নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন্ধ্যার সময় বড় বাড়ির খোলায় দুলাল গিয়ে উপস্থিত হয়।হারান জ্যাঠা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে হুঁকো ফুঁকছেন।তার ছেলে আশুতোষ পাশের চেয়ারে বসে আছে।জেলে পাড়ার কালু জেলে,পালপাড়ার বিরেনসহ আরও কয়েকজন গল্প করছিল।দুলালকে দেখে কালু নমস্কার জানায়।
-দুলাল আসলে? বস আমার পাশে।
হারান জ্যাঠা হুঁকো টানতে টানতে বলে।
দুলাল পাশের চেয়ারে গিয়ে বসে।
বিরেন পাল কথা তোলে।
-যা শোনা যাচ্ছে তাতে মনে হয় পাকিস্থানে আর থাকা যাবেনা।ওপারে চলে যেতে হবে।
-জ্যাঠা বিবিসির খবর শুনলাম,দেশের বিভিন্ন স্থানে আর্মির সাথে সংঘর্ষ চলছে।ছেলে-ছোকরারা সব দলে দলে ওপারে গিয়ে ট্রেনিং নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দিচ্ছে।আজ নাহয় আমাকে আর্মিরা কি মনে করে ছেড়ে দিয়েছে।বারবার এমন নাও হতে পারে।কানাঘুঁষা শুনছি আর্মিরা বাড়ির মেয়েদের ধরে ধরে ক্যাম্পে নিয়ে যাচ্ছে।আমাদের সবার বাড়িতে সমত্ত মেয়ে।এ অবস্থায় ওদের এখানে রাখা ঠিক হবে?
বিরেনের কথা শেষ হলে দুলাল কথাগুলি হারানকে বলে।
হারান হুঁকা খাওয়া থামিয়ে দেয়।সোজা হয়ে বসে।
-রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় নল-খাগড়ার প্রাণ যায়।
হারানের কথা শুনে কেউ কোন উত্তর দেয়না।সবাই চুপ করে থাকে।
-কোনদিক দিয়ে যাবে তোমরা? সবটুকু পথ নৌকায় যাওয়া যাবেনা।
হারানের কথার পর সবাই আলোচনা শুরু করে।
-জ্যাঠা,আমরা কালিগঞ্জ পর্যন্ত নৌকায় যাই।তারপর ওখান হতে গরু বা মোষের গাড়ি ভাড়া করে জয়পুরহাটের মঙ্গলবাড়ি হয়ে বর্ডার পার হই।
বিরেন পাল প্রস্তাব রাখে।
বিরেনের কথা সবার মনে ধরে।আর ওদিকের বর্ডারেও কড়াকড়ি কম।
-আমাদের এখন হিসাব করা দরকার নৌকা কয়টা লাগবে।
আশুতোষ বলে।
আশুতোষের চার ছেলে আর চার মেয়ে।আশুতোষ আর দুলাল সমবয়সি।এই ছেলেদের কারণে দেশ স্বাধীনের কয়েক বছর পর ওদের মধ্যকার বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।যার ফলে পাড়াও দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে।
সবাই হিসাব করে ছয়টা মোষের গাড়ি লাগবে ওদের সবার জন্যে।আর নৌকা লাগবে পাঁচটি।ঠিক হয় এপ্রিলের বরো তারিখ অর্থাৎ চৈত্রের শেষে এখান থেকে রওনা দেবে।
-ওতোগুলি মোষের গাড়ি একসাথে কালিগঞ্জে পাওয়া যাবে?
দুলাল জানতে চায়।
-কাকা আমার ছোট ভাই ভীমকে আগামীকাল পাঠিয়ে দিই কালিগঞ্জে।ওর শ্বশুর বাড়ি কালিগঞ্জ।ঠিক যোগাড় করে ফেলবে দেখেন।
কালু দুলালকে আশ্বস্ত করে।
বিরেনকে উসুখুস করতে দেখে,হারান কারণ জানতে চায়।
-জ্যাঠা,বলতে খারাপও লাগছে, তবুও বলি।নগেনদের কয়েক ভাই সবার ইজ্জত মারছে।
-কেন কি করেছে ওরা?
হারান জানতে চায়।
-জ্যাঠা চারিদিকে শোনা যাচ্ছে রিফুজি আর রাজাকার মিলে আর্মিদের সাথে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম লুট করছে।এদিকে দেখছি হিন্দু হওয়া সত্বেও ওরা কয়েক ভাই মিলে লুটপাট চালাচ্ছে।
বিরেন এক নিঃশ্বাসে বলে যায়।
দুলালের মনে পড়ে রিমিও গতকাল খাবারের সময় একই কথা বলেছিল।হারান আবার হুকো টানতে শুরু করে।চারিদিকে নিরবতা নেমে আসে।শুধু গোয়াল ঘর হতে গরুর গলার ঘন্টির টুংটুং শব্দ ভেসে আসে।আচমকা হারান নিরবতা ভাঙ্গে।
-দেশের মধ্যে গন্ডগোল আগে থামুক তারপর ব্যবস্থা নেবোখন।
আশুতোষ হারানকে ধরে বাড়ির ভেতর নিয়ে যায়।দুলাল বাড়ি ফেরার আগে ওর বড়দার বাড়িতে যায়।কয়েকদিন ধরে ওর বড়দা অসুস্থ।বড়দার ঘরে দুলাল যখন প্রবেশ করে তখন সেজো ভাতিজি মিলি বাপের মাথায় জল ঢালছিল।দুলালকে দেখে প্রমিলা মাথায় ঘোমটা টেনে দেয়।
-কে দুলাল?
শম্ভু কাঁপাকাঁপা গলায় বলে।
-এখন কি অবস্থা?রবি ডাক্তার এসেছিল?
-আগের চেয়ে তোমার দাদার জ্বরের প্রকোপ কম।বিকেলের দিক হতে আবার জ্বর একটু বেড়েছে।ঠাকুরপো তোমরা কি সিদ্ধান্ত নিলে?
প্রমিলা দুলালকে বলে।
-দুর্জয়ের সাথে মেয়েদের আর জামাইকে ওপারে পাঠিয়ে দেবো।দেশের পরিস্থিতি শান্ত হলে ফিরিয়ে আনবো।তোমরা কি ঠিক করলে?
-তাহলে আমরাও তাই করি।মিলি আর লিপি আর তোমার ভাজতেদের ওদের সাথে পাঠিয়ে দিই ,কি বলো ঠাকুরপো?
-ঠিক আছে বৌদি।
দুলাল বেরিয়ে আসে বড়দার বাড়ি হতে।
সিঁথি বাড়ির সব গয়না এক জায়গায় করে।দুর্জয় বেডিং বাঁধায় ব্যস্ত।দুলাল তার বড় তিন মেয়ে আর দুর্জয়কে ভারতে পাঠিয়ে দেবে।সাথে জামাই রঘুনাথও যাবে।বাকীরা বাড়িতে থেকে যাবে।
-গয়নাগুলো কার কাছে রাখবি আর কিভাবে রাখবি?
সিঁথি দুর্জয়ের কাছে জানতে চায়।
দুর্জয় কিছুক্ষণ চিন্তা করে।তারপর আলমারীর মাথার উপর হতে রেডিওটি টেনে নামিয়ে রেডিওটি খুলে ফেলে।মায়ের হাত হতে গয়নাগুলি নিয়ে রেডিওর মধ্যে ভরে ফেলে।হাতে নিয়ে ওজন করে।
-অনেক ওজন হয়ে গেলো মালো বা রিমি হাঁটার সময় টানতে পারবেনা।
দুর্জয় জানায়।
-তোর জামাই বাবুর হাতে দিস তখন।
সিঁথি বলে।
-তাহলেই হয়েছে।ওই গয়না আর পাওয়া লাগবেনা।
-ছিঃ জামাই বাবু সম্পর্কে ওমন কথা বলেনা।
-তোমার জামাই পারেইবা কি?পারার মধ্যে পারে বিড়ি খেতে আর ঘুমাতে।
মালবিকা ওর পেটিকোটের ভাঁজে টাকা ভাঁজ করে করে ঢুকাতে ব্যস্ত ছিল।দাদার কথা শুনে হেসে উঠে।
-তোদের কাজ শেষ হলো?
সিঁথি রিমি আর মালবিকার কাছে জানতে চায়।
-সোনার চেইনগুলি দিদির পেটিকোটের ডুরির ভেতরে ভরা শেষ। আর টাকাও সব ভেরেছি।
রিমি বলে।
-মালো তোর কতদূর?
-আমারও প্রায় শেষ মা।
মালবিকা চটজলদি জবাব দেয়।
রাত্রে খাওয়া শেষে সবাই বারান্দায় বসে।
-আগামীকাল সকালে তোরা রওনা দিবি।বাবা দুর্জয়,দুই বোনকে তোর হাতে তুলে দিলাম।দেখে রাখিস বাবা।
দুলাল দুর্জয়কে বলে।
-আমি দেখে রাখবো বাবা।
এই সময় জামাই রঘুনাথ আসে।রিমি বারান্দায় পিঁড়ি পেতে দেয়।
-জামাই গোছগাছ শেষ?
-হ্যাঁ বাবা।আপনার মেয়ে সব গুছিয়ে নিয়েছে।
-বাবা,চয়নতো একদম গ্যাদা।পথে খাওয়া-দাওয়া দেখে শুনে করিও।
রঘুনাথকে সিঁথি বলে।
পরদিন সকালে সবাই নৌকায় উঠে।নৌকা ছেড়ে দেয়।নদীর পারে সবাই দাঁড়িয়ে।রিমির ছোট ভাই খুব কান্নাকাটি করছে।মা ওকে কোলে নিয়ে আছে।ধ্রুব জেদ ধরেছে দিদিদের সাথে সেও যাবে।সিঁথি আঁচল দিয়ে চোখ মুছছে।দুর্জয় খেয়াল করে ওর বাবাও ধুতির কোছা দিয়ে চোখ মুছছে।রিমি ওর বান্ধবী ভবানীর পাশে বসেছে।ভবানী আশুতোষের সেজো মেয়ে।পরবর্তি জীবনে রিমি আর ভবানী আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধ হয়।রিমির ছেলে নিলয়ের সাথে ভবানীর মেয়ে প্রিয়তির বিয়ে হয়।
কালিগঞ্জে যখন দুর্জয়দের দল পৌঁছায় তখন বেলা পড়ে এসেছে।সবাই মিলে ভীমের শ্বশুর বাড়ির পাড়ায় আশ্রয় নেয়।জেলে পাড়া।সবই ছন আর মাটির ঘর।কালু জেলে ভীমের কাছে জানতে চায় গাড়ির কি ব্যবস্থা হয়েছে।ভীম জানায় এখন পর্যন্ত গাড়ি পায়নি।তবে পাবে।মোষের গাড়ি পাবার কোন আশা নেই। সব গরুর গাড়ি।কালিগঞ্জে দুইদিন থাকার পর দুর্জয়রা গাড়ি পায়।চারটি গরুর গাড়ি একটি মোষের গাড়ি।দলটিকে খুব আপ্যায়ন করে জেলে পাড়ার সকলে মিলে।
পাঁচদিন লেগে যায় শুধু জয়পুরহাটে পৌঁছাতে।পথে নানা রকম খারাপ খবর শুনতে শুনতে দলটি জয়পুরহাট পৌঁছায়।দুর্জয় বোনদের একটা কথা শিখিয়ে দেয় আর্মি আক্রমণ করলে কোন বাড়ির মধ্যে যেন না লুকায়।বিশেষ করে মালবিকাকে।জয়পুরহাটে দলটি একদিন বিশ্রাম নেয়।এখন ওদের কাফেলাটি দীর্ঘ গরুর গাড়ির মিছিলে পরিণত হয়েছে।প্রায় আশি নব্বইটি গরু-মহিষের গাড়ি এক লাইনে।
নিঃশব্দ দূরত্বে (১) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (২) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৩) (Click This Link)
নিঃশব্দ দূরত্বে (৪) (Click This Link)
চলবে…………
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৫
সুদীপ কুমার বলেছেন: পেয়ে যাবেন শীঘ্রই।
২| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৯:০২
রাজীব নুর বলেছেন: পেটিকোটের ভাজে টাকা কিভাবে লুকায়??
২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ১:২৪
সুদীপ কুমার বলেছেন: পেটিকোটের দড়ি যেভাবে ঢোকানো হয়।ছোট বেলায় একবার নানার বাড়িতে ডাকাত পড়েছিল।তখন পেটিকোটের দড়ির পাশ দিয়ে গলার চেইন,টাকা ঢুকাতে দেখেছি।
©somewhere in net ltd.
১| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ রাত ৮:৫৫
মেহেদী হাসান হাসিব বলেছেন: পরের পর্বের অপেক্ষায়।।।