নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দর্শন হল হিসাব বিজ্ঞানের ডেবিট এবং ক্রেডিট । সবসময় যতখানি ডেবিট, ঠিক ততখানিই ক্রেডিট হয় । পরকালের হিসেব যা-ই হোক, এই ইহকালে আমরা ঠিক যেভাবে শূন্য হাতে পৃথিবীতে এসেছি, সেভাবে শূন্য হাতেই পৃথিবী ছেড়ে যাব । এটাই পৃথিবীর আবর্তনিক নিয়ম । অনেকে আমরা এটা বুঝতে ব্যর্থ হই ।আপনি কারো ক্ষতি করবেন তো আজ অথবা কাল আপনার ক্ষতি হবেই হবে । ভালো করলেও তার ফল আপনি জীবদ্দশাতেই পাবেন ।অনেকে দেখবেন রাস্তাঘাটে অযথা হোঁচট খায়, অসুখে ভোগে- এসব এমনি এমনি নয়, হয় এর অতীত, নয়তো ভবিষ্যৎ প্রসারী কোন কারণ আছে । যদি আপনি কারো ক্ষতি না করেন, তবে আমি নিশ্চয়তা দিচ্ছি, আপনার কোন ক্ষতি হবে না । কেউ চেষ্টা করলেও আপনার ক্ষতি করতে পারবে না ।শুদ্ধ থাকুন, শুদ্ধতার শুভ্রতাকে উপভোগ করুন । জীবন সুন্দর হবে ।আমি সবার মতের প্রতিই শ্রদ্ধাশীল।আশা করি আপনিও তাই।সৌজন্যবোধ ও মানবতার জয় হোক !
(প্রথম খণ্ড)
Sleep paralysis বা Old Hag syndrome হচ্ছে নিদ্রাকালীন অসাড়তা, যাকে আমরা চলতি ভাষায় "বোবায় ধরা" বলে থাকি । আমি জানি, প্রায় সবারই এই অভিজ্ঞতা কমবেশি আছে । এবং একেকজনের কাছে এর ব্যাখ্যা বিবরণ বড় বৈচিত্র্যপূর্ণ আর রোমাঞ্চকর !
১.
পানিতে ডুব দিয়েছেন, কিংবা ডুব সাঁতার দিয়েছেন, চলে গিয়েছেন পানির অনেক গভীরে, আর দমে কুলাচ্ছে না, এখনই আপনার নিঃশ্বাস নেওয়া দরকার; প্রাণপণে চেষ্টা করছেন উঠে আসার, মাথাটা পানির ওপর তুলে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেবার, কিন্তু কিছুই পারছেন না, সব কিছু কেমন যেন স্থির হয়ে গেছে ! প্রবল তড়পানি আর হাউমাউ করে উঠে বসে দেখলেন আপনি বিছানায় । ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন, ঘামে ভিজে গেছে সারা শরীর ।
খেয়াল করে দেখুন তো, এরকম দম আটকে আসা দুঃস্বপ্নের বেলায় আপনার গায়ে কোন কাথা আছে কিনা ? কিংবা আপনি কি জ্বর কাশিতে ভুগছেন এসময় ?
২.
দৌড় প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন, দৌড়ের জোর (speed) বাড়ানো দরকার; কিংবা ধরুন ভয়ানক কোন দৈত্য আপনাদের তাড়া করেছে, সবাই প্রাণপণে ছুটছে অথচ আপনি এগুতে পারছেন না, যতই চেষ্টা করছেন দৌড়ের গতি বাড়াতে পারছেন না আপনার, একটা ভয়ার্ত অসহায় কান্না চেপে বসেছে আপনাকে, পেয়ে বসেছে মৃত্যুভয় । হঠাৎ ধড়মড় করে উঠে আবিষ্কার করলেন, আপনি তো নিজের বিছানায় ! বুক এখনও ঢিপঢিপ করছে !
আফসোস, আপনি বলতে পারবেন না যে, আপনি ঐ মুহূর্তে কিভাবে ঘুমুচ্ছিলেন । যদি বলতে পারতেন, তবে রহস্যের জট খুলে যেত । যাইহোক, রহস্যটা আমি পেয়ে গেছি ।
৩.
কারো সাথে মল্লযুদ্ধে লেগেছেন, অথচ হাত পায়ে বল পাচ্ছেন না, অন্তরাত্মা প্রার্থনা করেই যাচ্ছে "বল দাও.. মোরে বল দাও", অথচ ফক্কিকার ! কোন কাজ হচ্ছে না ! যতই জোরে আঘাত হানছেন প্রতিপক্ষের গায়েই লাগছে না তা ! বড়ই অসহায় সে যুদ্ধ । ঘুম ভেঙে দেখেন হাত পা তখনও নিশপিশ করছে । আহা রে বীর যোদ্ধা !
৪.
উঁচু বিল্ডিং থেকে পড়ে যাচ্ছেন, বা সিঁড়ি হতে নামতে গিয়ে হুমড়ে পড়ছেন, পতনের ধাক্কাটা সামলাতে হুঁশ ফিরল যেই, অমনি খেয়াল করলেন, কোথায় কী ? আপনি তো বিছানায় !
৫.
হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল । চোখ মেলেই বিপদে পড়লেন, আপনি তো নড়তে চড়তে পারছেন না । নিঃশ্বাসও যেন আটকে আছে । সামান্য ঘাড় নাড়াবেন সেটাও সম্ভব হচ্ছে না । কষ্টে দুঃখে চোখে পানি চলে আসছে । এ কী বিড়ম্বনা ! গলা শুকিয়ে কাঠ । সর্বশক্তি দিয়ে চিৎকার দিয়ে সাহায্যের আশায় ডাকতে চাইছেন প্রিয়জনকে । মর পোড়াকপাল ! কোন আওয়াজই তো বেরোয় না !
অনেকক্ষণ পরে আচমকা যেন একটা ধাক্কা খেয়ে start দিয়ে ওঠে (সচল হয়ে ওঠে) সম্পূর্ণ শরীর যন্ত্র !
বড়ই প্রহেলিকাময় ব্যাপারগুলো, তাই না ?
আমি আপনাকে রহস্যগুলো বলে দেব, তবে এখনই না । ব্যাখ্যাগুলো দেওয়ার আগে আমি আপনাকে দিয়ে পুরো প্রবন্ধটি পড়িয়ে নেব ।
আমরা ঘুমাই, কারণ আমরা অবসাদগ্রস্ত হই । ঘুমিয়ে সে শ্রান্তি আমরা প্রশমন করে নিই । এই অবসাদগ্রস্ততা শুরু হয় পায়ের পাতা হতে । সবার আগে ক্লান্ত হয় পায়ের পাতা, তারপরে পা, তথা নিম্নাঙ্গসমূহ, তারপরে হাত, মুখ, চোখ এবং সবশেষে ব্রেইন বা মস্তিষ্ক ।
এখানে একটি কুইজ দিয়ে রাখি আপনাদের, বলুন তো ঘুমানোর আগে সর্বশেষ কোন শারীরিক কর্মটি আমরা করি ?
প্রসঙ্গের লাগাম হাতের মুঠোয় ধরে বলছি, আমরা ঘুমের সময় সবশেষে নিস্তেজ হয় বা ঘুমিয়ে পড়ে আমাদের মস্তিষ্ক । আর যখন আমরা ঘুম থেকে জাগি, তখনও সবার আগে সজাগ হয় বা চেতনা পায় আমাদের মস্তিষ্ক । তারপরে আগের হিসেব অনুযায়ীই চেতনাপ্রাপ্ত হয় সারা শরীর ঘুরে সবশেষে পা । মূল রহস্যটা এখানেই ।
Narcolepsy নামে একটি সাইকোলজিক্যাল Term আছে যার দরুণ ঘুমের মধ্যে বা পরে মস্তিষ্ক সজাগ হলেও তৎক্ষনাৎ স্নায়ুতন্ত্রের ওপর নিয়ন্ত্রণ পায় না । বিজ্ঞান এটাকে বেশ ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে ব্যাখ্যা করে । অতকিছু আমার পছন্দ না । আমি ব্যাখ্যা করি সহজ কথায়, সহজ দৃষ্টান্তসহযোগে ।
আপনারা অনেকেই জানেন যে, ঘুমের ব্যক্তিকে স্পর্শ করে বা ঠেলা ইত্যাদি দিয়ে ডেকে তুলতে নেই । বলুন তো, এটা নিষেধ করা হয় কেন ?
সেই আলোচ্য রহস্য । ঘুমন্ত মানুষকে হঠাৎ ডেকে তোলা হলে তার অপ্রস্তুত মস্তিষ্ক আচানক তাল হারিয়ে ফেলে, সহসা কোথায় কী সিগন্যাল দেবে বুঝতে পারে না । একটি করতে গিয়ে করে বসে অন্য একটি । এরকম হওয়ার ফলে মুহূর্তেই ঘটে যেতে পারে বড়োসড়ো দুর্ঘটনা, ব্যক্তি হার্ট অ্যাটাক করতে পারে, প্যারালাইজ্ড হয়ে যেতে পারে, আভ্যন্তরীন বিশৃঙ্খলাবশতঃ তার তাৎক্ষণিক মৃত্যুও হতে পারে । এজন্য ঘুমন্ত ব্যক্তিকে ডাকতে হয় প্রথমে আস্তে আস্তে, উচ্চঃস্বরেও ডাকা নিষেধ । তার সাড়া পেলে তবেই স্পর্শ করে ডাকা উচিৎ ।
Sleep Paralysis এর ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটে । মস্তিষ্ক চেতনা পেয়ে জেগে ওঠে অথচ অন্যান্য অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ এবং স্নায়ু তখনও অপ্রস্তুত, অচেতন । ফলে ব্যক্তি বোবায় ধরা নামক এই অপ্রীতিকর অসহায় পরিস্থিতিতে পতিত হয় । স্নায়ুদৌর্বল্য বা পেশীর দৌর্বল্যের কারণে এমনটি ঘটে থাকে বলে বিজ্ঞান ব্যাখ্যা করে । হ্যাঁ, এই ব্যাখ্যা সত্য, তবে নিতান্ত দায়সাড়া । আমি আরো হৃদয়ঙ্গম ব্যাখ্যা দিতে চাই ।
(দ্বিতীয় খণ্ড দ্রষ্টব্য)
পুনশ্চঃ —
♣ এটি একটি #Zeonic Psycho-analysis ।
সর্বৈব মৌলিক গবেষণা । কোথাও কারও কোন উপাত্তের সাহায্য নেওয়া হয়নি, কারও কোন তত্ত্বও অবলম্বন বা অনুসরণ করা হয়নি । মূলতঃ আমার প্রতিটি লেখাই মৌলিক । আমি সাধারণত কোন রেফারেন্স নিয়ে লিখি না, কখনও লিখলে সেটা বেশ ফলাও করে উল্লেখ করে দেই ।
ණ
গত বছর একটা স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এই Old Hag বা বোবায় ধরা নিয়ে লেখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম । ইনবক্সেও অনেকে অনেকবার অনুরোধ করেছে এটি নিয়ে লিখতে । আলস্য ঝেড়ে মাথার ওপর ভরসা করে আজ নিজেকে বসিয়ে দিলাম লিখতে ।
ණ
লেখা চুরি হবার মত অপ্রীতিকর ঘটনা কয়েকবার ঘটার কারণে গবেষণামূলক লেখা প্রকাশ করা বন্ধ করেছিলাম । স্বপ্নের রহস্য নিয়ে গত বছর শুরু করা সেই লেখাটি আজও অসম্পূর্ণ রয়ে গেল ।
আগ্রহী পাঠক না পেলে আর জোর করে পড়াতে কারই বা ইচ্ছে করে ?
অপেক্ষা করুন দ্বিতীয় খণ্ডের । আর ভুলে যাবেন না কুইজটির কথা । দেখি, কে কে কী কী উত্তর দেন !!
** লেখাটি ফেইসবুকে দুই বছর আগে প্রকাশ করেছিলাম। সেখান থেকে কার্টেসি সমেত অন্য একটি ব্লগে আমার বরাত দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছিল। আশা করছি, পাঠক দ্বিধান্বিত হবেন না।
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.