নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একটি পথ, আপনি চাইলে হেঁটে দেখতে পারেন....

জীয়ন আমাঞ্জা

পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !

জীয়ন আমাঞ্জা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার দণ্ডিত কালো রাত

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ৮:২৯


তার সাথে দেখা হল দূর বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যাওয়া সেই গাঁয়ে। তোমরা সে গাঁয়ের নাম জানো না, যাওনি কখনও কেউ। সেখানে আষাঢ়ের ঝমঝমে বৃষ্টিতে শুরু হয়েছিল আমার বোধনের কালযাত্রা, পুরুষত্বের পুলকে পদার্পণ, আমার প্রেমিক সত্তার অভিষেক; সেই গাঁয়েরই মেঠো পথে হাঁটতে গিয়ে দেখা হল ফের অবন্তীর সাথে!

'অবন্তী', শুধুই 'অবন্তী', এখন আর তাকে 'আমার অবন্তী' বলে সম্বোধন করবার সাহস বা অধিকার কোনটাই আমার নেই। সেকালের কিশোরী অবন্তী আজ অন্যের ঘরণী, পুরোদস্তুর মহিলা এক, কোলে তার মাতৃত্বের নিদর্শন, চাঁদের মতো ফুটফুটে এক মেয়ে!

ধূমপানের আঁচড়ে আঁচড়ে বুকটা আমার অনেক আগেই তার দম হারিয়েছে, দম ফুরানো বুকটা আজ আচমকা আবার মোচড় দিয়ে উঠল সেই কিশোর কালের মুগ্ধ প্রেমিকের প্রাণ চঞ্চল টগবগে লাল হৃৎপিণ্ডের মতো। অবন্তীর চোখে দেখলাম যেন বজ্রপাতের ধাঁধানো ঝিলিক, নয়তো ভূমিকম্প!

একদিন দেখা হবেই জানতাম, তবে এভাবে হবে, ধারণাতেও ছিল না।
অদৃষ্টের এই অনির্ণেয় ধারাপাত বড়ই অদ্ভুত কড়চা।

বজ্রাহতের মতো দাঁড়িয়ে আছি, সেও দাঁড়িয়েছে, চোখে তার চিকচিক করছে দীর্ঘদিনের শুকিয়ে যাওয়া জলের কণা, হয়ত। কিংবা হতে পারে ও চোখে আজ সে ধরেছে অহংকার কিংবা অবজ্ঞা, এই চালচুলোহীন সাবুক্তগীন নামের প্রাণীটির প্রতি। 'পুরুষটি'ও নয়, সম্বোধনটা 'প্রাণীটি'!

কেমন আছ? এই প্রশ্ন কি খুবই অসমীচীন হবে? ভাবছি। আমার বিহ্বল ঠোঁট আপনাআপনিই কেঁপে চলেছে, কথা সরছে না মুখে।

এমন সময় অবন্তীই বলে উঠল, মেয়েকে দেখিয়ে, আমার মেয়ে, রূবাব!

কণ্ঠে অহংকার, না আমার প্রতি অবজ্ঞা- আমি এখনও বুঝে উঠতে পারছি না!

মেয়েটাও কেমন যেন উদাস হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে আছে! যেন মায়ের কাছ থেকে আগে থেকেই শিখে নিয়েছে যে, সাবুক্তগীন নামের এই লোকটিকে অবজ্ঞা করতে হবে!

আমি একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে, কিংবা অব্যক্ত কোন অসংজ্ঞেয় হাহাকার নিয়ে হাত বাড়ালাম মেয়েটির কপোল ছোঁব বলে।

ফোঁস করে সরিয়ে নিল অবন্তী ওর মেয়েকে!
হাউ ডেয়ার ইউ! হাউ ডেয়ার ইউ টাচ্ মাই ডটার!!

চোখ ফেটে পানি এল আমার! ওর মেয়ে! আমার তো কেউ নয়! কে আমি আজ?
ঢোক গিলে খসখসে কণ্ঠে বললাম, অনেক সুন্দর হয়েছে তোমার মেয়ে!

হঠাত মনে হলো, অবন্তী যেন বালির মূর্তির মতোন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল!

এতদিনের এত অভিযোগ, এত ব্যাকুলতা, এত জমানো কথা- সব যেন কোথায় হারিয়ে গেল, কিংবা সব চাপা পড়ে গেল মুহুর্মুহু দীর্ঘশ্বাসের দ্যোতনায়!

বলার মতো কিছু না পেয়ে, আমি কবি, বিড়বিড় করে আওড়াতে লাগলাম-

আমারও সাধ হলো
স্বাদ নিতে বিষাক্ত বিস্বাদের;
ছেড়ে স্বর্গের মায়া,
সুগন্ধী গন্ধমের মতো,
আমি তাই তোমাকে নিলাম খুঁজে
আদম সত্তার মতো,
উলঙ্গ সন্ত্রস্ত হাওয়াকে
বুক পেতে
এ নশ্বর মর্ত্যের মাটিতে
প্রেমিকের জ্বলন্ত আহ্লাদে!

অবন্তীর বিরক্তি যেন দপ করে জ্বলে উঠল হঠাত!

জীবনে পেরেছ কী আর আগডুম বাগডুম কয়েকটা চটকদার শব্দের পিঠে শব্দ বসানো ছাড়া? এই দিয়েই তো মুগ্ধ করে জখম করে গেছ একের পর এক সরল সাধারণ মেয়েকে!

আমার বাকপটু মুখ অবন্তীর সামনে কোনদিনই ভাষা খুঁজে পায়নি। সারাজীবনই ও ইচ্ছে মতো যা খুশি বকেছে, অপবাদ দিয়েছে, অপমান করেছে, আমি শুধু শুনে গেছি। জানি বুঝিয়ে লাভ নেই, আমি ভালো হই বা শত খারাপও যদি হই, তাতেও অবন্তী- সাবুক্তগীন সম্পর্কের কোন অদল বদল ঘটবে না। এ যেন অবধারিত চির সমান্তরাল এক সহযাত্রা, তফাত রেখে পথ পাড়ি দেওয়া, কখনও খুব কাছাকাছি এসে হাঁটা, আবার কখনও দুজনের মাঝখানে অনেকে গাড়িঘোড়া, পথচারী আর ঘরবাড়ির আড়াল! সহযাত্রা ফুরায় না তবু কোনদিন।

আমি প্রতিবাদ করিনি কখনও, আজও করলাম না। শুধু মিনমিনিয়ে বললাম, তুমি তবে কেন মুগ্ধ হয়েছিলে অবন্তী? তুমি তো সাধারণ নও!

মুগ্ধতা? কাকে তুমি মুগ্ধতা বলছ? তুমি তো করুণারও যোগ্য নও!

তাহলে এত জল কেন ঝরালে?

বাজে কথা বলবে না একদম! তোমার জন্য অশ্রু ঝরাব আমি? কী ভাব তুমি নিজেকে!!

কী আর ভাবব আমি? তুমি তো আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অর্জন, সাধ ভরে বয়ে বেড়ানো ব্যাকুল দীর্ঘশ্বাস!

এতক্ষণে পরীর মতো ছোট্ট মেয়েটি যেন একরাশ মুগ্ধতা নিয়ে মুখ ফিরিয়েছে আমার দিকে, তার যে উজ্জ্বল চোখ- যেন আমার অন্তরাত্মায় গিয়ে চুমু দিয়ে এল নিমিষেই! আমি আবার কিছু বলার মতো খুঁজে পেলাম না।

অবুঝ মেয়েটি আঙুল তুলে আমার দিকে তাকিয়ে ঠিক মায়ের মতো করেই দুর্বোধ্য একটা হাসি দিল।

কী যেন টের পেয়ে চকিতে অবন্তী মেয়ের হাত নামিয়ে চেপে ধরল নিজের বুকের সাথে। কাঁপা গলায় বলে উঠল, আর কখনও এসো না সাবুক্তগীন, আর কখনও এসো না! আমায় ঘেন্না কর, আমায় ভুলে যাও, মনে করো তোমায় নিয়ে শুধু খেলেছি আমি।

হাহ, এই কণ্ঠের প্রতিটি কম্পন আমি চিনি, পাথরের মতো শক্ত অবন্তী যে নিঃশব্দে কত কেঁদে যাচ্ছে ভেতরে ভেতরে, তা আমি ছাড়া আর কে বুঝতে পারে পৃথিবীতে?

হুট করে আমার সব মনে পড়তে লাগল, সব অভিযোগ, সব জমানো কথা, সব ফিরে আসতে লাগল, সব! আমায় ফেলে এগিয়ে যাওয়া অবন্তীর দিকে পেছন ফিরলাম, অনেক দূরে চলে গেছে অবন্তী, দূরে, আরও অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, নিমিষেই যেন যোজন যোজন দূরত্ব তৈরি হয়ে গেল আমাদের মাঝে! রুবাব, অবন্তীর ছোট্ট মেয়ে, চিৎকার করে কাঁদছে। হাত পা ছুড়ছে অদম্য আক্রোশে।

আমার ভেতর হতেও এবার হড়হড় করে আওয়াজ এল, এই কান্না আমি চিনি, ওই সন্তান, ওই কণ্ঠ- ওকে আমি চিনি অবন্তী, ওকে নিও না অবন্তী, ওকে আরেকটু দেখতে দাও প্লিজ!... অবন্তী....!!


আমি ধড়মড় করে বিছানায় উঠে বসেছি! রাত এখন চারটা। বুকটা ছটফট করছে, একটু পানি খাওয়া দরকার। না, পানি নয়, তারচেয়ে একটু বিষ হলেও মন্দ হত না!

পা দুটো এ্যাক্সিডেন্টে পঙ্গু। উঠে গিয়ে এক গ্লাস পানি ঢেলে খাব, সে সামর্থ্য নেই।
আমার অবন্তীর কাছে যাওয়া হয়নি। রুবাবকে আমার কখনই দেখা হয়নি।

রাতের পর রাত কেটে যায় স্মৃতির কারাগারে নির্ঘুম নির্যাতনের বন্দিদশায়। হায়, মরণ! হায় রে আমার চিন্তা-চিতায় দহন!
অক্ষমের আয়ু কেন এত দীর্ঘ হয় বিধি? এ তোমার অন্নপ্রাশনের কেমন প্রহসন?

ভোতা ধার, শীতল আঁচড়ের-
মুখভর্তি মৃত্যু নিয়ে এগিয়ে আসে ওরা,
হলদে দাঁতের গোড়ায় গোড়ায়
ফেনায়িত হয় হিংস্র আনন্দ ওদের,
ভেঙে ভেঙে যাওয়া নিঃশ্বাসের দুঃস্বপ্নে
এভাবেই ঘামে ভিজে ওঠে প্রতিটি রাত-
আমার দুঃস্বপ্নের দণ্ডিত কালো রাত!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.