নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
শিশুকালে ছেলেদের খেলার বস্তু
গাড়ি আর বল, মেয়েদের খেলার বস্তু পুতুল
। প্লাস্টিকের রংবেরং দেখতে, মাটির
গড়া ঢিমসে পুতুল,
চাবি দেওয়া নাচা গাওয়া পুতুল
কিংবা বাহারী কাপড়ের
হাতে বানানো মমতা মাখা পুতুল ।
কাপড়ের এই হাতে বানানো পুতুল
ছাড়া অন্য পুতুলকে আমার পুতুলই মনে হয়
না ।
আমি ছেলে, তবে আমার গাড়ী কিংবা বল
কোনটাই ছিল না । অভাবের সংসারে ওসব
বিলাসিতার আবদার করাই
যে বিবেকহীনতা তা ওই ছয় সাত বছরেই
বুঝে গিয়েছিলাম । বুঝতে পারার কারণ
আছে । বাবা আমাদের
চিনতে শিখিয়েছিলেন অভাব আসলে কী !
সোহান- শাকিলকে দেখতাম ঘর
থেকে টাকা চুরি করত । গ্রামের
উঠতি বয়সী ছেলেদের ওই সময়কার
রেওয়াজই ছিল বাড়ি হতে কিছু
একটা চুরি করে ঢাকায় চলে আসা ।
এটা করলেই ধরে নেওয়া হত যে,
"ছেলে এখন বড়ো হয়েছে" । কেউ
দুয়েকমাস ঢাকায় থেকে চলে যেত, কেউ
বা টিকে যেত এই শহরে ।
আমি মনে মনে ওসব ছেলেদের
ঘৃণা করেছি । পিতার কষ্টের
টাকা যে এভাবে উড়িয়ে দেয় তার
মতো অকৃতজ্ঞকে ঘৃণা করা ছাড়া আর
কিছু ভাবতে পারিনি তখন । পকেট
থেকে নেওয়া তো দূরের কথা, কখনও
বাবার কাছে চাইওনি একটি টাকা ।
কারণ, আমি জানতাম এই
টাকা কতটা কষ্টের । আমার বিচক্ষণ
বাবা আমাকে একদিন
সঙ্গে করে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর
কর্মক্ষেত্রে, যাতে ছেলে দেখতে পায়
কতটা কষ্ট করে বাবা তাদের জন্য
উপার্জন করে আনেন !
সবক কাজে দিয়েছিল । তখন
মিষ্টি সিঙ্গারা বাজারে এসেছিল ।
একটা ৩ টাকা করে । এক
পুলিশকে খেতে দেখে খুব ইচ্ছে হয়েছিল
যদি আমিও খেতে পেতাম ! কিন্তু
ঘরে কখনও মুখ ফুটে বলা হয়নি সে কথা ।
একবার খুব শখ হয়েছিল একটা টেনিস
বলের । মা'কে মিনমিন করে বললাম,
একটা বল কিনে দিতে । পরদিন বাবা ১
টাকা দামের একটি প্লাস্টিকের বল
এনে দিয়েছিলেন, সে বল ড্রপ
করলে টেনিস বলের মতো কখনও
ছিটকে ওঠে না ! প্রায়ই
ফুটো হয়ে চুপসে যায় । লজ্জায় সে বল আর
কাউকে দেখাইনি ।
মনকে সান্ত্বনা দিয়েছিলাম, টেনিস বল
কেনার দরকার কী, বাবার কত কষ্টের
টাকা !
যাহোক, অন্যের বল দিয়ে খেলার মানুষ
আমি ছিলাম না । ঘরকুনোও ছিলাম না ।
গোল্লাছুট, দাঁড়িয়া বান্ধা, হা ডু ডু'র
মতো উপকরণবিহীন খেলা, এবং সব রকমের
দুরন্তপনায় আমি ছিলাম সবার আগে ।
এসবের অবসরে আমার শিশুসুলভ আপন
একটা জগত ছিল । সে জগত বড়ো রঙিন আর
একান্ত । অন্যের প্রবেশ সেখানে ছিল
না । মেয়েদের মতো পুতুল
বানিয়ে সেখানে খেলতাম একা একা ।
অন্য ছেলেরা দেখলে যে পরিহাস
করবে সেটা বুঝেই কাউকে জানাতাম না ।
একটি মেয়েকে খুব পছন্দ হত তখন । নাম
বলব না । সেই মেয়েটাকে চুপি চুপি পুতুল
উপহার দিতাম । মেয়েটার শখই
হয়ে গিয়েছিল আমার কাছে পুতুলের
বায়না করা । সেই পুতুলেরই বিয়ের
কথা বলছি ।
বিয়ে ঠিক হল ও পাড়ার শ্রাবণীর
মেয়ে পুতুলের সাথে ।
আমরা ছেলে পক্ষ, ওরা মেয়ে পক্ষ ।
প্রস্তাব এসেছিলই আমার মারফত ।
আমি ছিলাম ঘটক । দিন তারিখ ঠিক
করে উভয় পক্ষের দেখাদেখি হল ।
চা বিস্কুট হল ।
আমরা মেয়ে পুতুলকে শাড়ি দিয়েছিলাম,
মনে আছে । গহণা কী ছিল তা আর
মনে নেই ।
বিয়েটা হয়েছিল ডিসেম্বরে ।
ছেলেপুলেদের এই আয়োজনে বুড়োরাও
মেতেছিলেন । বাড়ির
সামনে কলা গাছের গেইট করা হয়েছিল ।
উঠানে চেয়ার টেবিল পেতে সাধারণ
বিয়ের মতোই আয়োজন করা হয়েছিল ।
তবে দাওয়াতী ছিল কেবলই বাচ্চারা ।
বুড়োরা কেউ সে অনুষ্ঠানে খাননি ।
সাধারণ হিসেবের তুলনায় এ বিয়ের
হিসেবটা একটু ব্যতিক্রম ছিল । কনে পক্ষ
আগে ও পাড়া থেকে এসে খেয়ে যাবে,
তারপর যাব আমরা বর পক্ষরা ।
গিয়ে একবারে খেয়েদেয়ে বৌ নিয়ে ফিরব
। এই ছিল পদ্ধতি ।
আমরা বৌ আনতে গিয়ে নাখোশ হলাম ।
আপ্যায়ন অত ভালো হয়নি ।
আমরা করেছি পোলাও আর
ওরা করেছে সাদা ভাত ।
আমরা করেছি গরু মুরগী এবং মাছ,
ওরা করেছে কেবল গরুর গোশতের
ব্যবস্থা ! কৃপণের জাত কোথাকার !
ভেতরে ভেতরে সবাই ফুঁসছিল ।
এরপরে বৌ পুতুলটা সম্প্রদানের বেলায়
অসন্তোষের চুড়ান্ত হল । ওরা বৌকে তেমন
কিছুই দেয়নি অর্থাত শাড়ী গহণা, খাট
পালঙ্ক ইত্যাদি । ছেলেকেও
চাহিদা মতো তেমন কিছু দেওয়া হল না !
আমরা থমথমে মুখে বৌ গ্রহণ করলাম ।
ওদের বাড়ি থেকে বের
হয়ে হেঁটে হেঁটে ফেরার
সময়ে আমরা প্রতিশোধ নিলাম ।
বৌটাকে পুতুলের বাকশো হতে বের
করে গলায়
দড়ি বেঁধে রাস্তা দিয়ে টেনে হিঁচড়ে বাড়ি পর্যন্ত
নিয়ে এলাম । সে পুতুল আর এ বাড়ির
বৌয়ের মর্যাদা পায়নি । বিবর্ণ বিবস্ত্র
সে অভাগীর শেষ ঠাঁই হয়েছিল বাড়ির
পাশের পুকুরে । সে দিনের
সে শিশুগুলো টেরই পেল না যে বাংলার
বধূদের চিরন্তন দুঃখের
পালাটিকে তারা নিজের অজান্তেই
আপন চেতনায় বাস্তবে মঞ্চায়িত
করেছে ।
আমি এখনও ভেবে পাই না, সেই
শিশুগুলোকে কে শিখিয়ে দিয়েছিল এ
নির্দয় রীতি ! কে ?
০৭ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৪
জীয়ন আমাঞ্জা বলেছেন: কেমন ? বাক্যগুলো ভাঙা ভাঙা ?
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১১:৩৩
অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: লেখার ফরম্যাট এমন কেন !!!