা আজ পর্যন্ত সমাধান করা যায়নি।
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়, বিশ্বভারতী এবং অধুনা আমাদের বাংলা একাডেমি বানান প্রমিতকরণের ক্ষেত্রে যথেষ্ট ইতিবাচক অবদান রেখেছে। আমরা সম্প্রতি বানানের একাধিক রূপকে বর্জন করে সহজ এবং সমর্থনযোগ্য রূপগুলোকে বিধেয় করেছেন। এটি অবশ্যই প্রশংসার যোগ্য।
তবে এটাকে আমি এক অর্থে "ছাড় দেওয়া" বলে অভিযুক্ত করি। মুখে তুলে খাইয়ে দেয়ার মতো ভাষাকে যথাসম্ভব সহজ করে আমাদের সামনে উপস্থাপন করা হচ্ছে কারণ আমরা আমাদের ভাষার প্রতি এতই অনাগ্রহী! ছাড় না দিয়ে বাধ্যতামূলক করে দেওয়া হলে যত কঠিনই হোক, আমরা আমাদের ভাষা যথাযথভাবে শিখতে বাধ্য হতাম। এই ছাড়টা দেওয়া একেবারেই উচিত হয়নি।

বাংলা একাডেমি ই কার এবং ঈ কারের মধ্যকার একটি প্রভেদ দেখিয়েছে, ঈ কার কেবলই সংস্কৃতের জন্য। তদ্ভব, দেশি এবং বিদেশি শব্দের বেলায় ঈ হবে না।

অনেক অংশের মতো আমার এই অংশেও আপত্তি আছে। দেশি শব্দে ঈ নেই সত্যি, কিন্তু বিদেশি শব্দে অনেক ক্ষেত্রেই ঈ অপরিহার্য, যেমন: আ'মীন। আমিন বলা হলে অর্থ পাল্টে যাচ্ছে। ঈদ কে ইদ লেখা হলে তাতে আর আনন্দ থাকে না। Sea কে শুধু সি লিখলে কি মানাবে? Mean কে মীন না লিখে মিন লেখা হলে মানায় কি?

বাংলা একাডেমিকে এটা আবারও ভাবতে হবে।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৩৮

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: সুন্দর| তবে ই ঈ কারের ব্যাপারে একমত নই| আমরা যা উচ্চারণ করি তাই লিখিত হওয়া দরকার| এমনকি সংস্কৃততেও তুলে দেয়া দরকার

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৪৭

জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: অর্থাৎ দীর্ঘ উচ্চারণ নির্দেশকে অনাবশ্যক বলতে চাইছেন? :-)

২| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৭

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: অনেকটা তাই| কারণ আমরা সাধারণত দীর্ঘ উচ্চারণ করিনা| অবশ্য বিদেশি শব্দের ক্ষেত্রে এটা বেশি খাটে| মীনকে আমরা মিন উচ্চারণ করি| আর একটা কথা, ভাষাকে সহজসাধ্য করলে ভাষার পরিধি তাতে বাড়ে,সচলতা বাড়ে, এতে লাভই হয়| নিয়ম ভাষাকে বদ্ধজলাশয় করে তোলে

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.