নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
শুভ বাড়িতে এলে উৎসব শুরু হয়।রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে এই নিয়ে ধীরেন্দ্রর অনেক গর্ব।আর গর্ব করবেনা কেন?এমন মেধাবী ছেলে কয়জনের আছে?শুভ এলেই মাধবের পাখা গজায়।দুই বন্ধু মিলে টো টো করে নাটোরের পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। এমনই একদিন দুই জন ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হয়ে কানাইখালির মাঠে গিয়ে বসে।ছোট ছোট ছেলেরা ফুটবল খেলছে।শুভ প্যান্ট থেকে প্রেম কাঁটা তুলতে থাকে।
-মাধব শ্রীলাকে কেমন লাগে তোর?
প্যান্ট ঝারতে ঝারতে শুভ প্রশ্ন করে
-অনুরাধার বোন?ও তো খুব ভালো মেয়ে।কত বড়লোক ওর বাবা।কিন্তু মেয়েটার একদম অহংকার নেই।আমাদের কলেজে পড়ে।কেন কি হয়েছে?
শুভ কোন উত্তর দেয়না।মাধবকে একটা খাম ধরিয়ে দেয়।নীল রঙের খাম।মেয়েলী হাতে শুভর পুরো নাম লেখা।
-পড়বো?
মাধব জানতে চায়।
-তোকেতো পড়ার জন্যে দিলাম।
মাধব চিঠি পড়ে।গোটা গোটা হরফে লেখা।প্রিয়তমেষু, অনেকদিন তোমাকে দেখিনি।কেন জানিনা তোমার কথা মনে পড়লেই আমার সময় স্থির হয়ে যায়।খুব ইচ্ছা করে তোমার পাশে বসে গল্প করি।তোমার হাতে হাত রাখি।এই চিঠি পড়ে আমাকে খুব বেহায়া মনে হচ্ছে না?কি করবো বলো?আমি তোমাকে ছাড়া আর কিছু ভাবতেই পারিনা।
তুমি হয়তো ভাবতে পারো,কোনদিন কথা হলোনা।জানা হলোনা।তবু ভালোবাসলাম কেমন করে?আমিও নিজেকে প্রশ্ন করেছি।উত্তর পাইনি।আর জানার বিষয় যদি বল,প্রথম তোমাকে যেদিন দেখি, সেদিন হতে তোমাকে ছাড়া আর কাউকে জীবন সঙ্গী রুপে ভাবতে পারিনি। তুমি স্বরস্বতী পূজার দিন এসেছিলে আমাদের বাড়িতে,তোমার বাবার সাথে।আমি তখন এইটে পড়ি।
তোমার অপেক্ষায় রইলাম।ইতি শ্রী।
চিঠি পড়ে কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে মাধব।
-তোর মতামত কি?
মাধব প্রশ্ন করে।
-দেখা করার ব্যবস্থা করে দে।
পরদিন শুভ মাধবের সাথে মাধবের কলেজে যায়।একটি ক্লাস করেই মাধব বেরিয়ে আসে।শুভকে সে কলেজের পিছনে পুকুর পারে বসিয়ে রেখে এসেছে।মাধব সোজা শ্রীলার ক্লাসের দিকে চলে যায়।শ্রীলাদের ক্লাসে তখনও ক্লাস টিচার আসেনি।মাধব শ্রীলাকে ক্লাস থেকে ডেকে নেয়।
-মাধবদা কিছু বলবে?
শ্রীলা জানতে চায়।
-শুভ পুকুর পারে বসে আছে।চল।
শ্রীর মুখমন্ডলে রক্তিম আভা ছড়ায়।মাধবের খুব ভাল লাগে।মনে মনে মাধব ভাবে, শুভ আর শ্রীর জুটি দারুণ মানাবে। শ্রীকে নিয়ে মাধব শুভর কাছে আসে।
-কখন থেকে বসে আছি।
মাধবকে শুভ বলে।
শ্রী চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে মাটির দিকে চেয়ে।দু’হাতে বই বুকে জড়িয়ে আছে।মাধব দুইজনের দিকে চেয়ে দেখে।
-তোরা গল্প কর।আমি ইংরেজী ক্লাস করে আসি।
এরপর হতে মাধব ওদের মধ্যে চিঠি আর খবর আদা-প্রদানের বাহক হিসাবে কাজ করে।
ট্রেন থেকে নেমে ষ্টেশনের বাহিরে চলে আসে মাধব।বুকের মধ্যে কেমন মোচড়াতে থাকে।করিমপুর স্কুল পার হওয়ার সময় অনাবশ্যক মাধবের চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নেয়।বড়াল অনেক শুকিয়ে গিয়েছে।আগের চেহারায় আর নেই।এই নদীতেই ওর প্রথম সাঁতার শেখা।কামারের বাড়ির পাশ দিয়ে যাবার সময় জোগেস কাকার কথা মনে পড়ে।আজ কয়েক বছর হলো মারা গিয়েছে।হাফর টানছে জোগেস কাকার ছোট ছেলে।মাধবকে দেখে হাফর টানা থামিয়ে দেয়।
-মাধবদা না? কখন এলে?
-সকালের ট্রেনে।
-ভালো আছো তুমি?
-হ্যাঁ।তোরা কেমন আছিস?
-আমরা ভালোই আছি।শুধু পিসীর শরীর ভালোনা।
-কে? মায়ের কিছু হয়েছে নাকি?
-হ্যাঁ।তুমি বাড়িতে যাও।
মাধব বাড়ির দিকে হাঁটা ধরে।বাড়ির দরজায় এসে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে।নিজেকে সামলে নেয়।বাড়ির ভেতর ঢুকে।বারান্দায় বড় বৌদি তরকারি কুটছিল।মেজো দেবরকে দেখে মাথায় ঘোমটা টানে।
-মা দেখেন কে এসেছে?
মাধবীলতা ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।মাধব মায়ের কাছে গিয়ে মাকে প্রণাম করে।মাধবীলতা ঝরঝর করে কেঁদে ফেলে।কাঁদতে কাঁদতেই মাধবের গায়ে মাথায় হাত বুলায়।খবর পেয়ে রিপন ছুটে আসে।
-দাদা কখন এলি?
-এইমাত্র।তোরা সব ভালো?
-না।মায়ের শরীর ভালো যাচ্ছেনা।কয়েকদিন ধরেই থেমে থেমে জ্বর আসছে আর যাচ্ছে।
-ঔষধ খাওয়াচ্ছিসনা?
-বিধু কবিরাজ দেখছে।
দুপুরে তিন ভাই একসাথে খেতে বসে।মাধবীলতা তিন ভাইয়ের খাওয়া দেখে বসে বসে।ওদের খাওয়া শেষ হলে বিপ্লব নামাজ পড়ার জন্যে ঘরে চলে যায়।মাধবীলতা শুতে চলে যায়।সেলিনা গামছা এগিয়ে দেয় মাধবকে।
-বৌদি তোমাকে ভাবী ডাকতে পারবোনা।
মাধব সেলিনাকে বলে।
-আমিও তো বৌদি বলি।
রিপন উত্তর করে।
ওদের কথা শুনে সেলিনা হেসে উঠে।
-তোমাদের যা খুশি বলো।
-ছেলেপুলে নিচ্ছনা কেন?
মাধব গামছা এগিয়ে দিতে দিতে বলে।সেলিনা লজ্জায় ঘোমটা বড় করে।দুই ভাই হাসতে হাসতে বাড়ির বাহিরে চলে আসে।পুকুর পারে গিয়ে বসে।
-রিপন,জব্বার মোল্লা তো মারা গিয়েছে।এখন কি অবস্থা?
-শালা খবিস মারা গিয়েছে তো ভালো হয়েছে।না হলে আমিই একদিন ওকে খুন করতাম।
-জমি-জমার কি খবর?
-মায়ের নামে যে বত্রিশ বিঘা ছিল মাঠে,জব্বার মোল্লা ওই জমি নিজের নামে লিখে নিয়েছিল।
-বাঁকিগুলি?
-ওগুলি বাবার নামে।তাই নিতে পারেনি।বেচতেও পারেনি।
-মা জমি লিখে দিল?
-বড় হয়ে দেখতাম ওই খাট্টাস বাড়িতে এসে জমি বিক্রি করবে,জমি বিক্রি করবে বলে বাড়ি মাথায় তুলতো।পরে মা একদিন সব জমি লিখে দিয়েছে।
-পল্টু কোথায়?
-কিছুদিন আগে ওরা বাড়ি ধরেই ভারত চলে গিয়েছে।
কথা বলতে বলতে মাধব লক্ষ্য করে এক কিশোরী অত্যন্ত লাজুক ভঙ্গিতে পুকুরে নামছে।মাধব কিছু একটা বলতে গিয়ে রিপনের দিকে তাকায়।রিপনের মুখ উজ্জল হয়ে উঠেছে।সে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।রিপন বুঝতে পারে দাদা ওকে দেখছে।লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকায়।
-মেয়েটা কে?
-কোন মেয়েটা?
রিপন জানতে চায়।
-ওই যে ওই ঘাটে।
-ও।ওই মেয়েটা।ও হলো জবা।লোকমান চাচার বড় মেয়ে।ও মায়ের খুব ভক্ত।প্রতি সন্ধ্যায় এসে মায়ের গা-হাতপা টিপে দেয়।
-তুই পচ্ছন্দ করিস নাকি মেয়েটাকে?
-ধুস কি যে বলিস।চল বাড়ির ভেতরে যাই।
রাতে সেলিনা বাড়ির বড় মোরগটা কাটে।মাধব খুব তৃপ্তি করে খায়।মাংস খাওয়া ওর হয়না বললেই চলে।ব্রাক্ষ্মণ বাড়িতে মাংস বলতে বলির পাঁঠা আর কচ্ছপ।পাঁঠার মাংসে পিঁয়াজ রসুন নাই আর কচ্ছপের ঝোলের রঙ দেখলেই মাধবের বমি আসে।যেদিন ও বাড়িতে কচ্ছপ রান্না হয়,কুন্তলা ওর জন্যে আলাদা করে ডিম রান্না করে।খাওয়া শেষে মাধব মায়ের ঘরে যায়।
-বাবা ওই বাড়ির মানুষজন তোকে ভালোবাসে?
-হ্যাঁ মা।
-উনার নাম কি?
-কুন্তলা।
-তুই মা ডাকিস?
-হ্যাঁ মা,আমি উনাকেও মা ডাকি।
-বাবা মাধব,উনাকে আমার প্রণাম জানাস।আর দেখিস তোর দ্বারা ওই পরিবারের কোন ক্ষতি যেন না হয়।আমাদের যে উপকার উনারা করেছেন,তার মর্যাদা রাখবি চিরকাল।
পরদিন সকালে মাধব যাবার প্রস্তুতি নেয়।মাধবীলতা ছেলের হাতে একশো রুপি দেয়।রিপন একটা বস্তা মাথায় করে নিয়ে এসে মাধবের কাছে নামায়।
-এতে কি?
মাধব জানতে চায়।
-আম আর লীচু আছে।তুই নিয়ে যা।
রিপন বলে।
-আমি বস্তা টানবো কিভাবে?
-তুই টানবি কেন?গুজু নিয়ে যাবে।নাটোরের বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে আসবে।
দুপুরের দিকে মাধব নাটোরের বাড়িতে পৌঁছায়।কুন্তলার হাতে একশো রুপি তুলে দেয় মাধব।কুন্তলা জানতে চাইলে জানায়,মা দিয়েছে।বাড়ির সবাই আম আর লিচু পেয়ে খুব খুশি হয়।
-দাদা,তোমাদের কতগুলি আম গাছ আছে?
স্বপন জানতে চায়।স্বপন ভাইদের মধ্যে সবার ছোট।
-আমাদের কয়েকটি আম বাগান আছেরে ভাই।
-তোর মা কেমন আছে?
কুন্তলা জানতে চায়।
-মায়ের শরীরটা খারাপ যাচ্ছে কয়েকদিন হলো।জ্বর আছে শরীরে।
আড্ডা শেষে সন্ধ্যার দিকে মাধব বাড়িতে ফিরে।বাড়িটা একদম নীরব।মায়ের ঘরে গিয়ে স্বপনকে পায়।স্বপন পড়ছিল।
-মা কোথায়রে?
-রান্না ঘরে।
মাধব রান্নাঘরে যায়।কুন্তলা উনুনে ভাত তুলে দিয়েছে।
-বাবা,লাল বাজার যাতো।আভাকে রিতুদের বাড়ি থেকে নিয়ে আয়।রাত হয়ে গিয়েছে।
মাধবকে কুন্তলা বলে।
-অন্যরা গেলো কই?
-দুপুরের দিকে তোর বাবার সাথে বাড়ইহাট গিয়েছে।আগামীকাল আসবে।দেরি করিসনা।যাতো তুই।
মাধব বেরিয়ে পড়ে।রাত হয়ে গিয়েছে।রিতুদের বাড়ির সামনে গলিটা অন্ধকারে ঢাকা।রিতুদের বাড়িতে গিয়ে রিতুর মায়ের সাথে দেখা হয়।
-আভাকে ডেকে দেবেন মাসি।
-ওরা দোতালায় আছে।তুমি উপরে উঠে ওই ঘরে যাও।
মাধব সিঁড়ি দিয়ে দোতালায় উঠে যায়।মাধবকে দেখে আভার মুখ উজ্জল হয়ে উঠে।
-আভা বাড়ি চল।
মাধব বলে।
আভা খাতা গুছিয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ায়।
-মাধাবদা তুমি নীচে দাঁড়াও।আমরা আসছি।
রিতু বলে।
মাধব নীচে নামতে নামতে শুনতে পায়, রিতু আভাকে বলছে-তুই এখনও কিছু জানাসনি।আভার উত্তর কানে আসে-না।
গলির মধ্যের অন্ধকারে আভা ভয় পেয়ে যায়।মাধবের গা ঘেঁষে হাঁটতে থাকে।এক পর্যায়ে মাধবের হাত জড়িয়ে ধরে।মাধব আভার শরীরী উত্তাপ টের পায়।
-ভয় পাচ্ছিস নাকি?
মাধব প্রশ্ন করে।
-কি অন্ধকার।ভয় লাগবেনা।
আভা বলে।
-আমি থাকতে ভয় কি তোর?
মাধব বলে।
মাধবকে আভার বলতে ইচ্ছে করে,দাদা তুমি এভাবে আমার পাশে থাকবে চিরকাল।কিন্তু মুখে কথাটা আসেনা।বড় রাস্তায় এসে আভা মাধবের হাত ছেড়ে দেয়।সেই রাতে আভা অদ্ভুদ একটা স্বপ্ন দেখে।মাধবদার ঘরে পাঞ্জাবী পড়ে এক ছেলে দাঁড়িয়ে আছে।আভা দাদা বলে ডাকে।উত্তর আসে- কে আভা? আভা বুঝে ফেলে এতো মাধবদা। সে পিছন থেকে গিয়ে জড়িয়ে ধরে দাদাকে।দাদা আস্তে আস্তে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
চলবে…….
নিঃশব্দ দূরত্বে (১) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (২) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৩) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৪) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৫) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৬) (Click This Link)
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১২
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ।
২| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ২:৪৬
ওসেল মাহমুদ বলেছেন: লেখা চলুক ! তবে ঘটনার আংগিকে ও চরিত্রের বিশ্লেষণে আরো যত্নবান হলে সুখপাঠ্য হবে ! শুভকামনা !
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১৩
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ সুপরামর্শের জন্যে।
৩| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ সকাল ৭:৩৪
রাজীব নুর বলেছেন: তিন ভাই এর একসাথে খেতে বসাটা ভালো লেগেছে।
০৩ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১৩
সুদীপ কুমার বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:৪৮
হাসাস হোসেন বলেছেন: ভালই লাগলো